somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাংসের কারবার , মাংসের কারবারী - ১

০৭ ই মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিকেন ফ্রাই খেয়েছেন কখনো ? গরম গরম ভাতের সাথে মায়ের হাতে রান্না করা মুরগীর সালুন? বিয়ে বাড়িতে মুরগীর রোস্ট ? এখনো দেশী মুরগীর চাপ পেলে হাত ধুয়ে বসে পড়েন ?

আমিও , বিশ্বাস করুন, এই সবকটিই আমার জন্য দারুন মধুর কর্মকান্ড । আমার আনন্দে প্রথম ভাটা পড়ে যখন এভিয়ান ফ্লু বা পাখির ফ্লু ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময় এক কালান্তক রোগ হিসেবে। এ বিষয়ে গুগুল করলে এখন অনেক তথ্যই পাবেন । কি সেই রোগ, কেন হয়, কি ভাবে হয়, কেমন সেই ভাইরাস , কি করে ঠেকাবেন, সব আপনার ক্লিকের মুঠোয় । যেটা কখনোই পাবেন না , তা হলো , কেন কি ভাবে শুরু হয় এই সব প্রানঘাতী রোগ । হয়ত পাবেন , কিন্তু তার বিপরীতে তথ্য , প্রমান কিংবা স্রেফ গায়ের জোরে গালিগালাজে আপনার ভূত নামিয়ে দেওয়ার লোকও কম পাবেন না। তারপর রাজায় রাজায় যুদ্ধ দেখে আপনি উলুখাগড়া মানে মানে বাজারের ব্যাগটা হাতে বেরুবেন , এই সব ভুলে যাবেন , আর সরকারের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে সবচেয়ে সস্তা মুরগীটি কেনার চেষ্টা করবেন। অবধারিত ভাবে সেটি কোন না কোন ফার্মের মুরগী হবে। ফোলা ফোলা নধর দেহ কিংবা বাচ্চা মুরগীর স্যুপ আপনার ছোট্ট মনিটার জ্বরের জন্য খুব দরকারী । কে এত ভাবতে যায় কোত্থেকে এলো , কেমনে কি , ধুরু!






পাঁচটা মিনিট সময় হবে ? তাহলে দয়া করে উপরের ভিডিওটি দেখুন। নাহ, আমি আপনাকে নিরামিশ ভোজী হতে বলবো না । কিন্তু , যতবার কে এফসিতে খেতে যাবেন , ততবার দয়া করে নিচের ভিডিওটির কথা মনে করবেন ।



এই মুরগী গুলো , যারা আমাদের সামনে আসে সুদৃশ্য প্যাকেজে স্রেফ মাংস হয়ে , এদের জীবন আসলে মাত্র ৪৫ দিনের । এরা জন্মায় কৃত্রিম পরিবেশে । জন্মানোর পর থেকেই বাস করে হাজার হাজার মুরগীর বিষ্ঠা, খড় , আবর্জনা ভরা একটা বন্ধ কুঠুরীতে। এরা কোনদিন দিনের আলো দেখে না । কোনদিন মাটি, ঘাস, আকাশ , এমন কি নিদেন পক্ষে বাইরের পরিষ্কার বাতাস পর্যন্ত ফুস্ফুসে নিতে পারে না। মাংসের কারখানার বর্জ্য আর এমোনিয়ার ঝাঁঝালো বিষ এদের শ্বাসে। খাবার বলতে কৃত্রিম গুড়ো ভরা হরমোন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোন মতে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাজ্যের এন্টিবায়োটিক আর অন্য প্রানীর হাড় কিংবা ভুড়ি। এরা তো মানুষ নয়। কারো আদরের পোষা কুকুর , বিড়াল নয় । এরা বুঝি আল্লাহর জীব ও নয়। এরা আসলে প্রান থাকলেও প্রানী না । জন্মানোর আগেই ফাঁসির আদেশ হয়ে যাওয়া এক তাল মাংস পিন্ড । যাদের নিয়তিতে লেখা হয়ে গেছে অতিরিক্ত হরমোন দিয়ে অস্বাভাবিক দ্রুত বেড়ে ওঠা, মোটা হওয়া , নিজের দুর্বল হাড়, ফুস্ফুস কিংবা হৃদপিন্ড হাল ছেড়ে দিলে কোন মতে মরে যাওয়া । অথবা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কোন আলো ঝলমলে চোখ ধাঁধাঁনো রেস্টুরেন্টের প্লেটে দামী উচ্ছিষ্ট বনে যাওয়া !

এরা মরার আগেই মৃত !

বেশ কিছুদিন আগে , এভিয়ান ফ্লু নিয়ে পড়ালেখা করার সময় জানতে পেরেছিলাম, আমরা জবাই এর পরে গরু ছাগলের যেই সব অংশ ফেলে দেই, পুতে ফেলি সেগুলোই পশ্চিমা বিশ্ব লার্ড তৈরীতে ব্যবহার হয়। গরু, ছাগল, হাস , মুরগী , ঘোড়া ইত্যাদির যেই অংশ গুলো মাংস হিসেবে বিক্রি করা যায় না - যেমন চোখ, ভুড়ি , চর্বি , চর্বিযুক্ত মাংস , ফুসফুস --- সে সব পিষে ভর্তা করে পশ্চিমে একটা খাবার হয় , নাম ফ্রাঙ্কাডেল । সসেজের মতই দারুন জনপ্রিয় এই সস্তা খাবারটি বেশ ঝাল ও সাধারনত ভেজে খায়। তার পরেও যেই অংশ গুলো থেকে যায় তাকেই পিষে বা শুকিয়ে গুড়ো করে প্রানী খাদ্যে মেশানো হয় ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের উৎস হিসেবে। সেই খাবারে বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক থাকে কারন গ্রোথ হরমোন দিয়ে অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে বড় করা প্রানীগুলোর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তেমন থাকে না । আবার মল, মূত্র , খাবার, মরা প্রানীর ভিতরে বাস করে করে রোগ জীবানুর ডিপো হয়ে থাকে এই ফার্মের প্রানী গুলো। কারো মনে যদি প্রশ্ন থাকে , কি করে শুকর কিংবা মুরগীর ভিতরে কয়েক রকমের জিন আলা ব্যাক্টেরিয়া , ভাইরাস তৈরী হয় । ওয়েল, আমরাই তো ওদের মাছ, মুরগী, হাঁস, গরু, ছাগল, ঘোড়া ইত্যাদির দেহাবশেষ এর খিচুড়ি খাওয়াচ্ছি । স্বাভাবিক অবস্থায় এই কি ওদের খাদ্য হওয়ার কথা ?


সোয়াইন ফ্লু নিয়ে বেশ মাতামাতি হচ্ছে । শুকর সম্পর্কে আল্লাহর সাবধান বানী নিয়ে অতি হাস্যকর ব্যাখ্যা পড়ে একটা " আমার অনুভূতি আহত" বলে পোস্টও দিয়েছিলাম । কারন আমি মহা বিরক্ত । কেউ আসল জায়গায় হাত দেয় না । পুঁজিবাদী মুনাফাখোর হারামী কর্পোরেটদের চরিত্র উন্মোচন করে কেউ কেউ দুই একটা পোস্ট দিয়েছেন বটে ( এই মুহুর্তে ফারুক ওয়াসিফ , দিন মজুর আর মুনীর উদ্দীন শামীম এর কথা মনে পড়ছে ) , সেখানে রাজনীতি , অর্থনীতি , ষড়যন্ত্রনীতি নিয়ে বেশ ভালো ভালো আলোচনা হয়েছে --- যেটা হয়নি সেটা নিজেদের দিকে আঙ্গুল তুলা । অথবা তাঁরা ভুলে গেছেন , আমরা কি করে এই কর্পোরেট জায়ান্ট হারামী গুলার পা চেটে দিচ্ছি প্রতিদিন । শুকর নয় , মানুষই যে এই সমস্ত রোগ মহামারীর জন্য দায়ী সেটা ফারুক স্পর্শ করে গেছেন সামান্য । তাঁকে কৃতজ্ঞতা । অন্যরাও চেষ্টা করেছেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোটি কোটি শুকর পালন , আমেরিকার কঠোর নিয়ম্নীতি পাশ কাটিয়ে গরীব মেক্সিকোর পরিবেশ ফানাহ করে নিজেদের পকেট ভরানোর মার্কিন কর্পোরেট রাজনীতি --- এ সবে চোখ রাখতে । আসলে এগুলো এত বেশি গভীর আলোচনার বিষয় , সব সময় গুছিয়ে সব কিছু বলা যায় না ব্লগে । তবু আমি খুশি , অনেকেই তো লিখছেন , চেষ্টা করছেন কুম্ভকর্নের ঘুম ভাঙাতে ।

কিন্তু , শুকরে এসে মনযোগ যখন আসল জায়গা থেকে কুরান, হাদীস , আল্লাহর মহিমা তে চলে যাচ্ছে তখন সত্যিই বিরক্ত লাগছে । আল্লাহর মহিমা আর মহিমা চৌধুরী যে এক ব্যাপার নয় , এইটা খিচুড়ি পাকিয়ে যাচ্ছে ভীষন ভাবে । অনেকেই আঙ্গুল তুলছেন , শুকর প্রানীটাই তো হারাম । ওটাকে বুকে তুলে আদর করলে ফ্লু তো হবেই । সুতরাং , মার শালা! ঠিক যেমন এর আগে প্লেগের জুজুর ভয়ে নির্বিচারে কাটা পড়েছিলো শত শত হাজার হাজার ঢোল কলমির ঝাড় । ফলাফল ? কচু হাতি ঘন্টা ! এইবার আবার সেই একই হুজুগ একবার মোল্লার দাড়ি আরেকবার বাংলাদেশের শুকর পালকদের সুন্নতে খতনা করার খায়েশ নিয়ে জেহাদী জোশে মেতে উঠছে । বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লু তৈরী হয় নাই , কেউ বয়ে নিয়ে এলে অন্য কথা । কিন্তু কেন? এর উত্তরের ভিতরেই আছে আসল সত্য। মাজেজা।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০০৯ রাত ৯:৩৬
১৭টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×