somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদেশ যাত্রা ৪

০৫ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Click This Link

বড়ই সৌন্দর্য্য শহর পুত্রাজায়া

সকাল নয়টার মধ্যে নাস্তা সেরে পাসার সিনি স্টেশন থেকে ট্রেনে কেএল সেন্ট্রাল। ভাড়া মাত্র এক টাকা। মিনিট পাঁচেকের পথ। কেএল সেন্ট্রাল থেকে বিমান বন্দরমূখী ট্রেনের টিকিট কেটে প্ল্যাটফর্ম অর্থাৎ তিন তলা থেকে নেমে এলাম বেসমেন্ট টুতে। অপেক্ষা করছি। টিকিটের দাম নয় টাকা পঞ্চাশ পয়সা। দশটার দশ মিনিট আগে ট্রেন এলো। ছাড়ার সময় বোর্ডে দেখাচ্ছে দশটা। স্টেশনের এ মাথা থেকে সে মাথা হেঁটে এলাম। ১০/১২ জন মাত্র যাত্রী। সারা স্টেশন কেমন সুনশান। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। কোনো কোলাহল নেই। ট্রেন ছাড়ার মিনিট দুয়েক আগে উঠলাম। ঠিক দশটাতেই ছাড়লো ট্রেন। মাটির নিচ থেকে আস্তে আস্তে ওপরে উঠে এলো। ছুটলো শহরের ওপর দিয়ে। মাঝে একটা মাত্র স্টেশন। তারপরই আমার গন্তব্য পুত্রাজায়া সেন্ট্রাল। মাত্র ২৫ মিনিটে পোঁছে গেলাম। স্টেশনে নেমে গাইড ম্যাপে দেখে নিলাম কোথায় কোথায় কী কী আছে। কিন্তু যাবো কিসে করে ? সারি সারি বাস আর টেক্সি দাঁড়িয়ে আছে। জানলাম, বাসে পুরো পুত্রজায়া ঘুরে দেখা যাবে। খরচ হবে মাত্র পঞ্চাশ পয়সা ! মানে আমাদের দশ টাকা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বাস কোথাও থামবে না। সেন্ট্রাল থেকে সরাসরি পুত্রাজায়া শহরে। বাসে থেকেই সব দেখতে হবে। আমিতো সেভাবে দেখতে চাই না ! আর টেক্সিতে গেলে প্রতি ঘন্টা টেক্সি ভাড়া ত্রিশ টাকা অর্থাৎ বাংলাদেশি ৬ শত টাকা। উপায় নেই গোলাম হোসেন ! কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে মনের দুঃখ মনে চেপে টেক্সিতেই উঠে বসলাম...।

প্রচন্ড গরম পড়ছে। এগারোটায় টেক্সি ছাড়লো। ইয়া মোটা ড্রাইভার ! টাকলু। মাথায় খুব সুন্দর একটা টুপি। তাকে বললাম, এসিটা বাড়িয়ে দিতে। বেটার কথা শুনে আমার আক্কেল গুড়–ম ! বলে কীনা, নো ইংলিশ। মানে হারামজাদা ইংরেজি বোঝে না ! খাঁটি বাংলায় বললাম, বাবা তোর যেখানে খুশি নিয়ে যা আমাকে...। আহাম্মকী যা করার করেছি। টেক্সিতে উঠার আগেই জেনে নেয়া উচিত ছিলো, ড্রাইভার ইংরেজি জানে কি না ? বেটা ড্রাইভার তার মর্জি মতো আমাকে নিয়ে গেলো বিভিন্ন স্থানে। এর মধ্যে চমৎকার মসজিদ, কোর্ট বিল্ডিং, সাইন্স রিসার্চ ভবন, নগর ভবন,২/৩ টা ব্রিজ, মাহাথীর মোহাম্মদের বাড়ি আর অফিস ইত্যাদি কয়েকটা জায়গা দেখাতে দেখাতে ৫০ মিনিট পার হয়ে গেলো। স্থাপনাগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক ছবি তুললাম। নিতের ছবিও নিজেকে তুলতে হলো। একবার ড্রাইভার হারামজাদাকে ক্যামেরা দেখিয়ে ঈশারা করে বুঝালাম, আমার কয়েকটা ছবি তুলে দেবার জন্য। ওই বেটা নির্বিকাভাবে দুই দিকে মাথা নাড়লো। যার অর্থ ছবি তুলে দেয়া তার কাজ না কিংবা বেটা ছবি তুলতে জানে না ! এক ঘন্টা ৫ মিনিট পরে স্টেশনে আমাকে নামিয়ে দিলো ড্রাইভার। দয়া করে এক্সট্রা ৫ মিনিটের টাকা আর চাইলো না...!

প্ল্যাটফর্মে মিনিট দশেক এদিক সেদিক হাঁটলাম। একটা ম্যাংগো জুশ কিনে খেলাম। সিগারেট খেলাম দুটো। একটা নেশা করে, অন্যটা মেজাজ খারাপের কারণে। ভাবছি, এবার কোথায় যাওয়া যায় ? স্টেশন থেকে শহর বেশ ক্ষাণিকটা দুরে। আবার যে হেঁটে যাবো, সে উপায়ও নেই। বাইরে ভয়ঙ্কর রোদ। অথচ পুত্রাজায়া শহরটা ভালো করে দেখার অতৃপ্তি রয়েই গেলো। একটা নাগাদ সিদ্ধান্ত নিলাম, হোটেলে ফিরে যাবো। কোন বাসে যাবো ? বাস নম্বর তো জানিনা ! সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে আছে। এক বাস ড্রাইভার বললো, ৫০০ নম্বর বাসে উঠলেই পুডুরায়া বাস স্টেশনে যাওয়া যাবে। ৫০০ নম্বর বাস খুঁজে পেতে মিনিট তিনেক লাগলো। উঠে পড়লাম বাসে। মাত্র ৫০ পয়সা টিকিট। একটু সন্দেহ হলো। ট্রেনে যেখানে টিকিটের দাম ৯ টাকা ৫০ পয়সা, বাসে সেখানে ৫০ পয়সা হয় কী করে ? যাই হোক, বাস ছাড়লো। যাত্রী মোট ৬ জন। পথে ৫ জন নেমে গেলো। রইলাম শুধু আমি। এক স্থানে এসে ড্রাইভার নামতে বললো। কিন্তু সমস্যা হলো, জায়গাটা একদমই অপরিচিত মনে হলো আমার কাছে। সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে আমার আক্কেল গুড়–ম ! লেখা রয়েছে পুত্রাজায়া ! তার মানে, আমি এতক্ষণ পুত্রাজায়া শহরেই ঘুরছি ? ড্রাইভার আমার কথা বুঝে না, আমি তো তার মালে ভাষা বুঝার কোনোই কারণ নেই। আমি যতোটা না বিরক্ত, তার চেয়ে বেশি বিরক্ত হয়ে ড্রাইভার আমাকে নিয়ে ছুটে চললো। অবশেষে বেটা বাসটা ডিপোতে এনে থামালো। আমাকে কিছু না বলে দরজা খুলে নেমে চলে গেলো। আমি বোকার মতো বসে আছি বাসে...।

কতোক্ষণ আর এ ভাবে বসে থাকা যায় ? বাস থেকে নেমে এলাম। ৩/৪ জন ড্রাইভার বসে আছে। ওদেরকে আমার গন্তব্যের কথা নানা ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করলাম। কেউ বুঝলোনা। আমি আবার সিগারেট ধরালাম। ওদেরকেও সাধলাম। এক জন বাদে কেউ নিলো না। যে সিগারেট নিলো সে বেটা বুদ্ধিমানের মতো কষে সিগারেটে দুটান দিয়ে মারাত্বক (!) ইংরেজিতে যা বললো, তার সারমর্ম হচ্ছে- আমি ভুল বাসে এসেছি। আমার উচিত ছিলো ৫০১ নম্বর বাসে উঠা। যাই হোক, পরবর্তী বাসে করে আমাকে ফিরে যেতে হবে পুত্রাজায়া সেন্ট্রালে। সেখান থেকে ৫০১ বাসে করে পুডুরায়া যেতে আমার খরচ হবে ৩ টাকা ৫০ পয়সা। এই তথ্য পেয়ে আমি যারপরনাই আনন্দিত। আবার ৫০০ বাসে উঠে ফিরে এলাম সেন্ট্রালে। সাড়ে তিন টাকায় টিকিট করে চড়ে বসলাম ৫০১ নম্বরে। ৩ টা বেজে ১০ মিনিট। প্রচন্ড খিদে পেয়েছে। উপায় কী ! হোটেলে পোঁছতে অন্তত আরো ঘন্টা খানেক। জানলার পাশে একটা সিটে হেলান দিয়ে বসলাম। বাসে খুব বেশি যাত্রী নেই। ১৬/১৭ জন। বাস ছুটছে হাইওয়ে ধরে...।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১১:৫০
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সচীবদের সম্পর্কে এখন কিছুটা ধারণা পাচ্ছেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ২০ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৭



সামুর ব্লগারদের মাঝে ১ জন সচীব আছেন,(বর্তমানে কর্তব্যরত ) তিনি বর্তমানে লিখছেন; আধামৃত সামুতে তিনি বেশ পাঠক পচ্ছেন; উৎসাহের ব্যাপার! এরচেয়ে আরো উৎসাহের ব্যাপার যে, তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদ, ইসলাম এবং আইয়ামে জাহেলিয়া: ঐতিহাসিক ও আধুনিক প্রেক্ষাপট

লিখেছেন মি. বিকেল, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৪



আইয়ামে জাহিলিয়াত (আরবি: ‏جَاهِلِيَّة‎) একটি ইসলামিক ধারণা যা ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্ববর্তী আরবের যুগকে বোঝায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময়কাল ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×