বন্ধু আরাফাতের লেখাতে পড়েছিলাম (সন্ধ্যায়...) যে শেষ পর্যন্ত ওর নাকি ছিনতাই হয়নাই... নিছক অপরিচিত এক লোক ভুল করে ওকে পিছন থেকে ডেকেছিল... আমি আসলে এই লেখাটি পড়ে খুবই ব্যথিত হয়েছিলাম! কারণ কেন ও ছিনতাইকারীর পাল্লায় পড়লনা...!!! (আরাফাত আমার এ লেখাটা পড়লে আমাকে আর বন্ধু ভাববে কিনা কে জানে?) আমার ছিনতাই বিষয়ক করুন ঘটনাটি বলি আজ ...
২০০০’র ঘটনা। সবে ঢাকায় এসেছি কলেজ পড়ব বলে। বাসা থেকে হাত/পা খরচ যাই বলুন ভালই আসত। এ কারনে প্রতি মাসে শপিং করার একটা বাতিক হয়ে গিয়েছিল সে সময়। থাকতাম একটা হোস্টেলে। তো এক রুমমেট’র প্রস্তাবে রাজি হয়ে কিছু শপিং করার জন্য গেলাম এ্যালিফেন্ট রোডে। পকেটে ভালই টাকা ছিল, ও বয়সের জন্য। ঝটপট একটা জিন্সের প্যান্টও কিনে ফাললাম। আরো কিছু কিনব নিউমার্কেট থেকে চিন্তা করছি যখন এমন সময় পিছন থেকে দুজন ‘চোয়াড়ে’ চেহারার ছেলে এসে বলল, “ভাই একটু ‘সাইডে’ আসেনতো”। কিছু চিন্তা না করেই ভাল মানুষের মত আমরা দুজনেই একটু ‘সাইডে’ গেলাম ওদের সাথে। দুই চোয়াড়ের ওস্তাদ যে সে বলল, আমি ‘অমুক’ দলের ‘তমুক’, ঢাকা কলেজে মারামারি হইছে কিছু আগে এবং আমরা দুজন নাকি একজনের মাথা ফাটিয়ে আসছি! শুনেতো আমার চক্ষু চড়ক গাছ, বলে কি এরা! ব্যটাদের ‘ইগনোর’ করে যে চলে আসব তাও পারছিলাম না তখন। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলাম, ভাই কি বলেন এইসব? আমরা ঢাকা কলেজের ছাত্র না ও এলাকা ভাল পরিচিতও না এবং শপিং এ আসলাম মাত্র ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি ততক্ষন পর্যন্ত ভেবেছিলাম এরা ভুল করেই আমাদের এটা ওটা জিজ্ঞাসা করছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? এবার বলল, পকেটে ‘মাল’ আছে বেশি কথা বললে নাকি ওখানেই ‘ফালাই’ দিবে। সামনে ওদের ‘বস’ আছে তার সাথে যেন দেখা করি আমরা। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ তারপরেও বললাম, “ভাই ওনাকেতো চিনিনা, কোথায় খুজে পাব তাকে”? ওই দুজন বলল, “আমারাই নিয়ে যাব কোন সমস্যা নাই”। এটা বলার পর আমাকে এক রিক্সায় আর আমার বন্ধুকে আরেক রিক্সায় উঠান হল। ‘মালের’ ভয়ে আমরা দুজনেই চুপ তখন, এমনকি রিক্সা থেকে লাফ দিয়ে যে পালাব সে সাহসও ছিলনা (কি জানি হয়ত পালানোর মত স্মার্টও ছিলাম না!)। আমাদের দুজনকে নিয়ে গেল ঢাকা মেডিকেল কলেজের এক চিপার মধ্যে। ঐখানে নানা হুমকি ধামকি দেওয়া হল আমাদের। এবং পকেটর থেকে একটা ক্ষুর বের করে আমার গলায় চেপে ধরে বলল, যা আছে সব বের করতে, আমি বোকা এতক্ষন পর বুঝলাম যে আমাদের ছিনতাই করছে! কি আর করা ওদের কথামত সুবোধ বালকের মত ‘যা ছিল সব বের করে দিলাম’। ওস্তাদ তার সাগরেদকে আমার সদ্য কেনা প্যান্টটা হাতে দিয়ে বলল, “তোর না প্যান্ট নাই ভাল, নে এইটা রাখ”। এমন ভাবে বলল যেন এইটা ওরই প্যান্ট। আমাদের আর কি করার শুধু অভিসম্পাত দিতে পারি ওদের, সেটাই দিলাম মনে মনে। শুধু রিক্সা ভাড়া দিয়ে মেইন রোডে আমদেরকে ছেড়ে দিল। কি মহান এরা (!) কোন মলম টলম কিছু লাগান ছাড়াই আমাদেরকে ছেড়ে দিল!
আমার রুমমেট রাগে গজগজ করছিল... আমার বোকামির জন্য আজ এরকম হল বলে। ও বলেছিল, আর যাই করি কাউকে যেন একথা না বলি... আমিও কথা রেখেছিলাম কাউকে বলি নাই এই ঘটনার কথা... এজন্যই ওর নামও লিখলাম না এখানে... তবে আর থাকতে পারছি না তাই আজ লিখেই ফেললাম ঘটনাটা...
অপরিচিত কারো কথা শুনে কেউ কখনো ‘সাইডে’ যাবেন না... গেলে আমার মত ধরা খেতে পারেন... ও হ্যা ঐ ঘটনার পর থেকে শপিং করা কমিয়ে দিয়েছি আমি... কেন জানি ঐ এলাকা গুলোতে আর যেতেও ইচ্ছা করে না আর...