somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোবটিক ভালোবাসা অথবা বিচ্ছেদের গল্প

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত তিন সৌরবর্ষ ধরে পিছনে ঘুরে অবশেষে আজ জানতে পারলাম ভালবাসা আর ভালো লাগার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারার ক্ষমতা নেই সপ্তম বুদ্ধিমত্তার A-22 সিরিজের রোবটিনি ক্লারার!

ভাবছি ওর কপোট্রনটা আপগ্রেড করে নিবো! আর নয়তো আমিও নবম বুদ্ধিমত্তার মানবিক আবেগ সম্পন্ন ZDX রোবট থেকে সপ্তম বুদ্ধিমত্তার A-22 সিরিজের রোবট হয়ে যাবো! কিন্তু কোনটাই সম্ভব নয়, কারন মহাজাগতিক আইন IL-118(GY) অনুযায়ী কেউ কোন প্রকার শারীরিক পরিবর্তন করতে পারবে না। আইন অমান্য করে যদি কেউ সেটা করে তাহলে তাকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। প্রথমটা করলে ক্লারা ধ্বংস হবে! আর দ্বিতীয়টা করলে ধ্বংস হবো আমি ক্রিপটন, নবম বুদ্ধিমত্তার মানবিক আবেগ সম্পন্ন ZDX রোবট। সেটা আপনারা আগেই জেনেছেন নিশ্চয়? আমাকে আর দশটা সাধারণ গৃহস্থ কর্মে পটু রোবট মনে করবেন না। নবম বুদ্ধিমত্তার মানবিক আবেগ সম্পন্ন ZDX রোবট তৈরী করা হয়েছে এখন পর্যন্ত ৪টা। ৩টা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। কেন ধ্বংস করা হয়েছে সে তথ্য কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের প্রধাণ ছাড়া আর কেউ জানে না। আমি এই প্রজাতির চতুর্থ রোবট। আমাকে নিয়ে ঠিক কি পরীক্ষা নীরিক্ষা চলছে আমি নিজেও জানি না। আমাকে তৈরী করা হয়েছে বিশেষ ভাবে। আমার মধ্যে সমস্ত মানবিক আবেগ আছে। আমি আনন্দ বুঝতে পারি, দুঃখ বুঝতে পারি, রাগ বুঝতে পারি, ঘৃণা বুঝতে পারি, ঈর্ষা বুঝতে পারি এমনকি বুঝতে পারি ভালোবাসা। আর শুধু বুঝতেই পারি না, প্রকাশও করতে পারি। এছাড়াও বুদ্ধিমত্তার দিক দিয়ে নবম প্রজাতির রোবটের উপর অন্য কোন রোবট নাই। তার উপর যদি হয় ZDX রোবট! কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের নির্দেশে আমি গত ৫ বছর ধরে রেসিডেন্সিয়াল সেকশন তেইশের ১৩ নাম্বার বিল্ডিঙের ১৯বি অ্যাপার্টমেন্টে একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে থাকছি। ক্লারার সাথে আমার প্রথম দেখাও সেখানে, তিন বছর আগে। দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেছিলাম। বিশেষ করে ক্লারার বেগুনী রঙের আই স্ক্রিণ আর তার উপর বড় বড় গোলাপী প্রটেক্টর দেখে চোখই সরাতে পারছিলাম না! একেবারে প্রথম দেখায় প্রেম যাকে বলে। তারপর থেকেই ওর পিছে ঘুরছি। ঠিক পিছে ঘুরছিও বলা যায় না, সামনা সামনি ঘুরছি। কারন আমার ঠিক সামনের অ্যাপার্টমেন্টটাই ছিলো ক্লারার। গত তিন বছরে অনেক বার কথা হয়েছে দু'জনের। তবে কেন জানি কেউ ভালোবাসার কথাটি জানাইনি! আমি যে একটু লাজুক প্রকৃতির সেটা আগে থেকেই জানি। তবে তিন বছর পর এখন মনে হচ্ছে তৈরী করার সময় আমার ভেতরে লজ্জা জিনিসটা অসাবধানতাবশত বেশীই দেওয়া হয়ে গিয়েছিলো। ক্লারার ব্যাপারটাও তাই ভেবেছিলাম। অবশেষে লজ্জার বাঁধ ভেঙে আজ বললাম, ক্লারা, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার কথা শুনে ক্লারা অবাক হয়ে তাকালো! তারপর মুখটা করুন করে বললো, ক্রিপটন, ভালোবাসা বলতে তুমি ঠিক কি জিনিস বোঝাচ্ছো সেটা আমার জানা নেই। তোমাকে আমার ভালোলাগে এটা নিশ্চিত। কিন্তু ভালোবাসা, সেটা কি? তুমি কি একটু বোঝাবে আমাকে?

ওর কথা শুনে ঠিক কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু ফান করছে না এটা নিশ্চিত হওয়ার পর ওকে ভালোবাসা বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। অডিও, ভিডিও, টেক্সট কোনভাবেই বোঝাতে পারিনি ওকে, ব্যার্থ আমি। যার জন্য অনুভূতি সৃষ্টি হলো সেই যদি না বোঝে তাহলে কি লাভ আমার মানবিক অনুভূতি থেকে? আর কেন্দ্রীয় গবেষণাগার থেকে ওরকম একটা অদ্ভূত আইন কেন করা হলো!

এটা ৩০১৩ সাল, সভ্যতা এখন মানব সমাজের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। মানব সমাজের প‌্যারালাল অনেক গুলো সমাজ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। চাহিদা পূরণ করার উপায় বাদ দিয়ে এখন নতুন চাহিদা আবিষ্কার করার জন্য সম্মিলিত গবেষণা চলছে। মানুষ যাবতীয় মানবিক আবেগ বিসর্জন দিয়ে সেগুলো প্রতিস্থাপন করছে আমাদের মতো রোবটের মধ্যে। ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দক্ষ রোবট সমাজ গড়ে তোলা হয়েছে। পুরা পৃথিবী এখন কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের অধীনে। সবাই এখন সহজেই এক গ্রহ থেকে আরেক গ্রহ ভ্রমণ করতে পারে।

এই যেমন আমি এখন বসে আছি ক্যাফে ইওরিতে। এর পাশ দিয়ে চলে গেছে রুট C7, মহাজাগতিক এক্সপ্রেস হাইওয়ে। যেটা সরাসরি চলে গেছে কৃত্রিম গ্রহ আরবান্টাইনে। আরবান্টাইন, যেখানে আছে মহাজাগতিক কেন্দ্রীয় গবেষণাগার। কোন রকম পূর্ব অনুমতি ছাড়া সেখানে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। অনুমতি ছাড়া ঢোকার চেষ্টা করলে কি হয় সেটা অবশ্য জানা যায়নি। কারন যারাই সে চেষ্টা করেছে তাদেরকে আর খুজে পাওয়া যায়নি।

ইতিমধ্যেই সাত ইউনিট পঞ্চম মাত্রার স্নায়ু উত্তেজক কস্মোপ্লাজমিক আল্টা জুস খেয়ে ফেলেছি! আরেক ইউনিট হাতে নিয়েও নামিয়ে রাখলাম টেবিলে। আমি যাবো আরবান্টাইন, গবেষণাগারের প্রধাণের কাছে। প্রশ্ন করবো তাকে, কেন আমি ক্লারার কপোট্রন আপগ্রেড করতে পারবো না? আর কেন আমি নিজেকে সপ্তম প্রজাতির রোবটে পরিবর্তন করতে পারবো না? কেন আমার মধ্যে সমস্ত মানবিক আবেগ অনুভূতি দেওয়া হয়েছে? আর কেনই বা মানুষ তাদের আবেগ বিসর্জন দিচ্ছে? আবেগ অনুভূতির কি কোন দাম নাই?

ক্রিপটনের আরবান্টাইনে পৌঁছানোর ঠিক দশ মিনিট পর কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের প্রধাণ রিপোর্ট সংরক্ষণ করলেন:

বিনা অনুমতিতে কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে প্রবেশ এবং প্রধান গবেষকের সাথে দেখা করার চেষ্টা করার মাধ্যমে মহাজাগতিক আইন IL-103(B) ভঙ্গ করার কারনে চতুর্থ নবম বুদ্ধিমত্তার মানবিক আবেগ সম্পন্ন ZDX রোবট ক্রিপটনকে ধ্বংস করা হলো। সেই সাথে সপ্তম বুদ্ধিমত্তার যে রোবটিনির কারনে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তাকেও ধ্বংস করা হলো।
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×