somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃদু কবিতা চর্চা- শাহবাগীয় রীতি মেনে

২৩ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সন্ধ্যায় আজিজ গেলাম, একজনের আসবার কথা ছিলো, কিন্তু ঢাকা শহরের বিখ্যাত জ্যামের প্যাঁচে পড়ে নাজেহাল অবস্থায় যখন কিছু করার নেই, ভাবলাম একটু প্রায় ইসলামপুর হয়ে উঠা আজিজ মার্কেটের বাঙলাবাজার অংশটুকু ঘুরে দেখি।

সারি সারি কাপড়ের দোকানের মাঝে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো বইয়ের দোকান, দাঁড়িয়ে ছিলাম প্যাপিরাসে, অবশ্য সন্ধ্যায় নতুন নিয়মে প্রতি ঘন্টার লোড শেডিংয়ের ঝাপটা ছিলো শাহবাগে। সেই অন্ধকারে আইপিএস খরচা বাঁচানোর জন্য প্যাপিরাসের একটা অংশ দিলো বন্ধ করে, আমি বন্ধ দরজা দেখে হেঁটে গেলাম প্রথমাতে। প্রথম আলো আজিজ মার্কেটে একটা দোকান কিনেছে, বইয়ের দোকান, এবং সেটা এত ঘিঞ্জি অবস্থা, পা ফেলানোর উপায় নেই, এবং আশ্চর্য হলাম এটা দেখে, প্রাক্তন একুশেতে পূর্বে বাংলাদেশে প্রকাশিত লিটলম্যাগ রাখতো অনেক। শাহবাগের অনেকটা সময় আমি এইসব লিটলম্যাগের পাতা উল্টে পার করেছি, আজও ভেবেছিলাম একটু লিটলম্যাগ সাহিত্যচর্চা করে ফেলবো লোডশেডিং আর অপেক্ষার প্রহরে।

কিন্তু অপ্রধান এবং প্রধান কোলকাতায় প্রকাশিত যাবতীয় লিটলম্যাগের ভীড়ে আমি বাংলাদেশে কিংবা ঢাকায় প্রকাশিত লিটলম্যাগ পেলাম না। অবশ্য প্রথম আলো লিটলম্যাগকে গণনায় নাও ধরতে পারে, তাদের অনুগত লেখকবৃন্দ আছেন, যাদের নিয়মিত পুরস্কৃত করা হয়, যাদের অখাদ্য কুখাদ্য গদ্যও সমাদর পায়। রদ্দি লেখকেরা আসন আলো করে বসে থাকেন, এবং আমাদের প্রিয় মদ্দ্যপ মতি ভাই ঢুলু ঢুলু চোখে দিন বদলের স্বপ্ন দেখান আমাদের।

সেখানে মূলত ইংরেজি সহজ পাঠ হিসেবে টেক্সট বইয়ের এব্রিজড ভার্সন দেখলাম, দেখলাম পুরোনো বইগুলো, যা দেখলাম না, শিশু সাহিত্য বলে একটা অংশ ছিলো একুশেতে। সেটা উধাও হয়েছে, উধাও হয়েছে লিটল ম্যাগের অংশটুকু, উধাও হয়েছে বাংলাদেশের প্রকাশিত বিশেষত বাঙলাসাহিত্য নিয়ে লেখা বইগুলো। এইসব ব্যতিচার বাদ দিলে এবং ঘিঞ্জি হয়ে থাকা কোলকাতার আবর্জনা বাদ দিলে বইয়ের দোকান না বলে এটাকে গুদামঘর বলা ভালো।

বাংলাদেশে তেমন বইয়ের দোকান নেই, এই আক্ষেপটা মনে হয় না ঘুঁচবে। সেখানে একটা কফি কিনে, একটা কেক কিনে, আয়েশ করে বসে বই পড়া যাবে, এমন বইয়ের দোকান মনে হয় না বাংলাদেশে পাবো আমি। বার্নস এন্ড নোবেলস এখানে পাওয়া যাবে না, এমন কি নিউইয়র্কের বাসস্টেশনের দোতালা যে চমৎকার বইয়ের দোকান সেটাও আশা করা বাতুলতা। টাইমস্কয়ার কিংবা ম্যাডিসন গার্ডেনের সামনের অংশ নিয়ে আলোচনা করা উচিত হবে না।

সেখান থেকে গেলাম পুনরায় প্যাপিরাস, খুঁজে পেতে একটা বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিলাম, উল্টোবাগের বই, সেটা খুলে একপাতা পড়তে না পড়তে মাননীয় সেলসগার্ল চমৎকার করে বাতি নিভিয়ে বললেন, আসলে আইপিআস সাপোর্ট করবে না, কিছু মনে করবেন না ভাইয়া।

অন্ধকারে একটা বই হাতে কিছু না মনে করেই আমি বাইরে গেলাম। এরপরে খুঁজে ঢুকলাম পাঠক সমাবেশে। সেখানেই অপেক্ষা করা ভালো। বইয়ের দোকানটা ছোটো, মানে ১০ বাই ৮ ফুটের একটা খুপড়ি, এটা বস্তি বস্তি ভাবের বইয়ের দোকান, কিন্তু বইয়ের বিন্যাস ভালো, তেমন বেশী বই নেই, কিন্তু ছিমছাম একটা ভাব আছে, কখনই সেটা দেখে গুদাম ঘরের অনুভুতি আসে না।

সেখানেই দেখলাম, কিংবা খুঁজে পেলাম লিটলম্যাগ, বাংলাদেশে প্রকাশিত। বাংলাদেশে থিয়েটার নিয়ে ম্যাগাজিন বের হয়, সিনেমার ম্যাগাজিন বের হয়, এইসব নিয়ে আমার আগ্রহ কম বলেই এতদিন চোখে পড়ে নি। খুঁজে পেতে হাঁটু গেড়ে বসে দেখলাম খেয়ার নতুন সংখ্যা।

সম্পাদকীয় যথারীতি লিটলম্যাগীয়, লিটলম্যাগের বিশুদ্ধ সাহিত্যচর্চার ইতিবৃত্ত আর বাংলাদেশের অগ্রজ লেখক বানানোর কারখানা হিসেবে লিটলম্যাগের অবদান নিয়ে দু চার লাইন কষে লিখে , অপসাহিত্য বিষয়ক বক্তব্য- এইসব চিরায়ত লিটলম্যাগীয় বাতচিত উপেক্ষা করে সূচিতে গিয়ে কবিতা খুঁজলাম। প্রায় ৮০ পাতা কবিতা
১২১ থেকে মনে হয় শুরু হয়েছে।

লিটলম্যাগে লিখে লিখে প্রায় কবি স্বীকৃতি পেয়ে যাওয়া মানুষ, এবং লিটলম্যাগের সম্পাদকীয়তে যেমন বলা হয়েছে নতুন লেখকের আত্মপ্রকাশ ঘটে লিটলম্যাগে এমন কিছু নতুন কবির আত্মপ্রকাশের বিকৃত চিৎকার দেখলাম সেখানে।

কায়ে ক্লেশে হাঁটুতে ভর করে যতটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়া যায়, সেটুকু মনোযোগ দিয়ে কবিতা পড়লাম, অবশ্য তেমন পছন্দের কেউ নেই তালিকায়, ব্লগের সুবাদে কিছু কিছু পরিচিত নাম দেখলাম, তাদের নাম যেহেতু পরিচিত, সুতরাং তাদের কবিতা ঘাঁটা যায় ভেবে শুরু করলাম নাম দেখে পড়া।

পড়লাম, এবং পড়ে যা বুঝলাম, এই কবিতা লেখার জন্য দাড়ি চুল বড় করে রাস্তায় ঘুরবার কোনো প্রয়োজন নেই। কবিতায় এমন কিছু নেই যা এই উস্কোখুস্কো চূলের এবং দাড়ির বাহারকে ব্যাখ্যা করতে পারে।
এর ভেতরে কিছু কবি আছে, যাদের আর কবি হওয়ার চেষ্টা করা উচিত হবে না, এবং খুবই আশ্চর্যজনক কথা হলো, সেখানে ঠিক সে মাত্রায় উত্তরাধুনিকতা নেই। অর্থ্যাৎ আমাদের খেয়া লিলম্যাগ এখনও আধুনিক কবিতার কারাগার, যদিও এখানে প্রকাশিত কিছু কবির পুনরায় কবিতা না লিখাই উচিত এমন অভিমত আমার থাকবেই।

সেই সাথে আজিজের গলিতে গলিতে দেখলাম সেইসব কবিদের কয়েকজনকে। তাদের সাথে পরে কখনও কথা হবে, কিংবা বাতচিত হবে।

কবিতা কি কবির বেশবাস ধারণ করে কিংবা কবি হয়ে উঠবার প্রথা মেনেই কি মানুষ উস্কোখুস্কো চুল রাখা শুরু করে আমি জানি না। আসবার পথে এই প্রশ্ন করতেই একজন বললো, বোধ হয় উকুনের সাথে কবিতার একটা সম্পর্ক আছে, উকুনের খোঁজে মাথার চুলের এদিক এদিক অনুসন্ধিৎস্যু হাতের আন্গুল আর নোখের চিরুণি ছুটলে, এর কোনো একটা কবিতার সুইচ চালু করে, উকুণ খোঁজার পাশে পাশে কবি কবিতার শব্দও খুঁজেন, কবিতার সাফল্য নির্ভর করে মাথায় উঁকুনের সংখ্যা এবং সেটা পাকরাও করতে কবির সামর্থ্যের উপরে।

কুট্টুস , কুট্টুস, উঁকুন মরছে কবির আঙ্গুলের চাপে, আর রক্তাক্ত কবিতা পয়দা হচ্ছে।

আমাদের আধুনিক কবিকুলকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ পাঠক সমাবেশের মেঝে, কবিতাক্রান্ত হওয়ার আগেই যার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, সে চলে আসায় কবিতায় পতন হয় নি আমার।
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×