somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

জনস্বার্থ রক্ষাই হোক মুখ্য কাজ

২৯ শে মে, ২০০৯ সকাল ৮:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জনস্বার্থ রক্ষাই হোক মুখ্য কাজ
ফকির ইলিয়াস
========================================
ঘূর্ণিঝড় 'আইলা' লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে বাংলাদেশের দক্ষিণ জনপদ। হতাহতের সংখ্যা একশ' ছাড়িয়ে গেছে। বছরের শুরুতেই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাঁপিয়ে তুলেছে জনমানুষ। দেশের প্রধামন্ত্রী যার যা সাধ্য তা নিয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণ সহ্য করেই যাচ্ছে। সংগ্রাম করছে মানুষ। দু'বছর আগে 'সিডর' মারাত্মক ক্ষতিসাধন করেছিল। আমরা দেখেছি, বিভিন্ন দাতাদেশ, মানব কল্যাণমূলক সংস্থা ওই সিডর আক্রান্ত অঞ্চলে ব্যাপক ত্রাণ কাজ চালিয়েছিল। প্রচুর বিদেশী সাহায্যও পাওয়া গিয়েছিল। সিডরের পর প্রাপ্ত ত্রাণ দিয়ে ওইসব এলাকায় পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ কী কী প্রধান উন্নয়ন সাধিত হয়েছিল তা জানার একটা আগ্রহ গোটা দেশবাসীর ছিল। এখনও আছে। প্রাপ্ত ত্রাণের অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় হয়েছিল কি না তা জানার প্রয়োজন খুবই। কারণ ওই প্রাপ্ত সাহায্য দিয়ে ওই অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন হবে- এমন সংবাদ আমরা পত্রপত্রিকায় পড়েছিলাম।
বাংলাদেশের এবং বিদেশে অবস্থানরত দেশপ্রেমিক বাঙালি জাতির সবারই উচিত 'আইলা' উপদ্রুত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানো। বিদেশের দূতাবাস, মিশনগুলো এ বিষয়ে জরুরি উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসবে বলে আশা করছি। আর প্রাপ্ত ত্রাণ অর্থগুলো যাতে মজলুম মানুষের হাতে পৌঁছে সে ব্যবস্থার নিশ্চয়তাও দেয়া দরকার সরকারি পক্ষ থেকে।
আমরা দেখছি, চারপাশের অবস্থা বিবেচনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ বেশ শঙ্কার মুখোমুখি পতিত হচ্ছেন আবারও। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যেমন আশার আলো দেখার কথা ছিল তা যেন এক টুকরো মেঘ কোথাও ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করছে। পাকিস্তানে জঙ্গি বনাম সেনাবাহিনী যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কায় তামিল গেরিলা বাহিনীর নির্মম পতন, ভারতে নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ সব মিলিয়ে একটা প্রভাব তো পড়ছেই বাংলাদেশের আকাশে। এরপর রয়েছে দেশে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সঙ্কট। মনে রাখা দরকার সময়টা মোটেই অনুকূল নয়। তাই এগুতে হবে খুবই সতর্কতার সঙ্গে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন টানাপড়েন সৃষ্টি করেছে টিপাইমুখ বাঁধ। ঢাকাস্থ ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন, টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের ওপর কোন প্রভাব ফেলবে না। তার এই যুক্তিটি এই মুহূর্তে মেনে নেয়া বেশ কষ্টকর। কারণ, ফারাক্কা বাংলাদেশে যে প্রভাব ফেলেছে তা স্পষ্টই জানেন পদ্মাপাড়ের মানুষ। তাই আরেকটি টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে তেমন সঙ্কট সৃষ্টি বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না। মেনে নিতে পারে না। এ বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা হওয়া দরকার উভয় পক্ষের স্বার্থ বজায় রেখে। বাংলাদেশ-ভারতের অন্যতম প্রতিবেশী। প্রচুর ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অনেক পারস্পরিক স্বার্থ রয়েছে উভয় দেশের। তাই সে বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে উভয় দেশের একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো প্রয়োজন বলে মনে করি। এ বিষয়ে ভারতের নতুন সরকার উদার নীতির পরিচয় দেবেন বলেই আশা করছেন বাংলাদেশের মানুষ।
দুই.
ক্ষমতা থেকে অবসর নেয়ার পর এই প্রথম মুখ খুলেছেন চারদলীয় জোট মনোনীত সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। 'বাংলাভিশন'কে দেয়া একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে ব্যাপকভাবে দেশে-বিদেশে। ওই সাক্ষাৎকারে সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেছেন, তার নির্দেশেই দুই নেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে কিছু কথা বলে আমি কিছু প্রশ্ন তুলতে চাই। ওয়ান ইলেভেনের মূল পরিকল্পনাকারী কে বা কারা? এই তারিখের আগে ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের ভূমিকা কী ছিল? কেমন ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর দেশবাসীর অজানা নয়। ওয়ান ইলেভেনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি মূলত শুধু নির্বাহী স্বাক্ষরদাতা হিসেবেই আবিভর্ূত হন। শুধু তাই নয়, বলতে গেলে এটাও বলা দরকার এর আগেও রাষ্ট্রপতি শুধুই ছিলেন খালেদা-নিজামী সরকারের পক্ষে নির্বাহী স্বাক্ষরদাতা। দুই নেত্রীকে গ্রেফতার করা হবে সে সিদ্ধান্ত ড. ইয়াজউদ্দিনের ছিল না। সিদ্ধান্ত পত্রে তিনি স্বাক্ষর করেছিলেন মাত্র। তাহলে তিনি হঠাৎ করে আজ এই 'ক্রেডিট' নেয়ার চেষ্টা করছেন কেন? নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য? এভাবে নিরপেক্ষ হওয়া যায়? ওয়ান ইলেভেনের চেতনার ওপর একটা সময় পর্যন্ত আস্থাশীল ছিল দেশের মানুষ। এরপর আর ধোপে টেকেনি। কীভাবে কি হয়েছে তা দেশবাসী আঁচ করেছেন এবং ভবিষ্যতেও জানবেন। এক্ষেত্রে ড. ইয়াজউদ্দিন কখনই মূল নায়ক ছিলেন না হতেও পারবেন না।
বেগম জিয়া ঢাকার একটি সমাবেশে বলেছেন, বাংলাদেশের আকাশে শকুনের আনাগোনা শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বর্তমান সরকারের যোগসাজশও খুঁজেছেন। বাংলাদেশের আকাশে প্রকৃত শকুন কে বা কারা তা কি দেশের মানুষ দেখেননি, দেখছেন না? বর্তমান সরকারের 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার' করার ইসু্যটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্নভাবে সরকার পতনের চেষ্টা শুরু হয়েছে। তা দেশী-বিদেশী সংবাদ মিডিয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা দেশে এখন একটা জরুরি ইসু্য। যা শুরু হলে রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ানোর পাঁয়তারাও করছে একটি মহল। সরকার বলেছে, আগামী আসছে বাজেটে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যও বাজেট বরাদ্দ থাকছে। তা আরও কাঁপিয়ে দিয়েছে রাজাকার-আলবদর এবং তাদের মিত্রদের ভিত। বিভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে তারা সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছে।
পিলখানা হত্যা মামলার সরকারি রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। সমন্বয়ক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বলেছেন, সংসদের মাধ্যমে এ রিপোর্ট দেশবাসীকে জানাবার কথা ভাবছে সরকার। তিনি আরও বলেছেন, সেনাবাহিনীর নিজস্ব রিপোর্ট তাদের কাছেই থাকবে। হাঁ, এটা ঠিক সরকারি রিপোর্টের একটা গোপনীয়তা থাকে। যতটুকু জানানো সম্ভব ততটুকুই দেশবাসীকে জানানো উচিত। তবে কথা হচ্ছে, এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডে যে কালো শক্তির নেপথ্য সহযোগিতা ছিল তাদের নাম দেশবাসীকে জানানো হোক। এরা সরকারি পক্ষের হোক আর বেসরকারি পক্ষেরই হোক। লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ, কাপড়ে মুখ ঢাকা জওয়ানরা কি প্রতীক বহন করছিল তাও জানতে চায় দেশবাসী। মনে রাখতে হবে এই হত্যাকাণ্ডের 'গডফাদার'দের শায়েস্তা করতে না পারলে এর পুনরাবৃত্তি আরও মারাত্মক হতে পারে। জাতি আর তেমন কিছু দেখতে চায় না।
নিউইয়র্ক, ২৭ মে ২০০৯
-------------------------------------------------------------------
দৈনিক সংবাদ।ঢাকা। ২৯ মে ২০০৯ শুক্রবার প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০০৯ রাত ৯:০৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নজরুলের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আমার গাওয়া ৩টি নজরুল গীতি শেয়ার করলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ২:১৩

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে এক গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন স্বাধীনতা ও সাম্যের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেট্রোরেল পেয়েছি অথচ হলি আর্টিজানে নিহত জাপানিজদের ভুলে গেছি

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১১

জাপানে লেখাপড়া করেছেন এমন একজনের কাছে গল্পটা শোনা৷ তিনি জাপানে মাস্টার্স করেছিলেন৷ এ কারণে তার অনেক জাপানিজ বন্ধু-বান্ধব জুটে যায়৷ জাপান থেকে চলে আসার পরেও জাপানি বন্ধুদের সাথে তার যোগাযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধে নিহত মনোজ দা’র বাবা

লিখেছেন প্রামানিক, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৭১ সালের এপ্রিলের ছব্বিশ তারিখ। দেশে তখন ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। উচ্চ শিক্ষিত এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের নিয়েই বেশি সমস্যা। তাদেরকে খুঁজে খুঁজে ধরে নিয়ে হত্যা করছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিয়ে থেতে ভাল্লাগে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯

আমার বিয়ে বাড়ির খাবার খেতে ভালো লাগে। আমাকে কেউ বিয়ের দাওয়াত দিলে আমার খুসি লাগে। বিয়ের দিন আমি সেজে গুজে বিয়ে বাড়িতে আয়োজন করা খাবার থেতে যাই। আমাদের এলাকায় বর্তমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

উসমানীয় সাম্রাজ্যের উসমান এখন বাংলাদেশে

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০



জনপ্রিয় ''কুরুলুস উসমান'' সিরিজের নায়ক Burak Ozcivit এখন বাংলাদেশে। বিগত কয়েক বছর ধরে তার্কির অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন সুলতানদের নিয়ে নির্মিত সিরিজগুলো বিশ্বব্যপী বেশ সারা ফেলেছে। মুসলিমদের মাঝেতো বটেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×