somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতবর্ষে মুসলমানদের চেপে রাখা ইতিহাস !! - ৯ (এক হাতে অস্ত্র ও অপর হাতে কুরআন , কতটুকু সত্যি ?)

২৭ শে মে, ২০০৯ দুপুর ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শান্তির ধর্ম ইসলাম কি করে বলতে পারে এক হাতে তরবারী অন্য হাতে কুরআন নিয়ে ধর্ম প্রচার করতে ? আমাদের পূর্ব আলোচনা থেকে যতদূর বোঝা গেল তাতে ধরে নেওয়া যায়, ইসলাম যারা গ্রহণ করেছিলেন বা এখনো করছেন তা শুধু তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে বা নীতির আকর্ষণেই ।

ঐতিহাসিক সুরজিৎ দাসগুপ্ত লিখেছেন, "আমরা দেখেছি যে মালবার উপকূলে ইসলাম ধর্মের উৎপত্তির আগে থেকেই আরব বণিকদের বসতি গড়ে উঠেছিল, বাণিজ্যের সমৃদ্ধির জন্য শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখা তারা বিশেষ জরুরী মনে করত এবং দেশের ভারতীয় শাসকদের এ ব্যাপারে সাহায্য করত । স্হানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে আরব বাণিকদের অসদ্ভাবের কোন সাক্ষ্য পাওয়া যায় না । এর থেকে ধরে নেওয়া যায় যে, নিতান্ত বাস্তব কারণেই উভয়ের মধ্যে সদ্ভাব ও সম্প্রীতি ছিল ।পরে এই আরবরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে । তখন থেকে তারা পরিচিত হয় মুসলমান বলে । " শ্রী দাসগুপ্ত আরো লেখেন - " আরব বণিকরা যখন ইসলাম গ্রহণ করে এবং সেই ইসলামকে কেরালায় নিয়ে আসে, কেরালাস্হিত তাদের পরিবার বর্গের মধ্যে ইসলাম প্রচার করে তখন এ বণিকদের স্হানীয় কর্মচারীরাও , যাদের একটা বড় অংশ বণিকদের জন্য কায়িক শ্রম করত, ইসলামে আদর্শ ও বক্তব্য সম্পর্কে জানতে পারে । তারা জানতে পারে এমন এক শাস্ত্রের কথা, যাতে বলা হয়েছে - মানুষকে আলাদা জাতিতে জন্ম দেওয়া হয়েছে বটে কিন্তু জন্ম দিয়ে নয়, মানুষের বিচার হয় তার স্বভাব -চরিত্র দিয়ে । বর্ণভেদ প্রথায় জর্জরিত কেরালার জনগণ ইসলাম ধর্মের মধ্যে মানুষ হিসেবে বাচার ডাক শুনতে পেল ।"

শ্রীগুপ্ত পরে আরও লিখেছেন, " ব্রাক্ষণ্য ধর্মের ব্যবহারিক দিকগুলোর চাপে কেরালার জনসাধারণ যখন মানুষ হিসেবে নিজেদের পরিচয় ভুলতে বসেছে তখন ইসলাম ধর্মের আগমন ও আহ্বান । এই আহ্বানে তারা প্রচন্ড উৎসাহে সাড়া দিল এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে শুরু করল । 'তুহফাতুল মাজাহিদিন' এর লেখক জৈনুদ্দিন লিখেছেন, " যদি কোন হিন্দু মুসলমান হতো তাহলে অন্যরা তাকে এই (নিম্নবর্ণে জন্মের) কারণে ঘৃণা করত না, অন্য মুসলিমদের সঙ্গে যে রকম বন্ধুত্ব নিয়ে মিশত, তার সঙ্গেও সেই ভাবে মিশত ।' মানুষের মূল্য পাবে, সমাজে মানুষের মতো ব্যবহার পাবে - এটা ছিল ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রধান কারণ ।" [দ্রঃ দাশগুপ্তের ভারতবর্ষ ও ইসলাম, পৃষ্ঠা ১২৭-১২৮]

অত্যন্ত মূল্যবান তথ্যেপলব্ধি করে এটা ধরা যায় যে, এক হাতে অস্ত্র অন্য হাতে শাস্ত্র নিয়ে বলপ্রয়োগের কথাটি মুসলিম জাতির প্রতি অন্যায় প্রয়োগ মাত্র । এখানে একটা প্রশ্ন আসতে পারে - তাহলে ঐ নিয়ম অব্যাহত থাকলে কেরালা ও বাংলায় সমস্ত মানুষ মুসলমান হয়ে গেলেন না কেন ? তার একাধিক উত্তরের অন্যতম সদুত্তর হলো, এই বাংলায় শ্রীকৃষ্ঞ চৈতন্যের আর্বিভাবে ঐ স্রোত থেমে যায় । তিনি ইসলাম ধর্মের মূলবস্তু একেশ্বরবাদ আর সামাজিক সহজ স্বাভাবিক নিয়মনীতি সামনে রেখে মতবাদ আনেন সেটাকে অনুন্নত অবহেলিতরা ইসলামের বিকল্প বলে মনে করে ইসলাম গ্রহণ না করেও রেহাই পাওয়ার রাস্তা পেয়ে যান । তেমনি কেরালাতে শঙ্করাচার্যের আর্বিভাব হয় । তিনিও ইসলাম ধর্ম সামনে রেখে সহজ মতবাদ প্রচার করেন এবং বহু দেবদেবী পুজোর বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন ।

ঐতিহাসিক দাসগুপ্ত আরো লিখেছেন , " বহু দেবদেবীর পূজা মিথ্যা এবং ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় এ কথাটা সমগ্র ভারতীয় দর্শনের ইতিহাসে শঙ্করাচার্য যেমন অমোঘরূপে ঘোষণা করেন তেমনটি তার আগে ও পরে কেউ করেন নি । তার ঐ আপসহীন একেশ্বরবাদ ইসলাম ধর্মের কথাই স্বরণ করিয়ে দেয় ।......শঙ্করাচার্য ঐ সুনিশ্চিত একেশ্বরবাদ পেলেন কোথা থেকে ? সঙ্গত কারণেই সন্দেহ হয় যে, এই সরল ও সুদৃঢ় একেশ্বরবাদ শঙ্করাচার্য ইসলাম হতেই পেয়েছিলেন । ....শঙ্করাচার্য কথিত ঈশ্বরের সঙ্গে ইসলামের বর্ণিত আল্লাহর ভেদ নেই, অর্ন্তনিহিত সত্যে উভয়েই এক । " [দ্র ঐ পুস্তকের পৃষ্ঠা ১২৮,১২৯]

যদি এই কথাটি প্রামাণ্য ও সত্য হয় তাহলে চৈতন্য ও শঙ্করাচার্যের কথা মনে করে বর্হিভারত হতে ইসলাম আগমন তাহলে ইসলাম ধর্ম ও ধর্মবলম্বীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ক্রোধ এই দুটোর মধ্যে কোনটা সংযু্ক্ত হবে ?

হয়তো মুসলিম অভিযানে বা কোন মুসলিম চরিত্রের প্রভাবে দলে দলে আকস্কিভাবে ভারতীয়রা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে । আবার যখন নানা কারণ, যথা ধর্মের প্রতি পূর্ব মমতা অথবা স্বার্থ পূরণে ব্যর্থতা ইত্যাদির জন্য হিন্দু ধর্মে প্রত্যাবর্তন করতে চাইলে সেই নওমুসলিমদের আর হিন্দু ধর্মে স্হান দেওয়া যেত না ।

ব্রাক্ষণ্য শক্তি ভারতের বৌদ্ধদের প্রতি এত বেশি অত্যাচার করত যা অতীব দুঃখের । বৌদ্ধরা মাথা মুন্ডন বা নেড়া হতেন । অত্যাচার যখন সহ্য সীমা অতিক্রম করে তখন তখন তারা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন । বৌদ্ধদের বলা হতো 'নেড়ে' , তাই মুসলমানদেরকে অনেক অশিক্ষিত ও অজ্ঞ লোকেরা নেড়ে বলে থাকেন । এই নেড়ে কথাটি যতদিন থাকবে ততদিন ভারতীয় প্রাচীন হিন্দুদের বৌদ্ধদের প্রতি অত্যাচারের ইতিহাসকে জীবন্ত করে রাখার শামিল হবে ।

শুধু বৌদ্ধরা নন ভারতে আর একটা বিরাট জাতি জৈন । তারাও অত্যাচারের বন্যায় ভেসে গেছেন এবং হয় মুসলমান হয়েছেন অথবা মৃত্যুবরণ করেছেন ।

শ্রীদাসগুপ্ত বলেন, "বাংলার বৌদ্ধের মতো দক্ষিণ ভারতের জৈনরাও রক্ষণশীল শৈব হিন্দুদের হাতে নিপীড়িত হয় এবং একবার একদিনে আট হাজার জৈনকে শূলে হত্যা করার কথা তামিল পুরাণেই উল্লিখিত হয়েছে । "

পুরোহিত বা ব্রাক্ষণ্যবাদের কথা বলতে গিয়ে ঐতিহাসিক দাশগুপ্ত লেখেন, " শুদ্রকে স্পর্শ করলে সবস্ত্র স্নান ও উপবাসে শুদ্ধির প্রথাও প্রচলিত করা হয় । চন্ডাল জাতিকে প্রাচীন স্মৃতিকারগণও অস্পৃশ্য বলে চিহ্নিত করেছিলেন, কিন্তু এ কালের সমাজপতিরাই আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে ঘোষণা করেছিলেন যে, চন্ডালকে দেখা বা তার সঙ্গে কথা বলা বা তার ছায়া মাড়ানো প্রভৃতিও প্রায়শ্চিত্তযোগ্য পাতক ! " [দ্রঃ ঐ, ৫২ পৃষ্ঠা]

[চলবে]

সূত্রঃ চেপে রাখা ইতিহাস, গোলাম আহমদ মোর্তজা, মদীনা পাবলিকেশন্স ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০০৯ দুপুর ১:৫৮
৯টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×