somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কালবৈশাখী এবং অতঃপর...

১৬ ই মে, ২০০৯ রাত ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৈশাখ মাস আসলে প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় একখান ধুন্ধুমার ঝড় হবে, টিনের চাল উড়বে, গাছের ডাল ভাংবে এটা ই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে এত রোমান্টিকতার ও কিছু নাই, লেখালেখির ও কিছু নাই। তারপরও ব্লগ পাঠক এবং লেখক বলে কথা, এখন যা কিছু দেখি তাতেই একটু বেশীই মনে হয় দেখি।

এবারের গ্রীষ্ম একটু বেশীই শুস্ক, বেশীই তপ্ত। গা গেরামে থেকে অভ্যাস আছে, রোদে পুড়তেও হয় মাঝে মাঝে। তারপরও এবারের তাপদাহে সহসা বেরুনোর সাহস খুব একটা হয় না। আমার এখানে যে লোকগুলো কাজ করে, তারা প্রচন্ড কষ্ট করে পেটের দায়ে এই আবহাওয়ায়, প্রখর রোদে মাঠে কাজ করছে। শুধু দেখবার জন্য দাঁড়িয়ে থাকাও হয় না।

পড়ন্ত বিকেলে সেদিন গেলাম কাজ দেখতে। বের হবার সময় দেখছিলাম পশ্চিমের আকাশ খানিক কালো হয়েছে। বৃষ্টি এখন খুবই কাঙ্খিত, বলা যায় আরাধ্য, শুধু তাপের জন্য নয় আরো কারন আছে। কাজ শেষে ফিরতি পথেই আকাশ আরো ঘন কালো হয়ে উঠলো, আমার ভ্যানওয়ালা একটা পুচকি ছেলে, মানবাধিকার কর্মীরা হয়তো আমাকে শিশুশ্রমের দায়ে অভিযুক্ত করে ফেলতো যদি দেখতে পেত। পুচকি বলে, কিছু হবে না চলেন যাই........ সে ভ্যান চালায় এক্কেবারে পংক্ষীরাজের মতন। বড় রাস্তায় উঠার আগেই শুরু হল ধুলি ঝড়। ধুলায় অন্ধকার চারিদিক। সে যে কি বাতাস! ভ্যান থামিয়ে ভাবছি কোন বাড়ীতে ঢুকে পড়তে হবে। এর মাঝে আমার ষ্টাফ ফোন করে বলল বড় রাস্তায় ছোট্ট টঙ দোকানে যেখানে আমরা ভ্যানের অপেক্ষায় চা খাই সেখানে আশ্রয় নিতে, ওরা আমার পেছনেই আসছিল। বড় রাস্তায় কোনরকম উঠে সে দোকানটায় যেয়ে বসলাম, আরো অনেকে এসে জড়ো হয়েছে ওখানে। ঝড় ঠিক মত হলে এ ঘর টিকবে কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমি ঝড় অবলোকন করা শুরু করলাম, ইচ্ছে হল ছবি তুলি, ক্যামেরা সাথেই ছিল, পাবলিক এই ম্যাডামরে পাগল ভাববে মনে করে চেপে গেলাম। মনের ইচ্ছা মনেই রইলো।

ঝড় শেষ হলেই বৃষ্টি হবে, আর বৃষ্টি হলেই ঝড়ের প্রকোপও কমবে। আমার পুচকি ভ্যানবাহক বলে, চলেন এইবার যাই। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, তার হয়তো বাড়ী ফিরতে মন চাইছে। বৃষ্টি শুরু হবার কিছু পরেই আমি আর পিচ্চি বেড়িয়ে পড়লাম, সবাই বলল, আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে। পিচ্চির বাড়ী ফেরার তাড়া, আর আমার বৃষ্টি ভেজার লোভ, দুটো মিলে আমরা বৃষ্টি মাথায় দিলাম রওয়ানা। বেড়িয়ে বোঝা গেল ঝোড়ো বাতাস বেশ ভালোই আছে। ছাতা মেলার কোন উপায় নেই। বেশ তবে তাই হোক, বাহক এবং যাত্রী দুজনেই ভিজে ভিজে যাত্রা! সন্ধ্যায় ভেজার ঠেলাটা হল, কাঁপাকাপি শুরু হল একটু পরেই। আর বাতাসের তোড়ে ভ্যান তো মোটেও এগোয় না।

পাইলট কে বললাম, তুই তোর ভ্যান টানতে থাক আমি বরং হাঁটি, কারন যে বেগে সে চালাতে পারছে, হাঁটলে বরং আরো দ্রুত যেতে পারবো। অতপর ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল টাইপে আমার দুইজন এই ঝড়ের মাঝে হাঁটা এবং ভ্যান টানা, এই দুটি হাস্যকর কাজ করতে করতে চললাম। পথের একপাশে নদী, অন্যপাশে ক্ষেতখামার, ক্ষেত আর কি, এই রুক্ষ সময়ে সব অনাবাদী পতিত জমি। মাঝে মাঝে সে কি ভীষণ বাজ পড়ছে। একবার মনে হল, রোমান্টিকতা করতে যেয়ে এখন বজ্রপাতে না মরি! মেয়েটা অকালে মা হারাবে! প্রায় দুই তৃতিয়াংশ পথ হেটে এসে ঝড়ের তীব্রতা কমলো, আবার ভ্যানযোগে যাত্রা এবং অবশেষে বাড়ী ফিরতে পারা। পিচ্চিটাকে ভাল করে বৃষ্টি ভেজার পরবর্তী টিপস দিয়ে বিদায় করলাম। আমার মেয়ে তিড়িং তিড়িং করে লাফাচ্ছে, সে একটুও ভিজতে পরেনি তাই।

মফস্বল এলাকায় ঝড় ঝাপটায় বিদ্যুৎ থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক এবং নিরাপদ। ধরেই নিয়েছি সারারাত বিদ্যুৎ আসবে না। কারন প্রায় সময়ই গাছের ডাল ভেঙ্গে বিদ্যুৎ চলে যায় পরদিন এটা ঠিক করা হয়। কাজেই সেই রাতে যার যার মত ঘুম, সকালে টের পাওয়া গেল গত সন্ধ্যার কালবৈশাখী আমাদের বাড়ীর কিছুদূরে বিদ্যুতের একখানা খুঁটির ঘাড়টাকে মটকে দিয়েছে। হায় রে হায়! বিপদ সব আমাদের উপর পড়ার জন্যই বসে আছে? এখন এই খুঁটির ভাঙ্গা ঘাড় কে ঠিক করবে? পল্লী বিদ্যুৎ বলে বিদ্যৎ আমাদের, তবে খুঁটি পিডিবির, কাজেই খুঁটি আমরা ঠিক করতে পারবো না। এবার কার ঠেলা কে সামলায়! এদিকে ইউ এন ও সাহেব এর বাসায় পল্লী বিদ্যুৎ খাতির করে আলাদা কানেকশন দিয়ে দিয়েছে। কাজে কাজেই আমাদের আলো বাতাস পাবার আশা আরেকটু কমলো। গতরাতের রোমান্টিকতা আজ বিষন্নতায় রূপ নিয়েছে। ক্রমশ এটা আশংকায় পরিণত হচ্ছে।

আমার ষ্টাফ আরো এককাঠি উপরে! থেকে থেকে খবর নিয়ে আসে, এটা ঠিক হতে কমপক্ষে সাতদিন, পনের দিনও লাগতে পারে, আপনি জেনে রাখেন আপা। আমি বলি, তাইলে ঐ বাড়ী থেকে আমার লাইন টেনে দেন। ভদ্রলোক বেচারা মনে হয় এই কয়দিনে আমার ধমক ধামকে অতীষ্ট, কাজ কামে বিশেষ ফাঁকি দিতে পারছে না। তাই সে কোন সমাধানের পথে হাটে না। এবার বলল, ঐ বাড়ী থেকে লাইন টানতে যে তার লাগবে, সে খরচে আপনি আর জাফনা ঢাকা প্লেনে ঘুরে আসতে পারবেন। মনে মনে বলি প্লেনে এখন কতটাকা লাগে কোন ধারনা আছেX(। তার চাপাচাপিতে একবার টিকেট কেটেই ফেললাম ফোনে ফোনে। আমার কেন যেন প্রবল অস্বস্তি লাগছে, মন বলছে চলে যাওয়া ঠিক হবে না। ষ্টাফকে দেখলাম একটু খুশি খুশি। কি জানি আমার মনের ভুল কিনা। রাতেই আবার ফোন করে টিকেট বাতিল, ফাজলামিX(, আমি চলে যাই, তুমি ব্যাটা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘোরো, আর আমার কাজ চুলায় যাক। সকালে সে শোনে আমি যাবনা, বলল ঠিক আছে আর কিছু না। আমার স্থির সিদ্ধান্ত যাই হোক কাজ শেষ না করে কোথাও যাব না। নানা বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলে দিলাম।

ভাগ্য ভাল এরপর প্রতিরাতেই বৃষ্টি হচ্ছে, ফলে জাফনা একটু হলেও ঘুমাতে পারছে। যখন আই পি এস টা বন্ধ হয়ে যায়, তখন অসহায় মুখ করে শুধু বলে, আম্মু আর আই পি এস চলবে না? কেন চলবে না সেটা ওকে বুঝিয়ে বলি, বেশ দেখি বোঝে কোন অনুযোগ নেই, কষ্টটুকু সহ্য করছে। তিনদিন পর দেখা গেল ঘাড় ভাঙ্গা সারানোর চেষ্টা চলছে। বিকেলে আলো জ্বলে উঠলো, আহ সে যে কি আনন্দ। সব রুমে লাইট দেখে জাফনা অস্থির, আম্মু বন্ধ কর, আই পি এস আবার বন্ধ হয়ে যাবে, তখন ফ্যান চলবে না। আস্বস্ত করি, আর হবে না মা, এখন কারেন্ট এসেছে। শুনে সে যে কি খুশি, এবার নাকি আরাম করে ঘুমাতে পারবে।

তিনদিন তিনরাত আলো বাতাস বিহীন থেকে আবার আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলাম। একা হলে হয়তো এ অবস্থাটা উপভোগ করা যেত, জাফনা থাকাতে সেটা করা যায়নি, এতটুকু গরম সহ্য করতে পারেনা সে।
আর আমি পারিনা তার কষ্ট সহ্য করতে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:৫৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি অজ্ঞ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫২


ভাবতে পারো
৮০ টুকরো হতে হয়;
ভাবতে পারো
জ্বলে পুড়ে মরতে হয়!
ভাবতে পারো
কতটুকু লোভ লালসা
থাকলে পরে
এমন হবে বলো দেখি;
ভাবতে পারো
কেমন জন্ম মৃত্যুর খেলা;
জানি আমি
তুমি কিছু ভাবতে পারবে না
কারণ তুমি অজ্ঞ
মৃত্যুর পরে একা... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×