somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভর্তি সংকটের একই কাহিনী

২৯ শে মে, ২০০৯ রাত ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতি বছরই এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের হুল্লোড় আনন্দের ছবি ছাপানোর পরদিন বা তার পর দিন সেই দুঃসংবাদটা থাকবেই। এবারো তার ব্যতিক্রম হওয়ার কোন কারণ ঘটেনি। যারা পাশ করেছে তারা তো বটেই এমনকি যারা গ্রেডের সবচেয়ে ওপরের সারিতে তাদের মধ্যেও এতজন উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির সুযোগ পাবে না। এবছর ভর্তি হতে না পারার শোকটা নাকি সামলাতে হবে ৭৪ হাজার ৮৭৮ জনকে।
আসন বাড়িয়ে আর ডাবল শিফট করে জায়গা করে দেয়া হবে সব এসএসসি পাশ ছাত্রদের, বলেছে সরকার। যেন বা হঠাৎ করেই জানা গেল এই সমস্যাটার কথা। জেনেই এর চেয়ে তড়িত পদক্ষেপ আর কিছু হতে পারে না। কলেজগুলোতে আসন বাড়ানো যেন এক আদেশের ব্যাপারমাত্র। এতে ভুক্তভোগীরা লাভবান হোক বা না হোক, সরকারি ছাত্র সংগঠনের স্থানীয় কেউকেটারা নিশ্চয়ই ভর্তি বাণিজ্যে দ্বিগুন লাভের আশায় বেশ নড়েচড়ে বসেছে।

সমস্যাটা তো একদিনের নয়। প্রতি বছরের সাধারণ খবর। কিন্তু সরকারগুলো আসলেই কোন উদ্যোগ নিয়েছিল কি এসবের সমাধানের? প্রশ্ন এলেই সরকারগুলো এ ওর দিকে আঙ্গুল তুলে দেবে। এখন প্রতি বছর ফলাফল প্রকাশের এই নির্দিষ্ট সময়ে কেবল হা পিত্যেশ না করে যদি কোন পরিকল্পনার কথা শোনা যেত সরকারের তরফ থেকে, তাহলে সমস্যা সমাধানের আন্তরিকতাটা বোঝা যেত।
পরিকল্পনা নিতে হলে অবশ্যকীয় যে সব প্রশ্ন উঠবে সেগুলো হল- প্রতিটি জেলার সরকারি কলেজগুলোতে দুই শিফট চালু করতে হলে অন্তত কতজন অতিরিক্ত শিক্ষক দরকার হবে? সে শিক্ষকদের কতদিনের মধ্যে নিয়োগ দেয়া যাবে? মোট কতটি কলেজে দুই শিফট চালু করা যাবে এবং তার পরে আর কতটি কলেজ নতুন করে নির্মান করতে হবে? নির্মাণ কাজ শেষ করতে অন্তত কত মাস বা বছর সময় লাগবে এবং আসছে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ থাকবে কি না? ততদিনে বিকল্প ব্যবস্থা কি হতে পারে?
এ প্রশ্নগুলোর উত্তরের বদলে যদি কেবল আশ্বাসের হুংকার শোনা যায় তাতে বিশ্বাস রাখা মুশকিল হবে।

আশ্বাসে বিশ্বাস রাখা কেন দুরূহ হয়ে যাচ্ছে সেটা বিস্তারিত বলা বাহুল্য। সরকার বদল হয়, দলগুলোর সরকারে যাওয়া নিয়ে বিস্তর ঝগড়া বিবাদ হয়; কিন্তু বিস্ময়করভাবে কিছু ব্যবস্থা একই রকম রয়ে যায়। যেন বা একই নীতিতে চলবেন বলে এই সব ক্ষমতাধর দলগুলো কোথাও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা তো অনেক বড় ব্যাপার, এই এসএসসি পরবর্তী সংকটের সাথে যুক্ত বিষয়গুলো দেখলেও সেটা বেশ মনে হয়। যেমন, মাধ্যমিক স্কুল আর উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের সংখ্যার মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। স্কুল আছে ১৪৮৯৬ টি আর কলেজ ১৯০৫ টি। ১৫ হাজার স্কুলের ছাত্রদের জায়গা যে দুই হাজার কলেজে হবে না সেটা বুঝতে হলে তো অনেক পন্ডিত হতে হয় না। তার ওপর উচ্চ মাধ্যমিকের পড়া আরও নিবিড় মনযোগ দাবি করে। এ স্তরে ছাত্র শিক্ষক অনুপাত অবশ্যই মাধ্যমিকের চেয়ে কম হবে। লাইব্রেরি ল্যাবরেটরি সুবিধা আরো বাড়বে। তবেই এই স্তরের ছাত্র উচ্চ শিক্ষার জন্য নিজের ভিত্তিটা মজবুত করতে পারবে। কিন্তু কলেজগুলোতে সে পরিস্থিতি নেই। সে পরিস্থিতি তৈরির কোন পরিকল্পনাও সরকারের তরফ থেকে শোনা যাচ্ছে না।

সরকার তার নীতি আর পরিকল্পনা কিভাবে তৈরি করে? যদি এমন হত দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদসহ ছাত্র-শিক্ষকদের কথা শুনে, তাদের মতামত নিয়ে, বাস্তব পরিস্থিতি যাচাই করে পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে তা হলে বিষয় দাঁড়ায় এক রকম। আর তা না করে যদি বিদেশী টাকার শর্তের কাছে জিম্মি হয়ে অন্ধের মত পরিকল্পনা নেয়া হয় তা হলে আসবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ফল। মুশকিল হচ্ছে সরকারগুলো দ্বিতীয় পথে হাঁটছে। কিভাবে?

এডিবি এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নেয়া SESDP- (Secondary Education Sector Development Plan) এর আওতায় চলছে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা নিয়ে যাবতীয় পরিকল্পনা গ্রহন। পাঠ্যপুস্তক বেসরকারীকরণ, উদ্ভট ধরণের একমুখী শিক্ষার রূপরেখা, অবাস্তব স্কুলভিত্তিক মূল্যায়ন পরিকল্পনা- এসবই ঐ প্রকল্পের অবদান। ৯২ জন বিদেশী কনসালটেন্ট মিলে এনসিটিবি'র জন্য আধুনিক কারিকুলামের নক্সা তৈরি করছেন।

যদি সত্যিকার অর্থে ছাত্র শিক্ষকদের উদ্বেগ-অনিশ্চয়তা সরকারকে নাড়া দেয় তাহলে নিশ্চয়ই সে আশু ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগুবে এবং সেটি জনসমক্ষে প্রকাশও করবে। জনগণের জন্যও সে সুযোগ রাখবে পরিকল্পনায় অংশ নেয়ার।





সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:১৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×