somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল-কুরআন

২৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পবিত্র কোরআন হচ্ছে আল্লাহর এক মহা-নেয়ামত, ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বের একমাত্র সহায়ক হাতিয়ার, ভয় ও দুশ্চিন্তা দূর করার মাধ্যম, স্রষ্টার সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভের একমাত্র পথ, মুত্তাকিদের জন্য পথ-প্রদর্শক,পথের দিশা, পুঞ্জিভূত সম্পদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ সম্পদ, রোগাক্রান্ত অন্তরের আরোগ্যকারী, শয়তানের বিরুদ্ধে সবচাইতে শক্তিশালী মিত্র, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্যকারী।

১· ‘এ (কোরআন) সে-ই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই, এতে রয়েছে মুত্তাকীদের জন্য পথের দিশা” (সূরা বাকারা ২ আয়াত)।
২· “ হে মানুষ তোমাদের জন্য এসেছে উপদেশ তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এবং অন্তরে যা আছে তার নিরাময় আর মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত। বলুন, ”এ কোরআন আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত, অতএব তারা সবাই আনন্দিত হোক। তারা যা কিছু জমা করে এই কোরআন তাঁর চেয়ে অনেক উত্তম” (সূরা ইউনুছ ৫৭, ৫৮ আয়াত)।
৩· “রমজান মাসেই কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়াত, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী” (সূরা বাকারা ১৮৫ আয়াত)।

কোরআন পাঠ আল্লাহর নির্দেশঃ বর্তমান ফেতনা-ফ্যাসাদযুক্ত সময়ে আমাদের জীবন কোরআন কেন্দ্রিক হওয়া জরুরী। এ জন্য কোরআন পড়তে হবে আর কোরআন পড়া আল্লাহর আদেশ ও বটে!।
১· “আপনার প্রতি নাজিলকৃত কোরআন পড় ন এবং নামাজ কায়েম করুন” (সূরা আনকাবুত ৪৫ আয়াত)।
২· “আমি যাদের কিতাব দিয়েছি, তারা তা যথোপযুক্তভাবে পড়ে, তারা এর প্রতি নিষ্ঠা সহকারে ঈমান আনে” (সূরা বাকারা ১২১)।

সর্বোত্তম ব্যক্তি হতে হলেঃ প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে স্ব স্ব অবস্থানেসম্মান জনকভাবে থাকর জন্য আমরা সচেষ্ট। আমরা চাই ভালো থকতে, সুখে-শান্তিতে থাকতে, সফল হতে, মর্যাদার সাথে বাঁচতে। এ ক্ষেত্রে সর্বোত্তম ব্যক্তি হতে হলে আমাদের করণীয় কি হওয়া উচিত এ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশ হচ্ছে,
১· “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি তিনি, যিনি কোরআন শিক্ষা লাভ করেন ও কোরআনের শিক্ষা দান করেন (প্রচার করেন)” (বুখারী)।
২· “তোমরা ফরজ এবং কোরআন মজীদ শিক্ষা কর এবং লোকদিগকে শিক্ষা দাও” (মিশকাত)।
৩· “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ” (ইবনে মাজাহ)।

মুসলমান হিসাবে কর্তব্যঃ ময়াদা পূর্ণ জীবন গঠনের জন্য মুসলমান নর-নারীর কোরআন শেখা, কোরআন পড়া, মুখস্ত করা, বুঝতে চেষ্টা আবশ্যকীয় কর্তব্য। কোরআন শেখা, পড়া ও বোঝার জন্য প্রত্যেক মুসলমানের ব্যক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। এটা কোরআনের মৌলিক দাবিও বটে। প্রয়োজনে সমষ্টিগত উদ্যোগদও গ্রহণ করতে হবে।

কোরআন কিভাবে পাঠ করতে হবেঃ কোরআন আল্লাহর কালাম। কোরআন কিভাবে পাঠ করতে হবে এ ব্যাপরে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কোরআন সেইভাবে পাঠ করতে হবে, যেভাবে আমাদেরকে পাঠ করতে বলা হয়েছে রাসূল (সাঃ) যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, যেভাবে তিনি পাঠ করেছেন এবং তাঁর সাথী-সাহাবীগণ (রাঃ) পাঠ করেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে, “ধীরে ধীরে সহীহ-শুদ্ধভাবে কোরআন পড়-তেলাওয়াত কর” (সূরা মুযামমিল আয়াত ৪)। কোরআন আমাদের ধর্মগ্রন্থ হলেও আমরা অনেকে যথাযথ নিয়মে, সহীহ শুদ্ধ কোরআন পড়তে পারি না, জানি না। ছোট কালে কোরআন শিখলেও নানাবিধ ব্যস্ততার কারণে না পড়ায় আমরা অনেকে কোরআন পড়া ভুলে গেছি, অনেকে কোরআন পড়লেও আগের মত সহীহ হয় না, নিয়ম অনুযায়ী কোরআন পড়া হয় না। যারা ভুলে গেছি, তারা এখন সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, সহীহই ভাবে আবার কোরআন শেখার ব্যবস্থা গ্রহণ করাও জরুরী কর্তব্য। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোরআন শিক্ষা করে অতঃপর তা ভুলে যায়, কেয়ামতের দিন সে অঙ্গহীন রূপে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে” (আবুদাউদ)। চ-এর স্থলে ছ-দিলে, চ-এর স্থলে ঋ-দিলে অর্থের পরিবর্তন হয়, নাম্বার পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে আমরা সচেতন। আরবী হরফ একটির স্থলে আরেকটি পড়লে কি নামায হবে? এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে। অন্তত নামাজ উপযোগী সূরাগুলো-পড়াগুলো আমাদেরকে সহীহ করতেই হবে। কারণ নামাজের মধ্যে কোরআন ভুল পড়লে নামাজ হয় না। নামাজ ভঙ্গের ১৯টি কারণের মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে নামাজে অশুদ্ধ তেলাওয়াত করা- অশুদ্ধ পড়া। যথাযথ নিয়মে নামাজ না পড়লে রাসূলের (সাঃ) হাদিস হচ্ছে, ‘সবচেয়ে বড় চোর হলো সেই ব্যক্তি, যে নামাযে চুরি করে। জিজ্ঞাসা করা হলো, কি ভাবে নামাযে চুরি করা হয়? রাসূল (সাঃ) বললেন, যথাযথভাবে রুকু সিজদা না করা ও সহীহ ভাবে কোরআন না পড়া” (আহমদ)। শিক্ষিত, সামাজিক মর্যাদার অধিকারী আর সম্পত্তির মালিক হলেও কুরআনের জ্ঞান যাদের মধ্যে নেই, তাদের কে আল্লাহ নিরক্ষর আর মূর্খ হিসাবে কোরআনে উল্ল্যেখ করেছেন। এ ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, “তাদের মধ্যে এমন কিছু নিরক্ষর-মূর্খ লোক আছে যারা মিথ্যা আশা ছাড়া কিতাবের কিছুই জানে না, তারা মুধু অমূলক ধারণাই পোষণ করে” (সূরা বাকারা ৭৮ আয়াত)।

অন্ধ অবস্থায় যাদেরকে কেয়ামতের দিন ওঠানো হবেঃ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, মর্যাদা পূর্ণ জীবন যাপন করা, সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী হওয়া আর ট্রেনিং ও বিশেষ ট্রেনিং নেয়ারপরও ধর্ম পালনে উপেক্ষা করা, আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল থাকা, কোরআন না শিখা না পড়া আর কোরআন অনুযায়ী না চলা এক কথায় কোরআনের আয়াতকে ভুলে থাকার দুনীয়াবি এবং পরকালীন পরিনাম অত্যন্ত ভয়াবহ। এ ব্যাপরে আল্লাহর জলদ গম্ভীর ঘোষণা হচ্ছে, “আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন যাপন হবে সংকুচিত এবং কেয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধ অবস্থায় উঠাবো। সে বলবে, হে আমার রব! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? আমিতো দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন ছিলাম (পৃথিবীতে)। আল্লাহ বলবেন এরইরূপেই আমার আয়াত সমূহ তোমার কাছে এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে ছিলে, আজ অনুরূপভাবে তুমিও বিস্মত হলে- তোমাকে ভুলে গেলাম” (সূরা তোহা ১২৪, ১২৫ ও ১২৬ আয়াত)। কাজেই মুসলমান হিসাবে কোরআন শিখার কোন বিকল্প নেই। কোরআন শিখতেই হইবে।

ঈমানদার, মুসলমান হিসাবে আমকে যেমনি কোরআন শিখতে হবে, ধর্মের পথে চলতে হবে, তেমনি অধিনস্থদের কে কোরআন শিখানোর, ধর্মের পথে চালানোর দায়িত্ব ও আমার। পরিবার প্রধান, বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্ব আর কতৃêত্বে থাকর পরও এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে তার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে আল্লাহর আগাম সতর্ক বাণী হচ্ছে “ যে দিন তাদের চেহারা দোজখের আগুনের মধ্যে উলট-পালট করা হবে, সেই দিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য ও রাসূলের আনুগত্য করতাম। তারা আরও বলবে, আমরা তো আনুগত্য করতাম আমাদের নেতাদের ও প্রধানদের। অতএব, তারাই আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের রব! তাই আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ শান্তি প্রদান করুন এবং তাদের প্রতি লানত করুন-মহা লানত” (সূরা আহজাব ৬৬-৬৮ আয়াত)।

কোরআন শেখার ও বোঝা কঠিন নয়, সহজঃ যিনি আমাদের কে দয়া করে কোরআন দিয়েছেন তিনি অবশ্যই তা শিখতে পাঠ করতে, বুঝতে ও অনুসরণ করতে আমাদের মাঝে শক্তি আর যোগ্যতাও দিয়েছেন। আমরা আল্লাহর দয়া ও সাহয্য চেয়ে চেষ্টা করলে আল্লাহ অবশ্যই আমাদের সাহায্য করবেন। আল্লাহ আমাদের জন্য কোরআন শেখা ও বোঝা সহজ করেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন “আমি কোরআন কে বুঝার জন্য সহজ করেছি-সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, অতএব কোন উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি? (সূরা আল কামার ১৭ আয়াত)। আমরা সত্যিকারর্থে আল্লাহ বিশ্বাসি হলে কোরআন শেখার ও বোঝার ব্যাপারে আমাদের চেষ্টা, সাধনা, পরিশ্রম, আকাঙক্ষা ও ব্যাকুলতা কোথায়? মনে রাখতে হবে দৃঢ় ইচ্ছা, সংকল্প ও প্রচেষ্টা না চালালে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। কোরআন তার পাঠকারীর জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে এবং আল্লাহ তা কবুল করবেন বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এর পরও কি আমরা কোরআন শেখায় মনোযোগি হব না?
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×