somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ব্লগের কবিতা : প্রবাহ ঝলকের নির্বাচিত সতেরো /৩য় পর্ব

১২ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগের কবিতা : প্রবাহ ঝলকের নির্বাচিত সতেরো / ১ম পর্ব
Click This Link
-----------------------------------------------------------------------------
ব্লগের কবিতা : প্রবাহ ঝলকের নির্বাচিত সতেরো / ২য় পর্ব
Click This Link
------------------------------------------------------------------------------
কবিতার পাঠক কারা ? এ প্রশ্ন টি করেন মার্কিন কবি জেমস টেট।উত্তর ও দেন তিনি। বলেন, যারা মনে কবিতাকে লালন করেন। আর যারা কবি।
কবিতাকে ধারণের একটা উৎকৃষ্ট মাঠ হচ্ছে লিটল ম্যাগ। বিশ্বের অনেক দেশেই জাতীয় দৈনিকগুলোর সাথে সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশিত
হয় না। তাহলে কবিরা কোথায় কবিতা লিখেন ? লিখেন এইসব সাহিত্য
ম্যাগে। যাকে আমরা ছোটকাগজ কিংবা লিটল ম্যাগ বলি।
দ্যা পোয়েট্রি এর কথা অনেকেই জানেন। বের হয় শিকাগো থেকে। আমেরিকান পোয়েট্রি রিভিউ বের হয় ফিলাডেলফিয়া অংগরাজ্য থেকে। তাছাড়া আটলান্টা রিভিউ , প্যারিস রিভিউ এর
মতো পুষ্ট সাহিত্যম্যাগগুলোই ধারণ করছে বিশ্বসাহিত্য। কবিতা । কবিতাকথা।
বাংলাদেশে লিটলম্যাগের যে নিরন্তর প্রচেষ্টা চলছে , তা বিশ্বসাহিত্যের
মাঠে উল্লেখ করার মতো বিষয়। হোক না তা বাংলা ভাষায়।
সৈয়দ আফসার একজন লিটলম্যাগ সম্পাদক। তার সম্পাদনায় ''অর্কিড''
প্রশংসা কুড়িয়েছে বোদ্ধা মহলে। তার কবিতা আমি প্রথম পড়েছি সেই
ছোট কাগজেই। ব্লগেও তিনি লিখছেন নিয়মিত। সৈয়দ আফসার এর কবিতা দাঁড়িয়েছে তার নিজস্বতা নিয়ে। পড়া যাক তার কিছু পংক্তি।

ওই পথের রঙ ছুঁব কি ছুঁব না ভাবতে ভাবতে উড়ে গেল পদতল-মাটি আর
জলভেজা বালির কথা তবুও বাঁধা পড়তে হলো শুকনো জল আর পিঁপড়ের
নিকট এসে অথচ জলপতনের আগে আমাদের ডুবে যাবার কথা ছিলো
ঝোপজঙ্গলের পাশে, আর ওই পথ ছুঁব না বলেই তখনও আমরা খুঁজেছি
বহুবর্ণ পথের ডাঁটা;তোমার কথা শুনে লতা পাতার মতো বোবা হতে থাকি
স্বর্ণলতা গাছের মর্মরে...শুনেছি এখনও অতিযত্ন করে গুনে রাখো নীরবতা
যেন পত্রলিপিতে কেঁপে ওঠে স্মৃতিপথটুকু...

(পথলিপি / সৈয়দ আফসার )

বহুবর্ণ পথের ডাঁটা খুঁজে হারিয়ে যাবার কথা ছিল কবির! কাঁপানো স্মৃতির
মতোই বেঁচে থাকতে চান কবি , প্রিয়সীর হাত ধরে।কিংবা মাটির হাতে রেখে হাত। আমি মুগ্ধ হয়ে পড়ি সেই সৈয়দ আফসার এর কবিতা। যিনি
অন্য একজন কবির মাত্র একটা কবিতার বুননচিত্র আঁকতে গিয়ে লিখে
ফেলতে পারেন একটা পরিশুদ্ধ প্রবন্ধ। তা লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সুরমা য় ছাপা হয়। আর আমি পড়ি নিউইয়র্কে বসে। হাঁ , তা একজন প্রকৃত কবিই পারেন। তার মনন ধীরে বয়ে যায় , কবিতায়।

উৎসের আলোড়ন খুঁজে কবি বার বার সমর্পিত হন প্রকৃতির কাছে।তার
সকল আয়োজন, নীলিমার আত্মজীবনকে মানুষের কাছে নিয়ে আসে।
মানুষ মিলিয়ে দেখে কি এক অভিনব চেতনায় বেঁচে আছে কবিতা। আর
সগৌরবে তা কিভাবে ধারণ করছেন কবি।
কবিতায় সমকালকে চিহ্নায়নের বিষয়টিকে আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।
কারণ আজ থেকে শত বছর পর , একজন পাঠক তার পূর্বসূরি কবির জবানিতেই জানবেন ,এই সময়কে।
প্রবর রিপন তার কাবিতায় এভাবেই লিখে যান নিজেকে।

শহরের সবচেয়ে অনিরাপদ তালাটির মত ঝুলে আছি,
খুলে যাবো কি?
সমুদ্রের দিকে মুখ করা যে দরজা এখন আটকানো ;সেইদিকে?
সিংহের হা করা বিশাল মুখ
শিকারের বিতৃষ্ণায় এখন চোয়ালে আটকে আছে
কেশরের নিস্পৃহতায় তালার হৃদয়ে মরিচা
তালা কড়া নাড়ছে সেই ঘরের দরজায়
নাগরিকদের শ্যাওলা ধরা, ঘামে ঘামে মরিচাপড়া হাড়ের গন্ধে
যে ঘরে একদিন ঢুকে পড়ে আর বেরতে পারেনি
উজ্জ্বল সূর্য, হীরন্ময় চাঁদ আর তারাদের কিশোরবেলা।
এই তালা তাদের প্রেমিকাদের নিহত আত্মার সুরে দোলে
এই তালা প্রেমিকার অতৃপ্ত রতিতে ধাতব।
তালা কি অন্ধকারের ইতিহাস
না- পেছনে অজস্র আকাশ ফেলে রেখে।
সামনের আকাশে পাখির নিঃসঙ্গতার ভবিষ্যৎ ???

অনিরাপদ তালাটির মত ঝুলে আছি
বাতাসে নড়ে উঠি আর গোপন দীর্ঘশ্বাস
হাওয়ার প্রশয়ে তালা দরজায় করছে Knock
সেই ঘরের দরজায়
যে ঘরে এক মৃত তালা বানিয়ের
নিথর চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে কর্পূর
যার নিঃসাড় চোখের কোটর থেকে
বেরিয়ে আসছে এক কান্নার শীতল নদী
যে নদীতে ভেসে গেছে আশ্চর্য চাবি
যে নদিতে তাদেরও আগে মাছ শিকারে নেমে পড়েছে
এক গেয়োঁ,নির্বোধ,অসভ্য,আদিম কিশোর
যার করতলে শেষবারের মত দেখা গিয়েছিল পৃথিবীর আকাশ
আর এখন যে আকাশের নিচে পৃথিবী
সে আকাশ আর আকাশ নয়
এক ভয়ঙ্কর চাবিহীন নীল-শুন্য তালা।

(কড়া নাড়ছে তালা/ প্রবর রিপন)
এই কবিতাটিই বলে দিচ্ছে অনেক প্রশ্নের জবাব। এই নিখুঁত চিত্রনকে
কিভাবে অস্বীকার করবে মানবইতিহাস ?

একবার এক কবির কাছে জানতে চেয়েছিলাম , তিনি ব্লগে ছদ্মনামে লিখেন কেন ? তিনি বলেছিলেন, স্বনামে লিখতে সংকোচবোধ করি তো
তাই। কেন এই সংকোচ ? আত্মবিশ্বাসের অভাব ?
না একজন কবির তো সে অভাব থাকার কথা নয়। অবশ্য এটা ঠিক নিকনামে লিখলে , অনেক অপ্রিয় সত্য লেখা যায়। নিজেকে দূরে দাঁড়িয়ে
পরখ করা যায়। কবিতায় নিজেকে পরখ করছেন এমন একজন কবির
ছদ্মনাম একলব্যের পুনর্জন্ম
তার কবিতায় একটি অন্তর্লীন মমতা লক্ষ্য করি গভীরতার সাথে।যে বিরহ
কবিকে লালন করে , সে ই তো পরমেশ্বের । দেখুন সেরকম কিছু পংক্তিমালার অংশবিশেষ ।
আঙ্গুল থেকে ঝড় তুলে নিতে নিতে সেদিন -
বুঝে উঠতে পারিনি কোন্‌ হাত দুটি আমার ,
তার আগেই ভীড় থেকে ছিটকে পড়েছি যোজন দূরত্বে ;

পথ আমাকে নেয়নি , আমার ঘর-ও ছিলো না ।
মুহূর্ত থেকে মুহূর্ত -
আমার কেবল শূন্যতার জরায়ুতে জন্মের অপেক্ষা
আলিঙ্গন কেবল সেই এক জন্মান্ধ ভিখিরিকে
যে বারবার হত্যা করতে গিয়ে নিহত হয়ে ফিরে আসে -
মৃত্যুও এ হেঁয়ালি ভীষণ
কেবল তাদের জন্য-

( পথ যাকে গ্রহন করেনি / একলব্যের পুনর্জন্ম )
আমার মনে হয় শূন্যতার জরায়ুতে জন্মের অপেক্ষা এই বিশ্বালোকই
করেছে প্রথম। আমরা , মানুষেরা - তার সন্তান বলেই সেই অপেক্ষাকে
আজীবনই উপেক্ষা করতে পারি না।
ব্লগে লেখার বিশেষ সুবিধাটি হচ্ছে, তা তাৎক্ষণিক আন্তর্জালের কল্যানে
বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দেয়া যায়। যারা এখানে লিখেন, তাদের অনেকেই হাত
পাকিয়েছেন লিটল ম্যাগে লিখে। সেই মাঠের আরেকজন শক্তিশালী কবি
নৃপ অনুপ।
এই কবির আগুনলতা সিরিজটি যতোই পড়েছি, আমি তন্ময় হয়েছি বারবার। কি এক উদ্যম আর সাহস নিয়ে এগিয়ে গেছেন কবি। আহা!
এই কথাগুলো যদি আমি বলতে পারতাম !

যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে কাঁদতে নেই, বরং প্রস্তুত হও।
যে আগুন জড়িয়ে ধরেছে তোমার আঁচলের আঙিনায়-
সে স্ফুলিঙ্গ- আত্মার গহীনে নিয়ে চাষ করো, দ্রোহের মন্ত্র...
দেখো তবে; যুদ্ধময়দানে পড়বে না তোমার চোখ থেকে জল।
কেননা তোমার কান্না- আমারো অন্তরে কান্না ঝরায়,
তখন আমার হাতে রাইফেল সঙ্গে আছো তুমি, কি করবো আমি?
যে ভাবেই হোক ভাঙ্গতে হবে খাঁচা, উড়াতে হবে পাখি...
হাত রেখে হাতে- ক্ষেপণাস্ত্রের দিকে তুলে অগ্নিময় চোখ,
একবার বলে ওঠো স্বশব্দে, এই চোখে সত্য বলার আছে সৎসাহস...
ডাস্টবিনে আর কতখানি জমে থাকে বলো, ময়লা- আবর্জনা!
মানুষের ভেতর এর-চেয়ে ডাস্ট, দেখলাম এসে যুদ্ধময়দানে-
প্রহসন কাকে বলে! তৃতীয় হাতের ছোঁয়ায় সারা মানচিত্র কাঁদে...
কিন্তু এখন ফেরার কোন উপায় নেই, পিছনে দেয়াল অবরুদ্ধ;
তাই সময় এসেছে সময়কে ধরো; প্রস্তুত হও- আরো প্রস্তুত...

(আগুনলতা - ৯ম পাঠ / নৃপ অনুপ )
মানুষের একটা গন্তব্য আছে। হতে পারে তা প্রেম - বৈভব কিংবা মৃত্যু।
মানুষের এই হাত পাতা, তাই আমার কাছে মনে হয় অমরতার স্পর্শ
পাবার প্রত্যয়। যদি নৃপ অনুপ এর ভাষায় বলি - ''স্বপ্নের ভিতরে পেতে রাখি হাত তবু এই পৃথিবীর দিকে '' ।
.....................( ক্রমশ : )

ছবি - আ্যলন টেইলর জেফরিস
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:০৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×