somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদরে ভাষা শহীদরো, র্পব-২

১৭ ই মে, ২০০৯ দুপুর ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আসঙ্কাজনক হলেও সত্য যে আমরা ভাষা শহীদদের নাম ছাড়া বিশেষ কিছু জানি না। এটা আমাদের জন্য চরম লজ্জাজনক। একজন বাংলা ভাষাভাষী হিসেবে আমার একটা দায়বদ্ধতা থেকে যায়। সেই দায়বদ্ধতা থেকে ভাষা শহীদদের সম্পর্কে লিখতে বসা। আমার এই পোস্ট যদি কারো সামান্যতম উপকারে আসে বা ভালো লাগে তবে এ লেখা সার্থক হবে।)

ময়মনসিংহের গঁফরগাঁও’র পাচুয়া গ্রাম। সেটা ছিলো বাংলায় ১৩২৬ সালের ২৬ আষিন। গ্রামের মধ্যবিত্ত গেরোস্ত হাসান আলী ও সাফাতুন নেছার কোল জুড়ে আসে এক দুরন্ত শিশু। হাসিন আলী তাঁরনাম রাখলেন জব্বার। পুরো নাম আব্দুল জব্বার।
বাবা-মার প্রথম সন্তান হওয়াই আব্দুল জব্বার আদর পেতেন বেশি। যার ফলে অভিমানীও ছিলেন। ছোট বেলা থেকেই জব্বার ছিলেন দুরন্ত। অজানাকে জানার নেশা তার ছিলো প্রচন্ড। তিনি শিক্ষা জীবন শুরু করেন ১৩৩৩ সালে ধোপাঘাট কৃষিবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মেধাবী ছাত্র হলেও স্কুলের চার দেয়ালে আটকে থাকতে ভালো লাগত না। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে তিনি বাবার সাথে রাগারাগি করে ১৩৩৮ সালে বাড়ী থেকে পালিয়ে যান। এসময় তিনি ঢাকার বিভিন্ন ধরণের মানুষের সাথে মিশেছেন। পেটের দায়ে অনেক ধরনের কাজ করেছেন। ফলে অল্প বয়সে আব্দুল জব্বার দুনিয়া-দারির অনেক কিছুই শিখে ফেলে। এর কয়েক মাস পরে আবার ফিরেও আসেন।
বাড়ির চার দেয়ালে জীবন তাকে বেশি দিন আটকে রাখতে পারেনি। এর কিছু দিন পর তিনি দ্বিতীয়বারের মত আবার বাড়ী থেকে পালিয়ে ট্রেনে করে নারায়নগঞ্জে চলে যান। সেখান তার পরিচয় হয় বিদেশী জাহাজের ইংরেজ ক্যাপ্টেনের সাথে। ক্যাপ্টেন তাকে জাহাজে চাকরি দিবে বলে বার্মা’র (বর্তমানে মিয়ানমার) রেঙ্গুনে (বর্তমানে ইয়াঙ্গুন) নিয়ে যান।
বার্মা বারো বছর চাকরি করার পরে তিনি গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামে ফিরে জব্বার তরুনদের নিয়ে একটি গ্রাম রক্ষাবাহিনী গঠন করেন। তিনি ছিলেন সেই বাহিনীর কমান্ডার।
এর কিছু বছর পরে জব্বার তার এক বাল্যবন্ধু বোন আমিনা খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের প্রায় দেঢ় বছর পরে তাদের সংসারে আসে পুত্র যার নাম রেখেছিলেন নুরুল ইসলাম বাদল।
’৫২’র ফেব্র“য়ারির দিকে হটাৎ করে জব্বারের শ্বাশুড়ী অস্বুস্থ হয়ে পড়েন। জব্বার তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যান। পাশের গ্রামের এক ডাক্তার সিরাজুল ইসলামের সহায়তায় তিনি শ্বাশুড়ীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেন।
পুরো ঢাকা শহর তখন আন্দোলনের শহর। চারিদিকের আবহাওয়া উত্তপ্ত। রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়ে বাঙ্গালীরা তখন ক্ষুদ্ধ। শেষ সম্বল ভাষাকে আক্রমন করে “ঊর্দূ, একমাত্র র্ঊদূ হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা”- ঘোষনা শোনার পর থেকে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল, মিটিং, র‌্যালী, অসহযোগ আন্দোলন, পিকেটিং, পুলিশের সাথে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া চলছিলো।
১৯ ফেব্র“য়ারি দুপুরে খাবারের পর আব্দুল জব্বার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ২০ তারিখ রাতে তিনি ঢাকায় তার দুর্সম্পর্কে আতœীয় আবদুল হাই’র বাসায় কাটান। পরদিন সকালে তিনি শ্বাশুড়িকে দেখার জন্য হাসপাতালে যান। সেখানে কিছুটা সময় ডা. সিরাজুল ইসলামের সাথে কাটে। এরপর রোগির জন্য কিছু ফল-মূল কেনার জন্য জব্বার হাসপাতালের বাইরে যান।
বাইরে তখন তুমুল উত্তেজনা। পাকিস্তান সরকারের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গে তোড়-জোড় চলছে। সবার মুখে একই কথা। “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, বাঁচার মত বাচতে চাই।” এতো মানুষের ভিড়, তাদের প্রতিবাদের ভাষা, ভাষার জন্য আন্দোলন- নাড়া দেয় জব্বারকে। ক্ষণিকের জন্য তিনি শ্বাশুড়ি, হাসপাতাল, ফল কেনা সব ভুলে যান। এগিয়ে যেতে থাকেন তাদের সাথে। সকলের মত “রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, বাঁচার মত বাঁচতে চাই”শ্লোগানে সকলের সামনে এগিয়ে হাতে তুলে নেন ব্যানার।
এর পর পুলিশের গুলি, চারি দিকে চিৎকার, রাস্তায় চাপ-চাপ রক্ত...।


বরকতসহ আরো ভাষা শহীদদের সাথে জব্বআর দ্রুত ঢাকা মেডিকেলের জরূরী বিভাগে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অপারেশর থিয়েটারের নেবার পথে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সম্ভবত তিনিই ছিলেন প্রথম ভাষা শহীদ।

বি.দ্র: পোষ্ট করার জন্য আব্দুল জব্বারের কোন ছবি খুজে পেলাম না। নেটে ঘাটা ঘাঁটি করে, বই পত্র খুজেও পেলাম না। বাংলা একাডেমীর মহা পরিচলকের কার্যালয়ের সামনে ছবি আছে কিন্তু ক্যামেরার অভাবে আনতে পারিনি। কারো কাছে ছবির সফট কপি বা কোন লিঙ্ক জানা থাকলে জানাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৮
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×