somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

দেশটি ভেঙে যাচ্ছে! / মি শা হো সে ন

২৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ ভোর ৬:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি লেখা । পড়লাম । শেয়ার করলাম এখানে

দেশটি ভেঙে যাচ্ছে!
মি শা হো সে ন
-------------------------------------------------------------------
সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী যেভাবে উচ্ছেদ হয়েছে, তা দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সফল হতে পারে। কিছুদিন আগে সংসদ ভবনের চারপাশে একটি মানববন্ধন রচনা করা হয়। ধ্বনিত হয় ‘ইসলামকে রাজনীতির বাইরে রাখুন’ স্লোগান। এই ঘটনা দ্বারা প্রত্যয়ী হয়ে আমি পাকিস্তান সফর করি একই ধরনের অনুভূতির সন্ধানে।
এ বছর জামরুদে আÍঘাতী বোমা হামলায় যখন ৮৫ জন নিহত হয়, তার কয়েক দিন পর আমি করাচি যাই। সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলজুড়ে ওই হামলার খবর। ইসলাম অথবা ধর্মের নামে সহিংসতার খবর দিয়ে আবারও শিরোনাম লেখা হচ্ছে। সম্প্রতি সংবাদপত্রের এক জরিপে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ১০০ দিনে পাকিস্তানে ৩৩২টি সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ড সত্ত্বেও পাকিস্তানে কেউই কিছু করছে না। রাজনীতিকরা বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন, সাংবাদিকরা লিখছেন, কিন্তু কেউই রাস্তায় প্রতিবাদে নামছেন না। এর পরিবর্তে ১৬ কোটি লোক ঘরের ভেতরে আবদ্ধ রয়েছে এবং দেশের এই অবনতিশীল পরিস্থিতি অবলোকন করছে চা পানের ফাঁকে ফাঁকে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের সেই দিনগুলো কোথায়, যার ওপর এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?
দু’দিন পর কয়েকটি ব্রিটিশ দৈনিকে একটি ১৭ বছরের মেয়ে সম্পর্কিত খবর ছাপা হয়। স্বামীর পরিবর্তে আরেকজনের সঙ্গে দেখা যাওয়ায় তাকে চাবুক মারা হয়েছে। এ সংক্রান্ত অনাকাক্সিক্ষত ভিডিওটি আমি দেখতে বাধ্য হই। প্রতিটি আঘাত আমার বিবেককে বিদ্ধ করে। তার এ অগ্নিপরীক্ষা তার স্বজনদের মতো আমাকেও ক্ষুব্ধ করে তোলে। লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা শিরোনাম করেছে- ‘পাকিস্তানে ভয়ার্ত চিৎকার’। তবে আবারও লক্ষ্য করলাম, ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে প্রতিবাদের ভাষা সোচ্চার ও সংহত নয়।
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ওই উš§ত্ততা থেকে করাচি এখনও লাখ লাখ মাইল দূরে বলেই মনে হয়। এখানে এখনও আশা আছে। করাচি একটি কসমোপলিটন নগরী হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। আমার অভিজ্ঞতা হল, পাকিস্তানের অন্যান্য অংশের তুলনায় এখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, আছে আন্দোলনও। তবে এখানে, দেশের উদারপন্থার এই কেন্দ্রে, প্রতিবাদকারীরা একটি বার্ষিক শিল্পকলা উৎসব ভণ্ডুল করে দিতে সক্ষম হয়েছে। কেন? কারণ এটা নাকি তাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্যকে ‘লংঘন’ করেছে! যখন একটি উগ্র সংখ্যালঘু গোষ্ঠী করাচিবাসীর বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়, তখন কি একইভাবে তাদের অধিকার লংঘিত হয় না? আবারও কথার তুবড়ি ছোটানো ছাড়া আর কিছুই নয়! আমি ভেবে পাই না, কেন গোটা নগরী বর্বরদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে না। আমাদের মধ্যে যারা সমতাবাদে বিশ্বাসী, যদি কেবল তাদের কিছু দৃঢ় প্রত্যয় থাকত যা অন্যদের নেই, তাহলে পরিবর্তনের ঘটনা ঘটতে শুরু করত।
তাই এক অর্থে বলা যায়, পাকিস্তানে যদি বিপ্লব সংঘটিত হয়, তার সূচনা হবে করাচি থেকেই। নগরীটির এক ধরনের রূঢ়, তেজি অনুভূতি আছেÑ পরিচ্ছন্ন, সবুজ রাজধানী ইসলামাবাদে যার অভাব দেখা যায়। করাচির একটি সাহসী ও নির্ভীক পরিচয় রয়েছে, যার প্রতিফলন ঘটেছে এর নাগরিকদের ওপর। উদাহরণস্বরূপ, এখানে নারীরা আপাদমস্তক ঢেকে রাখে না। তাদের আছে সজীব অভিব্যক্তি, কণ্ঠ ও নির্দেশনা। তারা স্বাধীন, অগ্রসর চিন্তাধারার অধিকারীÑ সাহসের সঙ্গে বলব? আবেদনময়ী। সোয়াতসহ পাকিস্তানের অন্যান্য দমিত অঞ্চলে যে আশার স্পন্দন শোনা যায় না, এখানে তরুণ ও উদ্যমীদের সমাবেশগুলোতে তা ধ্বনিত হয়। এখানে পাকিস্তানের একটি ভিন্ন ভবিষ্যতের দেখা মেলে। যা প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক।
আমি প্রায়ই ভাবতাম, বাংলাদেশ নানাভাবে বিভক্ত। কিন্তু এখন আমি উপলব্ধি করি, আমাদের আসল মূল্যবোধগুলো অভিন্ন : আমরা একই ভাষায় কথা বলি, একই খাবার খাই, একই পোশাক পরি, দেখতে একইরকম এবং একই ভৌগোলিক এলাকায় বসবাস করি। আমরা একটি জাতি; মুসলমান, খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ- সবার একটি অভিন্ন লক্ষ্য আছে- গণতন্ত্র। এই একটি আশা কখনও ‘ধর্মীয়’ উপসর্গে ভুগবে না। অন্যদিকে পাকিস্তানের মানুষের নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করার মতো কিছুই নেই।
১৯৭১ সালের বিভক্তির পর থেকে বিশাল প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ (অন্তত দুজন রাষ্ট্রপ্রধানের হত্যাকাণ্ড, চারবার জরুরি অবস্থা, পাঁচটি বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং ১৯ বার প্রধানমন্ত্রী বদলের সম্মুখীন) জাতি হিসেবে আমরা ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছি। এর বিপরীতে পাকিস্তান একটি ‘ব্যর্থ রাষ্ট্রে’ পরিণত হওয়ার কিনারায়। অবশ্য আমি পশ্চিমা কূটনীতিকদের এ উদ্ধৃতিটি ব্যবহারে ঘৃণা করি। দেশটি (আমি এটাকে একটি জাতি বলতে চাই না) ভেঙে পড়ছে। ধর্মকে গণতন্ত্রের সঙ্গে মেশানোর ধারণা স্পষ্টভাবেই কোন টেকসই বিকল্প নয়। জনগণকে এখন বা চিরদিনের জন্য শান্তি ধরে রাখতে হবে।
মিশা হোসেন : বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক
----------------------------------------------------------------
দৈনিক যুগান্তর।২৯ এপ্রিল ২০০৯ প্রকাশিত


ছবি - ক্রিস গ্রুমবকো















সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ ভোর ৬:৫৩
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×