somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খেলার নাম সুমো

২২ শে মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাপানিদের অত্যন্ত জনপ্রিয় এক খেলা সুমো। এই সুমো খেলার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক সংস্কার ও ধর্মীয় চিন্তাধারা। তারা মনে করে সুমো খেলা আয়োজন করা হলে দেশে বেশি বেশি ফসল ফলে। কে জানে, জাপানিজদের এত আয়-উন্নতি সুমোর কল্যানেই হয়েছে কিনা?
সুমো যোদ্ধারা শৃঙ্খলাবদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করে। আর জাপানিদের নিজস্ব "শিন্তো" ধর্মের মূল কথাও তাই- "নিয়ন্ত্রিত জীবন"। তাই সুমো চর্চা আর ধর্ম পালন তাদের কাছে এক ব্যাপার। সুমো খেলায়াড়রা ধর্মীয় ও সামাজিক দিক থেকেও সম্মানিত ব্যক্তি। চাকরি ক্ষেত্রে সুমোয় পারদর্শিতা বিশেষ গুন হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রতিবছর সুমো অ্যাসোসিয়েশন বিশাল উৎসবের মধ্যে দিয়ে সুমো খেলার আয়োজন করে। জাতীয় টিভি চ্যানেলে এর সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সুমো শুধু খেলা নয়, জাপানিদের ব্ড় ধর্মীয় উৎসবও।
সুমো পৃথিবীর প্রাচীন খেলাগুলোর একটি। সপ্তম খ্রিস্টাব্দে এর উদ্ভব। প্রচলিত আছে, ৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে সিওয়া রাজা হতে পেরেছিলেন সুমো খেলায় বিশেষ পারদর্শিতার কারনেই। ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই খেলার বিভিন্ন নিয়ম ছিল। কিন্তু ১৬৮০ পর থেকে বর্তমান নিয়মটিই চলে আসছে।
আগেই বলেছি, এটি ধর্মীয় দিক দিয়ে খুবই সম্মানজনক খেলা। তাই খেলার জায়গাটাকেও (দোহিও) এরা অনেক পবিত্র স্থান মনে করে। দোহিওর বেশ ওপরে ঘরের চালার মতো করে রেপ্লিকা ঝোলানো থাকে, সেখানে লেখা থাকে ধর্মীয় বাণী। দোহিওর ব্যাস হয় ১৫ ফুট। খেলার শুরুতে লবন ছিটিয়ে স্থানটিকে পবিত্র করে নেয়া হয়। এরপর জায়গাটিকে ছালাম করে, তবেই দুজন খেলো্যাড় ভেতরে প্রবেশ করে। কিন্তু হেরে গেলে বা জিতে গেলেও এরা কখনো বাধভাঙা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে না, পাছে খেলার পবিত্রতা নস্ট হয়। তবে খেলায় জেতাও কিন্তু অত সোজা নয়। ১৫ দিন ধরে চলে এই খেলা। টানা ১৫ দিন ধরে টিকে থাকাও কম সাধ্যের ব্যাপার নয়। প্রত্যেক প্রতিযোগি ১৫ টি ম্যাচে ১৫ জনের সঙ্গে খেলে। যে বেশি খেলায় জেতে সেই হয় গ্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন বা আকিজুনো। তার জন্য রয়েছে বিপুল সম্মান ও অঢেল পুরস্কার। খেলা পরিচালনার জন্য থাকে একজন গিয়োজি (রেফারি)। আর গিয়োজির সিদ্ধান্তকে অনুমোদন দেওয়ার জন্য দোহিওর বাইরে থাকে পাঁচ সদস্যের গিয়োজি টিম। গিয়োজি ঘন্টা বাজালেই খেলা শুরু হয়ে যায়। প্রতিপক্ষকে ঠেলে, গুঁতিয়ে, ডিগবাজি দিয়ে ফেলে কিংবা দোহিও থেকে বের করে দিতে পারলেই নিশ্চিত জয়। তবে সাবধান, ঘুষি মারা যাবে না, তাহলেই ডিসকোয়ালিফাইড বা অযোগ্য। এভাবে যে সর্বাধিক ম্যাচে জিতবে, সে-ই হবে আকিজুনো।
আকিজুনো বা গ্র্যান্ড চ্যাম্পিয়নের জন্য পুরস্কার হলো দুই টন চাল, এক টন বাদাম-আঙুর-নাশপাতি, চার টন পেঁয়াজসহ নানা কিছু। ম্যাচ জেতা খেলোয়াড়দের জন্যও রয়েছে নানা পুরস্কার।
বিশালাকার দেহের কারনে সুমো খেলোয়াড়দের খুব সহজেই চেনা যায়। আর দ্বিতীয় কারন হলো তাদের স্বল্প পোষাক। এত স্বল্প পোষাক পৃথিবীর আর কোনো খেলায় আছে কিনা সন্দেহ। পুরো উদোম শরীরে কোমরের কাছে বিশেষভাবে বাধা থাকে সিল্কের মোটা বেল্ট। এই বেল্টের নাম মাওয়াশি। বেল্টের সঙ্গে আরও এক টুকরো কাপড় জুড়ে লজ্জাস্থান ঢাকার ব্যবস্থা। দেখতে নেংটির মতো এই পোষাকটাই সুমো কুস্তিগিরদের পোষাক বা জার্সি। লম্বা চুল মাথার পেছনে ওপরে ঝুটির মতো করে বাধা থাকে। একমাত্র গিয়োজির পরনেই থাকে রাজকীয় পোষাক। গলা থেকে পা পর্যন্ত লম্বা আলখেল্লা, স্যান্ডেল, মোজা, বেল্ট দিয়ে সুসজ্জিত পোষাকে খেলার জয়-পরাজয় নির্ধারণ ও ক্লান্ত হয়ে পড়া খেলোয়াড়কে উৎসাহ দেয়া টার কাজ।
সুমো খেলা বিশাল সাধনার ব্যাপার। অন্তত শরীরটা বানাতে তাদের কত কিছু থেকেই না বিরত থাকতে হয়। ধৈর্যের সঙ্গে কেবল খাওয়া, ঘুম ও ব্যায়াম- এই তিনের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে হয়। ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে টানা ১১টা পর্যন্ত চলে ব্যায়াম, অনুশীলন ও যোগাসন। এরপর বিশাল আয়োজন নিয়ে নাশতা। তারপর আবার ঘুম। ঘুম থেকে জেগে শুয়ে, বসে, টিভি দেখে মনকে চাঙ্গা করে নেওয়া। রাতের খাবারের আগ পর্যন্ত আর কোনো পরিশ্রম নেই। আর এভাবেই খেয়ে, শুয়ে ও বসে দেহে ক্যালরি জমা করা আর ধৈর্য ধরে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মধ্যে দিয়ে শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতা অর্জন। ১৫ বছর থেকে শুরু করে ৩০ বছর পর্যন্ত এই খেলা খেলা যায়। ৩০ বছর বয়স হয়ে গেলে খেলা থেকে অবসর নিতে হয় এবং নিজেদের শরীরের ওজন কমিয়ে কেউ সুমো প্রশিক্ষক বা অন্য কাজে নিয়োজিত হয়।
সুমো খেলায় শরীরের ওজনের ওপর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এই কারনে সুমোরা ইচ্ছেমতো নিজেদের ওজন বাড়িয়ে থাকে। ওজনদার শরীর ধরাশায়ী করা প্রতিপক্ষের জন্য কঠিন। গ্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন আকিবোনোর ওজন ছিল ৩৫০ পাউন্ড।
মানসিক দৃঢ়তা বাড়ার জন্য সুমো যোদ্ধাদের নিয়মিত ধ্যান করতে হয়। সেসঙ্গে সম্মান প্রদর্শন, আবেগ নিয়ন্ত্রন, শিষ্টা- এসবের চর্চাও করতে হয়। আর এসব বিচারে সুমো খেলা জাপানিদের কাছে ধর্ম পালনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০০৯ সকাল ৯:৫৮
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×