somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোনালী দিন

০৪ ঠা মে, ২০০৯ সকাল ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোনালী আলো এখনো দূর দিগন্তে। কোনো এক খুপড়ী পাড়ার ঘটনা। সদ্য শয্যা ত্যাগ করে এক মা ফোলা ফোলা চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে তার নয় বছরের শিশু সন্তানের দিকে। শিশুমুখ মাত্রই নিস্পাপ। আর তার উপর যদি হয় ঘুমন্ত তাহলেতো কথাই নেই। নিজের সন্তানের দিকে তাকিয়ে পৃথিবীর প্রতিটি মা কোনো না কোনো দিন ভেবেছে,কি অদ্ভুত সুন্দর। আবার কোনো না কোনো দিন ভয়ে তাদের বুক কেঁপে উঠেছে,কারো নজর না আবার লেগে যায়। কখনো দৃষ্টিতে থাকে আনন্দের পরিতৃপ্তি, কখনোবা শুন্য দৃষ্টি।

আলেয়ার দৃষ্টিতে শুধু অসহায়ত্ব। ভোরের পাখীরাও এখনো খাদ্য সন্ধানে বের হয়নি। প্রতিদিন সে নিজে যখন কাজে বের হয় খুব ভোরে,এমন কতদিন হয়েছে চোখ খোলা রাখতে পারছেনা। প্রায় দিন চুলায় রান্না চাপিয়ে বসে বসে ঝিমিয়েছে। কেমন করে সে তার শিশু সন্তানের ঘুম ভাঙায়? যেই বাসায় কাজ করে সে, খুব বেশি দূরে নয়।অল্প কিছু সময় হাটতে হয় তার। খালি পায়ে এইটুকু রাস্তা আসা যাওয়া করতেই তার পায়ে ফোস্কা পড়ে যায়। ভাবতে ভাবতেই ছেলের পায়ে হাত বুলায়। কোমল মতি শিশুর মনের মতই এখনো তুলতুলে দুটি পা। একটা দীর্ঘ শ্বাস নেমে আসে। হাত দুটো জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার আঙিকে। শীতল পানিতে থালা-বাটির দিনপাত আর এক জোড়া ছোট হাতে ধাতবের কড়াঘাতের অন্যরকম গল্পটা দুঁফোটা অশ্রু হয়ে গড়িয়ে পড়ল আলেয়ার চোখ হতে।

“রতন,বাপ উঠ্।সক্কাল হইয়া গেছে।”

দুচোখ কচলাতে কচলাতে ছেলের বিস্ময় মাখা দৃষ্টি।

“ওকি মা তুমি কান্দ কেন?”

“কান্দি না বাজান, চোহে কি জানি পড়ছে।”

সরল বিশ্বাসে গুঁটি গুঁটি পায়ে এগিয়ে যায় রতন। পেছন থেকে তার এগিয়ে যাওয়া দেখে, আর মুগ্ধ হয় আলেয়া। কি অদ্ভুত সুন্দর।

“মা আইজকা আমার আইতে একটু দেরী হইব।আইজকা আমরা হগলে মিলা নদীর ধারে খেলতে যামু।”

“আইচ্ছা বাজান। কিন্তু বেশি দেরী করিস না। আর সাবধানে থাকিস। পানিতে নামবি না একদম।”

“আইচ্ছা মা।আমি যাই।”

বলেই বেরিয়ে পড়ল রতন। এখন সে আগে যাবে মানিকের খোঁজে। তারা দুইজন একসাথে কাজ করে। বয়স আর শারীরিক ক্ষমতায় অন্যদের সাথে পাল্লা দিতেই এই জোট। দুজন মিলে করলে পরিশ্রম কিছুটা কম হয়। যদিও টাকা ভাগ করে নিতে হয়। তাও এটাই ভালো তাদের জন্য। তাছাড়া ওরা আলাদা কাজ করলে কেউ তাদের কাজে নেয় না। কিছুদূর এগোতেই মানিককে দেখা গেল।

“মানিক,আইছ দোস্ত। চল আগাই।”

“আইজকা গাও,হাত-পা কেমুন জানি ম্যাজ ম্যাজ করতাছে।”

“লও একটা দৌড় দিয়া যাই। গতরের ম্যাজ ম্যাজানী কইমা যাইব।”

আধো আলো আধো অন্ধকারে রদ্ধশ্বাসে ছুটছে ছোট ছোট দুটি প্রাণ। গন্তব্য শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত নদীর উপর দিয়ে ইস্পাত দৃঢ়তায় দাঁড়িয়ে থাকা ব্রীজ।

“মানিক মনে লয় আইজকা আমরা দেরি কইরা ফালাইছি। দেখ সবাই আইসা পড়ছে। এহন আবার তো লাইনে হগলের পিছে খাড়ান লাগবো।”

“তাই মনে হইতাছে।”

হাঁপাতে হাঁপাতে দুজন এসে দাঁড়ায় লাইনে সবার শেষে।

“এই পোলা লাইন ঠিক কইরা খাঁড়া।পাশাপাশি খাড়াইছস কে?আগে পিছে কইরা খাঁড়া।”

“আমরা দুইজন এক লগে।”

“একলগে হ আর আলাদা। সিরিয়াল ভাঙবি না কইলাম। নইলে খবর আছে।”

রতন মানিক চুপ চাপ রাস্তার পানে তাকিয়ে থাকে।এখনো অনেক ভোর। আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে হবে তাদের। ট্রেনের সময় প্রায় হয়ে আসলে বলে। এখনি ঝাকে ঝাকে রিক্সা আসতে শুরু করবে।

“স্যার ঠেলা লাগবে স্যার? দিই স্যার?”

“তুই পারবি না।তুই দিস না।”

“স্যার আমরা দুইজন আছি। দুইজন মিইলা দিমু স্যার। দিই স্যার? ও মানিক চাইয়া আছস ক্যা? হাত লাগা?”

“আরো জোরে রতন।”

“আরো জোরে মানিক।”

রতন মানিকের হাত টনটনে ব্যাথা করছে। উবু থুবু পাথরের কনায় পা আটকে আটকে যাচ্ছে। তাও তারা সর্বস্ব নিংড়ে দিয়ে যাচ্ছে। ব্রীজের মাঝপথ এসে গেল বলে। মাত্র দুটি টাকার আশায়। পূবের আকাশে স্মিত আলোর ছোঁয়া। আরেকটা সুন্দর সকাল। হয়তোবা আলোকিত আমার দেশ!!!

[ওই সমস্ত শিশুদের স্মরনে যারা সিলেটের কিন ব্রীজে এই অমানবিক কাজ করে মাত্র দুই টাকার বিনিময়ে। ছবিঃ শাহাবুদ্দিনের বিখ্যাত গতি সিরিজের একটি।]

১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×