somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফলের স্বাদে রুশ চুম্বন

২১ শে মে, ২০০৯ সকাল ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আপু দ্যাখ দ্যাখ চেরী- ওমা এখানে চেরী পাওয়া যায়! আরে আপু দ্য--খ কি-উই ও আছে এখানে!! সদ্য উদ্ভোধন হওয়া আগোরায় ঘুরতে গিয়ে বিদেশী ফল দেখে মেয়ে দুটোর এমন আহ্লাদী আর ন্যাকা কথা শুনে গা জ্বলে গেল।অতি সযতনে থরে থরে সাজানো বিদেশী ফলের পাশে আমাদের আমাদের আতা কলা আনারস চালতা যেন লজ্জায় কুকড়ে আছে।আমদানী করা মহার্ঘ সেই ফলের দাম আর দাপটের কাছে এরা যেন অসহায়।
আম কলা আনারসের মত ফল অনেক দেশেই মেলে তবে প্রবাসের বাজারে এইসব ফলের দেখা পেলে এখনো নিকটজনের দেখা পাওয়ার মত উৎফুল্ল হই।
দেড় যুগ আগের কথা বলছি-রুশীয় গ্রীস্মে চেরী তখন যেন আমাদের বড়ই এর মত সহজলভ্য। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দু-চার থোকা পাকা চেরী ছিড়ে নিলেও কেউ ফিরে তাকাত না।বহু কিসিমের আপেল আঙ্গুর নাশপাতি আর মাল্টা সারা বছরই মিলত- কখনো টাটকা কখনো শুকনো কিংবা কাচের জারে প্রিজার্ভ করা। অন্য কোন ফল তখন নজরে পড়ত না খুব একটা।
আমার শহরের সবচে বড় সপিং মলটায় এক সুদৃশ্য কাচের বাক্সে একবার একখানা মাত্র নিঃসঙ্গ আনারস যেটাকে এদের ভাষায় বলে আনানাস সেইটে দেখে চমকে উঠেছিলাম। বাপরে আনারসের কি সৌভাগ্য! বাইরে লেখা ছিল বিক্রির জন্য নহে। তারমানে শুধু প্রদর্শনের এত আয়োজন!
বেশীরভাগ রুশরাই তখনো হয়ত শুধু বইয়ের পাতায় আনারসের ছবি দেখেছে।তাজা একখান আনারস দেখার লোভ সংবরন করতে না পেরে সেই কাচের ঘরের উপর অনেকেই হুমড়ি খেয়ে পড়ত।
এমনি করে মাস গেল- রুপের জেল্লাও তার গেল কমে। পুরোপুরি সম্মান হানির পূর্বেই কোন সহৃদয় হয়তো তাকে ভক্ষন করে বহুদিনের পূষে রাখা খায়েস মিটিয়েছিল। তবুও মাসখানেক তার কদর দেখে আমি ভীষন উৎফুল্ল হয়েছিলাম- মনে হচ্ছিল সে যেন আমারই স্বজাতি।
বছর দুই বাদে মস্কোর বাজারে প্রথম দেখা মিলল রসালো মোলায়েম কাচা হলুদ আর মাখনের রঙ্গে রাঙ্গানো দামী স্টিকার সাটানো সেই দেশে অতি দুস্প্রাপ্য সাগর কলা! ভীষন পরিচিত সেই ফল আমার দারুন সেজেগুজে দোকানীর কোলের কাছের ডালাটায় এমন ভঙ্গীতে বসে আছে যে তার কাছে যেতে বড় সঙ্কোচ আর দ্বীধা ছিল মনে।
তবুও গেলাম।পুরোনো প্রেয়সীকে নবরুপে দেখে তার রস আস্বাদনের বড় স্বাধ হল। কিন্তু দাম শুনে এমন ছ্যাকা লাগল যে তার কাদির প্রান্ত ধরার সাহস হলনা।
আসলে সস্তা খেতে খেতে আমার মনটাই ততদিনে ছোট হয়ে গেছে-একটাকার বিনিময় মুল্য দশ রুবল হলেও সেই দশটা রুবল আমার কাছে দশটা স্বর্ণ মুদ্রার মতই মহার্ঘ!
ছুতে না পারি কিংবা খেতে না পারি তবুও দুর থেকে রুপ সুধা ভোগ করতে তো বাধা নেই।
নব্য এক প্রেমিক যুগল হাত ধরাধরি করে ঢলে ঢলে গলে গলে আসছিল ও পথ ধরেই –কাছে এসে কলার দ্যুতিময় রুপ দেখে থমকে গেল প্রেমিকা। প্রেমিকের কানের কাছে মুখ নিয়ে বিগলিত হেসে অতি আহ্লাদী কন্ঠে কি যেন বলল। প্রেমিক তার স্ত্রস্ত পায়ে দু’কদম এগিয়ে কলার মুল্য জিজ্ঞেস করেই যেন আতকে উঠল। ভীষন বিব্রতকর তার চেহারা দেখে আমার মত কৃপনেরও মনে চাইল দশটা রুবল দিয়ে ওকে সাহায্য করতে।
প্রেমিকার আব্দার বলে কথা- অবশেষে এ পকেট থেকে খুচরো পয়সা ও পকেট থেকে দু-চারখানা আধ ময়লা নোট বের করে বহুক্ষন হিসেব মিলিয়ে সাকুল্যে একখানা কলা কিনল।
কলার অবগুন্ঠন উন্মোচনের বাসনায় তাদের যেন তর সইছিল না। সামান্য দুরে গিয়েই আসন পেতে বসে পড়ল। তারপর … আমার দেশের সেই অতি তুচ্ছ কলার শত সহস্র বর্ষের জনম যেন সার্থক হল। ছেলেটা কি মোলায়েম ভঙ্গীতে যেন ব্যাথা না লাগে কলাটার মাথা থেকে একটু খানি ছিলে আলতো করে মেয়েটার ঠোটের ফাকে গুজে ধরল। মেয়েটার লোভাতুর চোখ তখন খুশীতে জ্বলজ্বল করছিল। তবুও তার কামড় দিতে সংকোচ হল। একটু খানি চুষে ফিরিয়ে দিল ছেলেটাকে-ছেলেটাও ফের একটু চুষে বাড়িয়ে ধরল তার ঠোটের খাজে। চলল তাদের রোমান্সের নতুন পর্ব। উদ্দেশ্য যেন কলা ভক্ষন নয়- রুশ প্রেমের প্রথম দিনেই যে চুম্বন এলেবেলে কিংবা পানসে হয়ে যায় সেইটের আবার নতুন আমেজে আস্বাদ গ্রহন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:১১
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

সততা হলে প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে

লিখেছেন মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম নাদিম, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৯

বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে। ক্রেতাদের মনে যে প্রশ্নগুলো থাকা উচিত:

(১) ওজন মাপার যন্ত্র কী ঠিক আছে?
(২) মিষ্টির মান কেমন?
(৩) মিষ্টি পূর্বের দামের সাথে এখনের দামের পার্থক্য কত?
(৪) এই দোকানে এতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×