somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালো থেকো মা, আনন্দে থেকো.................. শুভ জন্মদিন!

২৩ শে মে, ২০০৯ সকাল ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ থেকে দশ বছর আগে যে দেবদূতীটি আমাদের ঘরে এসেছিল তার নাম রেখেছি ’সূশ্রী’। আমাদের প্রথম সন্তান। যদিও তার গালভরা একটা ধর্মীয় নাম আছে কিন্তু তা স্কুল এবং অফিসিয়াল কাজ ছাড়া আপাতত আর কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছেনা। বড়ই আলাভোলা, ভীষণ অভিমানী, একটুতেই রেগে যায়, আর রেগে গেলেই ধুপ ধুপ পা ফেলে এক রুম থেকে অন্য রুমে। যখনই সে রাগ করে আমরা বলি, ঐ শুরু হলো ধুপ ধাপ। মেয়ে হাসে। আবার ভাল হতেও একমিনিট। একমাথা ঘন কোঁকড়া চুল, বন্ধুরা বলে ’ম্যাগী নুডলস’। তাতে আমার মেয়ে ভীষণ তিতিবিরক্ত, ক্ষতবিক্ষত। আমরা হাসি, পরামর্শ দেই তাদেরকেও কি কি নামে ডাকতে হবে। মেয়ে আরো ক্ষেপে বলে, ’আমি কেন ওদেরকে এসব কথা বলতে যাবো!’। এই আমাদের বড় মেয়ে।

দিন কেটে যাচ্ছে, মাস, বছরগুলো। ১০টা বছর কেটে গেছে। আমাদের শিশু মেয়েটি আস্তে আস্তে কিশোরী হয়ে যাচ্ছে।

মনে পড়ে, যেদিন সে জন্ম নিলো, সেদিন আমাদের কি টেনশন। তারিখ ঠিক আছে কিন্তু ওর মায়ের কোন ব্যথা নেই। হাসপাতালে দুপুর বেলা ডাক্তার একটা কি যেন ইঞ্জেকশন দিলেন ব্যথা ওঠার জন্য কিন্তু সব হজম। আমার বৌ হাসে আমার দিকে তাকিয়ে, এদিকে আমি ঘেমে যাচ্ছি। আমার উদ্বিগ্নতা বোধহয় ডাক্তার বুঝলেন। নার্সকে বললেন সাউন্ড মেশিন আনতে। নার্স সেই সাউন্ড মেশিন দিয়ে আমাকে শুনিয়ে দিলো বাচ্চার হার্টবিট। রাত প্রায় সাড়ে আটটায় তিনি এলেন মায়ের পেট চিরে (আক্ষরিক অর্থেই)।

ওর বয়স যখন দু'বছর তখন একবার আমরা গেলাম সুন্দরবনে। লঞ্চে করে আরও অনেক পর্যটকের সঙ্গে। যে ক'জন বাচ্চা ছিল সে তাদের মধ্যে সবার ছোট, এজন্য তার আদর রাখার জায়গা নেই। ফেরার পথে এক রাতে সবাই লঞ্চের ডাইনিং রুমে গল্প করছি হঠাৎ দেখি সুশ্রী নেই। তার মার কাছে নেই, নানু-নানার কাছে নেই, সারেং ছাড়া লঞ্চের সবাই দিগবিদিক খোঁজাখুজি করছে, লঞ্চ থামানোর চিন্তা চলছে। মায়ে কান্দে, বাপে কান্দে, কান্দে দেশের লোক টাইপ অবস্থা। হঠাৎ দেখি মেয়ে খেলছে লঞ্চের ডাইনিং রুমেই প্লেট বাসনের তাকের কাছে আধো আলো আঁধারিতে। এতক্ষণে সবার জানে পানি আসলো। কাউকে কাউকে চোখের পানিও মুছতে দেখেছি আমি। আমরা এখনো এ গল্পটা করি আমাদের বাসায় আর খুবই কৃতজ্ঞভাবে মনে করি সেই সব সহযাত্রীদের যারা আমার মেয়েকে অনেক ভালবেসেছিলেন।

যখন ওর প্রায় আড়াই বছর বয়স, তখন আড়াই মাসের জন্য তার কাছ থেকে আমি দুরে চলে গিয়েছিলাম। এই বিচ্ছিন্নতার সময়ে তার সাথে আমার কথাবার্তাও তেমন হতোনা। যেদিন ফিরে আসি সেদিন এয়ারপোর্টে সে এসেছিল তার মা ও মামার সাথে বাবাকে রিসিভ করতে। আমি কাঁচের ওপাশে, আর এপাশে যতই ওর মা আমাকে দেখায় কিন্তু ওতো আর আমাকে চেনেনা। অনেক দিনের অদর্শনে একটু লজ্জাও পাচ্ছিল কিনা কে জানে।

আমাদের মেয়েগুলো বড় হয়ে যাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে ভাবি পরিবর্তনের সময়গুলো। ওরা দু'বোন, পাঁচ বছরের বড় ছোট। মা ওদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। বাবা রাগী হলেও আপন মানুষ। কিন্তু মাঝে মাঝেই মা বাবার সাথে না ঘুমুলে যে তার চলেনা। এখনো যে টিভি দেখতে হলে বাবার হাতটা জড়িয়ে রাখতে হয়। রাখ জড়িয়ে ধরে রাখ। শক্ত করে ধরে রাখ, ছাড়িস না। বড় হয়ে ওঠ তবে নিজের আপনদের জড়িয়ে। নিজের পায়ের নিচে শক্ত জমি তৈরী করে নে। আজ যাদের ভালবেসে জড়িয়ে ধরেছিস, কাল হয়ে ওঠ তাদের জন্য শক্ত অবলম্বন। তোর জন্ম দিনে তোর বাবার কাছ থেকে এটুকু দোয়াই উপহার।

আজ ২৩ মে সুশ্রী-র জন্মদিন। ভালো থাকো মা। আনন্দে থাকো। শুভ জন্মদিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৮
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×