somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গানের জীবন ১ : খাপছাড়া গানের মাপছাড়া কথা

২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[আজকাল ব্লগে গান নিয়ে বেশ হইহল্লা হচ্ছে,দেখে মনে হলো গানমূর্খ হয়েও কিছু লিখে ফেলি। তবে খাপছাড়া অগভীর মানুষ বলেই কিনা, খাপছাড়া গান,যেগুলোকে ঠিক কোন দলেই ফেলা যাবেনা,সেগুলোই মাথায় চলে এলো,কাজেই একজায়গায় জড়ো করে ফেললাম]

বাংলা গানের মাঝে ইদানিংকার জীবনমুখী গান বাদে বিষয়বিচিত্রিতা একটু কম বলেই আমার ধারণা। রোমান্টিক,প্রেমের গান,প্রকৃতি,আধ্যাত্মবাদ,ঘুরেফিরে এই চলে এসেছে সেই রবিবুড়োর আমল থেকে,এখনো এগুলোর প্রাধান্যই বেশি। যদিও নচিকেতার পথ ধরে সুমন চট্যোপাধ্যায় আর অন্ঞ্জন কে অনুসরণ করে জীবনমুখী একটা গানের ধারা শুরু হয়েছে,কিন্তু সেটা তাদের পরে খুব বেশি প্রভাববিস্তারী হয়েছে বলে মনে হয়না,বরং এখনো "হিট" গানের তালিকায় সনাতন ধারার গানই প্রায় সব। আবার জীবনমুখী গানের বিষয়ের মাঝেও ক্ষোভ আর হাহাকারটাই বেশি,সুমন বা অন্ঞ্জনের পর কারোটা সেরকম নতুনও মনে হয়নি। অফস্প্রিংয়ের "মাই ফ্রেন্ড'স গট আ গার্লফ্রেন্ড অ্যান্ড হি হেটস দ্যাট বিচ" এই জাতীয় ভাষা বা বিষয় নিয়ে গান লিখলে আমাদের হজম হবে বলে মনে হয়না,বা ভ্যান হেলেনের "জাম্প জাম্প",বা পিংক ফ্লয়েডের "উই ডোন্ট নিড নো এজুকেশান" ধরণের গান এখনো দুর্লভ,বা শুধুই মজা করার জন্য গান,সে-ও তেমন দেখা যায় না বাংলাতে।

তবে,বলেছি তেমন দেখা যায়না,একদমই যে নেই তা-ও না,লেখাটা লিখতে লিখতেই মনে পড়লো বেশ কিছু "অফ দ্য ট্র্যাক" গানের কথা,কি কথায় কি সুরে একদম আলাদা,আমি বলবো,মজার। কখনো জীবনমুখী,কখনো শুধুই হাস্যমুখী,কখনো চটুল,কিন্তু সব মিলিয়ে একদম "অফ দ্য ট্র্যাক",খাপছাড়া,অন্য গানগুলোর সাথে মেলানো কঠিন,বোদ্ধারা এগুলোতে নাক সিঁটকাবেন,সন্দেহ নেই।

এমন খাপছাড়া গানের কথা ভাবলে প্রথমেই মনে ভাসে একদমই ছোটবেলায় নানাবাড়ির সাদা-কালো টিভিতে দেখা গুরু আজম খানের "আলাল ও দুলাল" এর কথা। গ্রামের আইল ধরে এক ছাগলদাড়ি সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন, তার দুই সুপুত্তুর দু'দিকে ভোঁ দৌড় ধরেছে,আর ব্যাকগ্রাউন্ডে হেঁড়ে গলায় গুরু গান ধরেছেন--
"আলাল ও দুলাল,আলাল ও দুলাল,
তাদের বাবা হাজ্বী চান,
চান খাঁর পুলে প্যাডেল মেরে পৌঁছে বাড়ি।"
গুরুর হেঁড়ে গলার পরই যার কথা মনে পড়ছে সে চাইমের খালিদ,সেসময় একটা গান বেশ মজার ছিল,সেটাও ঐ সাদাকালো টিভিতে দেখা,তখন আমাদের টিভি ছিল না,নানাবাড়ি গেলে টিভি দেখার কপাল মিলতো। তো দেখি একপাল লোকজন(তখনো ব্যান্ডের ধারণাটা নতুন) ঘটিবাটি নিয়ে হাহাকার করছে--
"ও.. ও.....আমার হাঁসের ছাও রে..
কাউয়ায় নেয় নাই, চিলে নেয় নাই,
নিছে মরার গুইলে রে
ও আমার হাঁসের ছাও রে!!"
গানটা অনেক খুঁজেছি পরে,পাইনি,কারো কাছে হবে কি?

একটু অন্যরকম গান করার ঝোঁকটা মনে হয় তখন শুধু চাইমেরই ছিল,হাঁসের ছাও ছেড়ে এরপর তারা পড়লো "জগানন্দন" কে নিয়ে। মজার সুরে হলেও,ভেতরটা করুণ,খুঁজলে নির্মম রূপটা পাওয়া যায় সহজেই,যখন খালিদ গেয়ে ওঠে--
"জয় জগানন্দন,ঘটিবাটি বন্ধন,পয়সা নাই তার করব কি?
ট্যারা কচুর পাতা,টাকি মাছের মাথা,মসল্লা নাই তাতে হইসে কি?"

এখনো এই দেশের অর্ধেক বা তারো বেশি লোক হয়তো এই জগানন্দের মতই,যাদের--"অভাবের সংসার,পোলামাইয়ার হাহাকার,
ঘরবাড়ি ছাইড়া ভাগবো নি?"

তবে,আমার বাচ্চাকালে যখন পত্রিকা মাত্র পড়তে শিখেছি,হঠাৎ করেই এক ভণ্ড পীরসাহেব বেশ "হিট" হয়ে গেলেন। ধরা খেলেন পাবলিকের হাতে,বেয়াদব জনতা পীরবাবাকে রামধোলাই দিয়ে থানায় পাঠালো, এদিকে অবসকিউরের টিপু লিখে গেয়ে ফেললো ভণ্ডবাবার গান--
"কলিকালের ভণ্ডবাবা খাজা বাবার নাম ভাঙায়া
ধর্মটারে ল্যাং মারিয়া ভাঁওতাবাজির এমডি সাজে।"
সেদিন হঠাৎ করেই পাশের বাসার ছাদে দেখি কে যেন মোবাইলে বাজাচ্ছে গানটা,আপনমনেই অনেকক্ষণ হাসতে হলো। আহা, আরো কত রাজনৈতিক বামনৈতিক ভদ্রবেশী ভণ্ডবাবা আমাদের চারপাশে স্যুটকোট কালোচশমা পেঙ্গুইন কোটে ঘুরে বেড়াচ্ছে,কিন্তু তাদের নিয়ে গান বাঁধার সাহস এখন আমাদের কোথায়?

অবশ্য এসব রাজনৈতিক ভণ্ডবাবাদের ল্যাং মারার চেষ্টা একেবারে যে কেউ করেনি সেটা বলা যাবে না। অবসকিউরেরই প্রায় সমসাময়িক ব্যান্ড ডিফারেন্ট টাচ,তখন শ্রাবনের মেঘগুলো গেয়ে বেশ
তোলপাড়,কিন্তু অনেকের স্মৃতিতে রাজনীতি গানটাও বেশ ভাল জায়গা করে থাকার কথা,কিভাবে--
"হালজামানার রাজনীতি ভাই করতাসি যে আমরা সবাই,
পিছন পকেট সদাই গরম গলাবাজির আছে যে সাঁই,
এ মন হায়,একবার দুইবার নেতা হইতে চায়,
হুনসি নাকি নেতারা সব অ্যারকন্ডিশান খায়।"
তারপরেও আমাদের শিক্ষা হয় না,নেতার চাঁদবদন দেখে আমাদের শান্তি,যদিও আমরা জানি--
"বাইরে গরম চলতে আছে সেইখানে স্যার নাই,
মরলে মরবো যুবকরা সব,আর মরলে টোকাই।"

খাপছাড়া গানের ওস্তাদ মানি অবশ্য মাকসুদকে,ফিডব্যাক,আর ঢাকার মাকসুদ। অতিবিশুদ্ধবাদী রবীন্দ্রপ্রেমীরা যতই তাঁর নিরীক্ষা নিয়ে ছাল তোলার দাবী করুক,মাকসুদের আগুনে কথা আর ব্যতিক্রমী
গানের আবেদন তাতে কমে যায় না। ভণ্ড সুশীলদের ধোলাই দিয়ে তখনই মাকসুদ গেয়েছিলেন--
"হেরোইনের ব্যবসা করে তুমি পুরিয়া ওড়াচ্ছো মানবতার,
আর তেজষ্ক্রিয় দুধ আমদানি করে গড়ে তুলছো কালো টাকার পাহাড়।
তবে সন্ধ্যে এলে শুদ্ধ সংগীতের আসরে তুমি হুইস্কি সেবন কর।
এযুগের পাদুকা এযুগের প্রসাধনী এযুগের বড় কথা এযুগের হয়রানী,
তুমি যুগের দোহাই দিয়ে সেমিনারে লেকচারে নাক সিঁটকিয়ে বলো
বন্ধ কর এই অশ্লীল ব্যান্ডবাণী।"
গা জ্বালানো কথা বটে। তবে এখানেই শেষ নয়--
"এরপর যদি কেউ চাপাবাজী করে,ঢাকার ছেলেরা চিৎকার করে বলে,
ধন্যবাদ,ভালো দিয়া গেলেন,ধন্যবাদ,ভালোই দিয়া গ
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:৪৮
৪৫টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×