somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রজেক্ট অতিমানব

২২ শে এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক: অপেক্ষা
নিজের ছোট্ট ঘরের জানালাটা দিয়ে নীরা বাইরে তাকিয়ে ছিলো। জানালার ঠিক বাইরেই লেক, আর দূরে লেকের পাশে পাহাড়ের সারি দেখা যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য বলা চলে। কবি হলে হয়তো সে এতক্ষনে একটা কবিতা লিখে ফেলতো। অথবা চিত্রশিল্পী হলে হয়তো ইজেলে রং মাখাতো কোন একটা ছবি এঁকে ফেলার জন্য।

এসব গুণ যে তার মধ্যে একদম নেই তা নয়। বেশ ভালো ভাবেই আছে। কারন নীরা পৃথিবীর নিঁখুততম মানবী।জিনেটিক ইঞ্জিয়ারিং করে তৈরী পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানবী। অন্তত বৈজ্ঞানিকদের মতে। তাই সাধারন মানুষ যা পারে না,তার অনেক কিছুই সে পারে। মানুষের জিনের নিঁখুততম বিন্যাসে তাকে তৈরী করা হয়েছে এই ল্যাবরেটরীতে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে পড়ানো হয়েছে। সকল রকম সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাকে শ্রেষ্ঠতম মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে আজকের দিনটির জন্য

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মানুষ হিসেবে তার কখনোই মন খারাপ বা উদাস লাগার কথা নয়। কিন্তু তার পরও কেমন যেন ফাঁকা ফাকা লাগছিলো নীরার। লেকের পানিতে পাহাড়ের ছায়া পড়েছে। গোধূলীর লালচে আলো মিলিয়ে অসাধারন এক মায়বী পরিবেশ তৈরী করেছে। নিঃসন্দেহে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সৌন্দর্য্যের একটি এই দৃশ্য। কিন্তু তারপরও নীরার কেন যেন কিছুই ভালো লাগছে না। আজ তার এবং পৃথিবীর ইতিহাসের একটা স্মরণীয় দিন। আজ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মানবীটি মিলিত হবে শ্রেষ্ঠতম মানবটির সাথে। তার তাতে জন্ম নেয়া শিশুটি হবে জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাহায্য ছাড়া তৈরী প্রথম প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ঠ অতিমানব। নীরার মতো একই ভাবে একজন শ্রেষ্ঠতম মানব তৈরী করা হয়েছে জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে। যদিও নীরা এখনো তাকে দেখেনি।

নীরার মতোই একই ভাবে তাকে তৈরী করা হয়েছে। কেবল আজকের দিনটির জন্য। নীরা যেমন ধারন করছে পৃথিবীর শুদ্ধতম মানবীয় গুনাবলীর জিনেটিক কোড, তেমনি ঐ মানুষটিও ধারন করছে শুদ্ধতম মানবের ডি.এন.এ কম্বিনেশন। তাদের দু'জনের ডি.এন.এ এর ন্যাচারাল সিলেকশন কম্বিনেশনে যে শিশুটি জন্ম নেবার কথা, সেটি হবার কথা পৃথিবীর শুদ্ধতম শিশু। সেই শিশুটি জন্ম দেবার জন্যই তৈরী করা হয়েছে তাদের। অনেক ব্যায়বহুল আর সময় সাপেক্ষ এই প্রজেক্টটির নাম দেয়া হয়েছে, "প্রজেক্ট অতিমানব"। দূরের অস্ত যাওয়া সূর্য দেখতে দেখতে অকারন বিষন্নতা নিয়ে নীরা অপেক্ষা করতে থাকে শুদ্ধতম মানুষটির জন্য।

দুই: আমি নিরন
আমি কি আসলেই নিরন, এই প্রশ্নটা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। হিসেব মতে আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মানুষ 'নিরন'। পৃথিবীর সকল মানবীয় গুণাবলীর প্রকাশ আমার মাঝে থাকার কথা। কিন্তু আমি দেখেছি, আমিও হিংসা করি,আমারো রাগ হয়। সবচেয়ে বড় যে সমস্যা তা হলো গত কয়েকদিন ধরে আমার মধ্যে প্রচন্ড হতাশা বোধ কাজ করছে। নিজেকে একটা তুচ্ছ বস্তু মনে হচ্ছে। একটা পরীক্ষার অংশ কেবল মাত্র। পৃথিবীর বেশীরভাগ মানুষ যেখানে খেতে পায় না, সেখানে আমাকে কেবল এই পরীক্ষাটির স্বার্থে চরম বিলাস বহুল জীবন যাপন করতে দেয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই, আমাকে শ্রেষ্ঠ একটি শিশুর পিতা হতে হবে।

নীরা মেয়েটিকে আমি দেখিনি। তবে মনে হয় সেও আমার মতোই একই রকম হতাশার ভেতর দিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। শ্রেষ্ঠ মানব আর শ্রেষ্ঠ মানবীর সমস্যা গুলো হয়তো এই ল্যাবরেটরীর বড় বড় বিজ্ঞানীরা বুঝে না। শ্রেষ্ঠ মানব হয়েও তাই আমি সুযোগ খুঁজছি এখান থেকে পালানো। দু'বার চেষ্টাও করেছি। কিন্তু দু'বারই ব্যার্থ হয়েছি। এখানকার নিরাপত্তা ব্যাবস্থা খুবই শক্ত।

অবশেষে আজ খুব কায়দা করে একটা ফল কাঁটার ছুড়ি যোগার করেছি। হয়তো আজই আমার জীবনের শেষ দিন। শ্রেষ্ঠতম মানুষের চুরি করা উচিৎ না। কিন্তু তারপরও আমি চুরি করেছি। করতে বাধ্য হয়েছি। এখন কেবল অপেক্ষা করছি নীরা নামের মেয়েটার সাথে দেখা করার জন্য। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মানবীটিকে একবার দেখেই আমি আত্মহত্যা করবো। হয়তো আর কিছুক্ষণ পরই আমাকে তার কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। পায়ে মোজার কাছে ফল কাঁটার ছুড়িটা লুকিয়ে রেখে আমি অপেক্ষা করতে থাকি।

তিন:পরিচয়
দরজা খুলে যে ঢুকলো তাকে সাধারন ভাবে খুবই সুদর্শন একজন যুবক বলা উচিৎ। পৃথিবীর যে কোন মেয়ে তাকে দেখে অদ্ভুত আকর্ষন বোধ করবে। কিন্তু নীরার মধ্যে তেমন কিছু হলো না। যুবকটি এসে নীরার থেকে একটু দূরে বসে তাকে পর্যবেক্ষন করতে থাকলো।

-"আমি নিরন" অসম্ভব ভারী আর আকর্ষণীয় কন্ঠস্বরে মানুষটি বলে উঠলো।
-"আমি নীরা"

অনেক্ষন তারা এরপর আর কোন কথা বললো না। জানালা দিয়ে আকাশের পূর্ণিমার চাঁদটির দিকে তাকিয়ে থাকলো। সময়টা অসম্ভব রোমান্টিক হবার কথা। কিন্তু তাদের মাঝে কোনই প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না।

-"শোন নীরা, আমি ঠিক করেছি আজ আমি আমার এই অতিমানব জীবন শেষ করে দেবো।একবারের শ্রেফ কৌতুহল বশত তোমাকে দেখার ইচ্ছে ছিলো। আমার কৌতুহল মিটেছে। " অনেক্ষন পর নিরনই প্রথম কথাটা বললো।প্রায় শোনা যায় না এমন ফিসফিস করে।
-"তুমি কি করে মারা যাবে, এখানে তো সে উপায় নেই। আমি আগে অনেক বার চেষ্টা করেছি। চারিদিকে ক্যামেরা, নিজে লুকিয়ে কোন একটা কিছু করার উপায় নেই।"

হঠাৎ করে নিরন বুঝতে পারে এই অসম্ভব সুন্দর আর নিঁখুত মেয়েটাও তার মতোই অসম্ভব হতাশা নিয়ে বেঁচে আছে। এই হতাশা কেবল সে ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। অতিমানব, অতিমানবী হবার কষ্টটা তারা দু'জন ছাড়া বোঝার আর কেউ নেই।

নিরন কোন কথা না বলে নীরার চোখের দিকে তাকায়। নীরা নিরনের শান্ত আর কালো দুটি চোখের ভাষা বুঝতে পারে। সেই চোখ বলছে,"আমি তোমাকে বাঁচাবো, আমি তোমাকে মুক্তি দেবো তোমার হতাশাময় জীবন থেকে"

চার: সমাপ্তি
"প্রজেক্ট অতিমানব" সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। অনেক সময় ধরে ধীর ধীরে গড়ে তোলা অতিমানবী নীরা আর অতিমানব নিরন দু'জনই একসাথে আত্মহত্যা করে। অবশেষে "প্রজেক্ট অতিমানব" বাতিল ঘোষনা করা হয়। যদিও বিজ্ঞানীরা নীরা আর নিরনের আত্মহত্যা করার তেমন কোন কারনই খুঁজে পায় নি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:২৯
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×