আজ কেন যেন আমাদের এই সংসারটা সম্পর্কে লিখতে ইচ্ছা হলো।
এই বাসাতে আমরা ৫ জন ছেলে থাকি। বাসাটা কবে কে প্রথম ভাড়া নিয়ে ছিলো কেউ জানেনা। অবাক হচ্ছেন? আসলে এটাই সত্যি। ব্যাক্ষা করি একটু। প্রথমে হয়তো কেউ বাসাটা ভাড়া নেয়, সে তার সাথে কয়েকজন ছেলেকে নিয়ে এই বাসায় ওঠে। তাদের কেউ কেঊ এক সময় চলে যায়, নতুন ছেলেরা এসে ওঠে। একসময় যে প্রথম বাসাটা ভাড়া নিয়েছিলো, সে নিজেও চলে যায়, নতুনদের মধ্যে কেউ বাসার লিজটা নিজের নামে নিয়ে নেয়। যে চলে যায়, সে সাথে করে তার নিজস্ব জিনিসপত্র নিয়ে যায়, সংসারের জন্য কেনা জিনিশ গুলো থেকেই যায়। আমি যাদের সাথে উঠেছিলাম তাদের কেউই আর নেই এখন। হারাধনয়ের সাতটি ছেলের মত একজন একজন করে পুরাতনরা সবাই চলে গেছে অন্য কোন বাসায়। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে কন্যাবিহিন এই সংসারটা তার নিজ গতীতে চলে আসছে, চলতে থাকবে জানিনা কতদিন।
সংসার, সেইটা একজনের ছোট্ট সংসার হোক অথবা ১০ জন সদসসের অনেক বড় সংসার, তার কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস থাকেই। আমাদের সংসারেও হয়তো সবকিছুই আছে, কিন্তু আমরা নিজেরাও জানিনা যে আমাদের কি কি আছে, কি নেই। যেমন কেউ রান্না করবে, সব কিছু রেডি, চুলায় পাতিল বসিয়ে দিয়ে দেখলো যে ঘরে একটাও পেঁয়াজ নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় তেল আর চাল নিয়ে। মশলা প্রায়ই থাকেনা সবগুলো, যা থাকে তা দিয়েই রান্না হয়। সব গুড়া মসলা আর আদা, রসুন এর পেস্ট ব্যাবহার করি আমরা। পেয়াজ আর মরিচটা কেটে নিতে হয় শুধু। ফ্রিজে মাছ মাংস সব সময়েই থাকে, যার যেদিন রান্না থেকে, সে একটা কিছু বের করে নেয়। প্রায় সময়েই একটা তরকারি আর ডাল রান্না করা হয়। মাঝে মাঝে তরকারির সাথে শাকসবজি থাকে। দুপুরের রান্না প্রায় দিনই বিকেল ৫টার পর শেষ হয়, মাঝে মাঝে ৬টা ৭টাও বেজে যায়। ২৪ ঘন্টা ছেলেরা কিছু না কিছু খায়। কেউ দিনে কাজ করে, সন্ধায় ফিরে এসে খায়, কেউ সারারাত কাজ করে ভোরবেলায় ফিরে আসে। যাদের সকালে ক্লাস বা কাজ নেই, তারা দুপুরের খাবার খায় বিকেল ৬ টার দিকে, রাতেরটা খায় রাত ৩ টায়। গত ৪ বছরে ব্রেকফার্স্ট জিনিসটা সকালে খুব কম দিনই খেয়েছি, আমার নরমাল ব্রেকফার্স্ট টাইম দুপুর ২ টার পর। সিডনীতে অনেক বাসাতেই একবেলা বাসায় বসে খাবার নিয়ম। রান্নার ঝামেলার জন্য এমনটা হয়। সব বাসাতেই মাঝে মাঝে কোন খাবার থাকেনা। হয়তো কেঊ রান্না করতে ভুলে গেছে অথবা কাজে চলে গেছে, সেদিন আর সহজে বাসায় কিছু খেতে পাওয়া যাবেনা। বাসায় প্রতিদিন কমপক্ষে ১৮ ঘন্টা টিভি চলে। অনেক সময় কেউ না থাকলেও টিভি চলতেই থাকে। সমস্ত ঘরে ডিভিডি ছড়ানো ছিটানো। বসার ঘরে কম্পিউটার টেবিলে রাজ্যের কাগজপত্র, আগের দিনে খাওয়া পানিয়ের বোতল (হার্ড এবং সফট), কাপড় চোপড়, এমনকি কাঁথা বালিশ পর্যন্ত স্তুপ করা থাকে। প্রায় দিনেই টিভির রিমোর্ট খুজে পাওয়া যায় না। সেইটা খুজতে গিয়ে এলোমেলো জিনিসগুলো আবারো ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়।
আমাদের বাসার দেয়ালে একটা ওয়েল পেইন্টিং আছে। বাসাটার মালিক বলেছেন ঐ পেইন্টিংটা উনি বাসা কিনে নেবার আগে থেকে আছে, তার মানে প্রায় ১১ বছর হবে। ঘর পরিস্কারের ব্যাপারে আমাদের সবারই চরম অনীহা। শুধুমাত্র বাসায় গুরুত্বপুর্ন কোন গেস্ট আসার কথা থাকলে অথবা বাসা ইন্সপেকশন থাকলে আমরা সবাই মিলে ঘর পরিস্কার করতে লেগে যাই। প্রতিটা ঘরের মেঝেতে আর বিছানার উপর কাপড় চোপড় এর স্তুপ পাওয়া যাবেই। আর একটা জিনিস বলতে ভুলে গেছি, আমাদের বাসায় মোট ৪৭ জোড়া জুতো আছে ! ৫টা মানুষের কি করে ৪৭ জোড়া জুতো থাকতে পারে সেইটা আমরা কেউ জানিনা। বাসায় ঢুকতে গেলে হঠাৎ করে কেউ ভাবতে পারে যে এখানে পার্টি চলছে ! আসলে সেটা না, আমরা এভাবেই থাকি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:০৬