somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতবর্ষে মুসলমানদের চেপে রাখা ইতিহাস !! - ৪ --সভ্যতা ও বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান

১৫ ই মে, ২০০৯ দুপুর ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খলীফা মামুনের বিরাট গ্রন্হাগারের লাইব্রেরিয়ান ছিলেন মুহাম্মদ ইবনে মূসা আল খারেজমি । ইনিই পৃথিবীতে প্রথম বীজ গণিতের জন্মদাতা । তখনকার যুগে গ্রন্গারিক পদটি পাওয়া খুব কঠিন ছিল কারণ, তাঁকে অত্যন্ত পান্ডিত্য এবং স্বরণশক্তির অধিকারী, চরিত্রবান, মধুরভাষী ও পরিশ্রমী হতে হতো । সেই সময় পৃথিবীর মধ্যে তিনিই ছিলেন শ্রেষ্ঠতম গণিতজ্ঞ । তিনি ঐ অভিজ্ঞতা শুধু বই পড়েই অর্জন করেন নি বরং বিশ্বপর্যটনও ছিল তার কারণ । তিনি ভারতেও এসেছিলেন বলে অনেকের ধারণা । ভারতের বহু ছাত্রকে তার জ্ঞানাংশ দিয়ে তিনি তাঁর প্রতিভার বীজ বপন করেন ।

আর এ কথাও অস্বীকার করা যায় না যে, ভারতে সে যুগে যা কিছু গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছেন তা তিনিও গ্রহণ করেছিলেন । কারণ পর্যটনের উদ্দেশই ছিল জ্ঞান সন্চয় । তিনি ভারতের বিষয় বর্ণনা করে 'কিতাবুল হিন্দ' নামে একটি গ্রন্হ রচনা করেন ।

আরো মনে রাখার কথা, অঙ্ক বিভাগের শূন্যের মূল্য অমূল্য এবং অপরিসীম । এই শূন্যের [০] জন্মদাতাও তিনি । 'হিসাব আল জাবার ওয়াল মুকাবেলা' গ্রন্হ তাঁর বিরাট অবদান ।

তিনি বিখ্যাত জোর্তিবিদও ছিলেন । খলীফার অনুরোধে তিনি আকাশের একটি মানচিত্র আঁকেন এবং একটি পন্জিকার জন্ম দেন । তাকে সরকারি উপাধি দেওয়া হয়েছিল 'সাহিব আলজিজ' বলে । [প্রমাণঃ সমরেন্দ্রনাথ সেনের লেখা বিজ্ঞানের ইতিহাস, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১২৬, ১৩৬৪]

আল মুকাদ্দিস একজন ঐতিহাসিক এবং পর্যটক । তিনি বলেন- আদাদউল্লাহ সিরাজ শহরে এমন একটি লাইব্রেরি করেছিলেন যে অট্টালিকাটির তখন পৃথিবীতে দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত ছিল না । যা দেখলে মূর্খ শিক্ষিত যে কোন জন মুগ্ধ না হয়ে পারত না । ভবনটির ভেতর অগভীর জলের নহর দিয়ে সাজানো ছিল, উপরে ছিল গম্বুজ আর অট্টালিকাটি উদ্যান দিয়ে ঘেরা ছিল, সেই সংলগ্ন একটি হ্রদ ছিল । পাঠকদের সুবিধার জন্য কাঠের মাচান বা কাঠের তাক একেবারে নিচে হতে উপর পর্যন্ত সাজানো ছিল, মেঝেতে কার্পেট সদৃশ বিছানা বিছানো থাকত । সেটা ছাড়াও সেখানে আরো গ্রন্হাগার ছিল ।

সবুরের একাডেমি সংলগ্ন গ্রন্হাগারটিতে বই ছিল ১০৪০০ খানি । সবগুলোই হাতে লেখা । বাগদাদে ১০৬৫ খ্রিষ্টাব্দে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ আরম্ভ হয় আর শেষ হয় ১০৬৭ খ্রিষ্টাব্দে । এটির প্রতিষ্ঠাতা নিজাম-উল-মূলক । তাঁর কিছূ দোষ-ক্রটি যেমন ছিল, গুণও ছিল সাগরের মতো । এখানে ছেলেরা মাসিক বৃত্তি পেত । অধ্যাপকগণ মিম্বারের মতো উচু জায়গায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিতেন । ছাত্রদের প্রশ্ন করে উত্তর শুনতেন । দেশ-বিদেশের ছাত্রদের সংখ্যা এত ছিল যে উচ্চকন্ঠের ঘোষক চিৎকার করে অধ্যাপকদের কথা জানিয়ে দিতেন ।



ঐ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পৃথিবী বিখ্যাত লাইব্রেরিও সগৌরবে শোভিত হচ্ছিল । ১১১৬ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠানের চারদিকে আগুন লেগে যায় । কোনোরকমে গ্রন্হগুলো সরিয়ে ফেলা হয় বটে কিন্তু প্রতিষ্ঠান ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্হ হয় । ইবনুল জওজী বলেন, তাঁর ক্যাটালগগুলো বড় সুন্দরভাবে সাজানো ছিল, তার মধ্যে একটা ক্যাটালগে বই এর সংখ্যাই ছ'হাজার । [প্রমাণঃ Abdus Subbuh: Libraries in the Early Islamic World (Reprinted from Journal of the University of Peshwar No-6. 1958) P.8]

মোঙ্গলনেতা হালাকু খাঁ ১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দে বাগদাদ আক্রমণ করে নগর ও খলীফার বংশ ধ্বংস করে দেয় । অনেকে মনে করেন হালাকু বুঝি মুসলমান । কিন্তু আসলে তা নয়, বরং তারা নরপিশাচ শ্রেণীর শক্তিশালী লুণ্ঠণকারী এবং তারা জাতিতে ছিল অমুসলমান । ১৩২৭ খ্রিষ্টাব্দে ইবনে বতুতা যখন বাগদাদ পর্যটন করেন সেই সময়টা ছিল হালাকুর আক্রমণের ৭০তম বছর । তিনি ঐ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বর্ণনা করে গেছেন ।

৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে আফ্রিকার কায়রো বা মিসরে আল-আজহার নামে একটি বিরাট মসজিদ নির্মিত হয় । আল আজিজ তার সঙ্গে একটি একাডেমি তৈরী করেন পরে সেটা উন্নতির শেষ ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয় । এখনো সেটা বর্তমান । সেই সময় সেই গ্রন্হাগারে গ্রন্হের সংখ্যা ছিল ১৮,০০০ ।



১০০৪ খ্রিষ্টাব্দে আল হাকিম 'দারুল ইলম ' এর উদ্বোধন করেন । সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কুরআন-হাদীস, ভাষাতত্ত্ব, জোর্তিবিদ্যা, ব্যাকরণ ও চিকিৎসা প্রভৃতি শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্হা ছিল । প্রতি মাসে বেশ কয়েকবার বিতর্ক সভা অনুষ্ঠিত হতো ।

অষ্টম শতকে খলীফা হারুণের সময় বাগদাদ, সিরিয়ায় দামেস্ক, ত্রিপলি ও হামায় কাগজের কল স্হাপিত হয় । অতএব এ কথা অত্যন্ত সত্য, মুদ্রণ যন্ত্রের আবিস্কারের আগে কাগজকল সাহিত্যিক তৎপরতায় নতুন যুগের দ্বারোদঘাটন করে ।

মিসরের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আরো যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় তখন ছিল, তার সবগুলো মুসলিম সভ্যতার সাক্ষ্য দেয় । যেমন - কর্ডোভা, গ্রানাডা, টলেডো, মার্সিয়া, আলমেরিয়া, সেভিল, ভ্যালেনসিয়া, কাদজে বিশ্ববিদ্যালয় । যেমন, মিঃ নিকলসন বলেছেন, মুসলমানদের কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যলয় স্পেন, ফ্রান্স, ইটালি এমনকি জার্মানির জ্ঞান সাধকদের চুম্বকের মতো টেনে আনত । [দ্রঃ Nicholson এর লেখা History of Arabs পুস্তকের ৮১১ পৃষ্ঠা, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় মুদ্রণ, ১৯৬২]

আগেই জানানো হয়েছে যে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শিক্ষা হচ্ছে যে, 'বিদ্যা শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অবশ্য কর্তব্য ।' মুসলিম বলতে পুরুষ ও মহিলা উভয়কেই বোঝায় । সুতরাং হযরত (সাঃ) এর সময়ে মহিলাগণও কবিতা, কাব্য সাহিত্য এবং কুরআন-হাদীসে যে পান্ডিত্য অর্জন করেছিলেন সে কথা অনেকের জানা আছে । যেমন, মহানবী (সাঃ) এর স্ত্রী মা আয়েশা (রাঃ) একজন উচ্চস্তরের হাদীসবিদ ও বিদুষী ছিলেন ।

স্পেন দেশে যখন ইসলামী সভ্যতা পৌছল তখন শুধু পুরুষরাই জ্ঞান চর্চায় এগিয়ে এসেছিলেন তা নয়, বরং মেয়েরাও অনগ্রসর ছিলেন না । যেমন, বিখ্যাত মহিলা লাবানা, ফাতিমা, রাজিয়া, খাদিজা, আয়েশা প্রভৃতি । কেউ যেন মনে না করেন হযরত মুহাম্মদের স্ত্রী-কন্যা তাঁরা । তাদের নামগুলোর সাথে নবী সাহেবের পরিবারের নামের মিল আছে মাত্র । এর থেকে তাদের মুহাম্মদ (সাঃ) এর পরিবারের প্রতি ভক্তি বোঝা যায় । এমনিভাবে 'বাদেয়া' নামে এক সুপন্ডিত মহিলা ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন । যেহেতু তখন বই ছাপার প্রেস ছিল না তাই হাতে লেখার ওপর নির্ভর করতে হতো জ্ঞান অনুসন্ধানকারীদের । তাই জ্ঞানী পুরুষদের বাড়ির মেয়েরা - স্ত্রী কন্যা - বোনেরা সেই কাজে সহযোগিতা করতেন । অতএব লেখায় আরো হাত পাকত, তাছাড়া যে তথ্য কেউ নিজে হাতে লেখে বা কপি করে অবশ্যই সেটা তার একবার নয় একাধিকবার পড়ার সমতুল্য হয়ে যায় ।

(চলবে )

সূত্রঃ চেপে রাখা ইতিহাস, গোলাম আহমাদ মোর্তজা , মদীনা পাবলিকেশন্স ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৫
১৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×