somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবোল-তাবোলঃ ৫ ( বৌদি সকাশে ২৮তম বিসিএস প্রিলি! )

২৪ শে এপ্রিল, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অষ্টপ্রহরের যাপিত জীবনের গল্প!

বিগত বছরের ২৭শে নভেম্বরের রাত্রি ৯ ঘটিকায় অফিস হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া আপন গৃহে প্রবেশের উদ্যোগ গ্রহনকালে মাতৃদেবীর রণরঙ্গিনী মুর্তি দেখিয়া থমকিয়া যাইতে বাধ্য হইলাম। সত্যি বলিতে ভয় কিসের? সেই বালক বয়স হইতে আরম্ভ করিয়া যৌবনের এই সময়ে আসিয়া ও আমি ধরণীতে এই একমাত্র ব্যক্তিকে কিঞ্চিৎ ডরাইয়া-সমঝাইয়া চলি!
প্রশ্ন আসিলো, "কয়টা বাজে? এতো দেরী কেন?" কী উত্তর দিব, বুঝিতে পারিলাম না। রাত্রি ৯ ঘটিকায় গৃহ প্রবেশ তো আর আমার ক্ষেত্রে নতুন কোন উপসর্গ নহে! এই বিষয়ে বহুবিধ বৃথা বাক্যব্যয় এবং অনাবশ্যক প্রহার (ধোলাই) পর্ব শেষে কোনরূপ ফল না পাইয়া তিনি ইতোমধ্যে হস্ত-পদ উভয়ই ধুইয়া ফেলিয়াছেন!

হুঁশ ফিরিলো পরবর্তী প্রশ্নে। "কালকে না তোর পরীক্ষা?"
সাথে সাথে মাথায় আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িলো। হায়, হায়, পরবর্তী দিন বিসিএস পরীক্ষা, প্রবেশ পত্র খানা কোথায় রাখিয়াছি?
টেবিলস্থ পুস্তকাদির পর্বত সরাইতে গিয়া বিধাতার অশেষ করুণাতে কিয়ৎক্ষন উহাকে পরে খুঁজিয়া ও পাইলাম।

এইবার নতুন ফরমায়েশ। পার্শ্ববর্তী ভবনে বসবাসরত এক সদ্য বিবাহিতা:P বৌদিকে পরীক্ষাস্থলে লইয়া যাইতে হইবে!
বিনয়ের সহিত শুধাইলাম, কী আমার অপরাধ? (বিশেষতঃ আমি বেবী সিটিং(Baby Sitting) বস্তুটিকে একবিন্দুও পছন্দ করিনা!):((

কারন, হিসেবে জানা গেলো-
১. আমার আর উক্ত বৌদির পরীক্ষা কেন্দ্র একই।
২. বৌদির বরের ও (দাদা) পরীক্ষা, তবে কীনা অন্য কেন্দ্রে, যাইবার পথ ও ভিন্ন।
৩. সর্বোপরি, আমার পড়াশোনার যে ছিরি, মা' নিশ্চিত যে, আমার কোনই সুযোগ নাই; অতএব, নিদেনপক্ষে কিঞ্চিৎ পরোপকার হউক!:D

অনুরোধে ঢেকি গিলিলাম; মাতৃআজ্ঞা শিরোধার্য করিয়া দ্রুতবেগে নিদ্রা দিলাম।

প্রভাতে সে এক নতুন উপদ্রব। ১০ ঘটিকায় পরীক্ষা আরম্ভ হইবে, আমি ৯ ঘটিকায় গৃহ-বহিঃর্গমণে ইচ্ছুক; সপ্তাহে এই একমাত্র দিন, নিদ্রার ব্যতিরেকে কাহারো সহিত কোন প্রকার আপোষে আমি বহুদিবসের অনিচ্ছা।

কিন্তু, বিধি বাম! মাতৃদেবীর তিরষ্কারে প্রায় ৭ ঘটিকায় গাত্রোত্থানে বাধ্য হইলাম। জানিলাম, সেই বৌদি সাজিয়া-গুজিয়া ফিটফাট হইয়া আমার গৃহেই চলিয়া আসিয়াছেন। সুতরাং, নিদ্রার চুড়ান্ত স্পেল বিসর্জন দিয়া বৌদিসকাশে পরীক্ষা কেন্দ্রের পানে ধাবিত হইলাম।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর জৈষ্ঠ্য পুত্রেরে বদৌলতে যে ত্রিচক্রযানসমুহের সাক্ষাৎ এ অভাগা জাতি পাইয়াছিলো (লোকে ইহাকে সিএনজি বলিয়া অভিহিত করিয়া থাকে), তাহাতে চড়িয়া ৮ ঘটিকাতেই সেস্থলে পৌঁছিয়া গেলাম!নির্বাক নয়নে দেখিলাম, আমাদিগের ন্যায় অতীব উৎসাহীর অভাব নাই! কেন্দ্রের সিংহদরজা উম্মোচিত হইবে ৯ ঘটিকা নাগাদ। বাইরে বসিবার স্থানাভাবে দন্ডায়মান থাকাই শ্রেয়। বিরক্তির চরমসীমায় পৌঁছিলাম যখন পার্শ্ববর্তী অতিউৎসাহী পরীক্ষার্থীগণের প্রস্তুতি ও অন্যান্য সাধারণ জ্ঞানমূলক প্রশ্নবানে জর্জরিত হইতে লাগিলাম। বুঝিলাম, নারী সংসর্গে অবস্থান করিবার কারণেই অপরদিগের দৃষ্টি আকর্ষনে সক্ষম হইয়াছি! মনে মনে বলিলাম, "রে নরাধম লুলগণ, চক্ষুর মাথা খাইয়াছিস! উহার সিঁথিতে রক্তবর্ণ সিঁদুর ও তোদের কামনার বিষবাষ্পে জল ঢালিতে সক্ষম নয়? এই জাতীয় সরকারী কর্মকর্তা রাষ্ট্রের কোন কাজে আসিবে!"

যাহা হউক, আধুনিক সভ্যতার সংস্পর্শে থাকিয়া ভদ্রতার মুখোশ পরিধান করিয়াছি বলিয়াই বৌদিকে সযতনে আগলাইয়া মনের কথা মনেই চাপিয়া রাখিলাম আর সময়যন্ত্রের সাহায্যে উল্টাগণণ (countdown) চালাইতে লাগিলাম।

এক সময়, আমার বারো ঘটিকা বাজিবার কিয়ৎক্ষণ পুর্বেই সেই আরাধ্য ৯ ঘটিকা হইলো। :) বৌদিকে তাঁহার কক্ষে প্রবেশ করাইয়া দিয়া আমি ও নিজস্ব কক্ষে প্রবেশ করিলাম।

পরীক্ষার প্রশ্ন পাইবা মাত্র যে পরিমাণ হা-হুতাশ চারিপাশ হইতে ভাসিয়া আসিতে ছিল, তাহা দেখিয়া বুঝিলাম, প্রশ্ন হার্ড হইয়াছে। তা আমার কী? লেংটার নাই বাটপারের ভয়! :P সেইদিন এক ঘন্টা ব্যাপী ২০-২০ ম্যাচ খেলিয়া আবার বৌদি সকাশে গৃহে ফিরিয়া আসিয়াছিলাম।

সর্বশেষে বলিতে চাই, এই রাষ্ট্রের সরকারী চাকুরীতে যে এখনো গরু-গাধাদিগের স্থান রহিয়াছে, তার উজ্জ্বল নিদর্শনরূপে ২৮ তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারীতে উর্ত্তীর্ণ হইয়াছি। এক্ষনে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে বিগত সপ্তাহে কতিপয় পুস্তক খরিদ করিয়াছি (কষ্টার্জিত অর্থের নির্মম শ্রাদ্ধ আর কাহাকে বলে?!)। দু;খের বিষয় এই যে, উক্ত পরীক্ষার আসন বরাদ্দ সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত কিছুই জানিতে পারি নাই। লোকমুখে শুনিতে পাইলাম, উহা প্রকাশিত হইয়াছে, অথচ, পিএসসি এর আন্তর্জালে (website) উহার কোন হদিশ না পাইয়া এক্ষনে সহ ব্লগারদিগের সরণাপন্ন হইলাম। কেহই কি নাই, যিনি এই হত-দরিদ্রের আশা পূরণে সক্ষম!


আবোল তাবোল-৪
আবোল তাবোল-৩
আবোল তাবোল-২
আবোল তাবোল-১
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৫:৩৭
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×