somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনুষ্ঠানীকতা নয়, প্রয়োজন নৈতিকতা

২১ শে মে, ২০০৯ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় ধর্মগুলো প্রবর্তনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল যুগের চাহিদার প্রেক্ষিতে ব্যক্তি ও সমাজজীবনকে শুদ্ধ এবং সভ্য করা। এ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রবর্তকররা অবলম্বন হিসেবে নিয়েছিলেন এক কাল্পনীক মহাশক্তিধরের অসীম ক্ষমতাকে। তবে অবলম্বন যাকেই করা হোক না কেন এটা স্বীকার করতে আমার কোন দ্বিধা নেই যে ধর্মের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তিজীবনকে শুদ্ধ এবং শৃংখলাবদ্ধ করা। এ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্রতিটি ধর্মই (তা একেশ্বরবাদী বা বহুশ্বেরবাদীই হোক) তথাকথিত কাল্পনীক সেই মহাশক্তিধরকে খুশি করার পথ অবলম্বন করেছিল। তাকে খুশি করা এবং তাঁর পরিনতিতে সমাজকে সভ্য করার মানসে প্রতিটি ধর্মই দুটি রূপ গ্রহণ করেছিল; যথাঃ আনুষ্ঠানীক আচরণ এবং নৈতিকতার চর্চা। আমার লেখার উদ্দেশ্যকে সরলীকরণের স্বার্থে মহাশক্তিধরকে খুশি করার এ পাথেয় দুটো নিয়ে কিঞ্চিত আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে বোধ করি।

১. আনুষ্ঠানীক আচরণঃ আনুষ্ঠানীক আচরণ বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে স্রষ্টাকে খুশি করার মানসে ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী কর্তৃক স্রষ্টার কাছে নত হওয়া এবং তার প্রার্থনা করা। এর ধরণ হতে পারে নামাজ, রোজা, ব্রত, পুজা, অনশন ইত্যাদি ইত্যাদি। আদতে এটা হচ্ছে নৈতিকতা অর্জনের জন্য একটি পরিকল্পিত রুটিন কর্মপ্রচেষ্টা। আনুষ্ঠানীক আচরণগুলো এ কারণেই প্রবর্তন করা হযেছে যাতে তা পালনের ফাকে ফাকে স্রষ্টাকে খুশি করার জন্য কিছু ভাল কাজ করতে হয় এবং অবিরত এ চেষ্টার মাধ্যমে তা ব্যক্তির অভ্যাসে পরিনত হয়। এখানে নামাজে দাড়িয়ে স্রষ্টার কাছে নত হওয়া বা দেবতাকে ফুল দিয়ে তাঁকে খুশি করা একটি আনুষ্ঠানীক আচরণ মাত্র। মূল লক্ষ্য হচ্ছে নৈতিকতা বা সততা অর্জন।

২. নৈতিকতার চর্চাঃ নৈতিকতার চর্চা বলতে বুঝানো হয়েছে সততা, ন্যয়নিষ্ঠতা, কর্তব্যপরায়নতা, আর্থ-সামাজিক ন্যায়বিচার, পরোপকার, দানশীলতা, ক্ষমাশীলতা ইত্যাদি ইত্যাদির চর্চা এবং প্রয়োগ। ধর্মের মূল উদ্দেশ্য আদতে নৈতিকতার প্রতিষ্ঠাই। আনুষ্ঠানীক আচরণগুলোর প্রবর্তনও কিন্তু নৈতিকতা অর্জনের জন্যেই। মহাশক্তিধরকে এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে কারণ ব্যক্তির উপদেশ হয়তো কম মানুষই শুনবে বা মানবে। এর স্থলে মহাশক্তিধর কেউ থাকলে, তাকে খুশি করতে পারলে বা খারাপ কাজের ফলস্বরূপ তার কাছ থেকে শাস্তির আশংকা থাকলে মানুষ সুশৃংখল হবে এবং সহজেই নৈতিকতার দিকে ধাবিত হবে।

এবার মূল আলোচনায় আসি। পূর্বেই বলেছি ধর্মগুলোর আসল উদ্দেশ্য নৈতিকতার প্রতিষ্ঠা। আনুষ্ঠানীক আচরণগুলো ছিল তা অর্জনের জন্য বাহানা মাত্র। কিন্তু মানুষ এখন কি করছে? তাঁরা কি নৈতিক হচ্ছে? নাকি শুধু আনুষ্ঠানীক ধর্মকেই মানছে? আমার মনে হয় আমার শেষোক্ত পর্যবেক্ষণটির দিকেই বেশিরভাগ মানুষ সায় দিবেন। ধর্মপালনকে এখন মানুষ শুধু একটি আনুষ্ঠানীক আচরণ হিসেবেই গ্রহণ করছে। নৈতিক শিক্ষাগুলোকে এড়িয়ে চলছে সযতনে। ঠিক এই কারণেই আপনি দেখবেন একজন মানুষ নামাজ পড়ার পরও, রোজা রাখার পরও বা দেবতাকে অর্ঘ্য দেবার পরও ঘুষ খাচ্ছে, মিথ্যা কথা বলছে, মানুষকে ঠকাচ্ছে, মানুষকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করছে। কথাগুলো মোটেও বাড়িয়ে বা বানিয়ে বলা নয়। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকেই এগুলো সত্য।

নিবিষ্ট চিত্তে ধর্মপালন করার পরও মানুষ এমন আচরণ কেন করছে? এর একটাই উত্তর, যে মহাশক্তিধরের ভয়ে মানুষ এতোদিন এমন নেতিবাচক আচরণ থেকে দূরে ছিল তাঁর প্রতি বিশ্বাস কিংবা তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে তাঁরা সন্দিহান। শাস্তির ভয় তাদের মাঝে আর বিন্দুমাত্র নেই। আনুষ্ঠানীকভাবে ধর্মপালন করছে শুধুমাত্র এই কারণে যে বাপ-দাদারা তা করে এসেছে এবং তা পালনের মাধ্যমে অন্তত বাহ্যিকভাবে দৃশ্যমান একটা ভাল মানুষের আবরণ গায়ে চড়ানো যায়। এতকিছুর পরও যদি আপনি সেই লোকটির সামনে স্রষ্টা বা ধর্ম সম্পর্কে কোন কটু মন্তব্য করেন বা এগুলো নিয়ে সাধারণ আলোচনার বা বিতর্কের অবতারণা করেন তবে দেখবেন কেমন রুক্ষভাবে সে আপনার দিকে তেড়ে আসছে। শারীরিক লাঞ্চনারও শিকার হতে পারেন। কেন সে বা তাঁরা এমন করে? এর একটাই কারন, ধর্মকে যেকোন মূল্যে টিকিয়ে রাখতে হবে। কেন টিকিয়ে রাখতে তার কিছু কারণ আপনিও জানেন, আমিও জানি। এগুলো নিয়ে আজকে আর আলোচনা নাইবা করলাম।

তবে সত্যি কথা হচ্ছে এই যে ব্যক্তি, সমাজ, দেশ ও সামষ্টিকতার স্বার্থে আমাদের অবশ্যই নৈতিকতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অগ্রগতির পথে এর কোন বিকল্প নেই। আলোচনার প্রেক্ষিতে এটা অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে ধর্মের মাধ্যমে আনুষ্ঠানীকতা অর্জন সম্ভব, নৈতিকতা নয়। এর বিকল্প হিসেবে একটিমাত্র উপায়ই আছে। তা হচ্ছে বিবেকের জাগরণ। মানুষ বিবেকবোধ সম্পন্ন প্রাণী। তাকে ভয় দেখিয়ে নৈতিক হতে বাধ্য করার কোন যৌক্তিকতা নেই বা সম্ভবও নয়। তাকে একমাত্র সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে এবং এর পরিনতিতে বিবেকের জাগরণের মাধ্যমে নৈতিক করার চেষ্টা চালাতে হবে এবং নৈতিকতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০০৯ দুপুর ১২:০১
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×