somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতবর্ষে মুসলমানদের চেপে রাখা ইতিহাস !! - ৫ (আরবী লিপির উৎস ও ইসলামের মাহাত্ন্য)

১৬ ই মে, ২০০৯ দুপুর ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হযরত আদম (আঃ) মানব জাতির আদি পিতা । তিনি নানা ভাষার অক্ষর মাটি দিয়ে তৈরী করে আগুনে তা পুড়িয়ে নিয়েছিলেন । পরে নূহ (আঃ) এর বন্যার পর তার বংশধরদের দ্বারা তা নানা দেশে চলে যায় । কুরআন ও ইতিহাস বর্ণিত ঐ বন্যা হয়েছিল ঈসা (আঃ) জন্মের ৩২০০ ব্ছর পূর্বে । [দ্রঃ মাওলানা দারিয়াবাদীর আল-কুরআনের উর্দু তাফসীর, পৃষ্ঠা-৩৬৯]

অন্য মতে ঈসমাঈল (আঃ) আরবী অক্ষরের জন্মদাতা । কেউ বলেন আরবী লিপির জন্মদাতা 'আদনান' । ঐতিহাসিক মসউদির মতে বনি মসিনের ছেলেরা আরবী লিপির আবিস্কারক । সেসব লোকদের নাম ছিল আবজাদ, হুত্তি, হাওয়জ ও কালিমন প্রভৃতি । তাদের নামানুসারেই আরবী বর্ণমালার বর্ণগুলোর নামকরণ হয়েছে । বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন বলেছেন, সারা পৃথিবীতে প্রথমে লেখা শুরু করেন দক্ষিণ আরবের লোকেরা । [দ্রঃ আরবী সাহিত্যের ইতিহাস, পৃঃ-১০৪ ]

অন্য মতে হযরত হুদ (আঃ) লিখিত বর্ণের স্রষ্টা আর তিনি প্রত্যাদেশ দ্বারা তা শিখেছিলেন । [দ্রঃ আহমাদ হাসানের লেখা আরবী বই এর উর্দু অনুবাদ, পৃষ্ঠা-১৫১]

ডঃ শহীদুল্লাহর মতে আরবী লিপি শামী লিপি হতে এসেছে এবং গ্রিক ও লাতিন বর্ণমালাও ঐ শামীর অনুকরণে রচিত । [দ্রঃ ডঃ শহীদুল্লাহর সংবর্ধনা গ্রন্হ, আরবী বর্ণমালা ]

ভাষা গবেষক জার্মান প্রাচ্যবিদ মুরতস প্রমাণ করেছেন আরবীভাষীরাই ইয়ামেনে আরবী লিপি তৈরী করে । তিনি আরও প্রমাণ করেছেন স্পেনভাষীরা তাদের লেখার বিদ্যা শিখেছিল দক্ষিণ আরব থেকে । [দ্রঃ ডক্টর মনসুর ফাহামীর লেখা মুজাল্লাতুল মজমইল আরাবী, দামেশক ১ ম খন্ড, সংখ্যা ৩২, পৃষ্ঠা ১০৫-১০৭]

সুতরাং প্রমাণ হয়, আরবরা অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিলেন না বরং তাঁদের তৈরি আলোকবর্তিকা সারা বিশ্বকে আলোকিত করেছে । হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে নিরক্ষর ছিলেন, তার অন্য তাৎপর্য আছে । যদি তিনি উচ্চশ্রেণীর শিক্ষক হতেন অথবা কোন উচ্চ বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতেন তাহলে অনেকে ভাবতেন এত ভাষা, ভাব ও অলংকার সংবলিত কুরআন তাঁরই রচনা । কিন্তু তিনি তার সুযোগ পান নি । তাছাড়া পন্ডিত পিতা হতেও পুত্রের পান্ডিত্য অর্জন সম্ভব, কিন্তু উনার ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বেই উনার পিতা আবদুল্লাহ পরলোক গমন করেছিলেন । আর বিদুষী মা হতেও শিক্ষা নেওয়া যায়, কিন্তু সেখানেও মহানবী (সাঃ) বন্চিত ছিলেন । কারণ মক্কার বিষাক্ত লু হাওয়া এবং অস্বাস্হ্যকর আবহাওয়ার জন্য কচি বেলাতেই উনার মা উনাকে অনেক দূরে হালিমা নামের এক ধাত্রীর নিকট পাঠিয়েছিলেন লালন পালন করার জন্য । আর হালিমার ছেলেরা ছিল মেষের রাখাল । এসব সত্য তথ্যের মাঝখানে এটাই প্রমাণ হয় যে, কুরআনের সৃষ্টি নিপূণতায় মহানবী (সাঃ) এর কোন হাত ছিল না বরং তা আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত একটি ঐশী গ্রন্হ । পৃথিবীর সকল শিক্ষকের শিক্ষক নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বরণীয় ও স্মরণীয় , কিন্তু কারো একথা বলার সুযোগ নেই যে তিনি বিশ্ব নবীর শিক্ষক । তবে এটা ঠিক যে, তিনি নিজে লিখতে না জানলেও কলম ও লেখার গুরুত্ব তার জানা ছিল । তিনি জানতেন, যে জাতির কলম যত শক্তিশালী সে জাতি তত প্রতিষ্ঠিত ও উন্নত হতে পারবে । তাই ৬২৪ খ্রীষ্টাব্দে বদর যুদ্ধের বন্দিদের মুক্তি দিয়েছেন এক ঐতিহাসিক শর্তে । সেটা হচ্ছে - নবীর নিরক্ষর ভক্তদের দশজনকে লেখা শেখাতে পারলেই একজন বন্দি মুক্তি পাবেন । অবশ্য শিক্ষিত বন্দিদের জন্য এই শর্ত ছিল । [দ্রঃ সিরাতুল মসতাফা, ১ম খন্ড, ৫৯১ পৃষ্ঠা ]

বিশ্বনবী তাঁর বক্তব্য অনেক ক্ষেত্রে লিখিয়ে নিতেন । [হাদীস সংকলনের ইতিহাস, পৃষ্ঠা ২২৩-২২৪, লেখক মুঃ আঃ রহিম ]

'সাদিকাহ' বলে একটি হাদীস নবীর যুগেই সংকলন করা হয়েছিল যাতে এক হাজার হাদীস লেখা ছিল । [সুনানে দারিমি, পৃষ্ঠা ৬৭ ]

হযরত আনাস নবীজির সঙ্গী ছিলেন । তিনি তার আদেশ, নির্দেশ, নিষেধ ও উপদেশ লিখে রাখতেন । লেখার মধ্যে যাতে ভুল না হয় বা অনিচ্ছাকৃত যোগ-বিয়োগ না হয়, তাই তিনি পড়ে শোনাতে বলতেন এবং বিশ্বনবী (সাঃ) শুনতেন । [হাকিমঃ মুসতাদরাক, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা-৫৭৩]

বিশ্বনবী মক্কা ও মদীনাকেই শুধু শিক্ষাকেন্দ্র গড়েনন নি বরং তাঁর পন্ডিত মুহাদ্দিস সাহাবীদের নিজের কাছে না রেখে তাঁদের পাঠিয়ে দিতেন তাঁদের প্রিয় জন্মভূমি হতে দূর-দূরান্তে । তাই দেখা যায় নবীর যুগে মক্কায় ২৬ জনকে রেখেছিলেন, কুফায় ৫১ জন, আফ্রিকার মিসরে ১৬, খোরাসানে ৬ জন ও জযীরায় ৩ জন । [দ্রঃ নূর মোহাম্মদ আজমীর হাদীসের তত্ত্ব ও ইতিহাসের পৃষ্ঠা ১৯ ]

ভাষা, ব্যাকরণ ও লিপির ইতিহাসের ফিরিশ্তি আজ বিশাল হলেও আরব সভ্যতা বা মুসলমান সভ্যতা একটা সাধারণ বস্তু নয়, বরং অসাধারণ ও উল্লেখযোগ্য । বর্তমানে পৃথিবীতে যত ভাষা আছে আরবী ভাষা প্রথম সারির আর্ন্তজাতিক ভাষা বলে গণ্য । তাই ইউ.এন.ও. তেও যে কোন বক্তব্য আরবীতে অনুবাদ করতেই হয় । যদিও বর্তমান পৃথিবীতে ভাষা আছে মোট দু'হাজার সাত শ' ছিয়ানব্বইটি । [দ্রঃ ডঃ শহীদুল্লাহর ভাষার উৎপত্তি, মুঃ সফিউল্লাহ সম্পাদিত শহীদুল্লাহর সংবর্ধনা গ্রন্হ (১৯৬৭) পৃষ্ঠা ২২২ হতে ২২৭]

পূর্বেই ইঙ্গিত দিয়েছি যে মুসলিম জাতি এবং ইসলাম ধর্মকে যেন কেউ একটা মামুলি বা অতি সাধারণ বিষয় বলে এড়িয়ে না যান । বর্তমান সিনেমা, টেলিভিশন, রেডিও, বই-পুস্তক বিশেষত ইতিহাসে প্রাপ্তব্য বিষয় হলো, মুসলমান যেন হতভাগ্য জাতি আর তাদের ইতিহাস শুধু অত্যাচার আর বিলাসিতার ফানুস । তারা 'বিদেশী' , আমাদের স্বদেশে এসে ভারতকে করেছে অনুন্নত অথবা ধ্বংস । কিন্তু এ কথা প্রকৃত ইতিহাস বলে না ।

যেমন অধ্যাপক শান্তিভূষণ বসু বলেন -

ক. " পৃথিবীর সর্বাধুনিক ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মের নাম ইসলাম ধর্ম । বহু পন্ডিতের মতে ইসলাম কার্যকরীভাবে মানুষের মনুষ্যত্ব রক্ষায় তৎপর ।.... .. খ্রিষ্টধর্ম মানুষকে পাপের ফলস্বরূপ বিচার করেছে। ...... হিন্দু ধর্মে মানুষকে বলা হয়েছে অমৃতের সন্তান । আপন সত্তার রূপ আবিস্কার করে মানুষ আবার ঈশ্বরেই ফিরে যাবে । তার সত্তার রূপটিই হচ্ছে ঈশ্বরের রূপ, অর্থাৎ মানুষের ঈশ্বর হতে বাধা নেই । বাইবেলে লেখা হয়েছে, একটি উটের পক্ষে সূঁচের রুদ্ধ পথে চলা যতটা দুস্কর, ধনী ব্যাক্তিদের স্বর্গে পৌছানো তত কঠিন অথচ ইহজগতে দারিদ্রপীড়িত অসহায় মানুষের দুর্গতির অন্ত নেই । হিন্দু ধর্মে মানুষকে যতই ঈশ্বর বলা হয়েছে ততই মনুষ্যত্বের অবমাননা ঘটেছে দিনে দিনে । কাজেই বলা চলে, উপরোক্ত দুটি ধর্মে যদিও মানুষের কল্যণই সমস্ত আলোচনার মূল লক্ষ্য তবুও কার্যত সামাজিক জীবণে এই কল্যাণ প্রকৃষ্ট রূপ পায় নি । ইসলাম মানুষের কল্যাণ কামনা করে বাস্তব চেহারা পাবার দিকে এগিয়েছে । শুধু বাক্যেই নয় , প্রকাশিত সত্যেই জানা গেছে ইসলাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও ইহজাগতিক । ... এবং তিনিই (মুহাম্মদ) সমগ্র মানব সমাজকে আহ্বান করেন সমস্ত অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে । ....তাঁর এই আহ্বান ও সংগ্রাম এতই প্রত্যক্ষ ও এতই সামাজিক মানুষের জীবন যাত্রায় সত্য যে, ইসলাম স্বভাবতই সহজ, সরল, গণতান্ত্রিক ও মানবিক ধর্ম হয়ে উঠে । "



খ. " 'মুসলিম' শব্দটির অর্থও তাই, 'যারা আনুগত্য স্বীকার করেছে ' । এই আনুগত্য পৃথিবীর চূড়ান্ত শক্তির কাছে নয়, মহত্তম কোন ব্যাক্তি বিশেষের কাছে নয়, এমন কি মুহাম্মদের কাছেও নয় । আনুগত্য একমাত্র আল্লাহর কাছে । "

গ. " ইসলাম পুরোহিত তন্ত্রের ধর্ম নয় । ঈশ্বর মানুষের মধ্যে তৃতীয় কোন মধ্যস্হের প্রয়োজন নেই ইসলামে । যে কোন শুদ্ধ চরিত্র মুসলমান মসজিদে প্রার্থনা পরিচালনা করতে পারেন । "

উপরোক্ত ক, খ ও গ মন্তব্য নৈহাটির ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজের অধ্যাপক শান্তিভূষণ বসুর 'প্রাচ্য দর্শনের ভূমিকা ' গ্রন্হের ২২৮, ২২৯, ২৩২ ও ২৩৪ পৃষ্ঠা হতে নেওয়া হলো । যেটা ছাপা হয়েছে ১৯৬৪ সালের আগষ্ট মাসে, কলকাতা ৯ হতে ।

১৯৬৪ সালের ছাপা তথ্যের সাথে ইদানিংকালের ছাপা তথ্যের যে অনেক গরমিল সর্বত্র পরিলক্ষিত হয় তা অতীব দুঃখের ও চিন্তার বিষয় ।

[সূত্রঃ চেপে রাখা ইতিহাস, গোলাম আহমাদ মোর্তজা , মদীনা পাবলিকেশন্স । ]
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০০৯ দুপুর ২:০৬
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×