somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে দেখা আঁতুড় ঘর/৮

১১ ই মে, ২০০৯ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভয় আর নানা অনিশ্চয়তার মধ্যে কেটে গেল প্রায় দু'মাস । এরমধ্যে একদিন ডিউটি থেকে ফিরে মেজদা জানালো আমার রেজাল্ট বেরিয়েছে । ভালো রেজাল্ট হয়েছে । শিলিগুড়ির অবস্থা একটু ভালো । ফেরা যাবে । বি এস সি তে ভর্তি হওয়ার আবার আমার সাধ জেগেছে । এদিকে নক্সালরা বলছে বুর্জোয়া শিক্ষা ব্যবস্থা জ্বালিয়ে দাও । শুধু বলছেনা অনেক স্কুল কলেজ পোড়ানো হয়েও গেছে । তবু আমার সাধ অটুট । আমি বি এস সি পড়বো। কীভাবে কী হবে জানিনা । এদিকে রাজ্যে রাস্ট্রপতির শাসন । নক্সাল, সিপিএম, আর কংগ্রসের পারস্পরিক লড়াই অব্যাহত গতিতে চলছে । অবশ্য এত দিনে সমীকরণটি তৈরী হয়ে গেছে ।

যেহেতু সর্বশেষ সিপিএম ভেঙে নক্সাল (সিপিআইএমএল) তৈরী হয়েছে তাই নক্সাল বিপ্লবীদের প্রথম শ্রেণীশত্রু হলো সিপিএম । তাই সিপিএম হত্যাযোগ্য । আবার ১৯৬৭ সাল থেকে কংগ্রেস কে ক্ষমতার বাইরে বের করেছে সিপিএম ,তাই কংগ্রেসেরও শত্রু সিপিএম । সুতরাং শত্রুর শত্রু স্বাভাবিক মিত্র । দেখা গেছে অনেক জায়গায় কংগ্রেস নক্সাল ভাই ভাই । ঐ সময় আমার সাদা মনে একটা প্রশ্ন জেগেছিলো যে একজন কম্যুনিষ্ট একজন কম্যুনিষ্টকে হত্যা করার জন্য একজন বুর্জোয়ার সহায়তা নেয় কীভাবে । না কোনো উত্তর ছিলনা । আসলে এটাই শাসকবুর্জোয়ার মিলিত ষড়যন্ত্র ছিলো । কারণ সামনে এগিয়ে আসছিলো নির্বাচন । আর নির্বাচনে জিততে হলে যে পেশী শক্তির প্রয়োজন তা একমাত্র এই লুম্পেন মিশ্রিত নক্সালরাই দিতে পারবে । উপরন্তু তারা নির্বাচন বিরোধী । ফলে নির্বাচন কেন্দ্রীক ক্ষমতার প্রশ্নটিও এ ক্ষেত্রে নেই । পুলিশ প্রশ্নটিকে আরো সুচারু রূপে দেখে । তারা নক্সাল এবং সিপিএম উভয়ের নিধনের জন্যই রাজ্য জুড়ে ফাঁদ পেতে ফেলেছে । ফলে পশ্চিম বঙ্গে সেই সময় ছোট বড় কয়েকটি গণহত্যার ঘটনাও ঘটে । তার মধ্যে কলকাতার বরানগর কাশীপুর হত্যাকান্ড অন্যতম । এই ধরণের হত্যাকান্ডগুলো পুলিশাশ্রিত কংগ্রসের গুন্ডারাই চালাত । লক্ষ্য থাকতো সেই সিপিএম এবং অবাধ্য নকশালরাই । আর এসব কারণে যেমন হঠাৎই দেখা যাচ্ছিলো নক্সাল গ্রুপ গুলোর মধ্যে তৎকালীন কুখ্যাত যুবকংগ্রেসীরা ভিড়তে শুরু করেছে । ভেতরে ভেতরে লোভ ছড়াচ্ছে যে পুলিশের ব্যাপারটা তারা দেখবে । পুলিশ ছুঁলে আঠারো ঘা । সুতরাং অলিখিত একটা গ্রুপ জন্ম নিলো নাম 'কংসাল' । অবশ্য এই প্রচারটা করতো সিপিএমই । কারণ এই সাঁড়াশি আক্রমনের মুখে তাদের তখন অস্তিত্বের সংকট ।

অথচ এটা ভাবলে ভীষণ অবাক লাগে যে এ বাংলায় বামপন্থিয়ানার মেঘ তখন এত প্রবল যে পাশের দেশটিতে চলা একটা জাতীয়তাবাদী যুদ্ধ তাদের মনযোগ আকর্ষণ করতে পারছেনা । সেই যুদ্ধে লিপ্ত স্বজন স্বভাষীদের জন্য এই বিপ্লবের পক্ষ বিপক্ষ কেউই বিশেষ চিন্তিত ছিলেন বলে মনে হয়না । অবশ্যই এটা আমার সেই বয়সের উপলব্ধি । রাজনীতির এক মরণমুখি তাড়না তখনকার পশ্চিমবঙ্গকে যেন শুধুই তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে । এই আবর্তনে পড়ে সেইসব মানুষেরা যারা উদ্বাস্ত, যাদের স্বজনরা তখনও পড়ে রয়েছে ওখানে তারা শুধু নীরবে আবার এক দুঃস্বপ্নের আড়ালে মুখ ঢেকে গুনছে অনন্ত প্রহরের কাল ।

প্র‌থম কথা, যুদ্ধটা ,যতই পেছনে ভাষা থাকুক ,এটা একটা জাতীয়তাবাদী যুদ্ধ । যা বুর্জোয়া পাতিবুর্জোয়ারা করে থাকে । এতে সর্বহারাদের ভূমিকা নেই কিছু । এটা তো সর্বহারাদের বিপ্লবের যুগ । কারণ সর্বহারাদের একনায়কত্ব ছাড়া দেশের খেটে খাওয়া মানুষের মুক্তি নেই । বিপ্লবের সর্বশেষ ভার্সান মাওবাদ তাই বলে । কপিবুক বিপ্লব, কপিবুক মার্কস মাও চর্চার বেদীতলে কত যে রক্তাক্ত প্রাণ স্থবির হয়ে গেছে তার হিসেব নেই । আসলে একটু পেছনের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় ৭০ দশকে দাপিয়ে বেড়ানো বিপ্লবীদের পূর্বজরাও বঙ্গভঙ্গ, দেশভাগ, স্বাধীনতা,দ্বিজাতীয়তা কোনো ব্যাপারেই তারা তাদের অবস্থান, ভূমিকাকে স্পস্ট করে তুলতে একই ভাবে ব্যর্থ হয়েছিলো । বরং নানা সাময়িক বিতর্কিত অবস্থানের জন্য পরবর্তীতে ভুল স্বীকার বা সংশোধনের আয়োজন করেছে । সমালোচকেরা বলে থাকেন যে একসময় দেশভাগের সমর্থক বামপন্থীরা পশ্চিমবঙ্গে তাদের রাজনৈতিক শক্ত ভিত বানিয়েছে পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তুদের দ্বারা ।

শিলিগুড়ি ফিরে এসে যেদিন কলেজে আবার ভর্তি হলাম তার পরদিনই খবর এলো মা বাবা সমেত আমাদের বাকি পরিবার সেই বাঘমারা ক্যাম্পে এসে আশ্রয় নিয়েছে । বড়দা'র নির্দেশে আমি তার পরদিনই রওনা হয়ে গেলাম বাঘমারার উদ্দেশ্যে । মা বাবা সমেত সবাইকে নিয়ে আসার জন্য । সেই বাঘমারা, যেতে যেতে একটু স্মৃতিতাড়িতও লাগছিলো মনে হয় । পথে পড়ছিলো সেই তুরা, ডালু ক্যাম্প ইত্যাদি । তবে এবার দৃশ্যের বদল ঘটে গেছে । পথে পথে গাড়ি থামিয়ে সামরিক বাহিনীর তল্লাসী । সংগে পরিচয় পত্র না থাকলে ডালুর পরে আর এগোতে দিচ্ছেনা । পথে দু এক জায়গায় ট্রেনিং ক্যাম্প দেখা গেছে । বাসের যাত্রীরা বলাবলি করছিলো ওগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প ।
(ক্রমশঃ)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০০৯ রাত ১১:০০
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×