somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওপার বাংলায় বাইশ ঘন্টা - ৩

২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
নিউমার্কেট থেকে বের হয়ে আশে পাশে হাঁটতে হাঁটতে কলকাতা কালচার দেখলাম।


সাধারণ শৌচাগার!

কিংবা, কচ্ছপের মত দেখতে এম্বেসেডর গাড়ি, ওই যে, ফেলুদা আর তোপসে যে সব গাড়িতে করে চড়ে বেড়ায়!



আর, হাতে টানা রিকশা। রিকশাওয়ালারা সাড়ি বেঁধে বসে আছেন রিকশা নিয়ে, রিকশার ক্যান্ডিডেইট মনে হলো তেমন নেই। হাতে একটা ছোট ঘন্টি ধরা, সেটাতেই কিছুক্ষণ পর পর টুংটুং শব্দ করছেন।




প্রথমে দেখে হাতে টানা রিকশার কনসেপ্টটা খুব নিষ্ঠুর মনে হলো। তারপর দেখলাম, আসলে ওরা রিকশাটা এমন এক ভাবে হেলিয়ে রাখে, যে সেন্ট্রিপেটাল ফোর্সটা চালকের হাতের বা কোমরের উপর দিয়ে যায় না। এতগুলো রিকশাওয়ালা এভাবে শুধু শুধু বসে আছে, কেউ চড়ছে না, দেখে আমার বেশ মায়াই লাগল। রিকশা চড়ার চেয়ে না চড়াটাই বেশি নিষ্ঠুর মনে হল। নতুন অভিজ্ঞতার লোভও যে হয় নি, তাও না। একটা রিকশায় উঠেই গেলাম, অল্প একটুখানির জন্য, দুধভাত দুধভাত, শুধু নিউমার্কেটের পিছন থেকে সামনে আনবে, বাংলাদেশের হিসাবে ৫ টাকার জায়গাও না। রিকশা চালক বিহারী। বাংলা পারে না ভালো। নামার সময় জিজ্ঞাসা করলাম, চাচা কত চান? চাচা বিগলিত হাসি হেসে বলেন, 'পনেরো রুপিয়া'! এটা কোন কথা হলো!!! তবু, দামাদামি যেহেতু আগে করি নি, সেটাই দিয়ে দিলাম, শুধু বললাম, এটুকুর ভাড়া বুঝি পনেরো রুপি? উনি কিছু বলেন না। আবার বিগলিত হাসি হাসেন, আর পনের টাকাটা পকেটে রেখে আবার হাত বের করেন, 'বকসিস?' (!)

ততক্ষনে বুঝা শুরু করলাম, কলকাতা হচ্ছে বকশিসর শহর!

আরেকটু হেঁটে দেখি নিউমার্কেটের কোলকাতা হাটের বিজ্ঞাপন--



কিন্তু ছবিটা কিসের? এক জন আরেক জনের কান পরিষ্কার করে দিচ্ছে?? এমন উদ্ভট কথাটা মাথায় আসল কারণ, পরের দিন হাঁটতে গিয়ে দেখলাম, রাস্তার পাশে কান পরিষ্কার করা হচ্ছে :( (দৃশ্যটা হাসি উদ্রেককারী, কিন্তু মোটেই প্রীতিকর না!)--



ততক্ষনে কলকাতা শহর আমার ভীষণ ভালো লেগে গিয়েছে। নিউমার্কেট, এসপ্লানেডের মত ছোট একটা জায়গাতেই যেদিকে তাকাচ্ছি নতুন নতুন সব ব্যাপার স্যাপার দেখতে পারছি। আর এত ধরণের মানুষ, কলকাতার বাঙালী, বিহারী, ভারতের অন্যান্য জায়গা থেকে নানা মানুষ, অনেক ইউরোপিয়ান, এমেরিকান, সব মিলিয়ে, সেই রাতের বেলাতেও গমগমে অবস্থা, আমি একটা হিজাব পড়া মেয়ে, ভারতে যেমনটা দেখা যায় তার চেয়ে একটু অন্যরকম বোরখা পরে ভিনদেশের পথে ঘাটে হাঁটছি, কেউ দ্বিতীয়বার ফিরেও তাকাচ্ছে না, যেন এটাই স্বাভাবিক। কজমোপলিটন সিটি হয়তো একেই বলে, খুব দ্রুত আপন আপন ভাবা শুরু হয়, কারণ 'এটা তোমার শহর না', সেটা বলে দেয়ার জন্য কেউ থাকে না। কলকাতার সবটুকু নিশ্চয়ই এরকম না, কিন্তু নিউমার্কেটের আশে পাশের জায়গাটা সেরকম।

একটা লোককে অনেকগুলো জিনিস এক সাথে মিশাতে দেখে খুব লোভ হলো খাওয়ার। নাম জিজ্ঞাসা করে কি জেনেছিলাম ভুলে গিয়েছি, মনে হয় মিক্সড চাট ছিল। পনেরো টাকা দিয়ে কিনে খেতে গিয়েই বিপত্তি। চোখে পড়লো--




এর পরে আর খাওয়ার রুচি থাকে! ভাইয়াকে দেখাই নি, ও ভেবেছে নও এর জন্য মন খারাপ, তাই খেতে পারছি না। ও বাকিটুকু শেষ করল।

আরও দেখলাম, সেই রাত নয়টায়, রাস্তার পাশে জুতা পালিশ করছেন একজন মহিলা। ভেবে বের করলাম কেন 'বিদেশী' লাগছে। বাংলাদেশে আমি কখনও কোন মহিলাকে জুতা পায়ে থাকা অবস্থায় পালিশ করাতে দেখি নি!



কিংবা পাব৭, নীলচে আলোর পাবের বাইরে সেই পাব বন্ধের তীব্র প্রতিবাদ, ঝট করে অর্কের কথা মনে পড়ল কেন যেন। কলকাতায় রাস্তায় যত খোলাখোলি পাব দেখা যায়, বাংলাদেশে তা না।



আর এখানে সেখানে নানা ধরণের ফলের জুস আর লাচ্ছির দোকান।



লাইম জুসটা দারুণ, একটু লবণ মেশানো থাকে। আর মাটির ভাড়ের আমের লাচ্ছিটা। ২২ ঘন্টায় অন্তত: ৫ গ্লাস তো খেয়েছিই!

আরও অনেক কিছু দেখেছিলাম। কিন্তু ওরকম কয়েক ঘন্টায় পায়ে হেঁটে কলকাতার স্বাদ নিতে গিয়ে আমি যতটা টায়ার্ড হয়েছিলাম, এখন লিখতে তার চেয়েও বেশি টায়ার্ড লাগছে। তাই সেদিনের গল্প ঘুম দিয়ে শেষ করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৫:১৮
২২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×