somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুসাবিদা (সুভাষিত)

১০ ই মে, ২০০৯ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুসাবিদা - ২ (সুভাষিত)

"প্রতিবেশী চাঁদ নয় তো অনাত্মীয়
রামধনু-রং দেশেও জমাব পাড়ি
মাঠের শিশির ঝরবে না একটিও
ক্রীতদাস ছায়া গোটাবে না পাততাড়ি"। (পদাতিক)

রোদ উঠেছে। আচারের শিশিগুলোর সময় হয়েছে ছাদে রোদ পোয়ানোর। রাতগুলো যেন আজকাল বড্ড বড় মনে হয়। আগে রোজ সকালে দলবেঁধে অন্তত দু’রকম শালিক হাজির হত ছাদে। এখন তারা কোথায়......।

"হয়ত তখন খুলে দেখবে মুঠো -
প্রকান্ড সেই নীল আকাশটা
কখন গেছে উপে।
যখন অনেক বড় হবে
আমার মেয়ে পুপে"। (পুপে)

কবিতা জগতে কয়েকদিনের যাত্রী আমি পিছন ফিরলেই কয়েকটা লাইন জলে বুদবুদের মত ভেসে ওঠে। আমার প্রয়াত সেজো কাকা আবৃত্তি করতেন -

"তার কথা শুনে
হাতের মুঠোটা খুললাম।
কাল রাতের বাসি ফুলগুলো
সত্যিই শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে"। (যেতে যেতে)

সেদিনের বালকের কাছে লাইনগুলো ছিল, কিন্তু ছিলনা কোনো অর্থ। সেটা বুঝেই সম্ভবত সেজ কাকা বোঝাতেন, পিছন ফিরে দেখলে..........।

গত সন্ধ্যায় খুব মজা পেয়েছিল ছোট্ট চড়ুই। মাঝে মাঝেই কাকের তাড়া খেয়ে বিরক্ত চড়ুইকে আনন্দ এনে দিয়েছিল কয়েকটা ফিঙে। উফ! ফিঙের তাড়া খেয়ে কাকগুলোর কী অবস্থা। সাক্ষী আছে নিয়নের বাতিগুলো।

বড় হয়ে সুভাষ মুখোপাধ্যায় কে আরো বড় করে পেয়েছি "নির্বাচিত নাজিম হিকমত" এর অনুবাদ কবিতায়। কবির কথায়, "নাজিম হিকমত-এর কবিতা দিয়ে কবিতা-অনুবাদে আমার হাতেখড়ি"। আমরা বরং সেই "হাতেখড়ি"র দু-একটা উদাহরণে চোখ বুলাইঃ

"বিংশ শতাব্দীতে
খুব বেশী হলে এক বছর
মানুষের শোকের আয়ু"। (জেলখানার চিঠি)

একবিংশ শতাব্দীতে ঢুকে পড়েও ওই লাইনগুলোর অনন্ত আয়ু টের পাই। একদম শেষে গিয়ে কবিতাটা তার আসল চেহারা দেখিয়ে দেয় এই লাইনগুলোতেঃ

"আশাভঙ্গের অভিশাপ নিয়ে আমি জেগে উঠলাম।
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বইতে মুখ রেখে।
অতগুলো কন্ঠস্বরের মধ্যে
তোমার স্বরও কি আমি শুনতে পাইনি"? (জেলখানার চিঠি)

সাইকেলের চাকাটা বিগড়েছে। যে রোজ চড়ত সাইকেলের পিঠ, আজ তারই পিঠে সওয়ার খোদ সাইকেল। চাকাটা ঘুরে যাচ্ছে শূন্যে, চকচক করছে স্পোকগুলো, সূর্যের আলোয়।

এরপর কবির কলমের "কন্ঠস্বর" নিয়ে আলাদা করে ভাবতেই হয়। আর ভাবতে গিয়েই ধরা দিল কিছু চিরকালীন ভাবনাঃ

"যে বছর জেলে এলাম
একটা পেনসিল ছিল
লিখে লিখে ক্ষইয়ে ফেলতে এক হপ্তাও লাগেনি।
পেনসিলকে জিজ্ঞেস করলে বলবেঃ
'একটা গোটা জীবন'।
আমি বলবঃ
'এমন আর কী, মোটে তো এক সপ্তাহ'।" (আমি জেলে যাবার পর)

এরপর কবি "লাগছে" বললেও "ফুলগুলো সরিয়ে" নেওয়া যায়না। কবি সেটা বুঝেই যেন বলে ওঠেনঃ

"ছেলেটা আমার
পুঁটুলি পাকিয়ে ব'সে।
বোকা ছেলে আমার,
ছি ছি এই তুই বীরপুরুষ?
শীতের তো সবে শুরু-
এখনই কি কাঁপলে আমাদের চলে"? (ফুল ফুটুক না ফুটুক)

না, চলেনা। আর চলেনা বলেই খোঁজ করলাম আগুনের, "যেখানে বাড়িগুলোর গায়ে/ চাবুক মারছে বিদ্যুৎ"। এক হাতে লেখনী আর অন্য হাত পাঠকের ঘাড়ে রেখে দিনের পর দিন কবি যা লিখেছেন, "বসন্ত" সত্যিই হাজির হয় পাঠকমনে, "ফুল ফুটুক না ফুটুক"।

অফিসের কাজের চাপে অনেকদিন দেখা হয়না পুরোনো প্রতিবেশীর সঙ্গে। একটানা কয়েকটা ছুটির ফাঁকে ভাবলাম গুঁজে দি কিছু সামাজিকতা।

"আরে, মুখুজ্যে মশাই যে! নমস্কার, কী খবর?", উত্তর আসে,

"পুরোনো মানচিত্রে আর চলবে না হে,
ভূগোল নতুন করে শিখতে হবে"। (মুখুজ্যের সঙ্গে আলাপ)

শিখছি, প্রতিদিন শিখছি। আর শিখতে গিয়ে দেখছি, কীভাবে,

"আমার অমন সুন্দর বাইরেটা
আমার এই অগোছালো ঘরে হারিয়ে যায়"। (মুখুজ্যের সঙ্গে আলাপ)

কবিতা মোটেই পছন্দ করেনা এমন একজনকে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের গোটা চারেক লাইন শুনিয়েছিলামঃ

"তোমাকে বলিনি
দজ্জাল ঘড়িটা
একদিন আমাকে বাজিয়ে দেখে নেবে ব'লে
টিকটিক শব্দে শাসিয়েছে" (তোমাকে বলিনি)

আমাকে অবাক করে সেই শ্রোতা এরপর শুনেছি আরও কয়েকজনকে ওই "টিকটিক শব্দে শাসিয়েছে"। এখানেই সুভাষ সার্বজনীন, এখানেই সুভাষ ভিড় থেকে আলাদা। কলমের প্রজ্ঞা কোন পর্যায় গেলে বেড়িয়ে আসে এমন লাইনঃ

"ছেঁড়া সেলাইয়ের ছুঁচে,
ভাঙা জোড়া দেওয়ার আঠায়
তুমি আছ
ছুঁলেই টের পাই"। (তুমি তো কাঁদ না) বা,

"হঠাৎ আমার চোখের জল পাথর হয়ে গিয়ে
ভয়ঙ্কর ভারী করে তুলেছিল
আমার কাঁধের ওপর চেপে বসা
এক অদৃশ্য শবাধার।
আমি সেইদিন বুঝেছিলাম।
জীবনের ভার মৃত্যুর চেয়ে হালকা"। (হিংসে) বা

"মার কপালে কাঁচপোকার টিপ
চাঁদ হিংসেয় জ্বলে"। (একবার বিদায় দে, মা)

এভাবে কোট করতে গেলে, শেষ হবেনা এই অধ্যয়। বরং সেকালে লেখা, তাঁর একালের ক'টা লাইন দিয়ে শেষ করি-

"সকালবেলায় জানলার গরাদ ঠেলে ভেতরে আসে
হাসপাতলের রুগীর পোশাকে রোদ্দুর!
পাশ ফিরে দেখি
মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে সকালে কাগজ"। (একটু পা চালিয়ে ভাই)।


সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×