somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিনিং অব লাইফ - পর্ব ১

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিনিং অব লাইফ - পর্ব ১
------------------ ডঃ রমিত আজাদ


আমার ফুপু চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। উনার কোন ছেলে নাই, তাই দায়িত্বটা আমাকে পালন করতে হলো। উনার মরদেহ শায়িত করার জন্য আমাকে কবরে নামতে হলো। প্রথামতো নরম মাটির উপর নিষ্প্রাণ দেহটি শুইয়ে দিয়ে মুখটি কিবলামূখী করে দিলাম। আমি এখনও জীবন্ত, আমার স্থান আপাততঃ মাটির উপরে। তাই মাটির ঘর থেকে উপরে উঠে এলাম। কাজ শুরু করলো কবরগাহের শ্রমিকরা। বাঁশ দিয়ে ঢেকে, মাটি ফেলতে শুরু করলো কবরে, ধীরে ধীরে ফুপুর নিথর দেহটি অদৃশ্য হতে হতে মাটির আড়ালে ঢেকে গেল। বেশ কয়েক বছর ধরে এমন ঘটে চলছে। আমাদের আগের জেনারেশনের মুরুব্বীরা একে একে বিদায় নিচ্ছেন। প্রতিবারই দাফনে উপস্থিত থেকে কখনো চোখের জল ফেলে, কখনো নীরব শোকে তাদের বিদায় দিচ্ছি। আমি পাশে দাঁড়ানো আমার শিশু ছেলেটির দিকে তাকালাম, মনে মনে ভাবছি, এরপর আসবে আমাদের জেনারেশনের পালা, সেই অনাগত ভবিষ্যতে আমার সন্তানরা আমাকেও এমনি করে বিদায় জানাবে। জন্ম-জীবন-মৃত্যু, এইই এক একটি মানুষের অবধারিত ভাগ্য। একটি গভীর চিন্তা আমার মনকে আচ্ছন্ন করে ফেললো, আচ্ছা এই সব কিছুর অর্থ কি? - হোয়াট ইজ দ্যা মিনিং অব লাইফ?

মাঝে মাঝে একটি করুণ সুর মনে ভেসে ওঠে, গুন গুন করে গাই সে সুর, গানটির কোন কথা নেই, শুধুই সুর - কথা ছাড়া সুর হয় নাকি? হয়, কারণ কথাটি তো আমি জানিনা, কেবল সুরটি জানি, সেটি করুণ সুর, আমার অজ্ঞতা, বিস্ময় আর বিষন্নতার আবেগটুকু শুধু ফুটিয়ে তোলে।

আমার সন্তানটি জন্মানোর কয়েকদিন পর শুধু কাঁদছিলো, ইতিউতি তাকাচ্ছিলো, তার চাউনি ও এক্সপ্রেশন দেখে মনে হচ্ছিলো সে একটা ভীষণ বিপদে পড়েছে। এ কোথায় এলো সে, তার চারপাশে সব কি? সে নিজেই বা কে? ইত্যাদি। ওর মা ওকে শান্ত করার জন্য বলছে, "কাঁদেনা বাবা, কাঁদেনা, দেখ কত সুন্দর সব কিছু, ঐ নীল আকাশ, ঐ রঙিন মেঘ, কতো গাছ, (বেলকুনিতে সদ্য ফোটা বাগানবিলাসের ঝার দেখিয়ে বলল), কত ফুল, কত সুন্দর পৃথিবী! ছেলেটি অবাক বিস্ময়ে মার দিকে তাকায়, যেন তার মনে কেবল একটাই প্রশ্ন, "এই সব কিছুর অর্থ কি?"

ছোটবেলায় অভিভাবকরা বলতেন, "ভালোভাবে লেখাপড়া করো, জীবনে বড় হতে হবে।" কি এই বড় হওয়ার মানে, সময়ের সাথে সাথে মানুষের দেহের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বাড়ে, মুখমন্ডলে পরিপক্কতার ছাপ পড়ে, এটাই কি বড় হওয়া? না বড় হওয়া বলতে মুরুব্বীরা বোঝাতেন, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, আমলা, এ্যাডভোকেট, ধনী ব্যবসায়ী, প্রফেসর, এই সব আরকি।


ধর্মশিক্ষা ক্লাসে শিক্ষক বলতেন, "মূল উদ্দেশ্য হলো বেহেশতে যাওয়া, সেই লক্ষ্যে এই দুনিয়ায় ভালো ভালো কাজ করতে হবে। ভালো-মন্দের পার্থক্য কি, এই বিষয়ে ধর্মগ্রন্থে বিষদ বলা আছে।"


যখন প্রথম প্রেম আসে, মানুষের মনে হয় জীবন অসম্ভব সুন্দর! ভালোবাসার মানুষটির হাতে একরাশ ফুল তুলে দিয়ে মনে হয়, জীবনের অর্থ খোঁজার আর কি প্রয়োজন? এই তো জীবন। জীবনের এই দীর্ঘ পথচলা যেন হয় এই প্রিয়জনটির সাথেই। এমন একজনার পাশে থেকে একটি জীবন অনায়াসে পার করে দেয়া যায়। নির্দ্বিধায় নির্বিঘ্নে একে অপরের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়া যায় - 'আমার না যদি থাকে সুর, তোমার আছে তুমি তা দেবে, তোমার গন্ধহারা ফুল আমার কাছে সুরভী নেবে, এরই নাম প্রেম, এরই নাম প্রেম'। নানা কারণে যখন বিচ্ছেদ আসে - তখন মনে হয়, জীবন একেবারেই অর্থহীন। বেঁচে থাকার আর কোন অর্থই নেই, কি হবে বেঁচে থেকে? এই পর্যায়ে প্রচন্ড হতাশা ও দুঃখবোধ থেকে কেউ কেউ আত্মহত্যা করে, জীবনকে অর্থহীন মনে করে নিজেকে শেষ করে দেয়।

সময়ের সাথে সাথে কমে আসে শোকের তীব্রতা, একজন মানুষের শূণ্যস্থান পূরণ করে অপর একজন মানুষ। প্রথম প্রেমের আবেগটি হয়তো থাকেনা, কিন্তু কেবলই একাকীত্ব ঘোচানোর জন্য, এই শূণ্যস্থান পূরণের প্রয়োজন দেখা দেয়। নতুন করে আবার মনে প্রশ্ন জাগে, জীবনের অর্থ কি?

সন্তান ঘরে আসলে হাসি, আনন্দ, খেলা, মিষ্টি মিষ্টি আধো কথা, হুটোপুটি-ছুটোছুটি করে ঘর আলো করে তোলে। শিশুর মায়া হাসিতে বিশ্ব ভোলে। তখন মনে হয়, প্রয়োজন নেই জীবনের অর্থ খোঁজার, অন্ততপক্ষে ওদের জন্যই বেঁচে থাকতে হবে।

অনেকে এইসব গভীর ভাবনার কোন প্রয়োজনই মনে করেনা। জীবনকে কেবলই উপভোগ করতে চায়। বৈধ-অবৈধ পথে অর্থ উপার্জনের মধ্যেই ডুবে যায়। বৈধ পথে অর্থ বেশী আসেনা, তাই বিপুল অর্থ উপার্জনের অবৈধ অথচ সহজ পথটিই বেছে নেয়। টাকার পালঙ্কে শুয়ে ভাবে, এটাই তার এচিভমেন্ট - 'আমার অর্থ-বিত্ত আমাকে দিয়েছে প্রভাব-প্রতিপত্তি, আমিই তো জীবনে সফল'। কিন্তু, সেটাই কি শেষ? একবার এক দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিবিদকে দেখেছিলাম অকালে মৃত তার একমাত্র তরুণ ছেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অঝোর ধারায় কাঁদছে। আমার তখন খুব জানতে ইচ্ছে করছিলো, ঐ মুহুর্তে সে কি ভাবছে? যেই ছেলের জন্য অপরের ক্ষতি করে এত কিছু করলো, সেই তো চলে গেল। ঠিক সেই সময়ে, সে কি জীবন-মৃত্যুর খেলা নিয়ে ভেবেছিলো, জীবনের অর্থ খুঁজেছিলো?


জীবনের অর্থ খোঁজার জন্য বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন দার্শনিক তত্ত্ব ও মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেক সময় সংশ্লিষ্ট অন্য তত্ত্ব ও মতবাদ থেকেও জীবনের অর্থ বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব এই সিরিজে। পাঠকদের গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।

(চলবে)


জানি তবু জানি,
নারীর হৃদয় প্রেম শিশু
গৃহ নয় সবখানি,
অর্থ নয় কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়,
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়,
আমাদের অন্তর্গত রক্তের মাঝে খেলা করে,
ক্লান্ত করে, ক্লান্ত করে,
ক্লান্ত, ক্লান্ত করে
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×