somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউএফো বা ফ্লাইং সাস কল্পনা, বাস্তব, নাকি দৃষ্টি বিভ্রম?

৩০ শে এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষের জানা মতে, পৃথিবীই হচ্ছে মহাবিশ্বের একমাত্র জায়গা, যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে। কিন্তু আমাদের এই পৃথিবী ছাড়া মহাবিশ্বের অন্য কোনো গ্রহে যে প্রাণের অস্তিত্ব নেই বা থাকতে পারে না, তা-ই বা বলি কী করে ? মানুষ কল্পনা বিলাসী কিন্তু বিজ্ঞানে বিশ্বাসী। মানুষ কল্পনা করতে ভালোবাসে ঠিকই, কিন্তু বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত যুক্তিকে অগ্রাহ্য করতে পারে না।
ইউএফো বা ফ্লাইং সসার বর্তমান সময়ের একটি বহুল আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিতর্কিত এই বিষয়টির সত্যতা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো সংশয় প্রকাশ করেন। মহাবিশ্বের অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি নেই, বা মহাবিশ্বের অন্য কোনো গ্রহে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণী থাকার সম্ভাবনা নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো তথ্য প্রমাণই মেলেনি এ সম্পর্কে। অথচ অনেকেই দাবি করেন তারা পৃথিবীর আকাশে ফ্লাইং সসার বা টঋঙ দেখেছেন। আর এই ফ্লাইং সসার বলতে যা বোঝায় তা হলো- বহির্জাগতিক কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর তৈরী অতি উন্নত কোনো মহাকাশযান।
মহাকাশে প্রাণের অস্তিত্ব ঃ বিজ্ঞানিদের মতে, পৃথিবী ব্যতীত আমাদের সৌর জগতে কোনো প্রাণের অস্তি-ত্ব নেই বলে যে বিশাল মহাবিশ্বের কোথাও কোনো প্রাণের অস্তিত্ব থাকবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণেল ল্যাবরেটরির প্ল্যানেটরী স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ডঃ কার্ল সাগান বলেন, ‘পৃথিবীর মতো প্রাণের অস্তিত্ব মহাবিশ্বের কোথাও না কোথাও অবশ্যই আছে, এটা আমরা অবশ্যই আশা করতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মহাবিশ্বের যে কোটি কোটি গ্রহ-নক্ষত্র রয়েছে তার মধ্যে কোনো না কোনো গ্রহে প্রাণের উদ্ভব ঘটার মতো পরিবেশ আছেই।’ মহাকাশের বিশাল ছায়াপথের মাঝে সৌরজগৎ থাকতেই পারে, সেসব সৌরজগতে থাকতে পারে পৃথিবীর মতো বসবাস যোগ্য একাধিক গ্রহ, আর সেসব গ্রহে পৃথিবীর চেয়েও আরো বেশী উন্নত সভ্যতা থাকাটাও তাই বিচিত্র কিছু নয়।
ফ্লাইং সসার দেখার ইতিহাস ঃ ফ্লাইং সসার দেখার অতীত ইতিহাসটা বহু প্রাচীন। বলা যায় প্রায় বহু হাজার বছরের প্রাচীন এই সসার দেখার ইতিহাস। অনেকেরই ধারনা প্রাচীন মিশরের পিরামিড নির্মানে জড়িত আছে ভিন গ্রহের প্রাণীরা। তবে এর সবই কল্পনা। তবে এবার ফ্লাইং সসার দেখার অতীত ইতিহাসটা একটু ঘেটে দেখা যাক।
প্রাচীনকালে আকাশের উড়ন্ত বস্তু নিয়ে সবচেয়ে বিস্ময়কর এবং অবিশ্বাস্য ঘটনাটি ঘটে ছিল মহাবীর আলেকজান্ডারের সময়ে, খৃষ্টপূর্ব ৩২৯ অব্দে। মহাবীর আলেকজান্ডার যখন ভারত আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঠিক সে সময়ই ঘটেছিল এই বিস্ময়কর ঘটনাটি। তিনি তখন আফগানিস্তান পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করার জন্য একটি নদী পার হচ্ছিলেন। ঠিক রাতের বেলা তিনি সবিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করলেন আকাশে দুটি প্রকান্ড আগুনের গোলা তার সৈন্য ছাউনীর উপর দিয়ে চক্কর দিচ্ছে। এসব ফ্লাইং সসার নাকি আলেকজান্ডারকে কয়েকটি যুদ্ধে প্রচন্ড সহযোগিতাও করেছিল বলে কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। কিন্তু তারপরেও এসব ফ্লাইং সসার মাটিতে নেমে আসেনি, বা কারও সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগও করেনি। এর কোনো সঠিক ব্যাখ্যাও তখনকার কেউ দিতে পারেননি। হতে পারে এসব নিছকই কল্পনা। আবার এর মধ্যে সত্য ঘটনার চেয়ে কিংবদন্তীর ভাগ বেশী থাকাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু সেকালের অনেক বিশ্বখ্যাত পন্ডিত ও দার্শনিক ব্যক্তিরাও দেখেছিলেন এসব ফ্লাইং সসার। খৃষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দিতে গ্রীক দার্শনিক এ্যারিস্টটলের লেখা থেকেও পাওয়া যায় এসব ফ্লাইং সসার দেখার কাহিনী। তিনি নিজেও আকাশে এ ধরনের উড়ন্ত বস্তু দেখেছিলেন বলে দাবি করেন। তিনি বস্তুটির আকৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন এটি ছিল দেখতে অবিকল একটি ডিস্কের মতো। আলেকজান্ডারের ঢালের সাথে নাকি এর অনেকটা মিলও রয়েছে। তবে তিনি এ ব্যাপারে তেমন কোনো যুক্তি সংগত বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে যেতে পারেননি। আর তাই এ্যারিস্টটলের দেখাটাও ছিল অসম্পূর্ণ। সেকারণে এ ব্যাপারটাকে দৃষ্টিবিভ্রম বলে উড়িয়ে দেয়া যায় অনায়াসেই।
এবার আসা যাক একটু আধুনিক কালের ঘটনায়। তখন ১৯৫৪ সাল, অক্টোবরের ১৪ তারিখ। বৃটিশ রয়্যাল অক্সিলারি এয়ার ফোর্সের বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট জেমস আর সালান্দিন অল্পের জন্য একটি ফ্লাইং সসারের সাথে ধাক্কা লাগার হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। এই তারিখের বিকেল ৪ টার সময় তিনি এসেক্সের নর্থ ওয়েল্ড ঘাঁটি থেকে চলে যাচ্ছিলেন দক্ষিণ দিকে। সেদিন আবহাওয়াও ছিল বেশ দারুন। কিছু দূর যাবার পরই তিনি দেখলেন তার মতোই আরো দুটো বিমান তার পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। বিমান দুটোর পেছন থেকে তাদের সাদা ধোয়ার লম্বা লেজ দেখা যাচ্ছে। ঠিক সেই সময়ই তিনি লক্ষ্য করলেন একটি ফ্লাইং সসার হঠাৎ উড়ে এলো এবং তা একেবারে তার বিমানের ককপিটের সামনে দিয়ে বারবার চক্কর দিতে লাগলো। কিন্তু সসারটির ছিল অবিশ্বাস্য গতি। প্রচন্ড ক্ষিপ্রতায় সে অবলীলায় তার জেট বিমানকে বোকা বানিয়ে তার চোখের সামনে দিয়েই চক্কর দিচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিমান ঘাঁটির কন্ট্রোল রুমে জানালেন এই বিস্ময়কর ঘটনার কথা। ঘাঁটি থেকে জানানো হল- কই রাডারে তো এমন কিছু ধরা পড়ছে না। রাডার স্ক্রিণে শুধু তোমার বিমানের ছবি আসছে, আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। অথচ তখনো সেই সসারটি প্রচন্ড দ্রুত গতিতে তার সামনে দিয়েই চক্কর দিচ্ছিল! সালান্দিন সসারটির ছবি তুলতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু সেটির প্রচন্ড গতির কারণে তিনি ক্যামেরার নিশানাই ঠিক করতে পারছিলেন না। আর তার একটু পরেই চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল সসারটি। মিলিয়ে গেল দূর আকাশের নীলিমায়।
ফ্লাইং সসার দেখার ঘটনা শুধু যে একটিই তা কিন্তু নয়। এরকম ঘটনা ঘটেছে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে। ১৬৮৬ সালের ১ জুলাই তারিখে জার্মানির লিপ জিগ শহর, জার্মানির হামবুর্গে ১৬৯৭ সালে, ১৭৫৬ সালে সুইডেনে, ১৮৯৬ এবং ১৮৯৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও দেখা গিয়েছিল ফ্লাইং সসার। এসব সসার দেখেছিলেন সেখানকার অধিবাসীরা। একজন বা দুইজন নয়, দেখেছিলেন অনেক লোক। এরকম ঘটনা আরও ঘটেছে পরবর্তী সময়ে।
ফ্লাইং সসার আসলে কী, তা নিয়ে গবেষণাও হয়েছে প্রচুর। বিজ্ঞানীদের মতে যারা ফ্লাইং সসার দেখেছিলেন বলে দাবি করেন তাদের যুক্তি ততোটা যুক্তিযুক্ত নয়। এ ব্যাপারটা সম্পূর্ণ রূপে দৃষ্টিবিভ্রম বলে আখ্যায়িতও করেন তারা। আবার অনেকেই আছেন যারা নিজেদের খ্যাতি এবং যশ বাড়ানোর জন্য এরকম ফ্লাইং সসার দেখেছিলেন বলে দাবি করেন। কিন্তু তাদের ব্যাখ্যা করা ঘটনাগুলো ছিল সম্পূর্ণ রূপে মিথ্যে এবং বানোয়াট। আর তাই বিজ্ঞান এসব ফ্লাইং সসার দেখার সত্যতা কখনো স্বীকার করে না।
তাহলে, বৃটিশ রয়্যাল অক্সিলারি এয়ার ফোর্সের বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট জেমস আর সালান্দিন কী দেখেছিলেন ? তাদেরটা না হয় মিথ্যে হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে, কিন্তু জার্মানি, সুইডেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের শতশত মানুষেরা কী দেখেছিলেন ? তাদের ফ্লাইং সসার দেখার ঘটনাটাও কি বানোয়াট অথবা দৃষ্টিবিভ্রম ? এতোগুলো মানুষের একসাথে দৃষ্টিবিভ্রম হয়েছে শুনলে অবাক লাগাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই ফ্লাইং সসার তাহলে কী ? এটা কি মানুষের স্রেফ কল্পনারই ফসল, নাকি দৃষ্টিবিভ্রম, অথবা বাস্তব ? এ প্রশ্নের জবাব একদিন হয়তোবা আমরা পাবই, আর সেদিন খুব বেশী দূরে নয়!

তথ্যসূত্র : মহাকাশের আগন্তুক ফ্লাইং সসার- ভবেশ রায় এবং বিভিন্ন ওয়েব সাইট অবলম্বনে।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×