সর্প বিষয়ক কর্মশালা- ৪/ শঙ্খচুড়
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
শঙ্খচুড় পৃথিবীর বিষধর সাপগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান। সদ্য জন্ম হওয়া সাপের বিষও পরিণত সাপের বিষের মতো সমান তীব্র হয়ে থাকে। এই সাপের বিষ মূলত নিউরোটক্সিক, অর্থাৎ এটির বিষ আক্রান্ত প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ করে। শঙ্খচূড়ের একটি সাধারণ দংশন-ই যেকোনো মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। এর কামড়ের ফলে সৃষ্ট মৃত্যু হার প্রায় ৭৫%। বাংলাদেশের সুন্দরবনের গভীরে এই সাপ দেখতে পাওয়া যায়।
বলা হয় সাপের রাজা শঙ্খচুড়। দীর্ঘ সুঠাম দেহ, বারো-আঠারো ফুট লম্বা। এদের ওজন হয় ১২-২০ পাউন্ড। গায়ের রং জলপাই, বাদামী বা সবুজাভ হলুদ, পেট ও গলা সাদাটে হলুদ। এর অন্য নাম রাজ কোবরা (ইংরেজি: King Cobra) (বৈজ্ঞানিক নাম — Ophiophagus hannah) ইংরেজি নামে কোবরা শব্দটি থাকলেও এটি কোবরা বা গোখরা নয়। এটি সম্পূর্ণ আলাদা গণের একটি সাপ। এই সাপের আকার পর্যবেক্ষণ এবং ফণার পেছনের অংশ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গোখরার সাথে এটির পার্থক্য খুব সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব। গোখরার তুলনায় শঙ্খচূড় আকৃতিতে যথেষ্ট পরিমাণ বড়। এর ফণার পেছনে প্রচলিত গোখরা বা খড়মপায়া গোখরার মতো চশমা বা গোক্ষুর আকৃতি চিহ্ন থাকে না। শঙ্খচূড়ের দেহজুড়ে নানারকম ছোপ বা প্যাটার্ন দেখা যায়। এরা লোকালয়ে থাকে না। গভীর জঙ্গলে ভেজা জায়গায় থাকতে এরা খুব পছন্দ করে। নদীর পাড় এবং পাহাড়ী এলাকাতেও এদের দেখা যায়। এরা ভেজা আবহাওয়া ছাড়া বের হয় কম। এরা জানুয়ারী মাসে মিলিত হয়। বাসা বানায় এপ্রিলে। চার বছর বয়স হলেই এরা সাবালক হয়ে যায়। অর্থাৎ যৌনমিলনের জন্য উপযুক্ত হয়। এরা বছরে একবার সঙ্গম করে থাকে। এরা একসাথে ১৮-৫০ টি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার আগে স্ত্রী শঙ্খচূড় তা শরীর পাকিয়ে কুণ্ডুলী তৈরি করে, এবং তা মৃত পাতা ব্যবহার করে উঁচু ঢিপির মতো তৈরি করেন। ডিম থেকে বাচ্চা হবার জন্য ৭০-৭৭ দিন ডিমে তা দেবার প্রয়োজন হয়। প্রায় ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ডিমগুলোকে তা দেওয়া হয়। বাচ্চা শঙ্খচুড় ১২-২৫ ইঞ্চি হয়ে থাকে। এই সাপ সাধারণত ২০ বছর বাঁচে। এইসাপ বেসিক্যালী সাউথ এশিয়ার সাপ।
শঙ্খচূড় এলাপিডি পরিবারভুক্ত একটি সাপ। ইউরোপ ও এন্টার্কটিকা ব্যতীত এই পরিবারে সারা পৃথিবীতে প্রায় ২০০-এর বেশি প্রজাতি দেখা যায়। এদের সবগুলোই বিষধর, এবং এদের সবারই ছোট, স্থায়ী বিষদাঁত রয়েছে। কিন্তু অঞ্চলভেদে এদের মধ্যে বাসস্থান, আচরণ, এবং বর্ণ ও গঠনগত অনেক পার্থক্য দেখা যায়। এলাপিডি পরিবারভুক্ত চারটি খুবই প্রচলিত সাপ হচ্ছে কোরাল সাপ, ডেথ অ্যাডার, ব্ল্যাক মাম্বা, এবং শঙ্খচূড়।
শঙ্খচূড়ের গণের নাম হচ্ছে Ophiophagus, যার আক্ষরিক অর্থ "সাপ খাদক", এবং প্রাথমিকভাবে এটি অন্যান্য সাপ ভক্ষণ করেই তার খাদ্য চাহিদা মেটায়। যেসকল সাপ এটি ভক্ষণ করে তার মধ্যে আছে র্যাট সাপ, এবং ছোট আকৃতির অজগর। এছাড়াও অন্যান্য বিষধর সাপও এটি ভক্ষণ করে, যেমন: ক্রেইট, গোখরা, এবং নিজ প্রজাতিভুক্ত অন্যান্য ছোট সাপ। তাছাড়াও এরা কাঠবিড়ালী, ব্যাঙ, পাখি ও গিরগিটি খেয়ে থাকে।
শঙ্খচুড় যেকোন অবস্থায় হুমকি অনুভব করলে সাথে সাথে ফনা তোলে। শঙ্খচুড়ই একমাত্র সাপ যারা বাসা বোনে। বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত অত্যন্ত সতর্কভাবে এরা ডিম পাহারা দেয়।
[এই লেখার প্রচুর তথ্য নেয়া হলো উইকিপিডিয়া, সাপ বিষয়ক বিভিন্ন সাইট ও বইপত্র থেকে আর ছবিটি নেয়া হলো ন্যাশনাল জিওগ্রাফি থেকে।]
সর্প বিষয়ক কর্মশালা- ১ / ফিতাসাপ
সর্প বিষয়ক কর্মশালা- ২/ চন্দ্রবোড়া
সর্প বিষয়ক কর্মশালা- ৩/ লাউডগা
১২টি মন্তব্য ৮টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কোরআন কী পোড়ানো যায়!
আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন
সেঞ্চুরী’তম
লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা
দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?
ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?
বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভণ্ড মুসলমান
ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?
মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আসবে তুমি কবে ?
আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন