somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুর বিকাশ ও শিশুর মনঃসামাজিক সমস্যা - ৪

২৮ শে এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিশুর বিকাশ ও মনঃসামাজিক সমস্যা-৩
শিশুর বিকাশ ও মনঃসামাজিক সমস্যা-২
শিশুর বিকাশ ও শিশুর মনঃসামাজিক সমস্যা - ১

শিশুর বিকাশ ও শিশুর মনঃসামাজিক সমস্যা - ৪
শিশুর সামাজিকতা শিক্ষা
শিশুকে সামাজিকতা শিক্ষা দিতে তাকে মা-বাবা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, চাচা-চাচী,
মামা-মামী, খালা-খালু, ভাই-বোন ও সমবয়সী বন্ধুদের সাথে বেশি সময় ব্যস্ত রাখুন।
শিশুকে একা থাকতে বা একা খেলতে নিরুৎসাহিত করুন। কয়েকজন মিলে খেলা যায় এমন যেকোনো ধরণের খেলা খেলতে তাকে উৎসাহিত করুন।
ছুটির দিনে বা অবসরে শিশুকে নিয়ে পরিবারসহ বেড়াতে যান। কখনো সম্ভব হলে
একসাথে বাইরে থেকে কিছু খেয়ে আসুন।
খেলাধুলা, নাচগান, সাঁতারকাটা আর ছবি আঁকায় তাকে উৎসাহিত করুন।
শিশুকে নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন, নৈতিকতাবোধ ও দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি সম্মান
প্রদর্শণ করতে শেখাবেন। ন্যায় অন্যায় সম্পর্কে তাকে প্রাথমিক ধারণা দিন।
পারিবারিক/ সামাজিক কোনো অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে, মিলাদ, জন্মদিন ইত্যাদিতে
শিশুকে সাথে করে নিয়ে যাবেন।
শিশুকে অযথা ভয় দেখাবেন না।

শিশুকে কথা শেখানো
শিশুকে কথা শেখাতে তাকে বেশি মানুষের মাঝে রাখুন ও তার সাথে বেশি বেশি কথা
বলুন। শিশুকে একা থাকতে দেবেন না।
শিশুকে ছোট ছোট শব্দ আগে শেখান। মা-বাবা, আশেপাশের পরিচিত বস্তু , শরীরের ভিন্ন অংগ, রং, আকার-আকৃতি এবং বিভিন্ন পশু-পাখির নাম শেখান ও সেগুলো দেখান।
শিশুকে কোনো শব্দ বিকৃত করে শেখাবেন না- প্রকৃত উচ্চারণটি তাকে শেখান। প্রয়োজনে একই শব্দ বারবার বলুন।
শিশুকে ছবির বই, ছবির কার্ড, গুনতে শেখার খেলনা, ইত্যাদি দিয়ে খেলতে শেখান।
শিশুর সকল প্রশ্নের যুক্তিগ্রাহ্য জবাব দেবার চেষ্টা করুন। শিশু প্রশ্ন করায় বিরক্ত হওয়া চলবেনা। তাকে প্রশ্ন করতে বাধা দেবেন না। তার প্রশ্নের কোনো অযৌক্তিক বা মিথ্যা জবাব দেবেন না।

শিশুর বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে করণীয়

শিশুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করুন। ছোট ছোট সহজ শব্দ, স্পষ্ট করে ধীরে
ধীরে বারবার শিশুকে বলুন।
ছোট ছোট ছড়া গান আর দু, তিন লাইনের গল্প শিশুকে শোনান।
শিশুকে বিভিন্ন ধরণের খেলনা দিয়ে খেলতে শেখান। বিশেষত সৃষ্টিশীল যে
খেলনাগুলো আছে যেমন - লেগো, পাজল, সুডোকু, শব্দধাঁধা ইত্যাদি দিয়ে
খেলতে শেখান।
শরীরের বিভিন্ন অংশের নাম, বিভিন্ন রঙের নাম, পশু-পাখি মাছের নাম, খেলনা, ফুল, ফল, দিন ও মাসের নাম বলতে শেখান।
বাসার কাছাকাছি কোনো স্কুলে শিশুকে পড়তে পাঠান। শিক্ষকদের সাহায্য নিন। কোনো সমস্যা হলে শিক্ষকদের বুঝিয়ে বলুন শিশুকে বিশেষভাবে যত্ন নিতে।
সবসময় ‘করতেই হবে/ পারতেই হবে’ এমনটা আশা করে শিশুকে বাড়তি চাপ দেবেন না; তাকে কোনো দুরূহ প্রতিযোগিতার মুখে ঠেলে দেবেন না। তার উপর গোপন নজরদারি এড়িয়ে চলুন।


শিশুকে তার ব্যক্তিগত কাজ কিভাবে শেখাবেন

শিশুকে তার নিজের যত্ন নিজে নিতে শেখান। সঠিকভাবে দাঁত মাজা, গোসল করা প্রস্রাব পায়খানার কথা বলতে পারা, জামা পরা, জুতো পরা, দোকানে যেয়ে ছোটখাটো জিনিস কিনতে পারা, ইত্যাদি শিখতে তাকে উৎসাহিত করুন- বিশেষ সহায়তা করুন।
এসব কাজ শেখানোর জন্য ধৈর্য ধরুন- একেকবারে একটি করে কাজ শেখান- অযথা তাড়াহুড়ো করবেন না। সহজ কাজটি সবার আগে শেখান। এ’ ক্ষেত্রে বিষয়টি শিশুকে ভালো করে বুঝিয়ে বলুন- ধাপে ধাপে কাজটি নিজে করে দেখান- এরপর শিশুকে সেটি করতে বলুন। শিশুর ব্যর্থতায় উত্তেজিত বা ধৈর্যহারা হবেন না। একবারে না হলে বার বার দেখান।
শিশু যদি এ’সব কাজের একটি করে ধাপ শিখতে পারে তবে তাকে উৎসাহ দিন, ছোট-খাটো পুরষ্কার দিন আর সমস্ত কাজটি শিখে গেলে তাকে আরেকটু বড় পুরষ্কার দিন ও আগেই পুরস্কার থাকতে পারে এমন আভাস শিশুকে দিন।


অতি চঞ্চল অমনোযোগী শিশু ও তাদের অভিভাবকদের করণীয়

চঞ্চলতাই শিশুদের বৈশিষ্ট। শিশু হবে হাসিখুশি দুরন্ত। কিন্তু চঞ্চলতাকে ছাপিয়ে একটি শিশু যখন অতিমাত্রায় অমনোযোগি হয়ে উঠে, বাড়ি বা স্কুল কোথাও মুহূর্তের জন্য মনসংযোগ করতে পারে না, হঠাৎ রেগে কাউকে আঘাত করে তখন এ ধরণের অমনোযোগিতা আর সাথে অত্যধিক অস্থিরমতি হয়ে থাকাটাকে অসুস্থতা হিসেবে গণ্য করা হয়- এ রোগটিকে বলা হয় অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারএকটিভ ডিসর্অডার, বাংলায় বলা যেতে পারে ‘অতি-চঞ্চল অমনোযোগী শিশু’।

এক্ষেত্রে অভিভাবকেরা যা করবেন-

রুটিন তৈরি করা- শিশুটির দৈনন্দিন কাজের জন্য (ঘুম থেকে ওঠা, দাত ব্রাশ করা,
খাওয়া, পড়া , খেলা, টিভি দেখা) একটি রুটিন করে দিতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করার জন্য তাকে উৎসাহিত করতে হবে। প্রয়োজনে তার আচরণের পরিবর্তণ হলে রুটিনটিও পরিবর্তণ করতে হবে।

নিয়ম তৈরি- বাসার সকলের জন্য সাধারণ পালণীয় কিছু নিয়ম তৈরি
করতে হবে। শিশুটির পাশাপাশি অন্য সদস্যরাও এ নিয়মগুলো পালন করবে- এতে করে শিশুটি বড়দের দেখে নিয়মমাফিক কাজ করা শিখবে।

নির্দেশনা বুঝিয়ে দেয়া- এ নির্দেশনাগুলো শিশু ঠিকমত বুঝতে পারে কিনা সে
বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে- যেহেতু তার মনোযোগ কম তাই কখনোই আশা করা
যাবে না যে সে সবকিছু একবারে বুঝে ফেলবে, এ জন্য তাকে সময় দিতে হবে,
রূঢ় আচরণ করা যাবে না।

ভালো কাজের পুরস্কার- নির্দেশনা ও নিয়ম পালন করলে শিশুটিকে পুরস্কার (
যেমন প্রশংসাসূচক বাক্য বলা, ফুল বা চকলেট দেয়া, বেড়াতে নিয়ে যাওয়া) দিতে হবে আর নিয়ম ভংগ করলে শাস্তির বদলে পুরস্কার বন্ধ রাখতে হবে।

বন্ধু-বান্ধবের সহায়তা- সামাজিক নিয়মনীতি শিখতে পরিবারের পাশাপাশি তার
বন্ধুদেরও প্রয়োজন। তাই সমবয়সীদের সাথে মিশতে ও খেলতে তাকে উৎসাহিত করুন।

প্রচেষ্টার প্রতি গুরুত্ব প্রদাণ- সে যে মনোযোগ দিচ্ছে, বা রুটিন পালন করছে সেই
প্রচেষ্টাটুকুকে গুরুত্ব দিয়ে তাকে পুরস্কৃত করুন- তার রেজাল্ট ভালো হচ্ছে কিনা,
তার অর্জন কতটুকু সেটা বড় বিবেচ্য নয়- আচরণ পরিবর্তণে তার চেষ্টাটাই আসল।

ডায়েরী ব্যবহার- শিশুটির যদি কিছুটা লিখবার মত বয়েস হয় তবে তার দৈনন্দিন
কাজগুলো একটি ডায়েরীতে লিখে রাখতে উৎসাহিত করুন।

শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করুন- শিশুর সমস্যা নিয়ে স্কুলের শিক্ষকের সাথে খোলামেলা
আলোচনা করুন। চিকিৎসকের মন্তব্য শিক্ষককে জানান এবং তার সাহায্য চান।
প্রয়োজনে শিশুর চিকিৎসকের সাথে স্কুলের শিক্ষকের যোগাযোগ ঘটিয়ে দিন।

খাদ্যতালিকা ও ব্যায়াম- চিকিৎসকের পরামর্শমত তাজা ফল সহ শিশুর খাদ্যতালিকা তৈরি করুন, এবং হালকা শারীরিক ব্যায়াম ও খেলাধুলায় তাকে উৎসাহ দিন।

রূঢ় আচরণ পরিহার- তার সমস্যাটিকে রোগ হিসেবে মেনে নিন- তাকে অপরাধী
ভাববেন না- তার কোনো দুরন্ত আচরণের প্রতিক্রিয়ায় তার প্রতি রূঢ় আচরণ করা
থেকে বিরত থাকুন।শিশুকে কখনোই মারবেন না- বকা দিবেনা। সমবয়সীদের সাথে তুলনা করে তাকে হেয় করবেন না বা অবজ্ঞা করবেন না। তাকে নিয়ে উপহাস
করবেন না। কঠোর ভাষায় বকা দেয়া, মারধোর করা, নৃশংস শাস্তি দেয়া, ঘরে তালা দিয়ে রাখা, হাত পা বেধে রাখা যাবে না। এ ধরণের আচরণ তার সমস্যাটিকে আরো গভীর করে তুলতে পারে । প্রয়োজনে তাকে ধৈর্য ধরে বারবার বুঝিয়ে বলুন।

অনাকাক্সিক্ষত আচরণের দিকে মনোযোগ না দেয়া: শিশুর কোনো অনাকাক্সিক্ষত বা খারাপ আচরণ যেমন চিৎকার, মারামারি, অস্থিরতা, ভাংচুর ইত্যাদির দিকে
মনোযোগ দিবেন না। অর্থাৎ এমন আচরণ করাকালীন সময় তার দিকে তাকাবেন না, বকা দিবেন না বা মারবেন না। বরং এ’ধরণের আচরণ করলে শিশুর সাথে কিছু সময়ের জন্য কথাবলা বা আদরকরা বন্ধ করতে পারেন। প্রয়োজনে তার প্রাপ্য সুবিধাগুলো সাময়িকভাবেবন্ধ রাখুন।

শিশুর প্রতি ‘হ্যাঁ’ বলুন: শিশুর প্রতি সবসময় ‘হ্যাঁ’ বলুন। কোনো আচরণ যদি
প্রত্যাশিত না হয় তবে সেটির প্রতিও ‘না’ বলবেন না- বরং প্রত্যাশিত আচরণ
করার জন্য তার প্রতি ‘হ্যাঁ’ বলুন। যেমন আপনি যদি চান যে শিশুটি ছাদের রেলিং
এর কাছে যাবে না তবে তাকে ‘রেলিং এর কাছে যেওনা’ বলার চেয়ে বলুন ‘ তুমি
রেলিং এর কাছ থেকে সরে এস, রেলিং এর কাছে গেলে পড়ে যেতে পার’ । তার
প্রতি সকল নির্দেশ ইতিবাচক ভাবে প্রদান করুন।

বিশেষ ধরণের খেলা দিন: একা একা খেলা যায় এমন ধরণের খেলা খেলতে তাকে
উৎসাহিত করুন।

চিকিৎসা গ্রহণ: চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। নিয়মিত ওষুধ খাওয়ান এবং
চিকিৎসক নির্দেশিত আচরণবিধি মেনে চলুন।

৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×