somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জনাব এম কে

১৯ শে এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১৯৮০ থেকে এখনও চালিয়ে যাচ্ছি)

এ ছোটগল্পটি পড়ে আপনি যা শিখবেন
১ নিজের ঢোল নিজে পেটানো
২ ভাষা দূষণ প্রক্রিয়া ও খাঁটি চিটাগাইংগা (আঞ্চলিক ভাষা)
৩ টু বি আ এম কে

লেখক পরিচিতি :
‘জনাব এম কে’ ছোটগল্পটি আমার একটি বিখ্যাত সৃষ্টি। কি হতে পারবো না যখন স্পষ্ট, কি হতে হবে তাও যখন নির্দিষ্ট তখন একটা নতুন পথ বেছে নিতে হবে। এরকম একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুগের দাবী অনুযায়ী নিজের ঢোল নিজে পেটানোর জন্য অবশেষে ঢোল আর হাইম (লাঠি) নিয়ে এ প্রয়াস চালাতে গিয়ে একদিন দেখি ‘আরে আমি তো ভালোই লিখতে পারি।’ ব্যস, আর ঠেকায় কে ? এই পুরস্কার, সেই পুরস্কার কত্তো কি ! সাল উল্লেখ করলে অবশ্য জায়গা হবে না। মজার ব্যাপার হলো অভিনন্দন পেতে পেতে আজকাল টাইরেড লাগে। সেজন্যেই আমাকে ‘পুরস্কৃত’(!) লেখক হিসেবে সবাই মেনে নিয়েছেন। কে জানে হয়তো ‘জনাব এম কে’ও পুরস্কার-টুরস্কার পেয়ে যেতে পারে। আমার লেখালেখির হাত বড়ই লম্বা। ছোট বেলা থেকেই লেখা-লেখির জন্য ভাড়ায় খাটতাম। এ পাড়ার মেয়ে ও পাড়ার ছেলেকে পেরেম পত্র দিবে। তো ডাকো আমাকে। এই করতে করতে আজকের আমি এত বড় অধ্যায় রচনা করতে পারছি। সব-ই উনার ইচ্ছা। যাদের ভালোবাসার হৃৎকলম লিখতে গিয়ে আমার এ হাল হয়েছে আমি আজ তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। পাঠক হিসেবে আপনিও ভাগ্যবান। মানে আপনিও ইতিহাস হয়ে গেলেন আর কি !

মূলপাঠ
আমাদের ডাগোদির বাড়ির এম কে সাহেব পালা করে বেলতলায় যান। শরমের কথা কি বলবো উনি আবার আমার বল্টু। তো যাই হোক একদিন মাথায় গরম উঠে যাওয়াতে সাহেব তাড়াহুড়ো করে বেলতলার দিকে যাচ্ছেন। ‘কি, এম কে সাহেব কই যান ?’ জিজ্ঞেস করতেই অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে উত্তর দিলেন - ‘..অ্যাঁ...................নাইরকইল তলাত যাইদ্দে।’ আবার আর এক দিন একই প্রশ্নের উত্তর মেলে এভাবে - ‘আঁই এক্কানা ভারসিটিত যাইয়োম।’ আমার তো আক্কেল গুড়ুম। ও আল্লা বল্টু কিতা কইল ! তো, এই হচ্ছে বল্টুর অবস্থা।
একদিন। কাউওয়া ডাকা বেইন্নে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সবগুলো পাড়াইল্ল্যা মুরগি হাগ্তে গিয়ে আন্ডা পয়দা করেছিলো। দুঃখের হতা কি হোইতাম ! কাউওয়াগুলাও সেদিন পুরো মহল্লা জুড়ে আন্ডা পয়দার আসর বসিয়েছিলো। সকাল বেলা দুয়ারে দুয়ারে কাউয়ার আন্ডার কুসুম দেখে মনে হয়েছে মানহুশ জাতি যেন সভ্যতার সংকটে আছে। ঘটনাটা ঘটেছিলো সেই সকালেই। মোরব্বা মার্কা মুখ নিয়ে তিনি আমার ঘরে হাম্বা হাম্বা ডাক দিয়ে হাজির হলেন। বললেন-‘কিরে অডা আইবো গুম যঅদ্দে না ?’ অথচ তখনও আমি বজ্রাসনে। মাঝে মাঝে আমি বাড়ি ফেরার পথে তিনি জিজ্ঞেস করেন-‘কিরে হন্ডে যঅদ্দে ?’ এই সমস্ত ফাজলামো কথা শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাপালা হয়ে যায়। সকাল বেলা হারামজাদাকে দেখে মাথা গেলো খারাপ হয়ে। লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন পড়ে অনে অনে সান্ত্বনা পাই। মুখে কঠিন ভাব এনে কেন এসেছে জানতে চাইলে বলে - ‘আজিয়ে গোডাদিন তুই আঁরলগে থাহিবি কিন্তু......ন থাহিবি।’ এ্যাঁ বলে কি ! এটা কেমন কথা ? ‘দোস্ত, তোরারে আজিন্নে উওগ্গে দারুণ হানা হাবাইয়োম।’ খুব ভালো কথা দোস্ত। তো আপনি সারাদিন কই থাকবেন ? ‘এক্কানা বেল তলাত যাইয়োম, মানি মাতা গরম অইগেইয়েতো।’ মনে মনে বল্লাম ‘হালার পুত তুই বেল তলাত যাবি তো আঁরেকা বেরাই ফেলোর ?’ খোশ মেজাজে তিনি কার্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলেন। সারাদিন লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতে হবে পাছে তেনার ভ্রাতৃকুলের কেউ আমায় দেখে ফেললে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা এবং অবশেষে সান্ধ্যভোজন গোল্লায় যাবে। বুশ ভায়ার সাথে বল্টুত্ব হলে যেমন লাদেন ভায়ার শত্রু হতে হয় না, অটোমেটিক লাগি যায়। তেমনি এম কে ভায়ার বল্টু হয়েও আমার যায় যায় অবস্থা। ইডেনের মা যেমন। এম কে সাহেবের মা-ও তেমন। সবলা নারীর গাভী মা আর অবলা নারীর মাছ মা। একবার বেল গাছ ঘরে চলে আসাতে ছেলে ঘরেই মাথা ঠান্ডা করার পাঁয়তারা করেছিলো। তো, মায়ের মন বলে কথা। বলেন ‘জেতাগ্গিন রাস্তার মাইয়ে আঁর ফোয়ার মাতা হাইবেল্লায় আইয়েদে।’ মা-কা পুত এম কে। আফিমের চামচ মুখে নিয়ে আর ক’জন জন্মাতে পারে ! চাইরোমিক্কে হায় হায় আওয়াজ উঠলো।
কি হলো, কি হলো ??
খোদ এম কে’র ঘরেই সমস্যা। কি সমস্যা ?
উনাদের মোরগে আন্ডা পয়দা করে দিয়েছে।
এটা-তো সকাল বেলার কথা।
সব মুরগি ডিম পয়দা করেছে, ঠিক আছে। তা বলে মোরগও !!
এ্যাঁ, এ সর্বনাশ কে করলো ?

সন্ধ্যায় যথারীতি রেস্টুরেন্টে বসলাম। আমাদের এম কে অবশ্য এ ব্যাপারে খুব সিরিয়াস। কথা দেন শুধু রাখার জন্যে। কথা দিতে দিতে মোটামুটি সবাইকে তিনি কথা দিয়ে ফেলেছেন। জব্বর খেলাম। প্রশ্ন উঠলো - ‘মোরগটার কি হবে ?’ উনি হাসেন, শুধুই হাসেন। অন্ধকারে পেঁচা যেমন, আলোতে কুত্তা যেমন। সেরকমই হাসেন। আর মিনমিনিয়ে বলেন - ‘এইরহম মাঝে মইধ্যে ওই থাহে।’

শব্দার্থ ও টীকা ঃ
এম কে - ছদ্ম নাম (মেম্বার অফ কাউওয়া সমিতি-কাক সম্প্রদায় সাধারণত যত্রতত্র হাগাহাগি করে এবং যা-তা খায়-এই অর্থে বোঝানো হয়েছে), ডাগোদির - পাশের, বেলতলা - এক তলা, দুই তলা যেমন, বেল তলাও সেরকম একটি তলা (ঠান্ডার জন্য যায় আর কি), বল্টু - বন্ধু বিশেষ (বেশি প্রিয়, প্রাণের অর্ধেক অথবা আদরে না কুলালে এভাবে ডাকা হয়), মাথায় গরম ওঠা - মানুষের মাথা গরম কালে বেশি গরম হলেও এখানে সারা বছর কিছু মানুষের প্রতীকি অর্থে মাথায় গরম উঠে বোঝানো হয়েছে, নাইরকইল - নারকেল, তলাত - তলায়, যাইদ্দে - যাচ্ছি, আঁই - আমি, এক্কানা - একটু, যাইয়োম - যাবো, কাউওয়া - কাক, বেইন্নে - সকালে, পাড়াইল্ল্যা - পাড়ার, হতা - কথা, হোইতাম - বলতাম, পয়দা - উৎপাদন করা বা জন্ম দেয়া (পাকি পাকি লাগে তাই না), মানহুশ - যে সমস্ত মানুষের হুশ নাই, কিরে অডা আইবো গুম যঅদ্দে না - কিরে ব্যাটা এখনও ঘুমাচ্ছিস, কিরে হন্ডে যঅদ্দে - কিরে কোথায় যাচ্ছিস, অনে অনে - নিজে নিজে, আজিয়ে - আজকে, গোডাদিন - সারাদিন, আঁরলগে - আমার সাথে, থাহিবি - থাকবি, ন থাহিবি - থাকবি না, তোরারে - তোদেরকে, আজিন্নে - সন্ধ্যায়, উওগ্গে - একটি, হানা - খানা, হাবাইয়োম - খাওয়াবো, এক্কানা - একটুখানি (ক্ষণিকের জন্য), মানি - মানে, মাতা - মাথা, অইগেইয়োতো - হয়ে গেছে তো, হালার পুত - শালার পুত্র বিশেষ, আঁরেকা - আমাকে কেন (ফরাসি ফরাসি লাগে তাই না), বেরাই ফেলা - জড়িয়ে ফেলা, ভায়া - মায়ের পেটে না ধরলে এ নামে ডাকা হয় (জমের পেটের সন্তান বিশেষ), লাগি যায় - লেগে যাওয়া, ইডেন - সুদুর কোলকাতায় যাওয়ার দরকার নেই (খেলা আশে পাশের মাঠেই হয়), জেতাগ্গিন - যত্তসব, মাইয়ে - মেয়ে, আঁর - আমার, ফোয়ার - ছেলের, হাইবেল্লায় - খাওয়ার জন্যে, আইয়েদে - আসে, মা-কা পুত - মা কাক যেমন বাচ্চা কাক গাছ বা উপর থেকে পড়ে গেলে সাধারণ মানুষ হেঁটে যাওয়ার সময়ও মাথায় ঘা মেরে নিরীহের মাথা রক্তাক্ত করে আর বড় গলায় কা-কা করে। সেরকম মায়ের ছেলে হিসেবে বোঝানো হয়েছে (এখন আর বাপ-কা বেটার দিন নেই), চাইরোমিক্কে - চারিদিকে, এইরহম - এইরকম, অই থাহে - হয়ে থাকে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×