somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৯০৪ টি কফিনবদ্ধ স্প্ন বনাম মুসলিম ভ্রাতৃত্ব কিংবা শ্রেনী সর্ম্পক।।

১৭ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৫:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একঃ

এ এক মারার দেশ । এখানে ফসলের চেয়ে আগাছার পরিমান বেশি । একাবিংশ শতাব্দীতে এসে সৈয়দ ওয়ালী উল্লার এ উক্তি বাংলাদেশের বিশেষ অঞ্চলের পরিবর্তে ৫৫,৫৯৮ বর্গমাইলের ভূখন্ডে জন্য সত্য হয়ে উঠেছে । তাই , ভাগ্যের অন্বেষায় জীবন যুদ্ধের অকুতোভয় যোদ্ধরা পিতা-মাতার স্নেহের ছায়া, স্ত্রীর ভালবাসা আর সন্তানের হাস্য উজ্জল মুখের মায়া উপেক্ষা করে দেশের সীমানা অতিক্রম করে ছুটে চলেছে বেড়িয়ে পরে পূর্বে -পশ্চিমে। এ ছুটে বেরিয়ে পরার পথ টুকু শ্বাপদ মুক্ত নয়, মসৃণ নয়। ভিটা-মাটি আর শেষ অবলম্বন ফসলী জমি বন্ধক পরছে মহাজনী সুদের কবলে অথবা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বিদেশ বিভূইয়ে পাড়ি জমানো পয়সা জোগাতে। এতো কিছুর পরেও নিশ্চিত নয় বিদেশের মাটিতে সামন্য ক্ষুন্নবৃত্তি। সেখানেও পদে পদে লাঞ্ছনা গঞ্জনা আর বঞ্চনার অশ্রু গাঁথা।। ইতিমধ্যে এ সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। সব কিছু জেনে বুঝে এদের প্রায় সবারই হৃদয়ের মূল এদেশের মাটি প্রথিত রেখে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে প্রবাসে পাড়ি জমাচ্ছে।

গত চার মাস দশ দিনে ৯০৪ স্বপ্ন টি কফিন বদ্ধ হয়ে ফিরে এসেছে স্বদেশের মাটিতে স্বজনদের কাছে। মৃত্যু জীবনের এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবুও কিছু কিছু মৃত্যু কিছু কিছু প্রশ্ন রেখে যায় জীবিত বিবেক গুলো কাছে। ৪৪% মৃত্যও কারণ হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে!? স্বজনবিহীন বিদেশ বিভূইয়ে আমানবিক পরিশ্রম, নিম্ন মান জীবন যাপন, মুজুরী বঞ্চনা আর দেশে ঋণ পরিশোধের দুশ্চিন্তা কে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা প্রবাস িবাংরাদেশী শ্রমিকদেও মৃত্যুও অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। শুধু কি তাই ? ২৯% কর্মক্ষেত্রে সংগঠিত দুর্ঘটনা জাত!? প্রশ্ন থেকে যায় , আধুনিক প্রযুক্তি এ যুগে কি সনাত পদ্ধতিতে আমাদের শ্রমিকরা কাজ করছে।

গত ১ জানুয়ারী হতে ৯ মে পর্যন্ত মধ্য প্রাচ্য আর দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে শুধু হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে দেশে এসেছে ৩৯১ জন শ্রমিকের লাশ। প্রত্যাগত দেশের তালিকার দিকে বিবেকবাদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

সৌদি আরব (মুসলিম দেশ) ১১৯ জন।
মালোয়েশিয়া (মুসলিম দেশ) ৮২ জন।
সংযুক্ত আরব আমিরাত (মুসলিম দেশ) ৭২ জন।
কুয়েত (মুসলিম দেশ) ৩৫ জন।
ওমান (মুসলিম দেশ) ১৬ জন।
কাতার (মুসলিম দেশ) ১০ জন।
বাহারাইন (মুসলিম দেশ) ১০ জন।
সিঙ্গাপুর (অমুসলিম দেশ) ৭ জন।
লেবানন (মুসলিম দেশ) ২ জন।

দুইঃ

মুসলিম জাহানের খলিফা হয়রম উমর (রাঃ) উতপ্ত মরূপথে উটের পিটে এক মাত্র ভৃত্যকে সহচর কওে চলেচে দূরবর্তী স্থানে রাষ্ট্রীয় কার্যে তাগিদে।্ কিছু পথ অগ্রসরের উটের পিঠ হতে নেমে খলিফা তাঁর ভৃত্যকে বলেন , ”এবার তমি উটের পিটে উঠ আর আমি উটের রশি ধরে অগ্রসর হই্।” তারপরৃ তারপর মরূপথে উটের রশি ধরে অগ্রসর হলেন খলিফা হয়রম উমর (রাঃ) আর উটের পিঠে তার ভৃত্য।

তিনঃ

তোমাদের চাকর-চাকরানী ও দাস-দাসীরা প্রকৃতপক্ষে তোমাদের ভাই. তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের অধীনস্ত করেছেন;
সুতরাং আল্লাহ যার ভাইকে তার অধীন করে দিয়েছেন সে তার ভাইকে যেন তাই খাওয়ায় যা সে নিজে খায়,
তাকে পরিধান করায় যা সে নিজে পরিধান করে. আর তার সাধ্যের বাইরে কোন কাজ যেন তার উপর না চাপায়. একান্ত যদি চাপান হয়, তবে তা সমাধান করার ব্যাপারে তাকে সাহায্য করা উচিত | (বুখারী, মুসলিম)

তোমাদের কোন ভৃত্য যদি তোমাদের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করে নিয়ে আসে তখন তাকে হাতে ধরে নিজের সঙ্গে খেতে বসাও,
সে যদি বসতে অস্বীকার করে তবু দুই এক মুঠি খাদ্য অন্ততঃ তাকে অবশ্যই খেতে দিবে; কারণ সে আগুনের উত্তাপ ও ধুম্র এবং খাদ্য প্রস্তুত করার কষ্ট সহ্য করেছে। (তিরমিযী)

(কৃতজ্ঞতা স্বীকার ও সংগ্রহ Click This Link )

চারঃ

তিন আবল্য বন্ধু রহিম, জোসেফ আর রাম বনের মধ্যে পথে হারিয়ে গোলক ধাঁধায় ঘুরতে ঘুরতে যখন ওষ্ঠগত প্রাণ তখন বনে প্রান্তে খুজে পেলো এক আখ ক্ষেত। জল তিষ্টায় তারা তিন জন এতো কাতর ছিল যে কিছু আখ খেয়ে ফেল। আখের রসে যখন তৃষ্ঞা জুরালো তখন খেয়ার হল , আখের মালিকের অনুমতি ব্যতিত আখ খেয়ে তারা ভিষণ অন্যায় করেছে। তারা মালিককে খুজে বের করে ক্ষমা প্রার্থনা করবে বলে মনস্থির কওে আসে পাশে কোজ করতে শুরু করলো।কিছুু সময় অনুসন্ধান করতেই আখ ক্ষেতের এক পাম্ভে মালিক কে একাকী কাজরত অবস্থায় পেয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলো। মালিক এভাবে তার জমির আখ খাওয়াতে মনে মনে ভিষণ ক্ষিপ্ত হল । কিন্তু সরাসরি তা প্রকাশ করলো না, কারণ সে একাকী তিন জনের উপর মনে জ্বালা মেটাতে পারবে না। তাই , মালিক চালকি করে রহিম ও জোসেফ কে এক পাশে ডেকে বলল , “তোমারা দু’জন আমার ক্ষেতের আখ খেয়েছো , তাতে আমার কোন দুৎখ নাই ্ কিন্তু , ও ব্যাটা রাম কেন খেবে? ও পৌত্তলিক পশুরও অধম।” মালিকের কথায় রহিম ও জোসেফের র্দষ্টি খুলে গেল। এতো দিন তারা কি ভুলটা না করেছে ; একটা মুর্তি পুজারি কে সাথে নিয়ে ঘুরেছে। সুতরাং আখ খাওয়া অপরাধে মালিকের সাথে মিলে রহিম ও জোসেফ পৌত্তলিক রাম কে উত্তমোধ্যম দিয়ে তাড়িয়ে দিল।

এবার রহিম কে মালিক এক পাশে ডেকে নিয়ে বলল,“ তুমি আমার মুসলামান ভাই , তুমি দুটো আখ নিলে আমার কোন কস্ট হয় না। কিন্তু ও ব্যাটা জোসেফ তো খ্রীস্টান; জাননো না দেশে দেশে খ্রীস্টানরা মুসলমানদের কি অত্যাচার টা করছে?” রহিমের মাঝে এবার দীনই তাগৎ জাগ্রত হল। মুসলিম ভাতৃত্বের বন্ধনে আবধ হয়ে মালিকের সাথে মিলে জোসেফ এর উপর চড়াও হল আর জোসেফ কোন রকম প্রাণ টি নিয়ে বাঁচলো।

এবার একা রহিম কে পেয়ে মালিকের আসল স্বরূপ প্রকাশ পেল। রুদ্র মুর্তিতে রহিমের উপর ঝাপিয়ে পরলো।

(কৃতজ্ঞতা স্বীকার ও সংগ্রহঃ আব্দুল গফফার চৌধুরী )

ফুটনোট (বাজে কথা) ঃ

মুসলিম আরব বিশ্বে বা অপরাপর বিত্তশালী মুসলিম দুনিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশের মুসলমান দরিদ্র ভাইরা কতটুকু মানবিক ব্যবহার পায় তা জিয়া আন্তজাতিক বিমান বন্দর থেকে প্রবাহমান কফিনের মিছিলের দিকে তাকালে কি একবারের জন্য মনে প্রশ্ন জাগায় না ? মুসলিম ভ্রাতৃত্ব বা বিশ্ব্বমুসলিম উম্মা শব্দ গুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পরে না কি ?

প্রশ্ন উঠতে পারে , বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম দেশের শ্রমিকরা যদি ধনিক মুসলিম বিশ্বে এহেন অমানবিক আচরণের স্বীকার হয় , তবে অমুসলিম দেশের (যেমন ভারত, ফিলিপাইন প্রভৃতি) শ্রমিকরা কি আরও বেশি বিদ্বেষ প্রসূত আমানবিক আচরনের স্বীকার হচ্ছে ?

স্পষ্টতই এর উত্তর হচ্ছে ‘ না’। যদি অনুসন্ধান করা হয়, দেখা যাবে হৃদরোগের স্বীকার বাংলাদেশী বা ভারত বা ইন্দোনেশিয়ান কিংবা ফিলিপিনো শ্রমিকের পরিসংখ্যানগত তেমন কোন পার্থক্য নেই। পার্থক্য নেই একজন ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানি শ্রমিকের অশ্রু সিক্ত কাহিনীর মধ্যে। কেন না ,এক্ষেত্রে কে হিন্দু, কে মুসলমান , কে খ্রিস্টান এ পরিচয় মুছে গিয়ে এশটি মাত্র পরিচয় মুখ্য হয়ে উঠে - সকলেই মজুদ , সকলেই শ্রমিক। মুসলিম ভ্রাতৃত্বে বন্ধন এখানে বাহিরে খোলস মাত্র । পুজিবাদী বিশ্ব ব্যবস্থায় একটি মাত্র সম্পকর্ই মুখ্য ও সর্বত্র বিদ্যমান , তা হচ্ছে মালিক-মুজুর সম্পর্ক।









১২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×