somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্লোদ মনে: ফরাসি চিত্রকলায় প্রতিচ্ছায়াবাদের পৃথিকৃৎ ...

৩০ শে এপ্রিল, ২০০৯ সকাল ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





ক্লোদ মনে।
একবার প্যারিসে এসে ক্লোদ মনে দেখলেন ল্যুভর মিউজিয়ামে বসে প্যারিসের চিত্রশিল্পীরা সব পুরনো দিনের শিল্পগুরুদের ছবি কপি করছে। মনে সেরকম না করে জানালার বাইরে তাকিয়ে যা দেখলেন তাই আঁকলেন। আর, এভাবেই জন্ম হল ইমপ্রেশনিজম-এর। খুঁটিনাটির মধ্যে না গিয়ে কেবল মূল ভাবটি ফুটিয়ে তোলার শিল্পরীতিই হচ্ছে প্রতিচ্ছায়াবাদ বা ইমপ্রেশনিজম; এর অন্য একটি বাংলা প্রতিশব্দ করা হয়েছে, প্রতীতিবাদ। মনেরএকটি ছবির নাম, ‘ইমপ্রেশন, সানরাইজ।’ চিত্রকলায় ইমপ্রেশনিজম শব্দটি ওখান থেকেই এসেছে। যা হোক। ফরাসি চিত্রকলায় প্রতিচ্ছায়াবাদের পৃথিকৃৎ ছিলেন মনে। প্রকৃতিতে বসে ছবি আঁকার রীতি তাঁর কাছেই শিখেছে তাঁর সমকালের শিল্পীরা।



মনের পুরো নাম ক্লোদ অসকার মনে। জন্ম, ১৪ নভেম্বর ১৮৪০-প্যারিসে। ৫ বছর পর মনের পরিবার চলে যায় নরমানডিতে। পরিবারের মুদি দোকান ছিল, মনের বাবা মুদিদোকানে বসতে বলত, মনে বসত না মনের ভিতরকার প্রখর শিল্পবোধের কারণেই হয়তো ... মনের মা ছিলেন গায়িকা। এগারো বছর বয়েসে স্থানীয় আর্টের ইশকুলে ভর্তি হয় বালক মনে। কয়লা দিয়ে নানান ক্যারিকেচার আঁকত কিশোর মনে -দশ থেকে কুড়ি ফ্রান্সে নাকি বিক্রি করত।



নরমান্ডি জায়গাটা সমুদ্রের তীরে। ১৮৫৭ সালে ওই সাগর তীরেই ইউজিন বোদিন নামে এক চিত্রকরের সঙ্গে দেখা মনের। বোদিনই তাকে তৈলচিত্র, আউটডোর ছবি আঁকার টেকনিক সম্বন্ধে প্রাথমিক জ্ঞান দান করেন। । ঐ বছরই, অর্থাৎ ১৮৫৭ সালেই মনের মা মারা যায়। মনের তখন ১৬ বছর বয়েস। এক বিধবা খালা ছিল -তার কাছে সে থাকতে শুরু করে। আঁকার ইসকুল ভালো লাগছিল না বলে ছেড়েও দেয়।



তারপর প্যারিসে যান মনে । অনেকগুলি বছর কেটেছিল প্যারিসে। অনেকেই বন্ধু হয়েছিল তার। তাদের একজনের নাম এদুয়ার্দ মানে। ১৮৬৬ সালে মনের ‘সবুজ ড্রেস পরা রমনী’ তাঁকে পরিচিতি ও খ্যাতি এনে দেয়।



এই ছবির মডেল ছিলেন কামিলে দনসিয়ূ। পরে এঁকেই বিয়ে করেন মনে। অবশ্য বিয়ের আগেই অর্ন্তসত্তা হয়ে পড়েছিল কামিলে। ১৯৬৮ সালের দিকে অর্থনৈতিক সমস্যায় দিশেহারা হয়ে সিন নদীতে ডুবে আত্মহত্যার চেস্টা করেন মনে।



যক্ষায় স্ত্রী কামিলে মারা যান ১৮৭৯ সালে। বিষন্ন মনে ছবি এঁকে যান মনে। অভার আর অভাব। দারিদ্রর চরম পীড়ন। সে সব ভুলে থেকে একের পর এক নিসর্গচিত্র আঁকতে থাকেন। ফ্রান্সের গ্রাম উঠে আসে ছবিতে।



১৮৮৩ সালে মে মাসে গিভারনি নামক একটি জায়গায় ২ একর জমিসহ বড় একটি বাগানবাড়ি ভাড়া নেন মনে। গোলাঘরটি স্টুডিও হিসেবে ব্যবহার করেন। বাড়ির সামনে ছোট বাগান, আঙুরক্ষেত। কাছেই শিশুদের স্কুল। কাজেই, ছবি আঁকার উপাদানের অভাব ছিল না। পরিবারের সবাই বাগানে শ্রম দিতে লাগল। ক্রমশ অর্থনৈতিক অবস্থা বদলাতে লাগল। সেই সঙ্গে ছবিও বিক্রি হচ্ছিল ভালো। ১৮৯০ সালে মনে বাগানবাড়িটি কিনে ফেললেন মনে।



জীবনে উত্থানপতন থাকবেই। মনের ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ল। মারা গেলেন ১৯২৬ সালে ৫ ডিসেম্বর। ৮৬ বছর বয়স। গিভারনির গীর্জের কবরখানায় সমাধিস্থ করা হয় তাঁকে।



১৯৬৬ সালে মনের বংশধরেরা মনের পদ্মপুকুরসহ বাগানবাড়িটি ফ্রেঞ্চ আদাদেমি অভ ফাইন আর্টসে দান করে। ১৯৮০ সাল থেকে দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় সেই । সারাবিশ্ব থেকে ট্যুরিষ্টরা আজও যায় সেই বাড়িতে।



সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:১২
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×