ভারত এ অঞ্চলের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র । স্বাধীনতার পর থেকেই ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটা । একই সাথে স্বাধীন হওয়া পাকিস্তান বা আরো পরে পাকিস্তান থেকে নিজেদের স্বাধীন করে নেয়া বাংলাদেশেও অনেকবার গণতন্ত্র বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে । জলপাই সার্কেলের বীরগণ কারণে অকারণে এদুটি দেশে রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে আসলেও ভারতে এখন পর্যন্ত ঐরকম সাহসী কোন সেনা নায়কের জন্ম হয়নি । আমরাও দেখেছি সেনা অভ্যুথ্থানের পেছনে সেনারা যত যুক্তিই দেখাক না কেন এতে দেশ পিছিয়েই যাচ্ছে ।
ভারতে সেনা শাসন আসেনা কেন ? এটা একটা প্রশ্ন বটে । ভারতে কি জিয়া, এরশাদ,আইয়ুব, ইয়াহিয়া, মোশাররফদের মত বীর জন্ম নেয়নি ? নাকি ভারতের রাজনীতি কখনো এমন অনিশ্চয়তায় পৌঁছেনি যেখানে পৌঁছলে সেনারা শাসন হাতে নিতে পারে ? নাকি 'র' এর মত শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থার উপস্থিতি ভারতকে অমন নাজুক পরিস্থিতিতে যেতে দিচ্ছেনা ? ছেলে খারাপ হলে মা-বাবা যেমন অপরের ছেলেকে দোষ দেয়, তেমনি এদেশে খারাপ কিছু হলেও আমরা অন্য দেশকে দোষ দেই । আমরা ভাবি 'র', সিআইএ, মোসাদ চক্রান্ত করে দেশটার বারোটা বাজাচ্ছে ।তাহলে আমরা কেন অন্য দেশের বারটা বাজাতে পারছিনা ? আমরা দুগ্ধপোষ্য বলে ? আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ঘুমের টেবলেট খেয়ে ঘুমায় বলে ?
শ্রীলংকার চীরস্থায়ী সমস্যা তামিল সমস্যা । এটা ভারতের সহায়তায় হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে বলে আমরা জানি । আমরা এটাও বিশ্বাস করি সিকিমকে অঙ্গ রাজ্য বানানো আর হাল আমলে নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতা সবই 'র' তথা ভারতের কারসাজি ।বাংলাদেশের যাবতিয় সমস্যার মূলে প্রথমেই ভারতকে দায়ী করে আমাদের বিশ্বাস । তাহলে ভারতের কাজই কি প্রতিবেশীদের মধ্যে বিভেদ তৈরী করা ? ভারত কি চায় এক চীন (?) ব্যতিত তার আশপাশে কোন স্থিতিশীল দেশ না থাকুক ?
ষাটের দশকে ভারতে নকশালবাড়ি আন্দোলন বেশ আলোড়ন তুলেছিল । পশ্চিম বঙ্গে বামপন্থীরা ক্ষমতায় এলেও নকশালীদের কপালে আর গণবিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া হয়ে উঠেনি ।এটা যতটা 'র' এর সাফল্য তার চেয়ে বেশী গণবিপ্লবীদের ব্যর্থতা ।প্রতিটি ব্যর্থতা যেমন নতুন সাফল্যের ইংগীত বহণ করে তেমনি সেই ব্যর্থতাকে পুঁজি করে ভারতে আবার সংগঠিত হয়েছে সেই বিপ্লবীদের উত্তরসুরীরা ।
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নিষিদ্ধ ঘোষিত কিছু বিপ্লবী দলের সাথেও এই নব্য নকশালীদের আঁতাতের খবর আমরা পেয়েছি পত্রিকান্তরে ।হতে পারে গুজব,তবু আমলে নিতে দোষ কোথায় ? এদেশের মাটিতেই গজিয়ে উঠল বিপ্লবীদের আতংক জেএমবি । প্রথম প্রথম বাহবাও কুড়িয়েছিল বেশ । কিন্তু এক ঢিলে অসংখ্য পাখি মেরে জেএমবি হয়ে গেল বিষহারা সাপ । এদেশের বিপ্লবীদের ক্ষতি, ইসলামের ক্ষতি, দেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট সহ অনেক পাখি মেরে নিজের প্রাণপাখিটাও উড়িয়ে দিল জেএমবির ঈমানদার ভাইয়েরা ।তবে কি জেএমবিও 'র' সৃষ্ট ? এক ঢিলে বহু পাখি মারা কম কথা নয় !
নেপালে মাওবাদী গেরিলারা ক্ষমতায় গেল ।ভারতের নকশালীদের সাথে কি তাদের কোন আঁতাত হবেনা ? আগামীর ভারতে সবচেয়ে আতংকজনক নাম এই নকশালদের নতুন দোসরকে কি এমনিতেই ছেড়ে দিবে ভারত ? নেপালের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আমরা লক্ষ্য করছি । প্রচন্দ ইতোমধ্যেই তার পদত্যাগের জন্য ভারতকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছে । উত্তাল হয়ে উঠছে নেপাল । সবই ভারতের কারসাজি ?
প্রতিবেশীদের বিপদ কি আপনাকে কোন সমস্যায় ফেলবেনা ? প্রতিবেশীর ছেলেটা যদি ডাকাত হয় তার প্র্র্র্রভাব কি আপনার ছেলের উপর পড়বেনা ? মিয়ানমার, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, নেপাল এবং উত্তপ্ত হয়ে ওঠা পরবর্তির বাংলাদেশ কি ভারতের স্বাধীনতাকামী (নাকি বিচ্ছিন্নতাবাদী ?) দের কোন লেসন দিচ্ছেনা ? একদিকে চির অশান্তির কাশ্মীর, অন্যদিক সাত বোন, সারা শরীরে নকশালীদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রেতাত্মা, চেন্নাই-মাদ্রাজের মত উন্নত শহরের দেশে কলকাতার মত ঘিঞ্জি এলাকা, জাতিগত বিশাল বৈচিত্র এবং তাদের সচেতন হয়ে ওঠা -এতসব পিছুটান নিয়ে ভারত পারবে তো আগামীর সুপার পাওয়ারে পরিনত হতে ?
ভারতের রাজনীতিকদের চরিত্র নিয়ে জনমনে কোন স্বস্তি নেই ।কংগ্রেস ছাড়া সর্বভারতীয় আর কোন দল নেই ।গজিয়ে উঠছে স্থানীয় দল । কেন্দ্রের প্রতি আস্থাহীনতা বাড়ছে । শিথিল হয়ে যাচ্ছে সর্বভারতীয় বন্ধন ।রাজনৈতিক দুবৃত্তায়নের কারণে স্বায়ত্বশাসন অচিরেই স্বাধীনতার দাবীতে উচ্চকিত হয়ে উঠতে পারে । ভারতের শরীর জুড়ে জমতে থাকা আগ্নেয়গিরি স্ফুলিঙ্গ উদগীরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে । ওদিকে পাকিস্তান,চীন কিংবা আমেরিকাও বসে নেই । পরবর্তি দুনিয়ায় ভারতের অবশ্যম্ভাবি আগমন নিয়ে তারা পর্দার অন্তরালে কোন নাটক প্রস্তুত করছে তা কি 'র' জানবে ?
ভারতের সুপ্রতিবেশী সুলভ আচরণ এ অঞ্চলের অনেক সমস্যার যেমন স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে পারে তেমনি পারে তার নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে । কোন দেশেরই উচিত নয় অন্য দেশের ব্যাপারে নাক গলানো - ভারত যত তাড়াতাড়ি নিজের ভুল বুঝতে পারবে ততই তার মঙ্গল । এ অঞ্চলের জন্যও তা মঙ্গলজনক ।