ম্যাক্সিম গোর্কির "মা''-এর মাঝে যে বিপুল প্রাণশক্তি দেখেছি ,এমিল জোলার "জার্মিনাল"-এ কয়লার খনিতে কর্মরত শ্রমিকদের যে হাহাকার আমরা শুনেছি তারই যেন প্রতিদ্ধনি শুনতে পাই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এর "ছাড়পত্র" কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতা'র মাঝে ।বইটি পড়লে পুঁজিবাদেরভ যাঁতাকলে পিস্ট হয়েও শ্রেনিহীন সমাজের চিরবাসনা জেগে ওঠে মনের মাঝে।
আমাদেরই বাসযোগ্য হয়নি এমন এক পৃথিবীতে আগমনের ছাড়পত্র পেয়েছে যে শিশুটি তাকে উদ্দেশ্য করেই লেখা হয়েছে এ বইয়ের প্রথম কবিতা।নাতিদীর্ঘ জীবনের অধিকারি এই কবি'র প্রতিটি কবিতার মাঝেই লক্ষ্য করি তারুণ্যের দিপ্তী।এই কাব্যগ্রন্থে তিনি লেনিন ও আমাদের রবিঠাকুরকে উদ্দেশ্য করেও কবিতা লিখেছেন।আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে "একটি মোরোগের কাহিনী","সিগারেট", "সিড়ি"কবিতা তিনটি।
"একটি মোরোগের কশিনী" কবিতায় দেখতে পাই যে একটি মোরোগের দিন কাটে এক প্রসাদের পাশে। স্বপ্ন তার প্রাসাদের ভেতরে যআবার।কারন প্রসাদ থেকে যএ উচ্ছিষ্ট খাদ্য ফেলে দেয়া হয় তা খেয়েই সে মুগ্ধ।কিন্ত এই খাবারের মাঝে ভাগ বসাতে আসল কিছু মানুষ । ফলে সরে যএতে হোলো মোরোগটিকে ।অবশেষে একদিন সেই প্রাসাদের ভেতরে যাবার সুযোগ হোলো তার;"তবে খাবার খেতে নয়,খাবার হিসেবে"।
বড়লোকের বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে কাজের যে অবস্থা হয় , কিংবা স্বপ্নের দেশ মালয়শিয়ায় শ্রমিক হিসেবে গিয়ে যাদের লাশ হয়ে ফিরতে হয়- এই মোরোগ তাদেরই প্রতিমূর্তি।
এ অবস্থা থএকে উত্তরণের উপায় কি হতে পারে তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় "সিগারেট" কবিতায় । সিগারেটকে যেভাবে শুষে খাওয়া হয় গরীবের প্রতি শোষণের চিত্রটও সেরকম।কিন্তু জ্বলন্ত সিগারেট থেকে ছলকে পড়া আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে সব কিছু ।
"সিড়ি"কবিতাতেও তিনি এঁকেছেন শোষণের চিত্র। বাদসা হুমায়নের মত পরিণতি যেকেউ বরণ করতে তাদের কারণে- এমনটাই বলছে সিড়িরা।প্রতিবাদের ভাষা কেমন হতে পারে তা তার কবিতা না পড়লে বোঝা কঠিন ।
"চে"এর সাম্যবাদকে জীবনের ধর্ম হিসেবে বেছে নেয়া ,ফরাসি বপ্লব শ পৃথিবীর সকল বিপ্লবের মাঝে এমন চেতনাই কাজ করেছে । আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধও তার ব্যতিক্রম নয় ।
সবশেষে তিনি লিখেছেন "ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়/পূর্নিমার চাঁদ যএন ঝলসানো রুটি"।গদ্যের মাঝে তিনি শক্তি খুজেছেন, কিন্তু তারই রচিত কবিতার মাঝে যে শক্তি লুকিয়ে আছে তার তুলণা কোথায় ?সাম্যবাদের দৃষ্টিতে তিনি সত্যিই এক সৈনিক।আমার চোখে তিনি একজন কমরেড,কমরেড সুকান্ত ভট্টাচার্য।