somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লোডশেডিং আর এক ভয়ন্কর জোৎস্না!

২৫ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝরাতে কারেন্ট যায়। ঘুম ভেঙ্গে গেলে মনে হয় আজকের রাতেও মজার ঘুমটা পুরো হলো না। অফিসে শিওর ঝিমোতে হবে। জানালা খুলে বসে বসে অন্ধকারে আকাশ দেখি। পাশের বিল্ডিং এও দেখি একজন সিগারেট ধরিয়ে আকাশ দেখছে। আমি হাক দিলাম," কয়ডায় বাত্তী গেলো?"
- দেখি নাই, উইঠা দেখি সব বন্ধ, গরমে মনে হইলো দোজখ শুরু হইয়া গেছে!
-আর দোজখ, বাজারে দোজখ, বাসে দোজখ, অফিসে দোজখ, সব জায়গায় দেখি দোজখ আর দোজখ আর টিভি খুললে তো দোজখের হুর পরীগো ভাষন
-ঠিকই কইছেন। তাও ভালো আছেন পানি আছে। সকালে এখনও ডরে থাকি টাট্টি কড়তে বইসা টেপ ছাড়লে পানি পড়বো তো, না পড়লো ঐ অবস্হায় অফিস যাইতে হইবো।
আমি হাইসা দিলাম। এমন সময় পাশের বিল্ডিং এর তিন তলার জানাল থেকে আরেক ভদ্র লোক," আরে ভাই আর কইয়েন না, এমুন দিনই বদলাইছে অহন তো দেখি কারেন্ট যায় না, মাঝে মাঝে ভুলে চুকে আইসা পড়ে।"
এরকম ভাবে চলতে থাকে কথার মিছিল, মাজে মাজে ওপেনে চলে খিস্তি খেউড়। অন্যান্য বিল্ডিং অন্যান্য তলা থেকে জানালার উকি দিয়ে আড্ডায় কেউ যাগ হয়, অদ্ভুত লাগে এই ইন্টার বিল্ডিং চ্যাটিং। ইয়াহু ম্যাসেন্জ্ঞার বা স্কাইপ আলার জানতে পারলে সুবিধা হতো, এই মধ্যরাতের খিস্তি খেউড় আরো ডাইনামিক হতে পারতো।
সেদিন অফিসে বসে নানা ডকুমেন্টস রেডী করতে গিয়ে হঠাৎ মোবাইলটার দিকে চোট পড়লো।নতুন অফিসে মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখি। এখন আর সারা দেশের এজ আর ইন্টারনেট দেখতে হয় না। জাতে উঠেছি বৈকি!
দেখলাম ৮ টা মিসড কল। হঠাৎ রাসেলের কথা মনে পড়লো। মনে হয় এখন ও ঘুমিয়ে অথবা কাজে যাবার জন্য রেডী হচ্ছে! ফোন দিলাম,"কিরে, কি করস?"
: রেডী হইতাছি, কামে যামু। আজকা ক্লাস নাই।
: মন খারাপ ক্যান? অফলাইন ম্যাসেজে কি লেখছস?
: আর কইস না। গতকাল একটা জায়গায় কাজ করলাম, বিয়া বাড়ি। মাত্র ২১ পাউন্ড।
: ভালোই তো! দেশে ফিরা আয়, এর চেয়ে ভালো টাকা পাবি!
: আর দেশ, দেশে থাইকাও সুখ নাই, এইখানেই সুখ নাই। ৪০০০০ টাকা দরকার, সিকিউরিটি লাইসেন্স করাইতে হইবো, ট্রেনিং নিয়া বারে কাজ করুম তখন মেলা পাউন্ড! কিন্তু এত টাকা দিবো কেডা?
: সত্যি নাকি? এ্যাকাউন্ট নম্বর দে?
: বাদ দে, মেলা তো লইছি, অহন আর ভালো লাগে না!
: কেন? পিয়ারীর কথা মনে পড়ে?
: আর পিয়ারী? এইহানে এর চেয়ে সুন্দর হাজার পিয়ারী ক্লিভেস দেখাইয়া পথে পথে ঘুরে। একটু কইয়া অফার দিলেই লিভ টুগেদার করন যায় কয়েক মাস!
: তোর সেই মালয়েশিয়ানের কি খবর?
: আরে ও তো আমার পাশের ফ্লাটেই থাকে। আইতে কইছিলো, আমি উল্টা কইছিলাম আমার ফ্লাটে আইতে। এহন আর এই সব ভালো লাগে না। ভাবছিলাম বোনটারে টান দিবো। ছোট ভাইটা এই বার এইচএসসি দিবো। পাশ কইরা কই ভর্তি হইবো কে জানে! ওরেও আনার দরকার, কিন্তু এইখানকার অবস্হা খুব খারাপ। দিনের রাইতে কোম্পানী বন্ধ হয়। পাশ করলে ইন্জ্ঞিনীয়ারগো চাকরি আছে কিন্তু পাশ করার আগ পর্যন্ত আগের মতো টাকা কামানোর স্কোপ এখন নাই!
: দেশে ফিরা আয়, দেশের অবস্হা এখনও খারাপ হয় নাই। হয়তো আরো ৩-৪ মাস লাগবো। অবশ্য এইবার এই দেশে মন্দা লাগলে টানা ৫-৬ বছর থাকবো। ৯০ এর পরের ঠেলা সামলাইতে পাক্কা ৯ টা বছর লাগছে। এইবারেরটা নিদেনপক্ষে আরো ৫-৬ টা বছর লাগবো যদি সেরকম মিরাক্যাল ইনভেস্ট না আসে।

টানা ২০ মিনিট কথা হলো অফিসে বসে। প্রচুর কাজ তবুও রাসেলের কথা মাঝে মাঝেই মনে পরে। অবশ্য রাসেলর জায়গা এখন শুভ্র দখল করেছে। আমার একসময় কলিগ এখন বন্ধুর থেকেও বেশী। ও ওর দুঃখ গুলো শেয়ার করে, মাঝে মাঝে আমরা বোটানিক্যাল গার্ডেন যাই, বিভিন্ন বিষয় দেখি রাস্তা থেকে, কিছু করার স্বপ্ন দেখি, শুধু স্বপ্নই দেখা হয় আর বাস্তবে কিছু করা হয় না। ও অবশ্য আছে ম্যাংগোতে। টেলিকম নিয়ে ওর আইডিয়া অনেক, কিন্তু পুজি নাই, তাই আফসোসের শেষ নাই।

সেদিন ঢাকা ভার্সিটির ফুলার রোডের মোড়ে বসে রইলাম কিছুক্ষন। রাত তখন ৯:৩০ টা। কিছু ছেলে আসলো ঢোল তবলা নিয়ে, মনে হয় বাংলা একাডেমীর বৈশাখ মেলা থেকে ফিরছে। বেশ আয়োজন করেই বসলো, আশোপাশের কিছু সাগরেদ জুটে গেলো। শুরু হলো লালনের গান। একে তো জোৎস্না রাত তারপর এরকম লালনের গান। চারিদিকের পরিবেশে কেমন যেনো বিষাদের চাদরে নস্টালজিক স্মৃতিগুলো গড়া গাড়ি খেতে লাগলো। আমি যার চোখেই তাকাই সবাই যেনো সম্মহিত। আমি ভাবলাম কি হলো এখন, সবাই এমন কেনো ঠায় দাড়িয়ে? এত গুলো লোক এক সাথে মন্ত্রমুগ্ধ হতে আমি কখনোই দেখিনি। জোৎস্নার আলো আরো প্রকট হচ্ছে, আশেপাশের মন্ত্রমুগ্ধের লোকের সংখ্যা বাড়ছে। মনে সবাই অপেক্ষায় কোনো আদেশের জন্য। কেউ খাকি পোশাকে, কেউ লুঙ্গী পড়ে ভবঘুরে, কেউবা চড়ালিপস্টিকের পতিতা। শুধু আমি চেস্টা করছি এই জাদুর মায়া থেকে পালাতে। আমাকে যে পালাতেই হবে, এই ভয়ন্কর জোৎস্না আমার নয়!
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×