somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যক্তিত্বের বিকার

০৯ ই মে, ২০০৯ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রত্যেক মানুষেরই কিছু ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য থাকে যা তার নিজের এবং বাস্তব জগৎ সম্বন্ধে ধ্যান-ধারণা আচার-অনুষ্ঠানকে দৃঢ়ভাবে নির্ধারণ করে। এই বৈশিষ্ট্যকেই ব্যক্তিত্ব বলা হয় এবং ব্যক্তির এই বিশেষত্ব দিয়েই একের সঙ্গে অন্যের ভিন্নতার বিচার করা হয়। এই ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যখন এমন কিছু বিশেষত্ব থাকে যা তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে চলার ক্ষমতাকে খর্ব করে এবং তা ঐ ব্যক্তি কিংবা সমাজের অন্যদের পক্ষে পীড়াদায়ক বা ক্ষতিকারক হয়, তখনই ঐ ধরনের ব্যক্তিত্বকে ব্যক্তিত্বের বিকার বলা হয়।

নিম্নোক্ত ব্যক্তিত্বের বিকারগুলো সাধারণতঃ প্রায়ই দেখা যায় :
১। সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তিত্ব - এক ধরনের লোক আছে যারা অহেতুক মনে করে অন্য লোক তাদের পেছনে লাগছে, ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। এরা সন্দেহ করে অন্য লোকে কেবল তাদের নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এদের কাজে লাগায়। এরা নিজেদের আত্মীয়, বন্ধু অথবা সহকর্মীদের উপর আস্থা রাখতে পারে না। স্বামী অথবা স্ত্রীর চরিত্রে সন্দেহ করে দাম্পত্য জীবনকে বিষিয়ে তোলে। অতি তুচ্ছ কারণে এরা অপমানিত বোধ করে। এরা কাউকেই বিশ্বাস করতে পারে না এবং সবসময় সতর্কভাবে চলা ফেরা করে। এদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে মনোচিকিৎসা (psychotherapy ) সম্ভব হলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।
২। সিজয়েড (চিত্তভ্রংশী) ব্যক্তিত্ব - এদের বৈশিষ্ট্যে হচ্ছে এরা আত্মকেন্দ্রিক, লোকজনের সাথে মেলামেশায় অনাগ্রহ এবং কল্পনাপ্রবণ। অসামাজিক মনোভাব এবং রসবোধের অভাব এদেরকে মানুষের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। এদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে মনোচিকিৎসা (psychotherapy ) সম্ভব হলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।
৩। বিষণ্ণতাপ্রবণ ব্যক্তিত্ব - এরা সর্বদাই বিমর্ষ, নৈরাশ্যবাদী, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এবং কাজকর্মে তৎপরতাহীন। এরা জীবনকে উপভোগ করতে পারে না। সাধারণতঃ নীতিবোধ এবং কর্তব্যপরায়ণতার দিকে এদের সজাগ দৃষ্টি থাকে।
৪। ফুর্তিবাজ ব্যক্তিত্ব - এরা বেশি আশাবাদী হয়, ফুর্তি আর হই-চই এর মধ্যে থাকতে ভালবাসে এবং জীবনকে উপভোগ্য মনে করে। এদের বিচারবুদ্ধি অনেকসময় দুর্বল হয় এবং বিবেচনা না করেই চটপট সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে।
৫। আবর্তনশীল ব্যক্তিত্ব - এরা কিছুদিন বিষাদে কাটায়, কিছুদিন ফুর্তিতে চলে, আবার কিছুদিন স্বাভাবিকভাবে থাকে।
৬। উৎকন্ঠাপ্রবণ ব্যক্তিত্ব - সব কিছুতেই এদের দুশ্চিন্তা, বিপদের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেখতে এরা অভ্যস্ত। তিলকে তাল করে দেখতে এদের জুড়ি নেই, সব সময়েই এরা ভয়-ভীতি-আতন্কের মধ্যে থাকে এবং আশ্বাস ছাড়া এরা চলতে পারে না।
৭। অহঙ্কারী ব্যক্তিত্ব - এরা নিজেদের অহেতুক অত্যন্ত বড় মনে করে যেটা তাদের চাল-চলনে কথা-বার্তায় স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। এরা সবসময় নিজেদের প্রশংসা চায়, নিজেদের সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। অন্যের সাফল্যকে এরা ঈর্ষার চোখে দেখে। যেখানে কিছু পাবার আশা, এরা বন্ধুত্ব পাতায় শুধু সেখানেই।
৮। অবসেসনাল ব্যক্তিত্ব - এরা সব জিনিসই নিখুঁতভাবে করতে চায়। খুঁতেখুঁতে মনোভাবের দরুন ক্ষুদ্র অপ্রয়োজনীয় জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দিতে গিয়ে কোনো জিনিসকে পছন্দ করে উঠতে পারে না। নিয়মানুবর্তিতা, সময় নিষ্ঠতার প্রতি অনমনীয় দৃঢ়তা রাখতে গিয়ে এরা ব্যবহারিক জীবনে সামজ্ঞস্য করে চলতে পারে না। এরা প্রায়ই কৃপণ স্বভাবের হয়। স্নেহ-ভালবাসার আদান-প্রদানে যথেষ্ট সন্কোচ থাকার জন্যে এদের বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা খুবই সীমিত হয়। নির্দিষ্ট কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করার পক্ষপাতী এরা।
৯। নির্ভরশীল ব্যক্তিত্ব - অন্যের উপর নির্ভরতা এবং পরমুখাপেক্ষিতাই এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এরা দুর্বলচিত্ত হয়, আত্মবিশ্বাসের অভাব, হীনমন্যতা এবং অসহায় ভাবের জন্য অন্যের বাধ্য হয়ে থাকতে পছন্দ করে। এরা অন্যের অনুগ্রহভাজন হয়ে থাকতে বেশি পছন্দ করে।
১০। সমাজবিরোধী ব্যক্তিত্ব - এরা অল্প বয়স থেকেই আপরাধ প্রবণ, দায়িত্বজ্ঞানহীন, বেপরোয়া, কলহপ্রবণ এবং উগ্র স্বভাবের হয়। এরা স্নেহ-ভালবাসা বর্জিত নির্মম-নিষ্ঠুর, আপরাধবোধহীন এবং নিজের স্বার্থের প্রতি খুবই সচেতন। জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এরা শিক্ষালাভ করতে পারে না; তাই জেল, জরিমানা সত্বেও বারেবারে নির্বিচারে একই আপরাধ করে বসে।

মানুষের সাথে মানুষের ব্যক্ত্যিত্বের তফাৎ থাকবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যক্ত্যিত্বের দোষ-গুন যখন সীমা ছাড়িয়ে যায়, যা নিজের ও আশেপাশের লোকের সমস্যা সৃষ্টি করে তখন একে ব্যক্তিত্বের বিকার বলা যেতে পারে। উপরোল্লখিত ব্যক্তির বিকারের ক্ষেত্রে ওষুধ প্রয়োগে বিশেষ কিছু সুবিধে হয় না। আত্মপ্রচেষ্টায় সম্ভব না হলে দীর্ঘদিন ব্যাপী মনোচিকিৎসায় (psychotherapy ) সুফল পাওয়া যেতে পারে।
তথ্যসুত্র:
মানসিক রোগ অজানা অধ্যায় - ডাঃ সজল আশরাফ
মনের সুখ-অসুখ - ডঃ শিবেন সাহা
মনের বিকার ও প্রতিকার - ধীরেন্দ্রনাথ নন্দী
ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০০৯ রাত ১০:৫৪
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×