somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নোয়াখাইল্যা (ফেনী-চৌদ্দগ্রাম) ভাষার ব্যাকরণ -১

১৭ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট বইনের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা চলতাছে । সিট পড়ছে সোহরাওয়ার্দী কলেজে । প্রথম পরীক্ষার দিন ফোন করলাম । পরীক্ষার খবর জিগানির আগেই বইনে চিল্লাইয়া উঠলো, " আমার লগে যাওনের লাইগা কারো ব্যবস্থা কৈরা দ্যান, আমি বাবার লগে যামুনা আর পরীক্ষা দিতে " । ঘটনা কিতা, খুইল্যা কৈতে কৈলাম ।

ঘটনা হৈল , প্রথম পরীক্ষা দিতে হলে গেছে, হাজার হাজার মানুষের মধ্যে , গেটের ভিতরে বইনরে দিয়া আইসা বাইরে থেকে আব্বাজান চিল্লাইয়া চিল্লাইয়া কৈতাছে, " এরে মুক্তু, হিইন্দি কিল্লাই যঅরি, ইমুই আয় ইমুই আয়, ইইন্দি ছাবাইত্যে খাবঅ " (ঐ মুক্তা , ঐদিকে যাইস না, এদিকে আয় এদিকে ছায়ার মইধ্যে দাঁড়া) । সকলের উৎসাহী দৃষ্টির বাণে জর্জরিত বইনে কয় আমি পরীক্ষাই দিতে যামু না , আপনে কাউরে ব্যবস্থা কৈরা দ্যান আমার লগে যাওনের লাইগা । অগত্যা দুএক জায়গায় ফোন কৈরা ব্যবস্থা কৈরা দিতে হৈল ।

আঞ্চলিক ভাষা নিয়া লজ্জা মোটামুটি সব দেশেই টুকটাক আছে । যদিও এইটা নিয়া হাসাহাসির পরিমাণে একটু কম-বেশি আছে । তবে আঞ্চলিক ভাষাগুলার সাথে প্রমাণ-ভাষার একটা যোগসূত্র তৈরী থাকলে, লোকেরও বুঝার সুবিধা হয়, আর সাথে সাথে হিউমিলিয়েশনের পরিমাণও বোধহয় একটু কমে । এই ধারণা থাইকা ফেনী-চৌদ্দগ্রাম অঞ্চলের ভাষার সাথে প্রমাণ বাংলার অনুবাদজাতীয় এই ব্যাকরণ প্রচেষ্টা ।

আলাদাভাবে অস্তিত্বশীল বৈলা ধৈরা নেয়া যায় এইরকম আঞ্চলিক ভাষাগুলার সাথে প্রমাণ বাংলার মোটামুটি তিনমাত্রার পার্থক্য থাকে ।

১ > কিছু মৌলিক শব্দ
২ > একই শব্দের পরিবর্তিত উচ্চারণ বা বিবর্তিত রুপ
৩> কিছু মৌলিক ব্যাকরণবিধি

নোয়াখাইল্যা ভাষার সাথে প্রমাণ বাংলার পার্থক্যের এই লেখাতে এই তিনটি মাত্রা থাইকা আলোচনা হৈবে ।

কেবলমাত্র আঞ্চলিক শব্দের উচ্চারণের জন্য এই লেখার কমন নিয়ম
১ : সকল একক 'চ' এর উচ্চারণ , সাইকেল শব্দের 'স' এর মত হবে । যুক্তাক্ষরের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে প্রমাণ বাংলার নিয়মেই অর্থাৎ বাচ্চা কাচ্চা সাচ্চা এসবের উচ্চারণের মতই হবে । বিশেষ ক্ষেত্রে উল্লেখ করে দেয়া হবে ।
২ : বর্ণ বা সিলেবলের পরে হাইফেন (-) এর উচ্চারণ হবে : আগের সিলেবলের , স্বরবর্ণের দীর্ঘায়িত উচ্চারণ, আগের সিলেবলে স্বরবর্ণ না থাকলে দীর্ঘায়িত 'অ' এর উচ্চারণ হবে ।

যেমন "বা-ইলা " (মসুর) শব্দের উচ্চারণ হবে বা+ আ + ইলা (ব এর পরে দীর্ঘ আ)
"ব-লা" (অলক্ষি, বান্দর এইজাতীয় গালি অর্থে) শব্দের উচ্চারণ হবে ব+অ+লা (ব এর পরে দীর্ঘ অ)


১ : মৌলিক কিছু শব্দ : নোয়াখাইল্যা ভাষায় কিছু মৌলিক শব্দ আছে যেইগুলা বাংলাদেশের অন্য অঞ্চলে কিংবা প্রমাণ-বাংলায় নাই বা সাধারণত ব্যবহার করা হয় না । এইধরণের শব্দগুলার একটা আংশিক অভিধান নিচে যোগ করা হৈলো ।

আঁনতা > খলুই / স্রোতের মুখের ছোট মাছ ধরার একটা খাঁচার মত যন্ত্র ।
বরগ > কলাপাতা
দোচ্ছা > টুকরিজাতীয় ধান বা চাল রাখার জিনিস
কোরা > টুকরির চাইতে কয়েকগুন বড় মূলত ধান রাখার শীতলপাটি যেই উপকরণে বানানো হয় সেই উপকরণে তৈরী পাত্র
বিচইন > হাতপাখা
নারা > বিচালি / ধান কাটার পরে খেতে ধানগাছের যেই অংশটুকু অবশিষ্ট থাকে সেই অংশ
দাইরগা > জ্বালানি কাঠ
চইচ্চা > ডোবা / ছোটপুকুর
বিডা > সবজি চাষের জমি (ধানক্ষেতের চাইতে তুলনামূলক উঁচু) (নোট : ঘরভিটির ভিটি শব্দের পরিবর্তিত রুপ, তবে ভিন্নার্থে ব্যবহার হয় বলে মৌলিক শব্দের তালিকায়)
উন্নাল > ঘরের চাল থেকে বৃষ্টির পানি যেইখানে পড়ে সেই জায়গা
মাইরা > ডাঁটাশাক
ডুইল্যাহাগ > লালশাক (নোট : হাগ শব্দটা শাঁক শব্দের বিবর্তিত রুপ)
লোয়াছঁই > বরবটি
গঁ-ই > লাঠির মধ্যে গোবর মাখাইয়া সেইটারে শুকাইয়া জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করার জন্য তৈরী দন্ড
বত্তন > বাসন
বিচা > পুরুষের যৌনাঙ্গ
হেডা, হাউয়া > নারীর যৌনাঙ্গ
হাঙ্গডি > প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পরে বিবাহ করা দ্বিতীয় স্ত্রী (নোট : একইসময়ে একাধিক স্ত্রী থাকলে, তারা পরস্পরের সতীন হিসাবেই বলা হয়)
রাঁ-ই > বিধবা
হেত্তিনি > নোংরা মানুষ
কাচরা > ময়লা
হালা > খুঁটি (বড়)
রাব > ঝোলাগুড় (খেজুর রস জ্বাল দিয়ে ঘন করে তৈরী করা কালো রঙের ভিসকাস তরল)
আলবা > ঘন তরল (নোট : আতপ থেকে বিবর্তিত আলবা অন্য অর্থে)
ড্যাগা > কচি
ক-ইয়া > পেঁপে
মুচি > কাঁঠালের অনিষিক্ত ফল
চুম্মা > বড়শির ফাৎনা
চিন > খড়ের স্তুপ
উগুইর > সাধারণত ধানের গোলা রাখার জন্য তৈরী করা নিচু ধরণের মাচা
বাইনদুয়ার > পিছনের দরজা (নোট : দুয়ার শব্দটা অপরিবর্তিত)
আগদুয়ার > সামনের দরজা
হান্দি > চিপা, দুইঘরের মাঝের গলি
ডেলা > ঘরের বেড়ার বাইরের ঘরভিটির উঁচু বর্ধিত অংশ
বেতরঙি মাছ > ভুতুম মাছ
মাল্তাই আম > ফজলি আম
বডইন > শীতলপাটি
দাঁইয়া মাছ > মলাঢেলা জাতীয় ছোট মাছ
ডি- কোম্বা > খেতে উৎপাদিত জালিকুমড়া (নোট : কোম্বা শব্দটা কুমড়ার পরিবর্তিত রুপ)
কুঁইয়ুঁর > আখ, গেন্ডারি
কাইড্যা হিম্বা > লাল পিঁপড়া (নোট : হিম্বা শব্দটা পিঁপড়া শব্দের পরিবর্তিতরুপ । কাইড্যা শব্দটা লালের সমার্থক শব্দ না । কেবলমাত্র পিঁপড়ার ক্ষেত্রেই এই ব্যবহার)
এলইচা হাগ > হেঁচিশাক
দু-নি > ফেন সরানোর জন্য ব্যবহৃত মাটির পাত্র

চঁ-ই > বড় পিঁড়ি (চৌকি থেকে বিবর্তিত চঅই, চৌকি অর্থেই ব্যবহৃত হয়)
হুরা > চাল মাপার জন্য ব্যবহৃত ছোট পাত্র (হুরা আবার ওজনের একক হিসাবেও ব্যবহৃত হয়, এক হুরা = মোটামুটি ২৫০ গ্রাম)
বইড্যা > ঢাকনা
চিবা > কাঠি
চটকা চিবা > সরু কাঠি (সাধারণত বাঁশগাছের ডালপালা)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৮
৯৬টি মন্তব্য ৮৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যারিস্টার সুমন দায়মুক্ত , চু্ন্নু সাহেব কি করবনে ?

লিখেছেন শাহাবুিদ্দন শুভ, ০৮ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৭


দেশে প্রথম কোন সংসদ সদস্য তার বরাদ্ধের ব্যাপারে Facebook এ পোষ্ট দিয়ে জানিয়ে থাকেন তিনি কি পেলেন এবং কোথায় সে টাকা খরচ করা হবে বা হচ্ছে মানুষ এসব বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×