somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রঙহীন স্মৃতি এবং উলঙ্গ অনুভূতি!

২৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনে আছে? মনে আছে তোমার?
আরে ঐ যে তোমার সাথে যেদিন প্রথম দেখা হলো! ঝুম ঝুম বৃষ্টিতে মেতে উঠেছিল প্রকৃতি। তোমার আমার খুশীতে যেনো প্রকৃতিও মিউজিক বাজিয়েছিল। তাই না? কি আসাধারণ সেই মুহূর্ত। ভোলা যায় কি সেদিন?
আর.... আর সেই যে একটু দূরত্ব রেখে একটি গাছের নিচে দুজন বৃষ্টি থেকে বাচার এক চেষ্টা করছিলাম। তাও কি মনে আছে তোমার? হা হা...মাঝখানেতে তোমার ব্যাগটা রেখে বলেছিলে, তুমি দূরে বসো। খবরদার কাছে আসবে না।
আমি তখন মিষ্টি একটি হাসি দিয়েছিলাম। অবশ্য আমি কিন্তু সেদিন খুব একটা সময় তোমার পাশে বসিনি। দাড়িয়েই ছিলাম। আর দেখছিলাম বৃষ্টির ছোট ছোট ফোটায় ভেজা এক অপরূপ মেয়েটিকে। বাংলার প্রকৃতি যেনো সেদিন তোমাকেও বাংলা বানিয়ে দিয়েছিল।
সেই তো শুরু। হঠাৎ একদিন কি মনে করে আমার কাঁধে মাথা রেখে দিলে!
কেনো? কেনো রেখেছিলে? বলবে?
নাহ থাক। বলবার কোনো দরকার নেই। আমি জানি। তুমি সেদিন এক প্রশান্তির সন্ধান করতে গিয়ে আমার কাঁধে মাথা রেখেছিলে। আমিও তোমাকে শক্ত করে ধরে বলেছিলাম, কি হলো হঠাৎ?
তাই না? কি চমৎকার সেই রোমান্টিকতা। মিষ্টি অনুভূতি। এক হিমেল বাতাসের মতো অনুভূতি।
আমি তো তোমাকে প্রায়ই বলতাম, আমার প্রিয় আকাশ। আকাশের নীল রঙ আমার খুব পছন্দ। সে আকাশে আমি হারিয়ে যেতে চাই। যদি কখনও পারি সেই আকাশে হারিয়ে যাবো।
একদিন তুমি নীল রঙের জামা পড়লে। কি মনে করে পড়লে তাও জানি না। সেদিন মিষ্টি রোদও ছিল। মিষ্টি রোদে নীল জামা তোমাকে যেনো আকাশ বানিয়ে দিয়েছিল। আর আমি সেদিন হারিয়ে গেলাম আকাশে। সেই বিশাল আকাশে এক উড়ন্ত পাখির মতো উড়েছিলাম। ডানা ঝাপটে আমি চঞ্চল হয়ে উড়ছিলাম আর তুমি নিশ্চুপভাবে স্থির আকাশের মতো অনুভব করেছিলে আমার আবেগকে।
তোমার খুব পছন্দের ছিল, আমার বুকে মাথা রেখে চুপ করে বসে থাকা। আমিও তখন তোমাকে জাবড়ে ধরে বসে থাকতাম। তোমার প্রতিটি নিশ্বাসকে তখন উপলব্ধি করবার চেষ্টা করতাম।
তুমি যখন শাড়ী পরতে; তখন তোমাকে খেপানোর জন্য বলতাম, তুমি শাড়ী পরবে? আর আমি তোমার পেটের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবো।
তুমিও লজ্জায় লাল হয়ে উঠতে। শাড়ী পড়লেই হতো! আমার সামনে সেদিন যেনো তুমি আসতেই চেতে না। তোমাকে আরও খেপানোর জন্য বলতাম, ছিহ তোমাকে বিছরি লাগছে।
তুমি তখন অভিমানে মুখটা গম্ভীর করে রাখতে। তোমার সেই গম্ভীর মুখখানা কিন্তু দেখার মতো ছিল! কপাল-টপাল কুচকে একদম ভাব নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে। বেশী বেশী রাগ করলে, আমাকে ভাইয়া বলে ডাকা শুরু করতে। তুমিও জানতে তোমার মুখে ভাইয়া ডাকটা আমার একদম পছন্দ না।
আমাকে খেপানোর জন্য এই অস্ত্র তুমি ভালো মতই ব্যাবহার করেছিলে। আমিও খেপে বুম।
যখন রাত নেমে আসতো। রাতের অন্ধকার গভীর থেকে গভীর হতো; তখন আবার তুমি আসতে। ফোনে ফোনে ফিসফিসিয়ে বলতে, এই... কি হলো? এখনও ঝগড়া করবে?
অভিমান আর থাকে কোথায়? সব যেনো মিলিয়ে গেলো তোমার হাসির শব্দতে।
তোমার আমার দু-শব্দের এস.এম.এস হতো। দুটি শব্দ দিয়ে পৃথিবীর অনেক মূল্যবান কথাও যে বলা যায় তা কিন্তু আমরাই জানি। হৃদয়ের সব গভীর কথাও কিন্তু বলে দেয়া যায় দুটি শব্দ দিয়ে।
তোমার আমার ঝগড়ার পর্বটা আরও মজার ছিল। চিৎকার চেচামেচিতে তুমি কাপিয়ে ফেলতে আমার কানের পর্দা। আমি তখন চুপ করে তোমার কথা শুনতাম। তুমি তখন বলতে, কি হলো? আমার ঝগড়াটাও তোমার ভালো লাগে না? চুপ করে আছো কেনো?
সে আরেক বিপদ! আবার ঝগড়ার সময় কথা বলতে গেলে বলতে, তুমি সব-সময় বেশী কথা বলো। আমাকে বলতে দাও না কেনো?
বিপদে চাপা পড়লেও মনে মনে হাসতাম। মনে মনে ভাবতাম, তোমার বুকে মাথা রেখে এক অবুঝ শিশুর মতো আমি শুয়ে আছি আর তুমি আমাকে বকেই চলেছ।
এসব তো আর তোমাকে বলতাম না। বলেই বা কি লাভ! বললে কি আর ঝগড়া করতে?
আবার অন্য কোনো মেয়ের সাথে আমার কথা বলতে দেখলে তুমি যেভাবে রাগে জলতে তখন আমার তোমাকে খুব আদর করতে ইচ্ছে হতো। তুমি জানতে, তোমাকে ছেড়ে আমি যাবো না। তারপরও তুমি কেনো যে সেধে সেধে ঝগড়াটা করতে তাও বুঝে উঠতে পারতাম না।
তুমি যখন কোনো ভুল করতে তখন তোমাকে বোঝাতাম। মনে আছে, তোমাকে একদিন বই মেলা থেকে ফেরার পথে কত্ত বুঝিয়েছিলাম। জীবনের বাস্তবতা মেনে নেয়ার জন্য তোমাকে বুঝিয়েছিলাম। তুমি একদম বাচ্চাদের মতো আমার বুকে মাথা রেখে চুপ করে শুনছিলে। এরপর থেকেই তুমি বলতে, আমার জীবনের লক্ষ্য তুমি ঠিক করে দিলে।
এতো একদিনের কথা। আরও কতদিন যে তোমাকে বুঝিয়েছিলাম। তোমার অপরাধে তোমাকে শাস্তি দেয়ার চেয়েও তোমাকে বোঝানোটাই যেনো আমার উদ্দেশ্য ছিল।
আর আমি সহজে রেগে যেতাম না। তাতেও তোমার অভিযোগ ছিল। আমি কেনো রাগি না!
এসব ভাবতেই হেসে আমি কুটি কুটি হই। না রাগাটাও যে একটা অপরাধ হতে পারে সেটা তুমিই বলেছিলে।
আমার বাসা থেকে চাঁদ দেখা যেতো না। চারিপাশে বিল্ডিংয়ের চাপে বেচারা চাঁদ হারিয়ে যায়। তোমার বাসা থেকে স্বচ্ছ চাঁদটা দেখা যেতো। সেই চাঁদের মতো তুমিও হয়ে উঠতে রহস্যময়ী। রহস্য করে বলতে চাঁদের বর্ণনা। আর সেই সাথে ভরা জ্যোসনায় তোমার সমস্ত ভালোবাসা ঢেলে দিতে আমাকে।
এতো রোমান্টিকতা আমাকে সাজায় না। তাই না? অহেতুক রোমান্টিকতা দেখাচ্ছি। তাই তো?


২.
সুখ তো আর সয় না। আমাদেরও সইলো না। রহস্যময়ী চাঁদ হয়তো আকাশে ওঠে কিন্তু তার বর্ণনাটা এখন আর শোনা যায় না। নুপুরের মতো ঝঙ্কারের হাসিটাও এখন আর আমার কানে বাজে না। কেউ এখন আর আমার সাথে সেধে সেধে ঝগড়া করে না। কেউ এখন আর আমাকে বকে না। কেউ এখন আর আমাকে দু-শব্দের এস.এম.এস করে না। কেউ এখন আর আমাকে বলে না, তোমার বুকে মাথা রেখে সুখ পাই। শান্তি পাই।
কারও অন্যায়ে এখন আর আমি বোঝানোর অধিকারও রাখি না।
জীবন। এটাই জীবন। বাস্তবতাময় জীবন। তোমাকেই বুঝিয়েছিলাম, কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিতে শেখো। তা না হলে জীবনে অনেক ভুগতে হবে।
আর সেই কঠিন বাস্তবতার ফাঁদে যেনো তুমি আমাকেই ফেললে।

সেদিন তোমাকে খুব কাছ থেকে দেখলাম। হাতে তোমার লাল চুড়ি ছিল। পরনে সবুজ জামা। ঠিক যেনো বাংলার রুপ। সেই অপরুপ রুপে আমিও যে তোমায় দেখার এক অদম্য ইচ্ছা নিয়ে বসে থাকতাম। কখনও বলা হয়নি। তুমিই তো বলতে, আমি অনেক চাপা স্বভাবের ছেলে।
মনে হলো, তোমাকে প্রশ্ন করি। প্রশ্ন করি, এখন কি তুমি সে মানুষটিকে আমার মতই চাঁদের গল্প শোনাও? এখন কি তুমি সে মানুষটিকে দু-শব্দের ছোট্ট এস.এম.এস পাঠাও? এখন কি তুমি সে মানুষটির বুকে মাথা রেখে বলতে পারো, আমি তোমার বুকে মাথা রেখে প্রশান্তি পাই? এখন কি সে মানুষটির সাথে অভিমান করো? সে কি তোমায় আমার মতই বোঝায়?
তখন কি আমার কথা তোমার মনে পড়ে?
এই সব প্রশ্ন মনে এসে ভীড় জমিয়েছিল। ভীড় জমিয়েছিল আমার প্রতিটি অনুভূতিতে এবং আমার স্মৃতিতে। কারণ তারা উত্তর চায়।
আমি তাদের উত্তর দিতে পারে নি। তাই সেই স্মৃতিরা সেদিন কেঁদেছিল। আর সে জন্যই সেদিন আমার চোখ দুটো তোমাকে দেখে লুকিয়েছিল।

তাই এখন আর বৃষ্টি আকাশ কিংবা চাঁদ আমাকে কাছে টানে না। কাছে টানে না বাংলার অপরুপ রুপ। তুমিই যেনো আমার মনের সকল রঙ। সেই রঙ এখন বিবর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ সমস্ত অনুভূতিই এখন উলঙ্গ হয়ে গেছে। তাদের উলঙ্গ নৃত্যতে আমি পরাস্ত। তাদের দেখে ঘৃণায় মুখ লুকানোরও সাহস পাই না।



বিঃদ্রঃ গল্পকে ব্যাক্তিগত ভাবিয়া কেউ আবার ধাক্কা খাইবেন না। ;)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫১
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×