somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হজ্বের সেই দিনগুলো - ৭ম পর্ব

২৬ শে মে, ২০০৯ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মসজিদে নব্বীর ভেতরে প্রবেশের সাথে সাথে এক অনাবিল শান্তিতে যেন সমস্ত হৃদয় ভরে উঠলো। একেতো সম্পূর্ন মসজিদটি কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আর সেইসাথে যোগ হয়েছে মনের ভাবালুতা। মসজিদের অভ্যন্তরে বিশাল থামগুলো দাড়িয়ে একদিকে যেমন স্হাপত্যকীর্তির নিদর্শন বহন করে চলেছে।



অন্যদিকে যেন কালের স্বাক্ষী হয়ে বছরের পর বছর দাড়িয়ে আগলে রেখেছে রাসুলের এই প্রিয় মসজিদকে । প্রবেশ পথে ঢুকতে দুধারে দাঁড়িয়ে ছিলো দুজন প্রহরী যাদের কাজ মূলত মসজিদের অভ্যন্তরে কেউ যেন খাবার বা ব্যাগে ভরে কোন জিনিষ,ক্যামেরা বা কাপড়চোপর ভেতরে না নিতে পারে । অবশ্য কেউ যদি জুতা রাখার ব্যাগ নিয়ে যায় সেক্ষেত্রে তারা নিষেধ করেনা ।



প্রবেশ দ্বার থেকে যে পথ ধরে মুসল্লীরা মসজিদে প্রবেশ করে ,মসজিদের অভ্যন্তরে সেই পথের দুধারে রাখা আছে সারি সারি প্লাস্টিকের ড্রাম সদৃশ্য কনটেইনার।এসব কনটেইনারে আলাদা করে হালকা গরম এবং শীতল জমজমের পানি রাখা আছে ।ওয়ান টাইম ব্যবহারের জন্য প্লাস্টিকের গ্লাসের জন্য পাশেই আছে সুন্দর হোল্ডার । এছাড়া সমগ্র মসজিদের মেঝে শুধু চলাচলের পথ ব্যাতীত মনোরম ডিজাইনের লাল কার্পেটে আচ্ছাদিত। একমাত্র রিয়াদুস জান্নাত বা বেহেশতের টুকরো বলে চিন্হিত স্হানটি সবুজ গালিচায় মোড়া।যার অবস্থান মহানবী ( সা: ) রোজা মোবারকের ঠিক পাশেই।এই স্থানের বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে ।




মসজিদের সবচেয়ে মন কাড়ে যে অংশটি সেটা হল গোল্ড প্লেটেড বিশাল আকারের অসংখ্য ঝাড়বাতি । এগুলোর আলোয় মসজিদের অভ্যন্তরে যেন ঝলমল করছে সর্বদা । কিন্তু অবাক হবার বিষয় যে এত আলোর সমাহারের পরও মসজিদের অভ্যন্তরে এক ধরনের স্নিগ্ধভাব সর্বদা বিরাজমান।



মসজিদের প্রবেশগেটের বিশাল থামে কিছু অংশ সোনার কারুকাজের বৈচিত্রতা সমান নজর কাড়ে আগত মুসল্লীদের। এছাড়া মসজিদের অভ্যন্তরে অসংখ্য থাম বা পিলার গুলো পিতলে মোড়ানো যার গায়ে ঝাড়বাতির বিচ্ছুরিত আলোর প্রতিফলন মসজিদের অভ্যন্তরে আলোর পরিমান বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে



আমরা সদলবলে সবাই একসাথে তাড়াতাড়ি এক সুবিধাজনক জায়গায় বসে পড়লাম । দলে আমরা কজন যারা নতুন তারা তখন ও এক মোহাচ্ছন্ন অবস্থায় চারিদিক তাকিয়ে দেখছিলাম। আর মনে তখন খেলা করছিলো অনেক কিছু। একদিকে বিস্ময় কাজ করছিলো স্হাপত্যশৈলী অবলোকন করে । অন্যদিকে অসম্ভব ভাল লাগায় আচ্ছন্ন ছিলাম এইভেবে যে অবশেষে আল্লাহপাক তার প্রিয় বন্ধুর শেষ বিশ্রামস্থল এবং প্রিয় মসজিদে নব্বীতে আমাকে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন এই ভেবে । ভাবনার সূতা ছিঁড়ে ভোরের সুবেহ সাদিকের আলো ফোটার সাথে সাথে করুন সুরে অথচ ভরাট গলায় সুললিত কন্ঠে মুয়াজ্জিন আযান দিলো । সমস্ত মসজিদের ভেতরে সে এক অদ্ভুত পরিবেশের সৃষ্টি হলো আযানের শব্দগুলো দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে মনে এক অসম্ভব ভালো লাগার আবেশ তৈরী করলো ।



নামাজ পড়ে প্রথম দিন সকালে আমরা সদলবলে বেরিয়ে আসলাম মসজিদ থেকে । ভোরের আলো তখন ফুটে উঠেছে । সকালবেলার আলোতে ভাল করে লক্ষ্য করলাম এই প্রথম মদীনা শহরকে। বিশাল চওড়া রাস্তা গুনে দেখলাম আট লেনের আর রাস্তার পাশে ফুটপাত দিয়েই মনে হয় দুই লেনে গাড়ি চলাচল করতে পারবে ।অবশ্য এই বিশাল ফুটপাত বছরের বেশীর ভাগ সময়ে খালি পড়ে থাকলেও হজ্বের সময় এর প্রয়োজনীতা উপলদ্ধি করা যায়।



আমাদের গেস্ট হাউসটা ছিলো মসজিদে নব্বী থাকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। তাই যাতায়তেরর সময় খুব একটা বেগ পেতে হয়নি ।বরং নামাজ পড়তে আসা যাওয়ার পথে নজরে পড়তো নানা দৃশ্য । যে এলাকায় আমাদের গেস্টহাউসটা ছিলো তার আশাপাশে জমজম হোটেল,ঢাকা হোটেল নামে প্রায় গোটা দশেক বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট ছিলো।



আমরা মদীনায় থাকাকালীন সময়ে একটি জুম্মা পেয়েছিলাম সেদিন দেখলাম এলাকাটি হয়ে উঠেছিলো বাংলাদেশীদের মিলনমেলা। অনেকই সেদিন মূলত এসেছিলো হজ্বে আসা তাদের পরিচিত বা আত্মীয়দের সাথে দেখার জন্য ।

মসজিদে নব্বীর প্রবেশের ঠিক বাইরে অর্থাৎ এর চারধারে মসজিদ এলাকাসংলগ্ন স্থানজুড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পাচঁতারা হোটেলের অবস্থান ।এই হোটেলগুলোর আন্ডারগ্রাউন্ডে আবার গড়ে উঠেছে চোখ ধাধাঁনো শপিংমল।





এই মলগুলোতে সকল ধরনের দ্রব্যসামগ্রীর সমাহার লক্ষ্য করা যায় । কি নেই এখানে খাবার থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্স ,পোশাক আশাক ,গহনাগাটির দোকান তাছাড়া আছে হাজীদের আকৃষ্ট করার জন্য নানা ডিজাইনের জায়নামাজ ,তাসবীহ এছাড়া ইসলামিক কালিওগ্রাফির উপর ডেকোরেশেনের কাজ পাথড়,চামড়া এবং নানা ধরনের ধাতুর উপর । এবং তাদের দামও বেশ চড়া ছিলো।



আমাদের স্বল্প বাজেটে আমরা আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলাম আমরা মূলত দেশে আত্মীয়য়স্বজনের জন্য জায়নামাজ আর তাসবীহ কিনবো আর অবশিষ্ট টাকা থাকলে হয়তোবা দেশে ফেরার আগে কিছু সোনার হালকা কিছু অলংকার কিনবো স্ত্রীর জন্য।

এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল যেহেতু আমরা হজ্বের নিয়্যতে মূলত এখানে আসা তাই পারতপক্ষে আমরা খুব কমই এসেছিলাম এই শপিংমল গুলো দেখতে ।

চলবে....।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০০৯ বিকাল ৩:০৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×