somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রত্যাশিত অদ্ভুতুড়ে

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এলাকার নাম ইব্রাহিমপুর। ইব্রাহিমপুর নামটা কেন হল এটা ভাবনার বিষয় নয় তারপর প্রশ্নটা মনে চিমটি কাটে। হয়ত কোন এক সময় ইব্রাহিম নামে একজন জমিদার ছিলেন কিংবা ইব্রাহিম নামের কোন সাধারণ মানুষ ডাল পুরি বা আলু পুরি বিক্রি করতেন তার নাম অনুসারে এলাকার নাম হয়ে যায় ইব্রাহিমপুর। এই এলাকাতেই সানজিদার জন্ম এবং বসবাস। বসবাস মানে ছোট একটা ফ্ল্যাটে সাবলেট হিসাবে একটা রুমে থাকা আর কি। আশ্চর্য সানজিদার বাবার নাম ও ইব্রাহিম কিন্তু সানজিদা জানে তার বাবার নামে এলাকার নাম নয় কারন তার বাবা তো একটা হাই স্কুলের পিওন মাত্র। বাস্তবতার আগুনের উত্তাপ টা সানজিদা মনে হয় একটু বেশি আগেই বুজতে শিখেছে। একটু বেশি আগে বলার কারন সানজিদার বয়স আর কতই হবে, ১২ বা সাড়ে ১২ হতে পারে। মাত্র ক্লাস সেভেন এ পরে সে।পড়াশুনায় সানজিদা মোটামুটি কিন্তু সানজিদার সবচেয়ে বড় গুন হল তার সুন্দর হাতের লেখা! ক্লাসের অনেকেই তার কাছে হাতের লেখা শিখতে আসতো। এ কারনে অনেকেই তার উপর একটু হিংসা করে তাকে বিভিন্ন অজুহাতে তেতো কথা বলতেও ছাড়ত না । একটা পিওনের মেয়ের কি কোন গুন থাকা মানায়? হ্যাঁ, তাইতো সানজিদা কিংবা তার বাবার কাছে এটা ভাবার কোন বিষয় নয়। এটা কি বাস্তবতা মুদ্রার এপিঠ না ওপিঠ সেটাও একটু চিন্তার বিষয় বটে। সানজিদা অবশ্য মনে মনে একটু সাহস সঞ্চিত রাখতে পারে কারন তার বাবা যে স্কুল এর পিওন সে তো ঐ স্কুল এই পড়ে। সানজিদার বাবার সপ্ন তার মেয়ে একদিন এই স্কুল এর হেডমাষ্টার হবে। তাইতো এত কষ্ট করে মেয়েকে পড়াশুনা করাচ্ছেন। হ্যাঁ, গরিব মানুষদের এ সমাজে হয়ত সপ্ন দেখা নিষেধ কিন্তু সপ্ন দেখতে এখন পর্যন্ত হরতাল দেয়ার কোন সিস্টেম চালু হয়নি তাই হয়ত সানজিদা বা ইব্রাহিমের মত লোকরাও সপ্ন দেখতে পারে।


একদিন স্কুলের সেলিম স্যার সানজিদা কে ডেকে বলল,এই মেয়ে তুমি তো আমাদের পিওন ইব্রাহিম এর মেয়ে তাইনা? সানজিদা হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়তেই স্যার বলল আজ স্কুল ছুটির পর আমার সাথে আমার বাসায় গিয়ে আমার মেয়েকে একটু হাতের লেখা শিখিয়ে দিবে, বুঝছ? সানজিদা হ্যাঁ সুচক উত্তর দেয়। মনে মনে সানজিদা একটু খুশি হয় এটা ভেবে যে, তার স্যার এর মেয়েকে সে শিখাতে জাবে,আহা এই বুজি সে ও ম্যাডামে হয়ে গেল। তাই স্কুল ছুটির পর সে খুব খুশি মনে স্যার এর সাথে স্যার এর বাসায় গেল। সেই খুশির ছোঁয়ায় সে তার বাবাকে বলে যেতেও ভুলে গেল। কিন্তু সে জানেনা এই ছোট্ট ভুলটি ই তার জীবন থেকে তার জীবনের সব সঠিক কিংবা ভুল করার সুযোগ চিরদিনের জন্য মুছে দিবে।
সন্ধ্যার দিকে ইব্রাহিমের কাছে ফোন আসে। সেলিম স্যার তাকে জরুরী ভাবে দেখা করতে বলেছে । সানজিদার মা বিকেলে বলেছিল সানজিদার বাসায় না ফেরার কথা, সে কাজের চাপে ব্যাপারটা নিয়ে তেমন ভাবার সময় পায়নি। ভেবেছে মেয়েটা হয়ত কোন বান্ধবীর বাসায় গেল। এইসব চিন্তা করতে করতে সে স্যার এর বাসায় গেল।


কিছু সময় পর ইব্রাহিম কান্নারত সানজিদা কে নিয়ে বাসায় ফিরে। বাসার কেউ কিছু জানতে পারে না কিন্তু ইব্রাহিম না বললেও সানজিদার মা তার মেয়েকে হাতে পাওয়ার সে বুঝে নেয় সানজিদার কান্নার কারন।
চাকরি হারানোর ভয়ে কিংবা মান সম্মানের ভয়ে ইব্রাহিম কাউকে কিছু বলার বা ডাক্তার দেখানোর সাহস পায়না। হ্যাঁ, গরিবের সাহস থাকা ও নিষেধ। রাত বাড়ার সাথে সাথে সানজিদার অবস্থা ও খারাপ হতে থাকে। সকালে ইব্রাহিম মেয়ের খারাপ অবস্থা দেখে এবং সানজিদার মায়ের আকুতি মিনতির কাছে হার মেনে সানজিদা কে নিয়ে যখন হসপিটাল এ পৌঁছেন ততক্ষনে সানজিদা এই পৃথিবীর কিছু পশুর লালসা বা সমাজের নিষ্ঠুরতা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়েছে। যে কলম নিয়ে সানজিদা শিখাতে গিয়েছিল সেই কলম মুঠে রেখেই সে হারিয়ে গেল।

৩ দিন পরঃ
কি করবে বুজে উঠতে পারেনা ইব্রাহিম। এই সমাজের কাছে ইব্রাহিম বিচার পায়নি। রাস্তায় বের হলে আগে যে মানুষগুলো সানজিদার নাম আদরের সাথে নিত আজো তারা সানজিদার খোজ নেয় কিন্তু ইব্রাহিম এখন তাদের চোখে কেমন যেন ঘৃনা দেখতে পায়। নিষ্ঠুরতা বা বাস্তবতার এ পর্বটি খুব তাড়াতাড়ি ইব্রাহিমের কাছে ধরা দেয়। আর দিবেই না কেন এখনকার সমাজে একজন ধর্ষিতার বা ধর্ষিতার বাবার সম্মানের মূল্য যে একটা সিগারেটের মূল্যের চেয়েও কম। হ্যাঁ,তাইতো ইব্রাহিম ও গলায় ফাঁস দিয়ে পৃথিবী থেকে মুক্তি ছিনিয়ে নেয়।

২ বছর পরঃ
আজ স্কুলে হেডমাষ্টার হিসাবে যোগদান করেছেন সেই সেলিম স্যার।খুব খুশির সাথে মিষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরলেন সেলিম স্যার। বাসায় এসেই শুনেন তার বউ আর ছেলেমেয়ে তার শ্বশুরবাড়ি গেছে জরুরী কাজে। সেলিমের মনটা একটু খারাপ হল। যাই হোক বিকেলে তার কাছে স্কুল ড্রেস পরা একটি মেয়ে এসে বলল মেয়েটি তার কাছে পড়তে চায়। শুনে সেলিম খুব খুশি হল। পরের দিন বিকেলে সে মেয়েটিকে আসতে বলে। মেয়েটি চলে যাওয়ার পর সেলিম ভাবে মেয়েটি দেখতে খারাপ না। সেলিমের ২ বছর আগের সানজিদার কথা মনে পড়ে। সেদিন ও তো তার বাসায় কেউ ছিল না।

পরদিন যথা সময়ে এই মেয়েটি এসে উপস্থিত হয়। সেলিম পকেটে হাত দিয়ে ক্যামেরা মোবাইলটা ছুয়ে নেয়। আজো সে সানজিদার ঘটনা রি-প্লে করবে, সাথে ভিডিও এর এক্সট্রা ইনকাম তো হবেই। তাইতো মেয়েটিকে ডেকে এনে ঘরে বসায় সেলিম। নিজের কাজ সম্পাদন করতে আস্তে আস্তে সে মেয়েটির কাছে গিয়ে মেয়েটিকে তার স্কাফ দিয়ে ডাকা মুখ খুলতে বলে। কিন্তু মেয়েটি মুখ খোলার পর সেলিম চমকে উঠে।

২ দিন পর সেলিমের প্রতিবেশিরা সেলিম কে সেলিমের বাসায় মৃত উদ্ধার করে। সব কিছুই ঠিক ছিল সেলিমের কিন্তু সেলিমের পাশে পড়ে ছিল একটি রক্তাক্ত কলম আর সেই কলম দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে বিচ্ছিন্ন করা একটি ছিন্নভিন্ন অঙ্গ যা এতদিন সেলিমের পুরুষত্ব প্রমান করে আসছিল।

বিঃ দ্রঃ - পরের বছর ঠিক একই দিনে পাওয়া যায় পাশের এলাকার ফরহাদ এর লাশ,যে কয়েকদিন আগে এক ধর্ষণ মামলা থেকে ক্ষমতার জোরে জামিন লাভ করেছিল।সেলিমের লাশের সাথে ফরহাদের লাশের সব কিছুর ই মিল ছিল কিন্তু পার্থক্য বলতে ফরহাদের লাশের পাশে পাওয়া গেছিল একটি রক্তাক্ত হাতুড়ি।
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×