somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদেশ যাত্রা ৬

১৭ ই মে, ২০০৯ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Click This Link

বিদায় রজনী

এপ্রিলের শেষ দিনে আমার কাজ শেষ। পরদিন অর্থাৎ ১ মে রিটার্ন টিকিট করা আছে। আজ শান্তনুরও ট্রেনিং ক্লাস শেষ হয়েছে। শান্তনু আরেকদিন বেশি থেকে ২ তারিখে রওয়ানা হবে। আমাকেও পটানোর চেষ্টা করেছে, আরেকদিন থেকে যাবার জন্য। আমার সে সুযোগ ছিলো না। ২ তারিখে অফিসে থাকতেই হবে। খুব জরুরি একটা মিটিং আছে। তাছাড়া যতই ঘুরাঘুরি করি না কেনো, সত্যি বলতে কী আমি যথেষ্ঠ হোম সিক একটা মানুষ। কাজের বাইরে এমনি এমনি বেশি সময় বাইরে কাটাতে আমার ভাল্লাগেনা। বাড়ির জন্য মন পোড়ে। আমাকে এক দিন বেশি থাকতে রাজী করাতে না পেরে শান্তনু প্রস্তাব করলো- বেড়াতে যাবার জন্য। শর্ত দিলো হোটেল থেকে বেরুনোর পর আজকে যত খরচ হবে, তার সবটাই আমার অনারে সে বহন করবে। উত্তম প্রস্তাব...। আমার কুয়ালা লামপুরে অদ্য বিদায় রজনী। আবার কবে আসবো কে জানে ? মনে মনে আমি বাকুম বাকুম ! তখনও যদি জানতাম...???

সন্ধ্যায় দুই বন্ধু মিলে ঘুরতে বের হলাম। এদিক সেদিক ঘুরে ক্লান্ত হলাম দুজনেই। রাত নয়টা নাগাদ চায়না টাউনের পাশের গলিতে একটা আলো আঁধারি দোকানে ঢুকলাম। প্রথম রুমটা দারুন ! ১০/১২ জনের বসার ব্যবস্থা। এসিটা বেশ বাড়ানো, ঠান্ডা। ভেতরের রুমে ঢুকতেই ...সিগারেটের ধূঁয়া...নারী পুরুষের চিৎকার ...বিকট সাউন্ডে বাজানো ইংরেজি গানের সাথে নাচা নাচি...উৎকট মদের গন্ধ...জড়াজড়ি...ঢলাঢলি...!!! এ কোথায় এলামরে বন্ধু ? শান্তনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে জানতে চাইলাম। পাশের টেবিলে বসা দুই বিদেশি বালক বালিকা সন্দেহজনকভাবে আমাদের দিকে তাকালো...একটু হেসে ওরাও
নিজেদের সাথে কানে মুখে কথা না বলে ঠোঁটে ঠোঁটে হৃদয়ের কথা বললো বা অন্য কিছু করলো...সেটা তাদের ব্যাপার ! এক পাশে ছোট একটা টেবিলে আমরা দু বন্ধু বসলাম।
কী খাবে, জানতে চাইলো শান্তনু।
তুমি কী খাবে, পাল্টা প্রশ্ন আমার।

খাস বাংলায় অসম্ভব একটা অশ্লীল গালি দিয়ে বললো, ওই ব্যাটা- হোস্ট কে ? আমি না তুই ?? রেগে গেলে সচরাচর বেয়াদবটা আমাকে তুই করে বলে। ওর সাথে আমার বোঝাপড়াটা একটু অন্য রকোম। আমাদের সম্পর্কের গোড়াপত্তনটাও বেশ চমকপ্রদ। সে এক ইতিহাস ! সুযোগ পেলে বলবো অন্য আরেকদিন। ওর আরো গালি থেকে বাঁচার জন্য তাড়াতাড়ি বল্লাম, দোস্ত তুমি যা খাওয়াতে চাও...। এবার মনে হলো, সে সামান্য খুশি হয়েছে। দুই জনের জন্য দুই পেগ করে চার পেগের অর্ডার করলো। ওর গ্লাসে কী জানিনা, আর আমারটা কী, সেটা বলবো না...। খাবো কী, চারদিকে যা দেখছি ! কে যে কার সাথে খাচ্ছে-নাচছে-হেলছে-দুলছে......! বুঝতে পারছিলাম না, আমার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হচ্ছে না সিগারেটের ধোঁয়ার কারনে...! সবাই জোড়ায় জোড়ায় বসে খাচ্ছে (!), আমরাও জোড়া...তবে তা ? ঝিম মেরে বসে আছি। সামনের গ্লাস খালী হয়ে গেছে- সেও অনেকক্ষণ। একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছি। বেরুতে মন চাইছে না। ইনফ্যাক্ট, নড়তেই ইচ্ছে করছে না। একটার দিকে শান্তনু মনে করিয়ে দিলো, সকাল ৪ টার সময় টেক্সি আসবে। আমাদের হোটেলে ফেরা দরকার। হোটেলে ফেরার জন্য শান্তনু যখোন টানাটানি করছিলো- তখন মনে হচ্ছিলো, পৃথিবীতে আমার সবচেয়ে বড়ো শত্র“ হচ্ছে সে। যাই হোক, আমরা অনেক কষ্টে হোটেলে ফিরে এলাম। রিসেপশনে বলে রাখলাম, আমাকে যেনো সকাল ৪টার সময় কল দেয়। ৫ টার মধ্যে এয়ারপোর্টে পৌঁছতে হবে। হোটেলে কাজ করে বাংলাদেশের ছেলে কামরুলকে আগেই বলে রেখেছিলাম, টেক্সির জন্য। রুমে ঢুকে আবোল তাবোল বকা শুরু হলো দুজনের। টিভি ছেড়ে দিলাম।

তোমার কালকে যাবার দরকার কী ? একসাথে আসছি, একসাথে যামু...এই আমার শেষ কথা ! রীতিমতো চিল্লাচ্ছে শান্তনু।
আমি তার চেয়ে বেশি জোরে বল্লাম, আমি এখনই যাবো, আমার ইচ্ছা...তোমার কী ?
আসলে দুজনের কেউ কারো কথা শুনছি না, দুজনেই বলছি। আর একর পর এক সিগারেট টানছি। স্টার মুভিতে ফাটাফাটি একটা সিনেমা হচ্ছে। আমি দেখছি।
শান্তনু বললো চ্যানেল পাল্টাতে।
কোনো পাল্টাবো, আমি দেখবো।
আমি দেখবো না।
না দেখলে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকো।
হঠাৎ বেরসিকের মতো রুমের ফোন বেজে উঠলো। রিসিপশন থেকে জানালো, আমার ফ্লাইটের সময় হয়েছে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি, ভোর চারটা বাজে। এবার হুশ হলো। তাড়াতাড়ি করে বাথরুমের কাজ কর্ম সেরে ১৫ মিনিটের মাথায় ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রুম থেকে। পেছনে পেছনে বেরিয়ে এলো শান্তনু। ওর ভাব দেখে মনে হচ্ছে, এতোক্ষণ রুমে কিছুই হয়নি। আসলেই তো, কিছু কি হয়েছে ? হোটেলের বাইরে টেক্সি ড্রাইভার দাঁড়িয়ে আছে। শান্তনুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম আমি।
অল দ্য বেস্ট... আস্তে করে বললো শান্তনু।
টেক্সি ছুটে চললো বিমানবন্দরের দিকে...

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:৫৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×