somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জনগণের স্মারকলিপি

২১ শে মে, ২০০৯ রাত ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আহু (বরাক) নদী মুক্ত কর
টিপাইমুখ বাঁধ বাতিল কর
প্রতি: ভারতের প্রধানমন্ত্রী
১৪ মার্চ, ২০০৭
বাঁধ বিরোধী এবং নদী, পানি ও জীবনের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস।
ড. মনমোহন সিং,
প্রধানমন্ত্রী, ভারত-এর প্রতি
স্মারকলিপি
স্মারকলিপি প্রদান কারী
১. টিপাইমুখ প্রকল্পের বিরোধী একশন কমিটি
২. জিলিয়ানগড়ং ইউনিয়ন
৩. নংবা এলপি গ্রাম কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান সংঘ
৪. জিলিয়ানগড়ং ছাত্র ইউনিয়ন, মণিপুর নংবা এলাকা
৫. টিপাইমুখ বাঁধ দ্বারা আক্রান্ত গ্রামসমূহের কমিটি।

শ্রদ্ধাভাজন মনমোহন সিং,
১৫০০ মেঘাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বহুমুখী পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পটি (টিপাইমুখ বাঁধ) দীর্ঘ আলোচিত একটি বিষয়। আমরা এই স্মারক লিপি স্বাক্ষরকারীগণ আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ১৯৮০ সালের শেষ দিক থেকে বছরের পর বছর টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে এ ধরনের বহু স্মারকলিপি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে প্রদান করা হয়েছে। সেই সব স্মারকলিপির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আহু (বরাক) নদীর উপর টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে জনসাধারণের গভীর উদ্বেগ, অসন্তোষ এবং বাঁধটি দ্ব্যর্থহীনভাবে জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখানের বিষয়টি ভারতে সর্বোচ্চ প্রধান নির্বাহীকে জানানো হয়েছে।
জনাব,
ভারতের মত একটি বৃহত্তর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উন্নয়ন কর্মকান্ড অবশ্যই জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের হতে হবে। জাতির সাধারণ মঙ্গলের তালিকার প্রধান বিষয় হিসেবে তাদের কল্যান অন্তর্ভুক্ত হবে যাদেরকে সর্বোচজ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। ১৪ মার্চ ২০০৭ সালে বাঁধ বিরোধী এবং নদী, পানি ও জীবনের জন্য জনতার আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে ভারতের মণিপুরের তামেনলং জেলার নংবা মহকুমা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক পুইলুয়ান (কুম্বিরল) নামক স্থানে আহু (বরাক) নদী রক্ষার জন্য জনগণের সংহতি অনুষ্ঠান পালিত হয়। জনগণের সেই সংহতি অনুষ্ঠানের জনতার সর্বসম্মত রায় হল এই যে, টিপাইমুখ বহুমুখী পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প জনগণের জন্য নয়। জনগণের দ্বারা নয় এবং তা জনগনের কোন প্রকল্প নয়।আমাদের অতিপ্রিয় বরাক নদীকে রক্ষার জন্য সংহতি অনুষ্ঠানে দূর-দূরান্ত থেকে উপস্থিত জনসাধারণ সেদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছ আমাদের কিংবদন্তিতুল্য বীরদের, জিলিয়ানগড়ং-এর মুরব্বীদের এবং বিশেষত পৌজাদুনাং ও লু রানী গাইদিনলিউদের যাদের জন্ম হয়েছে পুইলুয়ানি গ্রামে। কিংবদন্তিতূল্য মুরব্বীগণ জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। পৌ জাদুনাং ছিলেন জিলিয়ানগড়ং-এর একজন সৈনিক এবং আধ্যাত্মিক নেতা যাকে মণিপুরের জনগণ পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। আর লুগাইদিনলিউ ভারত সরকার কর্তৃক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তার সাহসী সংগ্রামের জন্য। বর্তমানে চরম বৈষম্যমূলক, গণবিরোধী ও প্রকৃতিবিরোধী টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পসহ সব ধরনের নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনে তারাই আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেন এবং পথ দেখান।
৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ আহু (বরাক) নদী হল জিলিয়ানগড়ং-এর আদিবাসী এবং অন্যান্য বহু আদিবাসী ও অ-আদিবাসীসহ এর অববাহিকায় বসবাসরত ভারত ও বাংলাদেশের অগণিত মানুষ ও সম্প্রদায়ের সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের নিরবিচ্ছিন্ন উৎস। এসব এলাকার মানুষ বেঁচে আছে এ নদীকে কেন্দ্র করেই। টিপাইমুখ বাঁধ এই নদীকে গলা টিপে হত্যা করবে; নদীটির সুদীর্ঘ প্রাচীনজ্ঞান ও নির্ভরযোগ্য স্বভাব পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং আমাদেরকে চিরদিনের জন্য দুঃখ-দুর্দশায় নিপতিত করবে। সুতরাং এ প্রকল্প জনগণের জন্য নয়।

বাহ্যিকভাবে প্রকল্পটি কয়েক দশকের উন্নয়ন এবং প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীসহ টেকনিক্যাল পেশাজীবীদের মূল্যায়নের দ্বারা হলেও তা বারংবারই অপরিকল্পিত ও ধ্বংসাত্মক বাঁধ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। প্রকল্পটির পরিবেশ বিষয়ক ছাড়পত্রের জন্য প্রকল্পের প্রস্তাবক প্রতিষ্ঠান উত্তর-পূর্ব বিদ্যুৎ শক্তি কর্পোরেশন লিঃ (নিপকো)-এর আবেদনপত্র ভারতের কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন কমিটি দুই দুইবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। প্রথমবার ২৫ নভেম্বর ২০০৬ সালে এবং পরবর্তীতে ২২ ফেব্রুয়ারী ২০০৭ সালে। নিপকো-এর পরিবেশ বিষয়ক ছাড়পত্রের আবেদনের বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন কমিটি প্রকল্পের মারাত্মক ত্রুটি খুঁজে পায়। এর মধ্যে অনেক ভূল, বিচ্যুতি, ফারাক এবং বৈজ্ঞানিক মানদন্ডের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয় এবং প্রকল্পটিতে ভারত এবং পৃথিবীর বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদগণ কর্তৃক এ ধরনের বিষয়ের ক্ষেত্রে স্বীকৃত সাধারণ মানদন্ডসমূহও পরিপালিত হয় নি। প্রকল্পটিতে পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান করা হয়নি এবং বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক উত্থাপিত বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে, প্রকল্পটি জনগণের দ্বারা করা হয়নি।

জনাব,
প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনে আপনার অস্বীকৃতি এবং সামরিক ও সন্ত্রাসী কায়দায় ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণকে সুপরিকল্পিতভাবে বাদ দিয়ে মণিপুরে অনুষ্ঠিত দু'টি গণশুনানীর আইনগত ও বিধিবদ্ধ যথাযর্থতাকে উপক্ষো করে এবং কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রাণায় কর্তৃক পরিবেশ ও বন বিষয়ক ছাড়পত্র প্রদান না করে ২০০৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে লোকচক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে অত্যন্ত তাড়াহুড়া করে প্রকল্পটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী মি. সুশীলকুমার সিন্ধ। এ সময় তার সাথে ছিলেন কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রী মি. সন্তোষমোহন দেব, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী মি. ওক্লাব ইবোবি এবং নিপকো'র উর্ধ্বতর কর্মকর্তাবৃন্দ।

এটি ছিল জনগণের সুবিধা নিশ্চিত কল্পে উন্নয়ন প্রকল্প সমূহের সুদীর্ঘকাল ব্যাপী প্রতিষ্ঠিত রীতি-নীতি ও শুদ্ধতার উপর এক চরম আঘাত। এটি ছিল জনগণের আবেগ অনুভুতির উপর এক অবৈধ ও আগ্রাসী কর্ম। তাই এ প্রকল্প জনগণের নয়।
উপরে বর্ণিত অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রকল্পটিকে সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থপুষ্ট হিসেবে উপস্থাপন করে ভারত সরকারের সর্বোচ্চ নির্বাহীর দপ্তর বিশেষকে আকর্ষণ প্রদর্শন করতে চাইছে।
আমরা ওই স্মারকলিপি স্মারক্ষরকারীগণ এবং সরকার কর্তৃক ধূর্ততার সাথে চাপিয়ে দেওয়া এ ধরনের একটি অপরিকল্পিত প্রকল্পের বলি হওয়া সকল গ্রামের জনসাধারণ এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

আপনার দপ্তরে অবশ্যই জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটতে হবে এবং জনগণের ইচ্ছা-আকাঙ্খা আপনার দপ্তরকে অবশ্যই পূরণ করতে হবে। আমাদের মুরব্বীরা যেমনটা বলে গেছেন, আমার বিদ্যুৎ আহার করতে পারব না। যেখানে আমাদের মৌলিক অধিকার সমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে, সেখানে আমরা আসলে কতদিন বসে থাকতে পারি? আমরা কখন দেখব যে, আপনি আমাদেরকে আমরা কি বলি দিতে পারি এবং আমাদের কিসে লাভ তা বলতে আসেন নি, বরং আমরা সত্যিকার অর্থে আমাদের ভবিষ্যৎ ও আমাদের ভূখন্ডের জন্য কি চাই তা জানতে এসেছেন? (আমাদের দ্ব্যর্থহীন দাবী) টিপাইমুখ বাঁধ বাতিল করুন, আহু (বরাক) নদীকে মুক্তভাবে প্রবাহিত হতে দিন এবং আমাদের নিজেদের জন্য, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করত আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
১৪ মার্চ ২০০৭

পুইলুয়ান (কুম্বিরোল) গ্রাম আহু (বরাক) নদী
তামেনলং জেলা, মণিপুর, ভারত।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×