একটা যুদ্ধ শেষে যুদ্ধের ক্ষত জেগে থাকে দেশের শরীর জুড়ে। আমাদের গণযুদ্ধ, আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধে শরিক হওয়া মানুষদের ভেতরে খুব কম মানুষই পূর্ব প্রশিক্ষিত যোদ্ধা ছিলো, বরং আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অকাতরে প্রাণ দিয়েছে যারা, তারা সবাই সাধারণ মানুষ, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজপড়ুয়া ছাত্র, গ্রামের কৃষক এবং কামার মুচি, স্কুলের শিক্ষক, যাদের কারোই অন্য কোনো সময়ে অস্ত্র হাতে নেওয়ার কথা ছিলো না, তবু তারা সবাই একটা অস্বাভাবিক সময়ে অস্বাভাবিক রকমের সাহসী হয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন।
তাদের নিজেদের প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে, প্রাণভয় তুচ্ছ করে শত্রুঅধ্যুষিত শহরে এসেছেন, গেরিলা যুদ্ধ করেছেন, গিয়েছেন বন্দরে, বুকে পিঠে মাইন বেধে, জাহাজ ডুবিয়েছেন, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
এইসব মানুষদের জন্যই আমরা এখন স্বাধীন একটা দেশ। আমাদের স্বাধীনতায় তাদের অবদানই প্রধান তবে স্বীকৃতির কথা ভাবলে, আমাদের প্রশিক্ষিত সেনাসদস্য যারা হয়তো সামান্য আঁচড়ের দাগ শরীরে লাগবার পরে আগারতলা গিয়ে ৩ মাসের অবকাশ কাটিয়েছেন, তারাই হয়েছেন বীর প্রতীক, বীর উত্তম এবং যারা এত ঝুঁকি নিয়ে সম্পূর্ন যুদ্ধটাই করেছেন, তাদের কেউই তাদের সাহসিকতার স্বীকৃতি পান নি।
যুদ্ধ শেষ হয়েছে, সোহওয়ার্দি উদ্যানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পনের পরে এইসব যোদ্ধার অস্ত্র সমর্পন করে চলে গেছেন নিজ নিজ পেশায় ফিরে গিয়েছেন। যাদের যুদ্ধপূর্ববর্তী সময়ে কোনো নির্দিষ্ট পেশা ছিলো না, তারা কাজের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরেছেন। হয়তো এদের ভেতরে ভাগ্যবান কেউ কেউ পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সম্মাননা এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পুনর্বাসিত হয়েছেন এখানে।
দেশের অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের অফিস দিনে দিনে জুয়ার আসর হয়েছেন, সেখানে সামান্য অংশভোগের জন্য করুণ লড়াইয়ে লিপ্ত হয় একদা সাহসী এবং উদার আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা। যুদ্ধকালীন সময়ে যারা এক প্লেট ভাত ভাগাভাগি করে খেয়েছেন সহযোদ্ধার সাথে বরাদ্দ এক প্যাকেট বিড়ি কিংবা সিগারেট ভাগ করে পরমানন্দে দেশর জন্য প্রাণবাজী রেখেছিলেন, সেই মানুষগুলোই এখন পয়সার প্রলোভনে সহযোদ্ধার মৃত্যু কামনা করেন। অভাব আমাদের সব নৈতিকতাবোধ এবং অহং আর উদারতা ধ্বংস করে ফেলেছে।
আলি মাহমেদ, যে এককালে সামহোয়্যারে শুভ নামে লিখতো, তার সাথে হঠাৎই পরিচয় হয়েছে একজন নৌ কমান্ডোর। সেই সাহসী নৌ কমান্ডো এখন ঠালাগাড়ী চালান জীবিকার প্রয়োজনে, তিনি হয়তো আশা ত্যাগ করেছেন, কিন্তু আমাদের আশাহত হলে চলবে না।
আমাদের আশেপাশের শ্রমজীবি মানুষদের ভেতরেই এমন সব সাহসী যোদ্ধারা ঘুরছেন। আমরা যাদের অবহেলায় ভুলে যাচ্ছি কিংবা উপেক্ষা করছি পদে পদে, এইসব সাহসী মানুষেরা আমাদের সাথেই আছেন।
আমাদের আশেপাশে দ্বিপ্রহরের ছায়ার মতো বিলীন হয়ে আছেন।
আমরা তাকে যদি অনুদান দেই, সেটা হবে করুণা। আমি এইসব সাহসী মানুষদের করুণা দিতে চাই না।দিতে চাই স্বীকৃতি। তার আত্মত্যাগ এবং সাহসীকতার স্বীকৃতি দিতে চাই। আমাদের প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এই স্বীকৃতি দিবে না।
আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারাই এই মানুষের যোগ্য সম্মান দিতে পারি। তার কাছে গিয়ে তাকে অন্তত একটা স্যালুট দিতে পারি।
তার নাম ফজলুল হক ভুঁইয়া
সাকিন আখাউড়া বাংলাদেশ
পেশা ঠেলাগাড়ী চালানো।
বিস্তারিত আছে
Click This Link
আলী মাহমেদের ব্লগে
আলোচিত ব্লগ
ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)
ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল
হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'
নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ
আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা
গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন