somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিনের কবি ওয়েন ইডুয়ো; তাঁর একটি কবিতা।

০৯ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কবি ওয়েন ইডুয়ো । চিনের প্রথম আধুনিক কবি- কিংবা বলা যায় চিনের প্রথম পাশ্চাত্য ভাবধারা কবি। তাঁর কবিতায় সুররিয়াল বা অধিবাস্তব উপাদানের সঙ্গে মিশে আছে চিনের লৌকিক উপাদান।

চিনে হুবেই বলে একটি প্রদেশ আছে। সেখানেই ২৪ নভেম্বর ১৮৯৯ সালে কবি ওয়েন ইডুয়োর জন্ম। ১৯২২ সালে চারুকলা ও সাহিত্য নিয়ে পড়তে গেলেন আমেরিকার শিকাগো নগরীতে । শিকাগো ছাড়াও কলরাডো ও নিউইয়র্কে পড়ালেখা করেছেন ওয়েন । আমেরিকা থাকাকালীন কার্ল স্যান্ডবার্গ, এ্যমি লোওয়েল, হ্যারিয়েট মনরো প্রমূখ বিশিষ্ট সাহিত্যকর্মীদের সঙ্গে ওয়েনের ঘনিষ্টতা গড়ে ওঠে । ওই সময়েই জন কীটস পড়ে মুগ্ধ হন ওয়েন । কাব্যগ্রন্থ ‘লাল মোম’ বের হয় আমেরিকা থাকতেই । দু-বছর পর, অর্থাৎ ১৯২৫ সালে চিনে ফিরে এলেন ওয়েন। জীবিকা হিসেবে বেছে নিলেন শিক্ষকতা। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ -‘মরা পানি’ বেরুল। কবিতার ছত্রে ছত্রে পাশ্চাত্য ভাবধারার স্ফূরণ ।
১৯২৩ সালে কবি জিউ জিমো The Crescent Moon Society নামে একটি সাহিত্য পরিষদ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। The Crescent Moon নামটি রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতা থেকে নেওয়া। সাহিত্য পরিষদটি ১৯৩১ অবধি কার্যকরী ছিল এবং চিনের নবতর সাংস্কৃতিক আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। বামঘেঁষা ওই সাহিত্য পরিষদের দর্শন ছিল- রাজনীতির জন্য শিল্পকলা। ওয়েন এই সভার অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৪৪ সাল থেকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন ওয়েন । অত্যন্ত স্পষ্টবাদী ছিলেন; ফলে ১৯৪৬ সালের ১৫ জুলাই কওমিঙটানের গুপ্ত ঘাতক তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।

অলৌকিক

আমি কখনোই আগুনের লাল কিংবা পিচ কুঁড়ির জলের মাঝরাতের কালো,
কি শোকার্ত গানের সুর অথবা গোলাপের সুঘ্রান চাইনি। আমি কখনোই চিতার
উদ্ধত অহংকার কি সাদা ঘুঘুর সৌন্দর্যও কামনা করিনি। এসব আমি চাইনি।
অথচ এসবের স্ফটিকীকরণ -হাজার গুণ বিরল আর অলীক বলে মনে হয়!
আমি ক্ষুধার্ত আর ব্যস্ত। আমি অপুষ্ট থাকতে পারি না। সামান্য দানাপানি হলেও চলবে।
আমাকে চাইতে হবে? ঈশ্বর জানেন আমার তেমন ইচ্ছে নেই। আমি একগুঁয়ে
আর বোকাসোকা। অপেক্ষা করে করে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। অলৌকিকের আশায়
অপেক্ষা করে করে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। আমি আর না-খেয়ে থাকব না। কে না
জানে-জগ ভরতি ঘোলাটে মদ আর ঝিঁঝি ডাকা গাছের কিংবা ধোঁওয়াময়
পাহাড়ের শৃঙ্গের কী এমন দাম? উজ্জ্বল উপত্যকা আর খালি আকাশের জ্বলজ্বলে
তারার- এসবই সাধারণ। নিমর্ম আর একঘেয়ে। আমাদের পরমানন্দের
কাছে এসব কিছুই না; স্পর্শকাতর নাম ধরে আমাদের কান্না কিংবা
স্বর্ণালী অক্ষরের তৃষ্ণা এবং সেসব গানে লেখা ...
-আমি নিশ্চিত যে পরে আর কান্না পাবে না
বনপক্ষীর কান্নার মত তুচ্ছ, হাস্যকর আর সময়ের অপচয় । কিন্তু, কে জানে?
অন্য উপায় তো নেই। আমি ভীষন ক্ষুধার্ত আর ব্যস্ত; ভেড়ার মাংস নিই
আর চমৎকার শস্যের জন্য বুনো ঔষধি অথচ ওখানে ক্ষতিকর কিছু নেই-
যতক্ষন না অলৌকিক ঘটছে ততক্ষন স্বচ্ছভাবে কথা বলা ।
তারপর আমি পলকেই সাধারণ ছেড়ে দেব। আমি আর
কখনও জমাট পাতা কি পুষ্পিত বসন্তের স্বপ্ন-ধাঁধা দেখব না।
আর আমি আমার শক্তি ক্ষয় করব না, তুলব না পাথরের ছাল;
দাবি করব না শাদা রসের উষ্ণতা;- আমাকে একবার অলৌকিকতা দাও,
তাহলে আমি কখনও কুৎসিতকে চাবুক মারব না।
একে এর বিপরীত দিতেও বাধ্য করব না।
আমি আসলে এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছি। আর ওসব ব্যাখ্যাতীত
দাগওয়ালা দ্যেতনা; আমি যা চাই তা হলো বৌদ্ধ ধ্বংসাবশেষের মতন
উজ্জ্বল পরিস্কার শব্দ-প্রখর আলোর, আমি সবটা চাই, সবটা ...
মুখে দীপ্যমান, আমি অতটা গোঁয়ার কিংবা বুদ্ধিহীন নই ।
কিন্তু আমি গোলাকার পাখা দেখতে পাই না-দেখতে পাই না
তার পিছনের শ্বাশত মুখ । কাজেই, যতবার পুর্নজন্ম সম্ভব
ততবারই অপেক্ষা করব আমি। কারণ আমার রয়েছে শপথ ।
আমি জানিনা কতবার আমার জন্ম হয়ে গেছে-কিন্তু, আমি অপেক্ষা
করব- করব। অলৌকিক ঘটনা ঘটার জন্য। সেই দিন আসবেই।
বজ্র যেন আমাকে পোড়ায়, আগ্নেয়গিরি ধ্বংস করে। সব নরক জেগে
উঠে আমাকে চূর্ণ করে। আমি কি আতঙ্কিত? না। বাতাস আমার ভিতরের
আলো নিভাবে না। আমার ইচ্ছে আমার ছুঁড়ে দেওয়া শরীর ছাই হয়ে যাক।
তাতে কী? সময়ের সেই ক্ষুদ্র অংশ হল ক্ষুদাতি অংশ-আহ!
একটি অসাধারণ ঝলক, এক স্বর্গীয় মহাজাগতিক নীরবতা
(সূর্য, চন্দ্র এবং ঘূর্নায়মান সব নক্ষত্র নিশ্চুপ, সময়ও থমকে গিয়েছিল।)
-সবচে নিখুঁত গোলাকার শান্তি। আমি শুনছি দরজার হাতল ঘুরছে :
সেই সঙ্গে স্কার্টের খসখস-এই হল অলৌকিক ঘটনা।
অর্ধ-ভেজানো সোনার দরজার ফাঁকে তোমায় ঘিরে আলোর জ্যোতি!

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:৫১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×