কিছু সুন্দর আছে, যাকে কখনোই ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আজ এমনই এক সৌন্দর্য দেখলাম। এর আগেও আমি বারবার হিমলায়ের কাছে এসেছি। কিন্তু হিমালয়ের অপরুপ এমন সৌন্দর্য দেখতে পাইনি। দীর্ঘ আট মাস পর নেপালে আজ হিমালয় দেখা গেলো পরিস্কার ভাবে। আমরা পোখরার সারেংকোট থেকে দেখলাম সেই সৌন্দর্য। বরফের ভোরের লাল সূর্য আর অন্নপূর্ণাকে মনে হচ্ছিল পৃথিবীর স্বর্গ।
সত্যিই আমরা খুব ভাগ্যবান। গতকালই আমরা পোখারায় এসেছি। এরপর মুষলধারে ঝুম বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিতে পুরো নেপালে আনন্দ। সবাই বলেছিলো কাল নিশ্চয়ই হিমালয় দেখা যাবে। নেপালের সব পর্যটেকরাও তাই ভোরের অপেক্ষায় ছিলো। সকাল ৬ টায় আগে থেকেই রির্জাভ করা একটি মাইক্রোবাসে আমাদের সারেংকোট যাওয়ার কথা। কিন্তু ঘুম ভাঙ্গলো লেক সাইডের হোটেলে থাকা অন্য সাথীদের চিৎকারে।
জানালায় গিয়ে দেখি দূর থেকে হিমালয়ের বরফ দেখা যাচ্ছে। অমার বাকি দুই বন্ধু জুয়েল এবং মামুন ভাইও ঘুম থেকে উঠে আমার চেয়েও জোরে চিৎকার শুরু করলো। মনে হলো আমরা যেন অন্য কোন পৃথিবীতে আছি। এই সুন্দর প্রকাশের কোন ভাষা জানা নেই কারোই।
তাড়াহুড়ো করে আমরা সবাই মাইক্রোবাসে করে পড়িমড়ি করে ছুটলাম মইক্রোবাসে করে সারেংকোট। পধে পথে দেখলাম ভোরের আলোয় ক্ষনে ক্ষনে বদলে যাওয়া হিমালয় আর অন্নপূর্ণার নানা রুপ। সরেংকোটে মইক্রোবাস থামার পর এক ঘন্টা হাটার পর পৌছালাম টাওয়ারে। এর পর মনে হলো আমরা এমন কোন পৃথিবীতে আছি যেখাতন আর কিছুই নেই। সব সুন্দর যেন এখানে এসে খেলা করছে। মন ভুলিয়ে দিচ্ছে। মনে হলো এই জন্মই যেন স্বার্থক।
অন্নপূর্ণার চুড়ায় জমে থাকা মেঘের বরফে তখন শুরু হয়েছে সূর্য মামার নানা খেলা। রং বদলাচ্ছে বারবার। ভোর থেকে সকাল। এরপর একটু একটু করে আবার বদালাচ্ছে পৃথিবী। পোখরা লেকেও পড়ছে সেই সুন্দরের অপরুপ ছায়া। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ মানুষ হয়ে জন্মেছি। আমরা আসবো আবার হিমালয়ে। বারবার। বারবার। মরে যাওয়ার আড়ে এই সুন্দর দেখেই কিংবা ভেবেই মরতে চাই।
ভাবতে খারাপ লাগছে আবার ভালোও লাগছে আর মাত্র একদিন পর আমরা দেশে ফিরবো। প্রিয় বাংলাদেশে। ৩ মে আমাদের ফ্লাইট। প্রিয় মাটিতে এসেই ছুয়ে দেখবো প্রিয় দেশ। প্রিয় মাটি। হাজার যন্ত্রনার পরেও এই দেশই যে আমাদের আশ্রয়। ভালোবাসি বাংলাদেশ। ভালোবাসি হিমালায়। ভালোবাসি পৃথিবীকে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০০৯ রাত ১১:৫৩