somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাযেন্স ফিকশান: নিকষ অন্ধকার

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম থেকে উঠার পর আমার মাঝে এক আশ্চর্য অনুভূতির জন্ম হল। হঠাৎ মনে হল আমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। পরমুহূর্তে আবার মনে হল আমার শরীর সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এই সংকোচন আমায় প্রচণ্ড পীড়া দিচ্ছে। তখন আস্তে আস্তে সব কিছু পড়ল ................... ............ মহাকাশযানটি হঠাৎ করে এর গতিপথ বদল করে ফেলে। আমি লুকিং গ্লাস দিয়ে বাইরের দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে মহাকাশযানটির গতিপথ বদল আমায় আশ্চার্যান্বিত করল। আমি কোনভাবেই একে এর গথিপথে ফিরিয়ে আনতে পারছিলামনা। ......... কিন্তু , আমি এখন কোথায় আছি সেটি মনে করতে পারছিলামনা। আমি কতক্ষণ স্থবির হয়ে পরে রইলাম। হঠাৎ করে আবার মনে হতে লাগল। এই মহাকাশযানটি আমায় দেয়া হয়েছিল পৃথিবীকে উল্কার আঘাত থেকে রক্ষা করার কৃতিত্ব স্বরুপ। মহাকাশযানে করে আমি ক্রিস্টিয়ানো নক্ষত্রের দিকে যাচ্ছিলাম।
নক্ষত্রটি দেখতে অনেকটা ক্রুশ চিন্হের মত। তাই আমি এটির নাম দিয়ে ছিলাম ক্রিস্টিয়ানো। আমার দেয়া নক্ষত্রের এই নামটি সবাই গ্রহণ করে নিয়েছিল। কারন, ততদিনে আমি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলাম।

হঠাৎ করেই আমার মনে আকাঙ্খা জেগেছিল এই নক্ষত্রের দিকে যাওয়ার নক্ষত্রটির তীব্র রেডিয়েশেনের কথা আমি বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার মনে হতে লাগলো আমাকে অবশ্যই ঐ নক্ষত্রের দিকে যেতে হবে। দিনটি ছিল জুলই মাসের ত্রিশ তারিখ সোমবার, ২২১২ সাল। মহাকাশযানের জ্বালানির কথা চিন্তা করতে হলনা। কারণ, আমি অনেক আগেই ইউরেনিয়াম দিয়ে মহাকাশযানের জ্বালানি তৈরি করে রেখেছিলাম। খাদ্য ও পানির সংকট থেকে বাঁচার জন্য অনেকগুলো ট্যাবলেট জড়ো করেছিলাম। প্রত্যেকটা ট্যাবলেট আমার প্রায় পনের দিনের ক্ষুধা মেটানোর কাজে লাগবে।
মহাকাশযানে করে রওয়ানা দেওয়ার সময় আমি পৃথিবীর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়েছিলাম। তখন আমার পৃথিবীর জন্য প্রবল মায়া লাগতে শুরু করেছিল। কিন্তু তখন আমার একবারও মনে হয়নি আমি পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবোনা।

বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোল সম্পর্কিত অনেক তত্ত্ব দিয়েছে। আমি কারোর তত্ত্বই মেনে নেইনি। সবার ধারণা ব্ল্যাক হোলে থেকে কোন কিছুই ফিরে আসতে পারবেনা। কিন্তু আমার আবিষ্কার করা সূত্র মতে সবকিছুকেই ব্ল্যাক হোলে পাঠানোর পর ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ক্রিস্টিয়ানো নক্ষত্রের দিকে রওয়ানা হওয়া ছিল আমার এই উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করেই। আমি প্রায় এক বছর ধরে মহাকাশযানে করে শুধু উপরের দিকে উঠছিলাম।
আজ ৩০ জুলাই ২২১৩ সাল। বিশাল মহাকাশযানে আমি একা। প্রতিদিনই বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রের তীব্র বেগে চলাচল আমার রাডারে ধরা পরত। প্রায়ই মনে হতো কোন একটা নক্ষত্র অথবা ব্ল্যাক হোল আমার যানটির পাশেই অবস্থান করছে। কিন্তু, আমার রাডার কোনভাবেই এর দিক নির্দিষ্ট করতে পারছিলনা।
একদিন আমার মহাকাশযানের রাডার ভিন্ন একটি সংকেত দিলো। দেখাগেলো মহাকাশযান হতে এক লক্ষ কিলোমিটার দূরে একটি ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব আছে। আরেকটা জিনিস স্পষ্ট হলাম যে আমার যানটি ওই ব্ল্যাক হোলের দিকেই যাচ্ছে। আমিই কোনভাবেই বুঝতে পারলামনা এটির গতিপথ ব্ল্যাক হোলের দিকে হলো কেমন করে। আমি অনেকক্ষন চেষ্টা করলাম এটির গতিপথ বদলানোর জন্য। কিন্তু পারলামনা। এক সময় আমি জ্ঞান হারালাম।

আমি বুঝতে পারলাম আমি এখন ব্ল্যাক হোলের মাঝে আছি। চারদিকে শুধু অন্ধকার। এর মাঝে একা শুধু আমি। আমার বার বার পৃথিবীর কথা মনে হতে লাগলো। কিন্তু, একটা জিনিস আমার মাথায় বার বার ঘুরে ফিরে আসতে লাগলো। " আমি এখনো ধ্বংস হলামনা কেন?”

অনেকক্ষন হাতড়ে হাতড়ে আমি সামনের দিকে এগুলাম। হঠাৎ করে আমি একটা বস্তুর সাথে ধাক্কা খেলাম। এটাকে কতক্ষন হাতড়ানোর পর আমি ঠাওর করতে পারলাম এটা আমার মহাকাশযান। একটা জিনিস আমার মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেল। ব্লাক হোলের মহাকর্ষ বলতো পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের চেয়ে অনেক গুণ বেশী হওয়ার কথা। কিন্তু, আমি কিভাবে স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে পারতেছি। আমার দমতো বন্ধ হয়ে আসছেনা। আমি স্পষ্টতই বুঝতে পারতেছি আমার শরীর ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে। এমন ভাবে সংকুচিত হতে থাকলে আমি এই নিকষ অন্ধকারে এক সময় বিলীন হয়ে যাবো। আমি অন্ধকারের সাথে মিশে যাবো। ওহ, ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু, আমি এখন ব্ল্যাক হোলের মাঝে আছি সেটা আরও অবাক লাগছে।
এখানে নিশ্চয়ই এক শক্তিশালী রাডার আছে। যার প্রভাবে আমার মহাকাশযান এখানে এসে পরেছে। কিন্তু, মহাকাশযানটিতো এখনো ধ্বংস হয় নি। আমি বসে পরলাম। হাতড়ে হাতড়ে মহাকাশযানের নিচের অংশ স্পর্শ করলাম। আসতে আসতে মহাকাশযানের নিচের অংশের মাটি পাগলের মত আলগা করতে শুরু করলাম। এক সময় শক্ত পাথরের মত বস্তুর অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম। বস্তুটি হাতে নেওয়ার পর আমি আশ্চর্য শক্তি অনুভব করলাম। আমি যখন বস্তুটি নিয়ে একটু সরে আসতে চাইলাম তখন মহাকাশযানটির নড়াচড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। আমি জিনিসটাকে মাটিতে রেখে মহাকাশযানে উঠে বসলাম এবং মহাকাশযানের বাতিটি জ্বালিয়ে দিলাম। সাথে সাথে মহাকাশযানসহ বাইরের অনেক অংশ আলোকিত হয়ে গেল। এই প্রথম ব্ল্যাক হোলটি আলোকিত হলো। আমি তখন মাটিতে রাখা বস্তুটির আর অস্তিত্ব খুঁজে পেলামনা।

আলোর ফোটন কণাগুলো সমগ্র ব্ল্যাক হলে ছড়াতে লাগলো। দেখতে দেখতে সবকিছু আবার আলোকিত হয়ে গেল। আমি খেয়াল করে দেখলাম হোলটার আকৃতি অনেকটা ক্রুশের মত। মনটা খুশিতে ভরে গেল। আমি যে এখন ক্রিস্টিয়ানো নক্ষত্রে দাঁড়িয়ে আছি!!!!! যেটাকে আমি এতক্ষন ব্ল্যাক হোল ভাবছিলাম। আমি যেই মাত্র মহাকাশযান হতে আমার ক্যামেরাটা হাতে নিচ্ছিলাম তখন হঠাৎ একটা মোবাইল ফোন প্রচণ্ড শব্দ করে বেজে উঠল। আমি অবাক হয়ে তখন শব্দটার উৎস খোঁজা শুরু করলাম।
চোখ খুলে দেখলাম আমার কানের কাছে আমার মোবাইলটা বাজছে। চেয়ে দেখলাম মুজিবুর ভাই ফোন করেছে। রিসিভ করার পর ওপর প্রান্তের কথা শোনার আগেই আমি বলা শুরু করলাম, "ব্ল্যাক হোল পৃথিবীর মত বাসযোগ্য!!!! শুধু আলোর অভাবে সেখানে সব কিছুকে সংকুচিত মনে হয়। একবার যদি কোনভাবে ব্ল্যাক হোলের রাডারে আলো জ্বেলে দেয়া যায় তবে সেটি সাথে সাথে ক্রিস্টিয়ানোর মত উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে যাবে। সেটি হবে পৃথিবীর মত বাসযোগ্য।"

ওপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসল,"আরে গাধা আলো নিয়ে ব্ল্যাক হোলে যাবে কে? তাড়াতাড়ি চলে আয় আজ সকাল ৮ টায় খোকা স্যারের ক্লাস আছে।"
আমি বুঝতে পারলাম আমি ভোর রাতে স্বপ্ন দেখছিলাম। তবে আমার মনে হয় ভোর রাতের স্বপ্ন মিথ্যে হয়না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×