somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিকতা ও ইসলামের পারস্পরিক সহাবস্থান যে কারণে সম্ভব নয়---প্রথম পর্ব

২৮ শে এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাস্তিকতার সংজ্ঞা অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে ঈশ্বরে অবিশ্বাসী লোকই নাস্তিক। তিনি পরিচালিত হন নিজ বিবেকের নির্দেশে। আর অপরদিকে প্রচলিত ধর্মগুলোর অস্তিত্ব জুড়ে রয়েছেন ইশ্বর। সব নিয়ম কানুন এবং আচার- অনুষ্ঠান রচিত হয় ইশ্বরকে ঘিরে। কাজেই এখানে স্পষ্টতই দুটি মতবাদ পরস্পরবিরোধী। তবে পরস্পরের বিরোধী হলেই যে সহাবস্থান সম্ভব নয় তা কিন্তু নয়। বাস্তবঅর্থেই আস্তিক ও নাস্তিক সহাবস্থান সম্ভব। উন্নত পৃথিবীর মানুষের কাছে আস্তিকতা বা নাস্তিকতা তাদের পারস্পরিক সহাবস্থানের ক্ষেত্রে কোন বাধা নয়। কারণ ধর্ম তাদের জীবনাচারণে কোন মুখ্য নিয়ামক নয়। তবে তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেখানে ধর্মের প্রভাব অনেক বেশি সেখানে এই শান্তিময় সহাবস্থান কল্পনা করা যায়না। প্রচলিত প্রধান চারটি ধর্মমতের সাথেই নাস্তিকতার সংঘর্ষ বিদ্যমান। তবে ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মগুলোর সাথে এই সংঘর্ষ কেবলমাত্র মনস্তাত্বিক। কিছু সমস্যা থাকলেও অন্য ধর্মমতের অনুসারীদের সাথে নাস্তিকদের সহাবস্থান সম্ভব এবং তা হচ্ছেও। তবে ইসলামের ক্ষেত্রে এই সংঘর্ষ কেবল মনস্তাত্বিক পর্যায়ে থাকেনা। তখন এই সংঘর্ষ চলে আসে শারীরিক পর্যায়ে। ঠিক এই কারণেই এই দুই মতের (ইসলাম ও নাস্তিকতার) পারস্পরিক সহাবস্থান সম্ভব হচ্ছেনা। আমার এই সিরিজে কেন ইসলাম ও নাস্তিকতার এই সহাবস্থান সম্ভব নয় তার কারণ ব্যাখা করার চেষ্টা করব। প্রতি পর্বেই কোন একটি বিশেষ কারণ এবং তার বিশ্লেষণ থাকবে।

নাস্তিকতা ও ইসলামের সহাবস্থানের ক্ষেত্রে প্রধান এবং অবশ্যই মূল বাধা হচ্ছে অসহিষ্ণুতা। চূড়ান্ত অর্থেই ইসলাম একটি অসহিষ্ণু ধর্ম। অন্য ধর্মের মতকে ইসলাম কিছুটা ছাড় দিলেও নাস্তিকদের কোনরকম ছাড় দিতে রাজি নয়। সহীহ বুখারীর নবম খন্ডের ৮৩ নম্বর পুস্তকের ১৭ নম্বর হাদিস অনুযায়ী যে তিন শ্রেণীর ব্যক্তিকে হত্যা করা যায়েয তারা হলেনঃ

১) হত্যার কিসাস (হত্যার বদলে হত্যা) হিসেবে;
২) বিবাহিত ব্যক্তি যিনি অবৈধ যৌনমিলন করেছেন এবং
৩) যে ব্যক্তি ইসলাম ত্যাগ করেছে।

সহীহ বুখারীর ৮৪ নম্বর বইয়ের ৬৪ নম্বর হাদিসে শেষ যামানায় কিছু তরুণ ধর্মত্যাগীর আবির্ভাবের কথা বলা হয়েছে; এবং আরো বলা হয়েছে এদের যেখানেই পাওয়া যাবে হত্যা করার কথা। শুধু তা-ই নয়, এদের হত্যা করলে হত্যাকারীর জন্য পুরষ্কারের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

প্রথমোক্ত হাদিসের তিন নম্বর অনুচ্ছেদ মতে, জন্মসূত্রে মুসলমান ছিলেন কিন্তু এখন নাস্তিক তারা অবশ্যই ধর্মত্যাগী শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত। কারণ নাস্তিকমাত্রই ইসলামকে অস্বীকার করেন। তাই প্রথম হাদিস অনুযায়ী তাদেরকে মারা যায়েয। এই হত্যা রাষ্ট্র কর্তৃক সম্পাদিত হতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা যে নেই তা ২য় হাদিস হতে পরিস্কার বুঝা যায়। এখানে ধর্মত্যাগীদের হত্যার বিনিময়ে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তার মানে দেশের সাধারণ মানুষ তাদের হাতের কাছে পেলে অথবা খুজেঁ পেয়ে নিজ উদ্যেগে হত্যা করলে ইসলামী রাষ্ট্র তাদের পুরস্কৃত করবে।

অতএব বিষয়টি প্রমাণিত যে, ইসলাম চূড়ান্তঅর্থেই নাস্তিকদের প্রতি অসহনশীল

অপরদিকে নাস্তিকতার ভিত্তি হচ্ছে সহনশীলতা। একজন ব্যক্তির নাস্তিক হওয়ার প্রথম পাঠই হচ্ছে সহনশীলতা। মুসলিম দেশগুলোর সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় একজন শিশুর ধর্মপরায়ন হওয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ হাঁটা শিখবার আগেই তাকে আমপারা হাতে বক্তবে যেতে হয়। আমি, আপনি বা কেউ কিন্তু এর ব্যতিক্রম নই। এর মাঝ থেকেই কেউ কেউ নাস্তিক হয়। পরস্পর বিপরীতধর্মী একটা মতের দিকে কেন মানুষ ঝুকে পড়ে? বেহেস্তের সুখ, আরাম, হুর-পরীদের লোভকে কেন অস্বীকার করে? এই শক্তি বা মনের জোরটা কোথা থেকে আসে?

এই শক্তি বা জোর অবিরত চর্চার ফল। চর্চার বিষয়বস্তু হচ্ছে পরমত। একজন ইসলামপন্থী হঠাৎ করেই নাস্তিক হয়ে যাননা। তাকে প্রতিনিয়ত ভিন্নমতের চর্চার মাধ্যমে তা অর্জন করতে হয়। এই চর্চার প্রথম সোপান হচ্চে সহনশীলতা। যে মত আপনার বিরুদ্ধে সে মতটা চর্চার জন্য আপনাকে প্রথমত সে মতটির প্রতি সহনশীল হতে হবে। সহনশীলতার মাধ্যমেই আপনি মতটিকে বুঝার চেষ্টা করবেন। পরবর্তীতে সময়ের বিবর্তনে হয়তো আপনি সে মতটির প্রতি সহানুভুতিশীল হবেন। চূড়ান্ত পর্যায়ে হয়তো সে মতটির প্রতি আপনার একরকম সন্মানও সৃষ্টি হবে। তবে চূড়ান্ত ফলাফল আপনাকে যেদিকেই নিয়ে যাক না কেন এতে সন্দেহ নেই যে নাস্তিকতার প্রথম সোপান হচ্ছে সহনশীলতা।

বিষয়টি প্রমাণিত যে, শুধুমাত্র বিশ্বাসের কারণেই ইসলাম ও নাস্তিকতা পরস্পর বিরোধী নয়। বরং এ বিরোধে পরস্পরের আচরণ ও আনুষ্ঠানীকতার অবদানও রয়েছে। এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই ইসলাম নাস্তিকদের (বিশেষ করে যারা পূর্বে মুসলমান ছিলেন) প্রতি অতিমাত্রায় অসহনশীল। সোজা কথায় তারা নাস্তিকদের মৃত্যূ কামনা করে। অপরদিকে আত্মবিশ্বাস রেখেই বলতে পারি নাস্তিকরা ইসলামের বিষয়ে যথেষ্ট সহনশীল। তারা শুধুমাত্র সে অংশটিরই সমালোচনা করে যা জাগতিক দৃষ্টিতে লজিক্যাল নয়। তবে নাস্তিকদের এই সহনশীলতা ইসলাম ও নাস্তিকতার পরস্পর সহাবস্থানের জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ নাস্তিকতার প্রতি ইসলাম অতোটাই আক্রমণাত্মক যে নাস্তিকদের সহানভূতি এক্ষেত্রে কোন নিয়ামক ভূমিকা পালন করতে পারেনা। বরং ইসলামের কারণে সহনশীল নাস্তিকদের হতে হয় বাস্তুচ্যুত অথবা ঝামেলা এড়ানোর জন্য বেছে নিতে হয় নীরব-নিভৃতের এক জীবনকে।

---------------------------------------------------------------------চলবে
২৪টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×