পাঁচটা বছর.....১৮২৫ দিন! এত্তগুলো দিন কিভাবে চলে গেলো!!! ভেবেই অবাক হই। নিজের দেশ ছেড়ে এতগুলো দিন কিভাবে কাটিয়ে দিলাম?!
আজ থেকে ঠিক পাঁচ বছর আগে এক সুন্দর সোনালী সকালে ব্যাগ টেগ গুছিয়ে আমরা গাড়িতে উঠলাম এয়ারপোর্টে আসার জন্য। গাড়িতে উঠার আগে সবাইকে বিদায় জানালাম, কিন্তু এক ফোঁটা চোখের জলও পড়ে নি! (আমি অনেক শক্তগোছের একটা মেয়ে।)
গাড়ি থেকে নামার পর মুহুর্তে....ভিতরে ঢুকে যাবার আগে বড় ভাইয়া যখন আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলো-আমি হয়ত সেই দৃশ্যটা কখনোই ভুলতে পারবো না। ভাইয়া তোমার কথা খুব মনে পড়ে....আমাকে এখন আর কেউ তোমার মত করে জ্বালায় না। মাছ খেয়ে মাছের কাটা আমার প্লেটে রাখে না কেউ। বাইরে থেকে এসে, ঘামে ভেজা শার্টটা আমার মুখের উপর ছুড়ে মারে না কেউ। (ওয়াক.. )
আমাকে যখন তখন কেউ আর আইসক্রিম খেতে বাইরে নিয়ে যায় না। আমার ভীষন যত্ন করে গুছিয়ে রাখা ঘরটা কেউ অগোছালো করে না। তোমার ড্রয়ার থেকে চুরি করে সুন্দর সুন্দর চিঠি লেখার রঙিন কাগজ নেয়া হয় না কিংবা বডি স্প্রে দেয়া হয় না কিংবা চুরি করে গল্পের বই পড়া হয়না কত দিন!! তোমার মাথা ভর্তি শাহরুখ খানের চুলের মত সুন্দর চুলগুলোকে আমি "ছাগলের গায়ের চুল" বলে কত্তদিন খেপাই না!!!
এতটা দিন আমি আমার প্রিয় দেশ, প্রিয় খুব কাছের মানুষগুলোকে ছেড়ে আছি!! ঈদ, নববর্ষ কখন আসে, কিভাবে আসে, কখন যায় টেরও পাই না! কতদিন ঈদের নতুন জামা কিনার জন্য অস্থির হয়ে যাই না! কতটা ঈদের দিন আমি সাধারন সাজে, শার্ট-প্যান্ট পড়েই ক্লাসে চলে গেছি তাড়াহুড়া করেই! কতদিন ঈদের সালামী পাই না বাবার কাছ থেকে!! আর একটা বারের জন্য খুব করে সেজে নতুন জামা পড়ে বাসার সবাই মিলে একসাথে একটু সেমাই খেতে ইচ্ছে করে অনেক। আরেকটা বার ঈদের সালামী নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে ইচ্ছে করে খুব।
একদিন ক্লাসে যাবার সময় একটা কাক দেখে সে কি আনন্দ আমার! ঢাকা শহরের অসহ্যকর কাক গুলোর কা কা ডাক শুনে কি যে বিরক্ত হতাম। সেই আমি একটা কাক এই আমেরিকার মাটিতে দেখে ভীষন ভীষন খুশি হয়েছিলাম। আমি আমার পিছনের দিনগুলোতে চলে গিয়েছিলাম যেন!
এখন বৃষ্টি দেখে আর আনন্দে লাফাতে ইচ্ছে করে না। বৃষ্টির দিনগুলোতে আগে ঈদের আনন্দের মত লাগতো। সারাদিন কাঁথা গায়ে জড়িয়ে শুয়ে শুয়ে বৃষ্টি পড়া দেখতাম। ঠিক দুপুরের দিকে আমরা চার ভাই-বোন মিলে ক্যারাম খেলতাম (সব সময়ই হারতাম আমি ) আব্বু অফিস থেকে এসেই বলতো মাংশ-খিচুড়ি, চানাচুর ভাজা, সিঙারা ভাজা হলে কেমন হয় আজ!?
আমার অনেকগুলো বৃষ্টির দিনে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আর কাঁথা জড়িয়ে ঘুমানো হয় না এখন। ভুনা খিচুড়ির স্বাদও কিভাবে যেনো পানসে হয়ে গেলো!
আমি এখন বৃষ্টির জলে মন ভিজাতে ভুলেই গেছি।
কেউ জানে না...আমার প্রিয় বাংলাদেশ তুমিও কোনদিন জানবে কিনা জানি না.....কতটা রাত আমি তোমার জন্য চোখের জল ফেলেছি, কতটা দীর্ঘশ্বাস বুক চিঁড়ে বেরিয়ে এসেছে! আমি পাগলের মত দিন গুনি শুধু সেই সবুজ সোনালী দেশটাতে ফিরে আসার জন্য। এতটা হাহাকার কেনো তুমি কোনদিন বুঝতেও পারবে না। কিন্তু আমি জানি পৃথিবীর আর কোন দেশে স্বর্গীয়ে সুখ মিলে না যে!
পৃথিবীর আর অন্য কোন দেশের মানুষ জানেই না যে আমার এই গরীব ছোট্ট দেশটাতেই কত ভালোবাসা, কত আনন্দ, কত সুর, কত রং লুকিয়ে আছে! এই ইট কাঠ পাথরের উন্নতদেশে আমি আমার সেই সুখগুলো কিভাবে খোঁজে পাবো?!
আমি জানি না আমি আবার কবে তোমার সেই নরম সবুজ কোলে ফিরে আসবো...আমার প্রিয় বাংলাদেশ। শুধু জেনে রেখো আমি ফিরে আসবো....একদিন ঠিকই ফিরে আসবো (ইনশাল্লাহ) .....হয়ত মানুষ নয়, হয়ত শঙ্খচিল শালিকের বেশে। কি জানি!!! যেই বেশেই আসি না কেনো, তোমার এই স্বার্থপর মেয়েটাকে গভীর মমতায় বরণ করে নিবে তো সেদিন?
আমি হাত ভর্তি কাচের চুড়ি পরে, খুব করে সাজবো সেদিন। হয়তবা খুব আনন্দে গুন গুন করে গানও করবো। হয়ত সেদিন তুমি ভিজে যাবে আমার তপ্ত লোনা চোখের জলে...ভিজে যাবে মাটি....
দেখে নিও সেদিন আমি কোন বারণই শুনবো না। আমি তোমার সেই আগেকার ছোট্ট মেয়েটা হয়ে যাবো...
"নিজেরই দেশ
হতে পারে এই গরীবেরই দেশ
হতে পারে অবহেলিতদের দেশ
তবুও যে আমার বাংলাদেশ
সবুজ দেশে লাল টকটকে সুর্য উঠে
দোয়েল কোয়েলের গানের সুরে
ভোরে আমার ঘুম ভাঙে।
বাংলাদেশ,
মাগো যখন আমি তোমার কোলে
মনে পড়ে কানে কানে বলেছিলে-
"এই দেশ তোমারি দেশ,
ভালোবাসার বাংলাদেশ"
Click This Link
হৃদয়ে বাংলাদেশ (পাঁচ বছরের জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল
হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'
নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ
আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা
গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন
মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.
গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন